—ফাইল চিত্র।
‘লোকসভা ভোট হতে পারে মার্চে’ (৬-১২) প্রতিবেদনটি পড়তে পড়তে মনে হল, আবারও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, খুনোখুনির ঘটনা আমাদের দেখতে হবে। এ রাজ্যের বিগত নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখে এসেছি, নির্বাচন ঘোষণা হতে না হতেই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন অঞ্চলে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে থাকেন। হুমকি, পাল্টা-হুমকি দিয়ে মনোনয়নপত্র পেশে বাধা দেওয়া থেকে শুরু হয়। তার পর এলাকা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা, নির্বাচনের দিন বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, বোমা-গুলি, অবরোধ, খুন-জখম ইত্যাদি ঘটনা একের পর এক ঘটতেই থাকে, হিংসার কোনও ধরনের প্রকাশই বাকি থাকে না! আতঙ্কের মধ্যে থাকেন ভোটকর্মীরা। বিগত দিনের নির্বাচনে বার বার এই চিত্রনাট্যই এ রাজ্যের বাসিন্দারা দেখেছেন।
কিন্তু কিছু দিন আগেই পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন সম্পন্ন হল। রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা বা মধ্যপ্রদেশ, আমরা কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না হিংসার সমারোহ। নির্বাচন ঘোষণা থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচার কর্মসূচি, ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্নে হল। ভোট গণনার সময় বা তার পরেও কোনও সংঘর্ষ, খুনোখুনির ঘটনার খবর সে ভাবে পাওয়া গেল না। সেখানে আমরা দেখলাম, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারসভা হল, নেতারা যে যাঁর রাজনৈতিক ইস্তাহার জনগণের সামনে রাখলেন, প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে গেল। কিন্তু সবটাই রাজনৈতিক প্রচারের অঙ্গনে। জনতাও নিজেদের মত প্রকাশ করলেন ভোটবাক্সে। গণনার ফল সকলেই মেনে নিল। ফল প্রকাশের পর সংসদ শুরু হল, সেখানেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ভোট লুট বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ শোনা গেল না।
ভিন রাজ্যের জনৈক ভোটকর্মী বন্ধুর সঙ্গে ফোনালাপ করছিলাম। কথা প্রসঙ্গে জানলাম, ভোটগ্রহণ, গণনা ইত্যাদি সামগ্রিক ভোট প্রক্রিয়াটা সফল ভাবে সম্পন্ন করা তাঁদের কাছে আনন্দের, সেখানে কোনও রকম ভয়-অশান্তির অবকাশ নেই। কিন্তু আমাদের রাজ্যের ভোটকর্মীরা ভোটের ডিউটি থেকে অব্যাহতি পেতে দরবার শুরু করেন, জীবনের নিরাপত্তার জন্যে। প্রশ্ন জাগে, এ রাজ্যে একই রকম হিংসামুক্ত নির্বাচন কি আমরা আশা করতে পারি না? প্রশ্নটি রইল নির্বাচন কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের কাছে।
দেবাশ্রিত রায়, রানাঘাট, নদিয়া
জাতীয় নেতা
দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘এত তাড়া কার’ (৩০-১১) একটি প্রয়োজনীয় প্রবন্ধ। যখন তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ সংঘাত চলছে, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্গত ভাবেই হস্তক্ষেপ করেছেন, এবং নবীনদের উপদেশ দিয়েছেন যেন প্রবীণদের অমর্যাদা করা না হয়। তবে তাঁর সম্পর্কে লেখকের একটি বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। তিনি বলেছেন, রাজ্য ছাড়িয়ে জাতীয় স্তরেও মমতাকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। নির্দ্বিধায় বলা যায়, মমতা এখনও জ্যোতি বসুর মতো জাতীয় নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য জ্যোতি বসুর নাম উঠেছিল এই জন্য যে, বামফ্রন্ট সে বার ৬২টি আসন লোকসভায় জিতেছিল। হয়তো দেবগৌড়ার প্রসঙ্গ এখানে উঠতে পারে, যিনি আঞ্চলিক দলের নেতা হয়েও প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে তাঁর নাম কিন্তু জ্যোতি বসুই প্রস্তাব করেছিলেন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় নেত্রী হতে পারেন, যদি কংগ্রেস ২০০ আসন পার না করে, আর তৃণমূল কংগ্রেস ভাল ফল করে। তখন আঞ্চলিক দল হিসাবে তৃণমূল প্রাধান্য পাবে।
যদি এমন পরিস্থিতি হয় যে, আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন নিয়ে কংগ্রেস সরকার গড়তে উদ্যোগী হল, তা হলে কংগ্রেস কোনও আঞ্চলিক দলের নেতাকেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব রাখতে পারে। তখন অখিলেশ যাদব, নীতীশ কুমার এবং শরদ পওয়ারের সঙ্গে মমতার নামও আসবে। এঁদের মধ্যে অখিলেশ যাদব মমতাকে নেত্রী হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই পরিস্থিতিতে জাতীয় নেত্রী হিসাবে মমতার গুরুত্ব নিয়ে আর বিতর্ক থাকবে না।
কমল চৌধুরী, কলকাতা-১৪০
নবীনের আশা
দেবাশিস ভট্টাচার্যের সঙ্গে সহমত যে, তৃণমূল দলের প্রধান এবং একমাত্র কান্ডারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে তিন বার তৃণমূল দল ক্ষমতায় এলেও, শুধুমাত্র তাঁর চটকদার ও লাগামহীন পরিচালনার ফলে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য দুর্নীতিগ্রস্ত, লোভাতুর কর্মী। বিশেষ কিছু লোককে অতিরিক্ত ক্ষমতা ও অধিকার পাইয়ে দিয়ে যদি ‘কেউকেটা’ বানিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে ক্ষমতার প্রকাশ এবং অধিকার দখলের সুপ্ত বাসনা জন্ম নেবে, সেটাই স্বাভাবিক! ইতিহাসের পথ ধরে নবীন প্রজন্মের কারও বাসনা জাগলে বাধা কোথায়?
সারনাথ হাজরা, হেম চক্রবর্তী লেন, হাওড়া
বঞ্চিত বিএলও
নতুন ভোটারদের নথিভুক্তি, মৃত ব্যক্তিদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, এবং স্থান পরিবর্তনের জন্য নাম সংযোজনের কাজটি করেন বুথ লেভেল অফিসার, বা বিএলও। নামটি গালভরা হলেও, বিএলও-দের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তাঁদের পারিশ্রমিক বাড়েনি দীর্ঘ দিন। সারা বছর তথ্য যাচাই করার পরিশ্রম করে, বিডিও অফিসে গিয়ে তালিকা জমা দিয়ে মাত্র তিন-চার হাজার টাকা পান। সাধারণত প্রাথমিক ও হাই স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক, বৃত্তিমূলক শাখার শিক্ষক, আইসিডিএস, আশাকর্মী-সহ চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। অনেকেই এক রকম বাধ্য হয়ে, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করেন। অথচ, সম্মানজনক ভাতা পান না। বিএলওদের একটা যুক্তিসঙ্গত সাম্মানিক দেওয়া হোক।
পাভেল আমান, হরিহরপাড়া, মুর্শিদাবাদ
স্থানীয় শিক্ষক
‘অবাধ্যতা’ (৪-১২) সম্পাদকীয় পড়ে নিজ অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করার ইচ্ছা জাগল। এক সময়ে গ্রামের শিক্ষানুরাগী মানুষ জমি দান করে, বা নগদ অর্থ দান করে বিদ্যালয় গড়তেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় যে ছাত্রছাত্রীরা এই স্কুলগুলি থেকে ভাল ফল করতেন, স্কুল পরিচালক সমিতি এবং অভিভাবকদের উৎসাহে এলাকায় তাঁদের স্থানীয় স্কুলের শিক্ষকতায় নিয়োগ করা হত। তাঁরা যেমন মেধাবী ছিলেন, তেমনই এলাকার আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বুঝতেন। আমাদের হাই স্কুলে ১৪ জন শিক্ষকের মধ্যে সাত জন গ্রামেরই মাস্টারমশাই ছিলেন। বাকি সাত জন বাইরে থেকে ট্রেনে-বাসে যাতায়াত করতেন। ট্রেন-বাস লেট করলে সঠিক সময়ে ক্লাস নিতে অসুবিধা হত। সবচেয়ে বিপদ হত বন্ধ বা ধর্মঘটের দিনে। কিন্তু স্থানীয় মাস্টারমশাইরা হেঁটে গিয়ে স্কুলের গেট খুলে দিব্যি স্কুল চালাতেন। খুব ভাল ছিল সেই ব্যবস্থা। স্থানীয় মানুষ হওয়ায় কোনও দুর্বৃত্তদের সাহস হত না শিক্ষকদের ‘শাসন’ করতে যাওয়ার। কারণ, তাঁরাও ছিলেন ভূমিপুত্র।
স্থানীয় ভাবে নিয়োগের ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু হল এক সময়। ‘ডোনেশন’-সহ নানা শর্ত তৈরি হতে লাগল। বাধ্য হয়ে আশির দশকে এই প্রথার বিলোপ করে ‘স্কুল সার্ভিস কমিশন’ তৈরি হল। কিন্তু শিক্ষকদের শহরে থাকার ঝোঁক বাড়ল, কেউই গ্রামে যেতে চান না। এমনকি যে প্রার্থীর সেই গ্রামেই বাড়ি, তিনিও সেখানে থাকতে চান না। এখন তো আবার এসএসসি পরীক্ষার স্বচ্ছতাও প্রশ্নের মুখে। ঘোলাটে পরিস্থিতি আরও অন্ধকারময়।
তপোময় ঘোষ, কেতুগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy