গত ১০ মার্চ আই লিগে মোহনবাগানের চ্যাম্পিয়নশিপ ভাগ্যনির্ধারক খেলা দেখার সুযোগ হয়। সে দিন হাজার হাজার সমর্থকদের ‘মোহনবাগান মোহনবাগান’ ধ্বনি শুনে বুক ভরে গিয়েছিল। কল্যাণীর স্টেডিয়াম জুড়ে সবুজ আর মেরুন আবির। মোহনবাগান গোল করার পর সমর্থকরা উত্তেজনায় কাঁপছিলেন। মোহনবাগান শুধু একটা ক্লাবের নাম নয়। মোহনবাগান হল আবেগ, মোহনবাগান হল হৃদয়।
এটিকে-মোহনবাগান সংযুক্তিকরণের পর সমর্থকদের মনে আশঙ্কা ছিল, জার্সির রং সবুজ-মেরুন থাকবে তো? ঐতিহ্যের প্রতীক পালতোলা নৌকা থাকবে তো? ১০ জুলাই সংযুক্তিকরণের পর প্রথম বোর্ড মিটিংয়ে ঘোষণা করা হল, দুটোই থাকবে।
১৯১১ সালের আইএফএ শিল্ডে ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে পরাজিত করে মোহনবাগান সেরার শিরোপা লাভ করে। মোহনবাগান প্রথম ভারতীয় দল, যা কোনও ইউরোপীয় দলকে পরাজিত করেছিল। ইংরেজদের বিরুদ্ধে এই জয় পরাধীন ভারতবাসীর কাছে ছিল এক পশলা স্বাধীনতার স্বাদ। আশা রাখি, আগামী দিনে তৈরি হবে উন্নততর পরিকাঠামো, মোহনবাগান এশিয়ার সেরা ক্লাবে পরিণত হবে, বিশ্ব-দরবারে ভারতীয় ফুটবলের মাথা উঁচু করবে। স্বাগত জানাই এটিকে-মোহনবাগানের নতুন পথ চলাকে।
সুভাশীষ দত্ত, চাকদা, নদিয়া
ঐতিহ্যের ধারা
আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ঠিক চল্লিশ দিনের মাথায় মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে এটিকে-র সংযুক্তিকরণ হয়ে গেল। ঐতিহ্যের মুকুটে যুক্ত হল আধুনিকতার পালক।
এই সংযুক্তিকরণ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কারণ, ফিফা এবং এআইএফএফ আইএসএল-কে ভারতের সেরা ‘অফিশিয়াল টুর্নামেন্ট’ ঘোষণা করার পর থেকে, আইএসএল না খেললে আমন্ত্রণমূলক প্রতিযোগিতা ছাড়া ভারতের গণ্ডি আর পেরনো সম্ভব নয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা আই-লিগ খেলা ক্লাবগুলো আর্থিক কারণে নির্মাণ করতে পারবে না। এটিকে-র আশি শতাংশ অংশীদারিত্ব নিয়ে যে কথা উঠছে, তার কোনও সারবত্তা আছে বলে আমি মনে করি না। এই ফ্র্যাঞ্চাইজ়িরা কর্পোরেট কোম্পানির ধাঁচে চললেও, ক্লাবের কোটি কোটি সমর্থক এখানে চাকরি করেন না যে, ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে তাদের চাকরি চলে যাবে। অতীতে কর্মকর্তাদের বহু সিদ্ধান্ত সমর্থকদের মনের মতো হয়নি। তাতে তেমন কিছুই হয়নি! ক্লাব দিনের পর দিন ট্রফি পায়নি। তাতে ঐতিহ্যেরই বা কী ঘাটতি হয়েছে?
যদি এটিকে ভবিষ্যতে তাদের শেয়ার বেচতে চায়, তখন নিশ্চয়ই কুড়ি শতাংশ অংশীদারভোগী ক্লাবকেই আগে জানাবে। এটাই আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত। তখন দেখা যাবে। সে দিনের কথা চিন্তা করে আজকের এই অগ্রগতিতে লাগাম টানার কোনও যুক্তি নেই। অন্যতম কর্ণধার বর্তমান বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ঠিকই বলেছেন, “এটিকে, মোহনবাগানের এক হওয়াকে কুর্নিশ জানাই, এই যুগলবন্দি ইতিহাস সৃষ্টি করবে।’’
১৮৮৯ সালে ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে উত্তর কলকাতার মোহনবাগান অঞ্চলের মিত্র আর সেন পরিবারের সাহায্যে ভূপেন্দ্রনাথ বসু ১৫ অগস্ট এই ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৩ সালে কোচবিহার কাপে অংশগ্রহণই ছিল প্রথম প্রতিযোগিতা। ১৯০৪ সালে কোচবিহার কাপ জেতা ক্লাবের প্রথম ট্রফি জয়। ১৯০৫ সালে চুঁচুড়ায় আয়োজিত গ্ল্যাডস্টোন কাপে আইএফএ শিল্ডজয়ী ডালহৌসিকে ৫-০ গোলে পরাজিত করে। ১৯১১ সালে খালি পায়ে খেলে ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে হারানো তো ইতিহাস। কলকাতা লিগ ৩০ বার, ডুরান্ড ১৬ বার, রোভার্স ১৪ বার, আইএফএ শিল্ড ২২ বার, ফেডারেশন কাপ ১৪ বার, আই লিগ বা জাতীয় লিগ ৫ বার, সুপার লিগ ২ বার— এ সব কিছুই রেকর্ড বইতে লেখা আছে।
১৯৭৭ সালে মোহনবাগানের প্রাণপুরুষ ধীরেন দে-র চেষ্টায় নর্থ আমেরিকান সকার লিগ ক্লাব নিউ ইয়র্ক কসমস এল মোহনবাগানের সঙ্গে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে। এক লাখ দর্শকের মাঝে ইডেন গার্ডেনসে ২-২ গোলে অমীমাংসিত ভাবে শেষ হল সেই খেলা। মোহনবাগানের হয়ে যাঁরা সে দিন খেললেন, তাঁদের জীবনের সেরা মুহূর্ত হয়ে রইল দিনটি। একটা টিকিটের জন্য কী যে হাহাকার দেখেছি! একটা সময় মোহনবাগান ক্লাবের সদস্যপত্র থাকা ছিল গর্বের ব্যাপার।
২০০৮ সালে জার্মানির বিশ্ববিখ্যাত গোলকিপার অলিভার কান তাঁর জীবনের শেষ ম্যাচ খেলতে এলেন মোহনবাগানের সঙ্গে, বায়ার্ন মিউনিখ দল নিয়ে। স্থান, সল্টলেক স্টেডিয়াম। দর্শক এক লাখ কুড়ি হাজার। এ সবই আমার দেখা।
যা দেখা নয়, তেমন একটা ঘটনার কথা বলি। সাল ১৯৬৪, তখন আমি খুবই ছোট। মনে আছে বাড়ির সবাই খুব উত্তেজিত। মুখে শুধুই ধীরেন দে-র নাম। মোহনবাগানের ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সারা বছর ধরে বিশাল কর্মকাণ্ড। পূতাগ্নি জ্বালান চুনী গোস্বামী। ঠিক তার আগের বছরই নতুন তাঁবুর দ্বারোদ্ঘাটন করেন জেনারেল জয়ন্ত চৌধুরী। ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেন, রাজ্যপাল পদ্মজা নায়ডু। হাঙ্গেরির বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব তাতাবেনিয়া এসেছিল ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে। প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে এসেছিল কমনওয়েলথ ক্রিকেট দল, যাতে ছিলেন স্যর গারফিল্ড সোবার্স, কলিন কাউড্রে, ব্রায়ান ক্লোজ়, মুস্তাক মহম্মদ, লান্স গিবস প্রমুখ। ভারতীয় দলে ছিলেন পটৌডি-র নেতৃত্বে তখনকার সেরা ভারতীয় ক্রিকেটাররা। এসেছিল তখনকার বিশ্বসেরা ভারতীয় হকি দল, খেলা হয়েছিল কলকাতা একাদশের সঙ্গে। টেনিস খেলতে এসেছিলেন রমানাথন কৃষ্ণণ, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, বব হিউইট, মুলিগান প্রমুখ। ইস্ট জার্মানির বিশ্বখ্যাত অ্যাথলিটরা এসেছিলেন ভারতীয় অ্যাথলিটদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।
চিন্তা রয়ে গেল, ক্রিকেট, হকি, অ্যাথলেটিক্স-এর মতো বাকি খেলার ক্ষেত্রে ক্লাবের ভবিষ্যৎ কী?
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭
রাখির জন্য
জাতীয় ভারোত্তোলক রাখি হালদার অলিম্পিক্সের স্বপ্ন ত্যাগ করে ফিরে আসতে চান পাতিয়ালা সাইয়ের জাতীয় প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি শিবির থেকে (১২-৬)। খেলা ছাড়বেন বলে ঠিক করে ফেলেছেন তিনি।
করোনায় ক্রীড়া দুনিয়া স্তব্ধ হওয়ার আগে টোকিয়ো অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ে সুবিধেজনক অবস্থায় ছিলেন রাখি। ২৭ বছরের তরুণী বাংলার রাখির ঝুলিতে পাঁচ বারের জাতীয় খেতাব, ৬৪ কেজি বিভাগে কমনওয়েলথ ভারোত্তোলনের পদক জয়, কাতার কাপের ব্রোঞ্জ পদক। এত সাফল্য ও অভিজ্ঞতা অর্জনের পরে তিনি শুধু নিজের ডায়েট জোগাড় করতে না পারায় খেলা থেকে সরে যাবেন।
দুধ, ডিম, মাছ, মাংস ছাড়াও ফুড সাপ্লিমেন্ট, ফল খেয়ে আন্তর্জাতিক মানের লড়াকু তৈরি হতে গেলে নিজের জন্য মাসে প্রায় হাজার পঞ্চাশেক টাকা খরচ হয়। রেলের কর্মী রাখিকে বাবা-মাকে দেখতে হয় সামান্য মাইনের ভরসায়। কোনও স্পনসর নেই। অলিম্পিক পদক জেতার স্বপ্ন তাই চিরতরে ছাড়তে চান তিনি। সরকারি আনুকূল্যও তো পেতে পারেন তিনি। রাজ্যের সবাই হাত বাড়ালে রাখি মনের জোর হারাবেন না।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy