Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

সম্পাদক সমীপেষু: কেন এই কটাক্ষ

দেশের স্বাধীনতা আমরা আন্দোলন করেই পেয়েছি। আন্দোলন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:০২
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভার বক্তৃতায় আন্দোলনরত কৃষকদের ‘আন্দোলনজীবী’, ‘পরজীবী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। যদিও তার পর বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়ে ‘আন্দোলনকারী’ ও ‘আন্দোলনজীবী’-র মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে তৎপর হন। কিন্তু এক জন গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী কী করে প্রতিবাদীদের এমন কটাক্ষ করতে পারেন? এটা প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নেওয়া নয় কি? প্রধানমন্ত্রী নিজেও এক সময়ে বিরোধী নেতা ছিলেন, তৎকালীন শাসক দলের বিরোধিতায় একাধিক আন্দোলনও করেছেন। সে ক্ষেত্রে ‘আন্দোলনজীবী’ শব্দটি তাঁর ক্ষেত্রেও খাটে। হতে পারে আজ তিনি ক্ষমতাধর, তাঁকে আর আন্দোলন করতে হয় না। তাই বলে এমন মনোভাব?

দেশের স্বাধীনতা আমরা আন্দোলন করেই পেয়েছি। আন্দোলন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। বিশ্বে কোনও দিন কোনও অধিকার আন্দোলন ছাড়া অর্জিত হয়নি। তা সে নারী, বিভিন্ন জাতি, শ্রমিক, দলিত— যারই হোক না কেন। ভারতে সবচেয়ে বড় আন্দোলনকারী ছিলেন মহাত্মা গাঁধী। তাঁর আন্দোলনের ইতিহাস কি কখনও ভোলা যায়? প্রয়োজনে কোনও বিষয়ে আন্দোলন করে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়। সেই সুবাদে আমরা প্রত্যেকেই আন্দোলনজীবী। আর কৃষকরা তো নিজেদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছেন। সেখানে তাঁদের গায়ে ‘পরজীবী’ তকমা লাগিয়ে, তাঁদের থেকে সতর্ক থাকার উপদেশ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ঔদ্ধত্যের চূড়ান্ত নিদর্শনই যেন প্রকাশ পাচ্ছে।

কেন্দ্রের আনা নতুন তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীর বুকে চলা কৃষক আন্দোলন আগামী সপ্তাহেই তিন মাসে পদার্পণ করছে। অথচ, কেন্দ্রীয় সরকার এখনও নিজের অবস্থানে অনড়। আন্দোলনকারীদের আক্রমণের পথে হাঁটছে তারা। কখনও ‘খলিস্তানি’, ‘পাকিস্তানি’, ‘আরবান নকশাল’, অথবা কখনও ‘সন্ত্রাসবাদী’, ‘দেশদ্রোহী’ একাধিক বিশেষণে পরিকল্পিত ভাবে আন্দোলনরত কৃষকদের দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সুদীপ সোম , হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

পরজীবী নেতা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, যাঁরা হাজতে বন্দি সন্ত্রাসবাদীদের ছবি বুকে লাগিয়ে কৃষকের কথা বলছেন, তাঁরা আন্দোলনের পবিত্রতা নষ্ট করছেন। কৃষকদের বুকে আছে ভগৎ সিংহ, সুভাষচন্দ্র, চন্দ্রশেখর আজাদ, আসফাকুল্লা, বিসমিলের ছবি। তাঁদের সংগ্রামের অনুপ্রেরণাই আন্দোলনকারীদের এতখানি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলেছে। কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব যদি আন্দোলনজীবী হন, পরজীবী হন, তবে তো ভগৎ সিংহ, সুভাষচন্দ্রদেরও ‘পরজীবী’ বললেন প্রধানমন্ত্রী। যে স্বাধীনতা আন্দোলনের সুফল আজ ক্ষমতার গদিতে বসে তিনি ভোগ করছেন, সেই আন্দোলন কি নেতৃত্বহীন ছিল? অবশ্য প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন, তাঁদের পূর্বসূরি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ কিংবা হিন্দু মহাসভা কেউই সেই আন্দোলনে অংশ নেয়নি। ব্রিটিশদের সহযোগিতা করেছিল।

অতীতের স্বৈরাচারী শাসকদের মতোই আজও সরকারের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কোনও ভিন্ন মত, ভিন্ন সুরকেই ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ বা ‘সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া, এবং তার উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নামিয়ে আনা বিজেপির রাজনীতি। সেই রাজনীতিই কি প্রধানমন্ত্রী করছেন না? তবে, আন্দোলনকারী কৃষকরা ভাল করেই জানেন, ‘আন্দোলনজীবী’ কথাটি গৌরবেরই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে কোনও প্রতিবাদের, আন্দোলনের পাশে এসে যাঁরা দাঁড়ান, তাঁরা মহৎ ব্যক্তি। কৃষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবির পাশে দাঁড়ানো সমাজের প্রতিটি অংশের মানুষের কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী যাঁদের ‘আন্দোলনজীবী’ বলছেন, তাঁরা সেই দায়িত্বই পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী নতুন আইনের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে ঘোষণা করেছেন, “ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল, আছে, থাকবে। সংসদে দাঁড়িয়ে বলছি।” কৃষকরাও তো তা-ই চাইছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী আইনে সে কথাটি যুক্ত করছেন না কেন? কেন তাঁরা এ ব্যাপারে জেদ করছেন? এর মধ্যেই মিথ্যাচারটি স্পষ্ট।

প্রধানমন্ত্রী জানেন, সহায়ক মূল্য আইনসম্মত করে দিলে তাঁদের নতুন কৃষি আইন আনার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে। গোটা কৃষিক্ষেত্রটিকে যে আজ তাঁরা দেশি-বিদেশি একচেটিয়া পুঁজির অবাধ লুটের জন্য খুলে দিতে চাইছেন, সে উদ্দেশ্য বানচাল হয়ে যাবে। সহায়ক মূল্য আইনসম্মত হলে কর্পোরেট লুটেরাদের শোষণ-লুণ্ঠনের পথে বাধা পড়বে। কৃষকদের লাগাতার আন্দোলন তাই যেমন কর্পোরেট পুঁজিপতিদের, তেমনই বিজেপি নেতাদের ক্ষিপ্ত করেছে।

সমর মিত্র, কলকাতা-১৩

আলুচাষির ক্ষতি

মেমারির বোহারে আলুচাষি বুদ্ধদেব পালের মৃত্যুর সংবাদে মর্মাহত হলাম (‘আলুর দাম নিয়ে আশঙ্কা, দাবি চাষির অপমৃত্যুতে’, ১৪-২)। গত বছর আলুর বাজার ভাল গিয়েছে, চাষির হাতে কিছু টাকা এসেছে। তাই এ বছর চাষিদের বেশি আগ্রহ ছিল আলু চাষের। পঞ্জাব থেকে আসা বীজের দাম বহু গুণ বেড়ে গিয়েছিল, সার আর মজুরিতে খরচের হারও বাড়ছে। তা সত্ত্বেও বাংলার চাষি বেশি করে আলু চাষ করেছিলেন। এ বার আবহাওয়াও ভাল ছিল। তাই প্রচুর উৎপাদন হয়েছে। ফলে দাম পড়ে গিয়েছে। নতুন আলু ওঠার পর ৫০ কেজি বস্তার দাম ৪০০ টাকা ছিল, যে দাম পেলে চাষির অন্তত খরচটুকু উঠে আসে। কিন্তু এখন দাম ক্রমশ পড়ে ২০০-২৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, মজুরি মিলিয়ে বিঘা পিছু খরচ যেখানে ২৫ হাজার টাকা থেকে ২৮ হাজার টাকা, সেখানে এক বিঘায় উৎপন্ন আলুর দাম মিলছে ১৫ হাজার টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা। এই ক্ষতি কী করে, কত দিনে পূরণ হবে? বহু চাষি জমি ঠিকা নিয়ে, বীজ-সার ধার নিয়ে আলু চাষ করেন। তাঁরা কত দিনে এই ক্ষতির ধাক্কা কাটিয়ে উঠবেন? আলুর দাম চড়লে সরকারের যত মাথাব্যথা, কিন্তু দাম পড়লে দেখা যায়, চাষির পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই।

অনিমেষ হাজরা, তারকেশ্বর, হুগলি

ভাগচাষি পাবেন?

‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের ফর্ম জমা নেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, নির্দিষ্ট একটি ফর্মে স্বঘোষণা দিয়ে জমির দলিল সহযোগে আবেদন করা যাবে। এ দিকে গ্রামাঞ্চলে, বিশেষ করে পূর্ব বর্ধমান জেলার দক্ষিণ দামোদর এলাকায় খবর ছড়িয়েছে যে, জমির মালিক কাউকে এক মরসুমের জন্য জমি চাষ করতে দিলে, সেই ভাগচাষি বর্গা পেতে পারেন, এবং কৃষকবন্ধু প্রকল্পে টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। ফলে জমি মালিকেরা ভাগচাষিদের থেকে জমি ফেরত নিতে শুরু করেছেন। অনেক ভাগচাষি তো জমিতে ধান রোপণের জন্য বীজও বুনেছিলেন। এখন সেই জমি বীজসমেত ফেরত দিতে হচ্ছে। জমির মালিকের সঙ্গে ভাগচাষিদের দ্বন্দ্বও ক্রমে বেড়ে চলেছে। সমস্যায় পড়েছেন ভাগচাষিরা। মালিকেরা জমি হারানোর ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এটি কি সত্যি? যদি এক জন মালিক আর্থিক প্রয়োজনে কারও কাছে জমি বন্ধক রাখেন, তা হলে কি সেই বর্গাদারও আবেদন করতে পারেন? প্রকৃত নিয়ম কেউই জানেন না। ব্লক অনুযায়ী ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা হোর্ডিং-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া দরকার।

সুকমল দালাল, খণ্ডঘোষ, পূর্ব বর্ধমান

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Farmers Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy