১৯৭১ সালে ২ ফেব্রুয়ারিকে ‘বিশ্ব জলাভূমি দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এই দিনের কথা সাধারণ মানুষের মনে থাকে না। সরকারের তরফে তাঁদের বোঝানোর কোনও উদ্যোগও করা হয় না। আমরা, নাগরিকরা যখন ডেভলপার বা প্রোমোটারের কাছ থেকে ফ্ল্যাট বা আবাসন কিনি, তখন জানতে চাই না, জায়গাটা কি অতীতে জলাভূমি ছিল?
রামসার কনভেনশন অনুযায়ী জলাভূমি হল— স্যাঁতসেঁতে, পিটভূমি অথবা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট জলাশয় এলাকা, যা স্রোতস্বিনী অথবা স্রোতহীন, স্বাদু, লবণাক্ত বা মৃদু লবণাক্ত জলের দ্বারা পূর্ণ। সামুদ্রিক এলাকার সেই অংশকে জলাভূমি বলা হবে, যেখানে ভাটার সময় জলের উচ্চতা ৬ মিটারের নীচে থাকে। আবার অন্য ভাবে জলাভূমি বলতে বোঝানো হয়— এক পরিবর্তনশীল জলজ প্রতিবেশ, যেখানে জলস্তর ভূমির উপরিভাগে অবস্থান করে, অথবা সেই ভূখণ্ড অগভীর জল দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। আক্ষেপ এই যে, যদি এক শতাংশ মানুষও জলাভূমি রক্ষার্থে সচেতন থাকতেন, তা হলে লাগামছাড়া উন্নয়নে কিঞ্চিৎ লাগাম পরানো যেত।
বেঙ্গালুরু শহর এক সময় ঝিল-সরোবরের জন্য বিখ্যাত ছিল। ২০০টির উপর সরোবর ছিল সেখানে। মাত্র দু’-এক দশকের মধ্যেই এই শহরে সরোবরের সংখ্যা ৫০-এর নীচে চলে এসেছে, যার পরিণতিতে বর্ষায় শহর ডুবে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের একটি তথ্য থেকে জানা যায়, পৃথিবীর ১৬৯টি দেশের প্রায় ২২৯০টি জলাভূমি চিহ্নিতকরণ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব কলকাতার ১২৫ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে যে বিশাল জলাভূমি আছে, এটি তার অন্তর্ভুক্ত। এখানে বছরে প্রায় ২০,০০০ টন মাছ এবং দৈনিক ১৫০ টন টাটকা আনাজ উৎপন্ন হয়। এর সংরক্ষণের জন্য যদি আজও আমরা উদ্যোগী না হই, তবে আর কবে হব?
দেখে নেওয়া যাক, অবহেলায় পড়ে থাকা জলাভূমিগুলো আমাদের কী কী কাজে লাগে— ১) জলাভূমি অসংখ্য জীবের চারণ ও প্রজননক্ষেত্র, ২) অনেক প্রাণীর জন্য জলাভূমি নিরাপদ বাসস্থান, ৩) জলাভূমির তলদেশের সবুজ উদ্ভিদ, গাছের পাতা এবং অন্যান্য অংশের পচনক্রিয়ায় উৎপন্ন বায়োমাস মৎস্য প্রজাতির আশ্রয় ও খাদ্য সংস্থান সুনিশ্চিত করে, ৪) জলাভূমির উপরিতল আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সরবরাহ করে থাকে, ৬) মাটির বিভিন্ন স্তরে জল সরবরাহ করে, যাকে ‘ওয়াটার রিচার্জ’ বলা হয়। এ ছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জল বিশুদ্ধিকরণ, স্থানীয় জলবায়ুর স্থিতাবস্থা বজায় রাখা, কৃষিব্যবস্থায় সহযোগিতা-সহ নানা ভাবে উপকার করে জলাভূমি।
তাই সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে আবেদন, জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য সরব হন। জলাভূমি বাঁচলে তবেই মানবসভ্যতা বাঁচবে।
বিশ্বদীপ ভট্টাচার্য
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
বিস্মরণ
‘আচমকাই নিভল অনির্বাণ জ্যোতি’ (২২-১) প্রসঙ্গে এই চিঠি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর যাবতীয় অবদানকে অস্বীকার ও মুছে ফেলার অদম্য বাসনা জেগেছে বর্তমান সরকারের। ১৬ ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের কাছে গর্বের ‘বিজয় দিবস’। ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ভারত আক্রমণের পর মাত্র ১৩ দিনে বিজয় নিশ্চিত করেছিল ভারত। অবসান হয়েছিল স্বাধীন রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’-এর মুক্তিযুদ্ধের। এ বছর তার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব দু’দেশে সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে। ভারতের অনুষ্ঠানগুলিতে সচেতন ও পরিকল্পিত ভাবে এই বিজয় দিবসের মূল কান্ডারি ইন্দিরা গান্ধীর নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। শুধু দেশের সেনাবাহিনীর অবদান ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। অন্য দিকে ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে দাবি করেন, তিনি কুড়ি-একুশ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কিছু সহকর্মীর সঙ্গে সত্যাগ্রহে অংশ নিয়েছিলেন, এমনকি কারাবরণও করেছিলেন। এ বিষয়ে এখনও কোনও প্রামাণ্য নথি পাওয়া যায়নি। এটা কি অমরত্বের বাসনায় ইতিহাসকে অস্বীকার এবং তার গতি পরিবর্তনের প্রচেষ্টা! ১৯৭১-এর যুদ্ধে আত্মত্যাগ করা ভারতীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের পাশে ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। পঞ্চাশ বছর অবিরাম জ্বলতে থাকা সেই আগুন নিবিয়ে ইন্দিরাকে আরও এক বার মুছে ফেলার চেষ্টা হল। অমর জওয়ান জ্যোতির অনির্বাণ শিখাকে এ দিন মিশিয়ে দেওয়া হল ‘ন্যাশনাল ওয়ার মেমরিয়াল’-এর প্রজ্বলিত অগ্নিশিখার সঙ্গে। এই স্মারক ২০১৯-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেন স্বাধীনতা-পরবর্তী পর্যায়ে ভারতীয় সেনার আত্মবলিদানকে শ্রদ্ধা জানাতে। কীর্তিটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর, তাই এই মিশিয়ে দেওয়ার কাজ সাঙ্গ হল। সময়ের সঙ্গে লোকে ভুলে যাবে অনির্বাণ জ্যোতির কথা, ইন্দিরার কথা। ‘জাতীয় যুদ্ধ স্মারক’-এ জ্বলজ্বল করবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদীর অমরত্ব।
গৌতম পতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
জন্মশতবর্ষে
এই বছর ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা চলচ্চিত্রের কাহিনিকার শক্তিপদ রাজগুরুর জন্মশতবর্ষ। অথচ, তাঁর জন্মশতবর্ষ পালনে তেমন কোনও সরকারি উদ্যোগ বা ভাবনা এখনও চোখে পড়ছে না, এটাই দুঃখের। উদ্বাস্তু মানুষের জীবন-যন্ত্রণা নিয়ে তিনি কলম ধরেছিলেন। দিনের পর দিন কেটেছে তাঁর উদ্বাস্তু শিবিরে। তাঁদের যন্ত্রণা তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। শক্তিপদ রাজগুরুর জন্ম বাঁকুড়া জেলায় ১৯২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। শুধু মেঘে ঢাকা তারা নয়, অমানুষ, অন্যায়-অবিচার, অনুসন্ধান-এর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য যেমন লিখেছেন, তেমনই বহু গল্প ও উপন্যাসের জনকও তিনি। তাঁর জন্মশতবর্ষ পালন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিদ্যুৎ রাজগুরু
শিলিগুড়ি, দার্জিলিং
ভয়ঙ্কর ভাইরাস?
“‘মৃত্যুভয়ের’ নয়া ভাইরাস” (২৯-১) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে এই চিঠি। এই ধরনের সংবাদ পাঠকদের মধ্যে ভীতি ছড়াতে পারে। মনুষ্যজীবন রোমাঞ্চকর। ভাইরাস তার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই তাকে নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। কিন্তু একটি অপরীক্ষিত, অসমর্থিত, নিছক গবেষণাপত্রকে রোমাঞ্চোপন্যাসের ভূমিকা হিসাবে ব্যবহার করা অনৈতিক, অবিজ্ঞান। ‘নিওকোভ’ যদি ভয়ঙ্কর হয়ও, তা এখন ভবিষ্যতের গর্ভে। সেই গভীর অতল থেকে তাকে তুলে এনে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া অনুচিত।
‘নিওকোভ’-এর প্রসঙ্গ বিজ্ঞান গবেষণায় আরও একটি দিক নিয়ে আশঙ্কা জাগায়— অতঃপর জনস্বাস্থ্য মানেই ভাইরাস সঙ্কট, অন্য কিছু না। অন্য যা কিছু জনমানুষের পক্ষে বিপজ্জনক, মর্মান্তিক, তা এখন থেকে ভুলে যেতে হবে। জনস্বাস্থ্যচর্চার এই রূপান্তরে শামিল না হওয়াই কাম্য।
সঞ্জয় সেনগুপ্ত
কলকাতা-৯৯
অকেজো ডাকঘর
মুর্শিদাবাদ জেলার নওদা থানা এলাকায় তিনটি উপ-ডাকঘর রয়েছে। তার মধ্যে সব্দরনগর উপ-ডাকঘরে সেভিংস, চিঠি গ্রহণ ও বিলি ছাড়া কিছুই কাজ হয় না। বেলা ৩টের মধ্যে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। নওদার আমতলা উপ-ডাকঘরেও আধারের কাজ হয়। সর্বাঙ্গপুর উপ-ডাকঘরে আধারের সঙ্গে মোবাইল লিঙ্কের কাজ হলে আধারের কাজ শুরু হবে বলে শুনছি।
অথচ, সব্দরনগর উপ-ডাকঘরে এখনও আধারের কোনও কাজ শুরু হল না। নেটওয়ার্ক-জনিত সমস্যা দেখিয়ে এই উপ-ডাকঘরে আধারের কাজ শুরুই করছে না ডাক কর্তৃপক্ষ। এমনকি চিঠি বুকিংয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে যদি নেটওয়ার্ক-জনিত সমস্যা হয়ে থাকে, তা হলে উপ-ডাকঘরটির স্থান পরিবর্তন করা হোক অবিলম্বে।
হামিম হোসেন মণ্ডল (বুলবুল)
ঝাউবনা, মুর্শিদাবাদ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy