—ফাইল চিত্র।
সুমন সেনগুপ্তের ‘হয়রানিই তা হলে উদ্দেশ্য?’ (৪-১) শীর্ষক প্রবন্ধটির সঙ্গে সহমত পোষণ করে কিছু কথা বলতে চাই। রান্নার গ্যাসের সংযোগের সঙ্গে গ্রাহকদের আধারের বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছিল তেল মন্ত্রক। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই সংযোগ সম্পন্ন না হলে নানা সমস্যা হবে, এমন কানাঘুষো কিছু দিন আগে ছড়িয়ে পড়ে চার দিকে। যদিও সরকারি ভাবে তেমন কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। এর পরেই গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন পড়ে গ্যাস ডিলারদের দোকানের সামনে। প্রশ্ন ওঠে, যদি কেউ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে আধারের বায়োমেট্রিক সংযুক্ত না করেন, তা হলে কী হবে? সরাসরি উত্তর পাওয়া যায়নি। অনেকে ভাবলেন, হয়তো গ্যাসের ভর্তুকি বন্ধ হয়ে যাবে কিংবা গ্যাসের সংযোগটিও বিচ্ছিন্ন হতে পারে। এই সব ভয়ের মাঝে অধিকাংশ গ্যাসের ডিলার নিরাপত্তার অজুহাতে নতুন রবারের পাইপ কিনতে বাধ্য করেন বহু গ্রাহককে। সম্প্রতি আধারের বায়োমেট্রিক কারচুপির মাধ্যমে বহু মানুষ ব্যাঙ্কের টাকা হারিয়েছেন। এমন সময়ে গ্যাসের সঙ্গে আধারের বায়োমেট্রিক সংযুক্ত করাটা কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত? কেরোসিন তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্রামে অনেকেই গ্যাসের সংযোগ নিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছেন। অথচ, গ্যাসের ডিলার থেকে সাব ডিলার— কেউই গ্রামাঞ্চলের দিকে গ্যাসের সিলিন্ডার বাড়িতে ঠিকমতো পৌঁছে দেন না।
এ ছাড়া গার্হস্থ কাজে ব্যবহারের সিলিন্ডার ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রাহকের বাড়িতে কী ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া যায়, তেল মন্ত্রক আগে সে দিকে নজর দিক। এ ছাড়া ডোমেস্টিক সিলিন্ডার কেবলমাত্র গার্হস্থ কাজেই ব্যবহার হবে়, তা-ও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অন্য দিকে, গ্যাস সংযোগের সঙ্গে আধারের বায়োমেট্রিক সংযুক্তিকরণ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করার প্রয়োজন আছে। পাশাপাশি আধারের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ক্ষতি জনতার
সুমন সেনগুপ্তের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। পূর্ববর্তী সময়ে প্যান-আধার, রেশন কার্ড-আধার, ভোটার কার্ড-আধার সংযোগ স্থাপন এবং আধারে ফোন নম্বর সংযুক্তির সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা সাধারণ মানুষের মনে এখনও অমলিন। ফলে রান্নার গ্যাস সংযোগের সঙ্গে আধার সংক্রান্ত বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাইয়ের সরকারি নির্দেশের যথাযথ অনুসন্ধান না করেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত সংবাদ শুনে গ্রাহকেরা গ্যাস ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটরদের দোকানের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে গেলেন। সরকার এটা ভাল করেই জানে যে, ‘ভর্তুকি’ নামক নামমাত্র অনুদান হাতছাড়া হওয়ার আতঙ্কে বহু মানুষ হাওয়ায় ভাসা খবরের ভিত্তিতেই নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে যাঁর আঙুলের ছাপ মিলে গেল, তাঁর মুখে যুদ্ধ জয়ের হাসি। আর যন্ত্র যাঁদের চিনতে অস্বীকার করল, তাঁরা নানা ভাবে আঙুল ঘষে শেষ পর্যন্ত বিফল হয়ে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রইলেন। জনগণকে এ ভাবে হয়রান করে নীতি নির্ধারকেরা কী আনন্দ পান, প্রশ্ন থেকেই গেল। এরই ফাঁকতালে আবার কয়েক জন গ্যাস ডিলার নানা অছিলায় গ্রাহকদের বাধ্য করলেন কিছু টাকা ব্যয় করতে।
লাইনে দাঁড়ানোর গড্ডলিকা প্রবাহে গা না ভাসালেও ব্যক্তিগত ভাবে এই কাজে আমি ডিজিটাল পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছিলাম। মোবাইলে ইন্ডিয়ান অয়েল ওয়ান এবং আধার ফেস আরডি অ্যাপের মাধ্যমে সফল ভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে কেওয়াইসি আপডেট করেছিলাম গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। এখনও পর্যন্ত সেটির অবস্থান দেখাচ্ছে, প্রক্রিয়াটি চলমান। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ভারতীয়ের ব্যক্তিগত তথ্য এবং বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হল। তার পর ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, রেশন দোকান, সাইবার ক্যাফে— সর্বত্র সেই তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিবিধ সরকারি কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য করা হল। আর সেই তথ্য যখন চুরি গেল, তখন প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষের ক্ষতির দায় নিতে অস্বীকার করল রাষ্ট্র। তথ্য নিল রাষ্ট্র, আর সেই তথ্যের সুরক্ষার দায় কি সংশ্লিষ্ট নাগরিকের?
প্রশ্ন জাগে, নীতি নির্ধারকেরা কি বারংবার বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই করার নির্দেশ দিয়ে জানতে চান ‘আমি’ আসলে কে? এর ফলে অনেক সময় আমার নিজেরই মনে প্রশ্ন জাগে, আমি সত্যিই ‘আমি’ তো? আর যে কোনও ব্যাপারে এই ‘আমিত্ব’-এর প্রমাণ দেওয়ার হয়রানি এখন এ দেশের জনসাধারণের ললাট-লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
পরিকল্পিত প্রয়াস
সুমন সেনগুপ্তের বক্তব্যের সঙ্গে সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ একমত হবেন বলেই বিশ্বাস। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধার ও অন্যান্য বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে কিছু দিন অন্তরই সরকারি নির্দেশিকায় সাধারণ মানুষ যে ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তা প্রত্যেক ভুক্তভোগীই জানেন। এর জন্য শুধুমাত্র ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাই নয়, কিছু জালিয়াতদের হাতে এই বায়োমেট্রিক তথ্য পড়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া থেকেও নিস্তার নেই মানুষের। একটু ভাবনাচিন্তা করলেই দেখা যায়, নোটবন্দি থেকে শুরু হয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং মূল্যবৃদ্ধি থেকে বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য— প্রতিটি সামাজিক ক্ষেত্রেই মানুষ আজ বিভিন্ন ভাবে দুর্দশার শিকার। এই সমস্ত ঘটনার প্রতিবাদে মানুষ যাতে কোনও ভাবেই মুখর ও সংগঠিত না হতে পারেন, সেই কারণে উল্লিখিত বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজে জনগণের মন আটকে রাখার এ এক নিরন্তর সরকারি প্রয়াস বলেই মনে হয়। এর সঙ্গে বাড়তি হিসাবে যোগ করা যেতে পারে ধর্মীয় উন্মাদনায় মানুষের মন বিক্ষিপ্ত করে রাখা।
বিরোধীরা সমস্ত কিছুর সঙ্গে আধার যোগ নিয়ে প্রথমে অনেক ক্ষেত্রেই সরব হলেও পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন বিরোধী শাসিত রাজ্যেও তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সেই আধারকেই ভিত্তি হিসাবে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে। তাই এই বিষয়ে বিরোধীদেরও যেমন অহেতুক হয়রানির জন্য সরব হতে হবে, তেমন তথ্য যাচাইয়ে সুরক্ষিত বিকল্প কী হতে পারে, সেই নিয়েও নির্দিষ্ট চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভুললে চলবে না, রাজনীতি মানুষের হয়রানির জন্য নয়, তাঁকে নানা ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়া ও সুরক্ষিত রাখার জন্যই।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
মানুষ অসহায়
সুমন সেনগুপ্তের প্রবন্ধটি সম্পর্কে কিছু কথা। এখন রান্নার গ্যাসের সংযোগের সঙ্গে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাইয়ের কাজ রাজ্যের সব জেলায় এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটররা শুরু করে দিয়েছেন। ডিলারদের অফিসের সামনে তাই গ্রাহকদের লম্বা লাইনও পড়ছে। এলপিজি সংস্থাগুলি বাড়ি বসে এই কাজটি সেরে ফেলার জন্য অনলাইন অ্যাপও চালু করেছেন। অনেকে বাড়িতে বসেই অনলাইনে কাজটি সেরে ফেলছেন বটে, কিন্তু তাতে কেউ কেউ আবার সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন।
এই মুহূর্তে ভর্তুকি-যুক্ত গার্হস্থ কাজে ব্যবহারের এলপিজি গ্রাহকদের কাছে কেওয়াইসি আপডেট করাটা যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটা ভাল করেই জানে সাইবার অপরাধীরা। জামতাড়া গ্যাং তাদের সাইবার জালিয়াতির সময়ে যেমন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কেওয়াইসি আপডেটের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিত, সেই ধাঁচেই দুষ্কৃতীরা এখন গ্যাসের কথা বলে লোককে ঠকাচ্ছে। দুঃখের বিষয়, বিরোধী দলগুলি সব দেখেও চোখ বন্ধ করে আছে। ফলে, সাধারণ নাগরিকরা আজ অসহায়।
প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত, ব্যান্ডেল, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy