পথিক গুহর লেখা ‘পঞ্চম বলের গোলকধাঁধা’ (১৭-৭) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে বিশেষ ধরনের পেন্ডুলাম ব্যবহার করে মহাকর্ষের সূক্ষ্ম পরীক্ষা ও তার ভিত্তিতে পঞ্চম বলের অস্তিত্বকে বাতিল করার বিষয়টি অনুচ্চারিত থেকে গেল। ২০২১ সালে ব্রেকথ্রু প্রাইজ় পান এরিক এডেলবার্গার, জেন্স গুনডলাচ ও ব্লায়ন হেকেল। তাঁরা দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এক অতি সূক্ষ্ম পেন্ডুলাম বানিয়ে মহাকর্ষ তত্ত্বের উপর পরীক্ষা করেন ও পঞ্চম বলের অস্তিত্ব যাচাই করেন। একটা দড়ি থেকে ডাম্বেল ঝুলিয়ে দিয়ে ডাম্বেলে মোচড় দিলে সেটা খানিকটা ঘুরে আবার উল্টো দিকে ঘোরে, অর্থাৎ পেন্ডুলামের মতো কাজ করে। এ ক্ষেত্রে ডাম্বেলের দুই প্রান্তে যদি সমান্তরাল বল কাজ করে, তা হলে দড়িতে কোনও মোচড় পড়ে না। আরও গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, পেন্ডুলাম বানানোর কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য দড়িতে মোচড় পড়তে পারে না। স্কুল-পাঠ্য বলবিদ্যার এই নীতির উপর ভিত্তি করেই এডেলবার্গার ও তাঁর সহকর্মীরা তাঁদের পেন্ডুলাম বানান ও মহাকর্ষ তত্ত্বের অতি সূক্ষ্ম পরীক্ষা করেন। তাঁরা দেখেন যে, একটা মাথার চুল যত সরু, সেই দূরত্বেও আমাদের চিরপরিচিত নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্র সঠিক। আরও দেখেন যে, একটা নির্দিষ্ট মহাকর্ষ ক্ষেত্রে ভিন্ন উপাদান বা ভিন্ন ভরের বস্তু-কণারা সবাই একই ত্বরণ পায়। সুতরাং, পঞ্চম বল বা নতুন কিছুর জায়গা নেই।
তবে, একটা চুল যত সরু, তার চেয়েও অনেক কম দূরত্বে নতুন কিছু কি ঘটতে পারে? এর উত্তর পেন্ডুলামের পরীক্ষা দেয় না। পরমাণুর বর্ণালি-বিজ্ঞানের অতি সূক্ষ্ম পরীক্ষা থেকেও এখনও পর্যন্ত পঞ্চম বলের কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে অবশ্যই আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সঙ্গে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আজও ঠিক ভাবে মিল হয়নি। স্ট্রিং থিয়োরি এসেছে, তবে তার পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই। ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির সমস্যারও সমাধান হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে হাঙ্গেরির নিউক্লিয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার ফল। তাই, প্রয়োজন আরও নির্দিষ্ট প্রমাণ।
অম্লান রায়
গবেষক, ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টার
রহস্যময় এক্স১৭
‘পঞ্চম বলের গোলকধাঁধা’ প্রবন্ধে ক্রাসৎজনাহোরকির পরীক্ষালব্ধ যে কণার অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে, তার ভর ইলেকট্রনের প্রায় ৩৪ গুণ, অর্থাৎ প্রায় ১৭ গিগা-ইলেকট্রন ভোল্ট। তাই এই কণার নাম দেওয়া হয়েছে এক্স১৭। আন্তঃপারমাণবিক স্তরে গেজ বোসন নামের কণার বিনিময়ের মাধ্যমে তিনটি বল ক্রিয়া করে। তড়িৎ-চুম্বকীয় বলের বাহক গেজ বোসন হল আলোর কণা বা ফোটন। বিভিন্ন কোয়ার্কের মধ্যে প্রবল পারমাণবিক বলের বাহক গেজ বোসন হল গ্লুয়ন। আর, তড়িৎ-দুর্বল পারমাণবিক বলের ক্ষেত্রে কোয়ার্ক, ইলেকট্রন এবং অন্যান্য কণার মধ্যে যে গেজ বোসন বিনিময় হয়, সেগুলি হল ডব্লিউ (+), ডব্লিউ (-) এবং জ়েড (০)। চতুর্থ বল, মহাকর্ষের বাহক গেজ বোসন কণার নাম গ্র্যাভিটন, যার অস্তিত্ব এখনও প্রমাণিত হয়নি। তাই এক্স১৭ কণার অস্তিত্ব প্রমাণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছে পঞ্চম বলের অস্তিত্ব।
সার্নের বিজ্ঞানীরাও পঞ্চম বলের খোঁজে কাজ করে চলেছেন। তাঁদের নজরে রয়েছে বিউটি মেসন কণা। দুই কোয়ার্ক-বিশিষ্ট হ্যাড্রনকে বলা হয় মেসন। আন্তঃপারমাণবিক স্তরে হ্যাড্রন কণা হল প্রোটন এবং নিউট্রন। বিউটি মেসনগুলি স্থায়ী নয়। এরা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অন্য প্রকার মেসন এবং লেপটনে পরিণত হয়। লেপটন হল পরমাণুর অভ্যন্তরে অবস্থিত ইলেকট্রনের সমগোত্রীয় বিভিন্ন ভরের কণা।
বিজ্ঞানীরা বিউটি মেসন থেকে ইলেকট্রন এবং মিউয়ন উৎপন্ন হওয়ার হার পরীক্ষা করে দেখলেন যে, এই দুই লেপটনের উৎপন্ন হওয়ার হারের মধ্যে ১৫ শতাংশ পার্থক্য রয়েছে। এই দুই হার সমান না হওয়াতেই সন্দেহের উদ্রেক। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেন অ্যালানাক বলেছেন, “হয়তো নতুন কোনও বলের জন্যই বিউটি মেসন থেকে মিউয়নে ক্ষয় প্রত্যাশিত হারে হচ্ছে না।” এই পার্থক্যের নেপথ্যের কারণ সন্ধান করতে গিয়ে অন্য কোনও অজানা গেজ বোসন বাহিত পঞ্চম বলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় কি না, তা সময়ই বলবে।
পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
পিসা-র পরীক্ষা
‘পঞ্চম বলের গোলকধাঁধা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, গালিলেও ইটালির পিসা শহরের হেলানো মিনার থেকে নাকি পাখির পালক এবং লোহার বল নীচে ফেলেছিলেন এবং সে দুটো এক সঙ্গেই মাটিতে পড়েছিল। কিন্তু গালিলেও-র ছাত্র ভিনচেঞ্জো ভিভিয়ানির লেখা জীবনী ও অন্য নথি থেকে জানা যায়, গালিলেও পিসার হেলানো মিনার থেকে একটি ছোট এবং একটি বড়— দু’টি লোহার গোলককে এক সঙ্গে নীচে ফেলে পরীক্ষা করেছিলেন। পিসার হেলানো মিনারের মতো উঁচু জায়গা থেকে একটি পাখির পালক ও একটি লোহার বলকে ফেললে, স্বাভাবিক ভাবেই বলটি আগে মাটিতে পড়বে। পালকটি পড়বে ধীরে ধীরে। কারণ, বাতাসের ঊর্ধ্বচাপ ও ঘর্ষণের কারণে পাখির পালকটির পতন বাধাপ্রাপ্ত হবে।
গালিলেও পালকের পরীক্ষাটি সম্ভবত করেছিলেন একটি কাচের নলের মধ্যে। তিনি ওই নলটিকে সম্পূর্ণরূপে বায়ুশূন্য করে নিয়েছিলেন। এবং নলটি বার বার উল্টে দেখিয়েছিলেন যে, নলের
মধ্যে গিনি ও পালক একই সঙ্গে
নীচে পড়ছে।
দেবাশিস রায়
কলকাতা-১
মনোরোগের বর্ম
রত্নাবলী রায়কে তাঁর “অপরাধীর ‘ঢাল’ হল মনোরোগ?” (২১-৭) শীর্ষক নিবন্ধের জন্য সাধুবাদ। এখন যে কোনও অপরাধী নিজেকে আইনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ‘মনোরোগী’ সাজছে। কারণ ‘মানসিক রোগ’-এর কারণে কোনও অপরাধ করলে ভারতীয় আইনে কিছু রেহাই মেলে। কিন্তু যে বা যারা এত নিপুণতার সঙ্গে প্রতারণা করছে, তারা কী করে মানসিক ভাবে অসুস্থ হবে? তাই যারা অপরাধ করে নিজেদের মানসিক অসুস্থতার শিকার বলে দাবি করছে, তারা আইনের চোখে জাত অপরাধী এবং তাদের অপরাধ শাস্তিযোগ্য। মনোরোগকে অপরাধীরা যাতে বাঁচার বর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, গণমাধ্যমগুলিকে এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে অনুরোধ করছি।
সর্বানী গুপ্ত
বড়জোড়া, বাঁকুড়া
ন্যায়নিষ্ঠ
হাতের ছাপের তত্ত্বের উদ্ভাবক উইলিয়ম জেমস হার্শেল (‘হাতের ছাপ থেকে অপরাধী প্রথম শনাক্ত হয় বাংলাতেই’, ১৮-৭), ছিলেন এক ন্যায়নিষ্ঠ ম্যাজিস্ট্রেট। পক্ষপাতহীন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তিনি বাঙালি সমাজের অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। নীলদর্পণ নাটকের ভূমিকায় হার্শেলের প্রশংসা করে দীনবন্ধু মিত্র লেখেন, “সত্যপরায়ণ, বিচক্ষণ, নিরপেক্ষ ইডেন, হার্শেল প্রভৃতি রাজকার্য্য-পরিচালকগণ শতদলরূপে সিবিল সরভিস সরোবরে বিকশিত হইতেছেন।”
নীলবিদ্রোহ কালে হার্শেল ছিলেন নদিয়ার অফিশিয়েটিং ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি নীলকর বা কৃষক কারও কোনও বেআইনি আচরণ সমর্থন করতেন না। সেই কারণে তাঁর কার্যকলাপে বিরক্ত হয়ে ইন্ডিগো প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনে। সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সে সময়ের নীলকর-দরদি দু’টি পত্রিকা বেঙ্গল হরকরা ও ইংলিশম্যান তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদ্গার করতে থাকে। তাঁর অপসারণ চেয়ে একাধিক চিঠিও এই পত্রিকা দু’টিতে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু কোনও কিছুই হার্শেলকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
উত্তম কুমার পতি
শালডিহা, বাঁকুড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy