—ফাইল চিত্র।
সেমন্তী ঘোষের ‘সবার জন্য, সবাইকে নিয়ে’ (২৮-১) শীর্ষক উত্তর-সম্পাদকীয় প্রবন্ধে খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর নিজের একটা কথা প্রবন্ধকার তুলে ধরেছেন— “তত ক্ষণই ধর্মপরিচয়টা গ্ৰহণ ও বহন করা যত ক্ষণ তা আমাকে বড় হয়ে উঠতে সাহায্য করে, আর যেখানে যত শুভ আছে তার সঙ্গে মিলিত হতে বাধা না দেয়।” এই কথায় প্রশ্ন ওঠে, তাঁর কাছে ‘বড় হয়ে ওঠা’ বলতে কী বোঝায়? মহাত্মা গান্ধী সন্ন্যাসী বা নবি নন। তাই সেই সম্পর্কীয় কোনও সাধনায় সিদ্ধিলাভের কথা আসে না। অথবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানীও নন, যে কী কী ডিগ্ৰি অর্জিত হল তা দেখে যোগ্যতার মাপকাঠি বোঝা যাবে। বরং, তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাঁর নাম গোটা দেশের কাছে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।
সেই সময়ে কংগ্রেসের মতো একটা বৃহৎ এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের কর্ণধার হয়ে, তিনি কিন্তু হিন্দু হিসাবেও নিজের পরিচয় দিতেন। এই দুই পরিচয়ের সামঞ্জস্য রক্ষার ক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই এক জন ব্যতিক্রমী। কারণ, তিনি কোনও দিনই হিন্দু সমর্থকদের নিয়ে রাজ্যে রাজ্যে মন্দির গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেননি অথবা দেশে মসজিদ বা বৌদ্ধ মন্দির বাড়ছে কি না, সেই নিয়ে দুশ্চিন্তাও করেননি। বরং, স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম পর্বে, বিশেষত কংগ্রেস মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে চলে আসার পর, উগ্ৰ হিন্দু জাতীয়তাবাদ কিছুটা প্রশমিত হয়েছিল। তবুও এটা ঠিক যে, গান্ধী ব্যক্তিগত ভাবে হিন্দু ধর্মে গভীর ভাবে আসক্ত ছিলেন। তিনি বুক ফুলিয়ে বলতেন, গীতা তাঁর মা এবং গীতার মধ্যেই নাকি সব সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব। এমনকি স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মের মৌলিক বিশ্বাসগুলো আশ্রয় করে এগিয়ে যেতে পছন্দ করতেন। এ সবের জন্যই গান্ধী খিলাফত আন্দোলনে যোগ দিলেও মুসলিম জনগণের কাছে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ সর্বজনীন নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। রামরাজ্যের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমেই তিনি উত্তর ও পশ্চিম ভারতের কৃষকদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত করতে পেরেছিলেন। তবে তিনি যে রামরাজ্যের কথা বলতেন, সেটা কিন্তু মোটেই ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নয়। ভাল কোনও শাসনব্যবস্থা বোঝাতে তিনি রামরাজ্য উল্লেখ করেছিলেন। কথা হল, এত বড় একটা দেশের সাধারণ জনগণকে স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন যিনি দেখাচ্ছেন, তাঁর মুখে এমন রূপকথার গল্প মানায়? ব্রিটিশ শাসনের শেষ পর্বে ভারতের আর্থ-সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে রামায়ণে বর্ণিত ব্যবস্থার আদৌ কোনও মিল আছে?
প্রবীর চক্রবর্তী, গোচারণ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ভোটজয়ের স্বার্থে
সেমন্তী ঘোষ তাঁর প্রবন্ধে গান্ধীজির রামভজনা আর আজকের রাষ্ট্রের রামবন্দনার যে বৈসাদৃশ্য খুঁজেছেন, তা বড় সময়োপযোগী এবং প্রাসঙ্গিক। স্মরণীয়, গান্ধীজির সমকাল আর ২০২৪-এর দূরত্ব নির্ণয় করা গেলেও আজ রাজনীতির পাঁকে পড়ে সেই রীতিনীতি আর ভাবধারার তফাত দাঁড়িয়েছে আকাশপাতাল। মহাত্মা তাঁর রামভক্তির সঙ্গে রাজনীতির সমানুপাতিক দূরত্ব বজায় রাখতেন। হিন্দু সমাজের প্রতি তাঁর বিশ্বাস ছিল অটুট— এ ধর্ম কখনও অসহিষ্ণু বা সঙ্কীর্ণ হতে পারে না। তবুও নাথুরাম গডসের হাতে তাঁকে মরতে হয়েছিল। তবে লক্ষণীয়, এখানে শাসকের সূক্ষ্ম ও গভীর যে রাজনীতিটি প্রবন্ধে উঠে আসেনি তা হল, মহর্ষি বাল্মীকির রামায়ণের রামচন্দ্র এক জন পৌরাণিক মহান চরিত্র। চরিত্রটি কৃত্তিবাসের হাতে পড়ে আরও পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু সেই পৌরাণিক রামচন্দ্রকে ঐতিহাসিক রামচন্দ্র রূপে দেখানো হচ্ছে। তাঁকে রক্তমাংসের চেহারা দেওয়ার জন্য একটা রাষ্ট্র উদ্গ্রীব হয়ে উঠছে। এও এক নতুন ইতিহাস তৈরি হচ্ছে। মহর্ষি বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেন খ্রিস্টপূর্বাব্দে। অন্য দিকে, কৃত্তিবাস অনুবাদ করেন ১৫০০ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই। অতীতের সেই পৌরাণিক লোকগাথার রামচন্দ্রকে এখন দেবতা বানিয়ে ভোটবাক্সকে পাকাপোক্ত করে বৈতরণি পার হওয়ার স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। যে দেশ শিক্ষা স্বাস্থ্য দারিদ্র অপুষ্টি থেকে আজও মুক্ত হতে পারেনি; আজও জাতপাতের লড়াই প্রবল হয়ে বিরাজমান, সে দেশে আজ ঘি-হলুদ মাখা চাল ‘প্রসাদ’ হয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায়। এঁরা কতটা ধর্মপ্রাণ তা জানা নেই; তবে তাঁরা যে রণকুশলী, কূটকৌশলী এবং ভোটকৌশলী, সে বিষয়ে ধর্মপ্রাণরা না বুঝলেও দূরদর্শী মানুষ মাত্রেই বোঝেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘ধর্মের নামে মোহ এসে যারে ধরে/ অন্ধ সে জন, মারে আর শুধু মরে।’ ভারত আজ শুধু মোহগ্রস্ত নয়, রাহুগ্রস্তও। কুসংস্কার গ্রাস করছে ধর্মকে। বিজ্ঞান এখানে শুধুই দর্শক।
সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪
উদারপন্থী
সেমন্তী ঘোষ তাঁর প্রবন্ধে সম্প্রীতি ও পাশাপাশি মিলমিশ করে থাকার যে বার্তা দিয়েছেন, এ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনমানসে তার ব্যাপক প্রচার অত্যন্ত জরুরি। এই প্রসঙ্গে এই সংবাদপত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী তথা গজল গায়িকা বেগম আখতার-কে নিয়ে ঋতা গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘খাতা দেখে গান করলে তা অন্তর থেকে আসে না’ (পত্রিকা, ২৯-৬-১৯) শীর্ষক প্রবন্ধে বেশ কিছু সুন্দর দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। প্রথমত, হিন্দু তার উপরে ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়ে ঋতা অকপটে স্বীকার করেন যে, তাঁকে ঈশ্বরে বিশ্বাস শিখিয়েছিলেন বেগম আখতার, যিনি জন্মসূত্রে মুসলিম এবং ঋতার মাতৃসমা সঙ্গীত গুরু। ঋতা তাঁকে আম্মি বলে ডাকতেন। মিলাদ-উন-নবি দিবস উপলক্ষে আম্মি তাঁর লখনউয়ের বাড়ির এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ঋতাকে ফিরনি রান্না করতে বলেছিলেন। আবার, আম্মির ইচ্ছাতেই ঋতা সেটা পরিবেশন করতে গেলে তাঁর বাড়িতে আগত জনৈক মৌলবি সাহেব তাতে আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, “ও কেন, বাড়িতে আর কোনও মেয়ে নেই? ও তো মুসলমান নয়।” শিল্পী বেগম আখতার এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন এবং প্রবল জেদ ধরে হিন্দু ঘরের মেয়ে ঋতাকে দিয়েই ওই অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের খাবার পরিবেশন করিয়েছিলেন। ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতাকে শত হাত দূরে সরিয়ে রেখে উদার নীতি নিয়ে চলার এ এক সুন্দর দৃষ্টান্ত।
আর এক বার কিছু লোক এসে বেগম আখতারকে জানায় যে, কয়েক জন হিন্দু এসে মাজার চত্বরে থাকতে শুরু করেছেন আর পুজো করছেন। বেগমের কাছে তাঁরা এর বিহিত চাইলে তিনি বলেছিলেন, ঈশ্বরের জায়গায় ঈশ্বরকেই তো স্মরণ করা হচ্ছে। কোনও খারাপ কাজ হচ্ছে না যে, আমি বন্ধ করব। পরস্পরকে সঙ্গে নিয়ে চলা এবং উদারতার কী অতুলনীয় এক উদাহরণ।
এ বার একটু পিছিয়ে যাই। মহাত্মা গান্ধীর জীবনী পড়লে আমরা জানতে পারি যে, ১৯৪৭ সালের ২৫ জুলাই প্রার্থনার সময় তিনি যে বক্তব্য রেখেছিলেন, সেখানে বলেছিলেন, “এখনও যদি আমরা ভীরুতা আর জড়তা কাটিয়ে মুসলিমদের ভালবাসতে পারি, মুসলিমরাও ভাবতে বাধ্য হবে যে, আমাদের সঙ্গে লড়াই করে কী লাভ হবে তাদের?” জাতির জনকের এই উক্তি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথে এক পরম পাথেয়। অনেক বছর আগে ঘটে যাওয়া দু’জন প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্বের এই সব ভূমিকা ও বক্তব্য আজও সমান প্রাসঙ্গিক এবং অনুকরণীয়।
সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
অমিল পরিষেবা
সাম্প্রতিক কালের কলকাতা এয়ারপোর্টের বেহাল যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে এই পত্রের অবতারণা। ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা ‘যাত্রীসাথী’ অ্যাপ চূড়ান্ত ব্যর্থ। অ্যাপ ক্যাবগুলির যথেচ্ছাচারও এখন সর্বজনবিদিত। তাই এয়ারপোর্টে নামা যাত্রীদের কাছে একমাত্র ভরসার জায়গা ছিল প্রি-পেড ট্যাক্সির কাউন্টার। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে সেই লাইনে ট্যাক্সি আজকাল প্রায় ঢোকেই না। কাউন্টারের সামনে লাইন দীর্ঘায়িত হয়। অনেকেই দীর্ঘ সময় নষ্ট করার পর বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে বাধ্য হন। অথচ, বাইরে সার সার হলুদ ট্যাক্সি। কাউন্টারের মানুষটির বক্তব্য, লাইনে ট্যাক্সি না ঢুকলে আমরা কী করব। এই লাইনে ট্যাক্সি ঢোকার ব্যাপারটা পুলিশ প্রশাসন কেন নিশ্চিত করতে পারে না? সেটা নিয়ে অবশ্য অধিকাংশ যাত্রীর মাথাব্যথা নেই। তাঁরা চান সুষ্ঠু পরিষেবা। কেন যাত্রীদের বার বার ২৫০ টাকার জায়গায় ৭০০/ ৮০০ টাকা দিয়ে বাড়ি পৌঁছতে হবে? কেন প্রশাসন তাঁদের হয়রানি কমাতে কোনও ব্যবস্থা করবে না?
দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য, কলকাতা-৫৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy