Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Students

সম্পাদক সমীপেষু: সঠিক সিদ্ধান্ত

গত বছর খাতা দেখতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, দীর্ঘ করোনা কালের পর পরীক্ষার্থীরা পার্ট-এ খাতাটিতে খুব বেশি লেখেনি। এক বড় সংখ্যক পরীক্ষার্থী দু’-একটি পাতায় লিখেছে, বাকিটা ফাঁকা।

পরীক্ষার্থী।

পরীক্ষার্থী।

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৪৩
Share: Save:

‘দ্বাদশে এক প্রশ্নপত্রে জটিলতার আশঙ্কা’ (৮-৯) সংবাদে পত্রিকার পক্ষ থেকে অনেকের মতামত তুলে ধরা হয়েছে। শঙ্কা আছে, ‘এসএকিউ’ উত্তরগুলি বিক্ষিপ্ত ভাবে গোটা খাতায় ছড়িয়ে থাকা, নতুন ব্যবস্থায় খাতা দেখার সময় বেড়ে যাওয়া, পরীক্ষার্থীদের উত্তর দু’বার লিখে ফেলার সম্ভাবনা, কুড়িটি শব্দের মধ্যে উত্তর সীমাবদ্ধ না থাকা প্রভৃতি নিয়ে। প্রশ্ন হল, কেন এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ?

গত বছর খাতা দেখতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, দীর্ঘ করোনা কালের পর পরীক্ষার্থীরা পার্ট-এ খাতাটিতে খুব বেশি লেখেনি। এক বড় সংখ্যক পরীক্ষার্থী দু’-একটি পাতায় লিখেছে, বাকিটা ফাঁকা। অনেক কাগজ এ ভাবে নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি সংসদকে জানানো হয়। আমার ব্যক্তিগত মত, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা সংসদ। প্রথমত, দু’টি প্রশ্নপত্র অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ। দু’টি উত্তরপত্রের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। দ্বিতীয়ত, খাতা দেখতে সময় কম লাগবে। কারণ, আলাদা দু’টি খাতা দেখা, যোগ দেখা, নম্বর যোগ করা সময়সাপেক্ষ। তৃতীয়ত, পরীক্ষার্থী অনেক সময়ে যত্ন সহকারে বুকলেটটি এ-পার্টের সঙ্গে বাঁধতে পারে না। খাতা দেখার সময় দেখা যায়, দু’টি পার্ট আলাদা হয়ে আছে। এমনও দেখেছি, বুকলেটটি জমা না দিয়ে পরীক্ষার্থী সেটি বাড়িতে নিয়ে এসেছে। এ বার সেই সমস্যা আর থাকবে না। সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছেন যে, দুটো পার্টই এক জায়গায় লিখতে হবে, প্রশ্নপত্রে সেইমতো নির্দেশ দেওয়া হবে।

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

বিলম্বে ফল

২০২২-এর জুলাই মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এই পরীক্ষার্থীদের তৃতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা হয়েছিল এ বছরের জানুয়ারিতে। কিন্তু দুই পরীক্ষারই এখনও পর্যন্ত ফল প্রকাশিত হয়নি। এক সিমেস্টারের রেজ়াল্ট না প্রকাশ করে পরের সিমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়াতে কত ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে, তা কারও অজানা নয়। কিন্তু এখনও ফল প্রকাশ না পাওয়ায় ছেলেমেয়েদের ভোগান্তির শেষ নেই।

বিএড-এ ভর্তির ফর্ম বেরিয়ে গিয়েছে বহু আগে। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলদোল নেই ফল প্রকাশে। যে সব ছাত্রছাত্রী বিএড-এর ফর্ম ভর্তি করছে, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় স্নাতকের ফল দিতে হচ্ছে। ফলে, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় তারা স্বাভাবিক ভাবে অনেকটাই পিছিয়ে থাকছে। ভাল ছাত্রছাত্রীদেরও সরকারি কলেজে সুযোগ পাওয়া তো দূরের কথা, বেসরকারি কলেজের দোরে দোরে ঘুরতে হচ্ছে। মোটা টাকা দিয়ে অনেকেই ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছে বছর নষ্ট করবে না বলে।

অপর দিকে, তৃতীয় সিমেস্টারের পড়ুয়াদের অবস্থাও শোচনীয়। তাদের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, এবং দ্বিতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা শেষ হয় অগস্টে। তাদেরও এই দুই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়নি। অথচ, তৃতীয় সিমেস্টারের পঠনপাঠন চালু হয়ে গিয়েছে! ফলে তারা কোনও স্কলারশিপের ফর্ম পূরণ করতে পারছে না। কিছু দিনের মধ্যে স্কলারশিপের ফর্ম ভরার শেষ দিনও চলে যাবে। গরিব ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হবে পড়াশোনা চালানোর খরচ পাওয়া থেকে।

তৃতীয় সিমেস্টারে বিশেষপত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলিতে যেখানে ছাত্রছাত্রীর স্নাতকোত্তরের প্রথম দুই সিমেস্টারে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে করা হত, সেখানে এ বছর স্নাতকের নম্বর দিয়ে বিশেষপত্র দেওয়া হয়েছে। যেটা হাস্যকর শুধু নয়, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে প্রতারণা। অনেক ছাত্রছাত্রীই তাদের পছন্দের বিশেষপত্র পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলা বিভাগের বিশেষ পত্রের সিলেবাসে অনেকগুলি পত্র থাকলেও, হাতেগোনা বিশেষপত্রই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় অধ্যাপকের অভাবে। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে যত দ্রুত সম্ভব ফল প্রকাশ করার আর্জি জানাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।

হিমাদ্রি মণ্ডল , বাংলা বিভাগ, অন্নদা কলেজ, ঝাড়খণ্ড

অনন্য শিক্ষক

স্বাগতম দাসের ‘সেই সব মাস্টারমশাই’ (১০-৯) প্রবন্ধটি আমার শিক্ষাজীবনে পাওয়া এক মাস্টারমশাইয়ের কথা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিল। ব্যতিক্রমী ছিলেন বলেই হয়তো শিক্ষকসমাজের এই দুঃসময়ে তিনি আমাদের মতো ছাত্রদের কাছে স্মরণীয়। পুরো নাম সুধীরচন্দ্র খাঁ। আমরা বলতাম, ‘খাঁয়ের মাস্টারমশাই’। কিশোরীমোহন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি আমাদের ইতিহাস, ভূগোল আর বিজ্ঞান পড়াতেন। সাধারণ ধুতি পাঞ্জাবি পরে দীর্ঘদেহী, ঋজু মানুষটি দূরের গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে সকাল সকাল স্কুলে চলে আসতেন। ঝাঁটা হাতে নিজেই পরিষ্কার করতেন স্কুলের ঘরগুলো। বর্ষাকালে গ্রামের রাস্তার ধারে ছাত্রদের নিয়ে গাছ বসাতেন। বিজ্ঞান পড়াতেন হাতে-কলমে। ছাত্রদের গাছ চেনাতে, মৌমাছির চাক বা পাখির বাসা দেখাতে নিয়ে যেতেন জলা-জঙ্গলে। মনে আছে, আকাশের তারা চেনাতে মাঝেমধ্যে আমাদের সন্ধ্যাবেলাতেও স্কুল মাঠে ডেকে পাঠাতেন। পুজোর ছুটিতে মাস্টারমশাই বেড়াতে যেতেন। ফিরে এসে সেখানকার গল্প বলতেন। চোখের সামনে ইতিহাস ও ভূগোল জীবন্ত হয়ে উঠত। কারও মুখাপেক্ষী না থেকে নিজের উদ্যোগে স্কুলে রেখেছিলেন এক আলমারি শিশু সাহিত্যের বই। সেই ছোটবেলায় আমাদের উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, লীলা মজুমদারের সঙ্গে পরিচয় ঘটে গিয়েছিল সুধীরবাবুর দৌলতে। বেত হাতে কখনও তাঁকে ছাত্র শাসন করতে দেখিনি। তাঁর ক্লাসে সব সময় স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলা বজায় থাকত। গুরুতর অসুস্থ হলে মাস্টারমশাই খোঁজ নিতে চলে যেতেন সংশ্লিষ্ট ছাত্রের বাড়ি। বেশির ভাগ শিক্ষকই ‘প্লেন লিভিং, হাই থিঙ্কিং’-এর আদর্শ মেনে চলতেন। বিদ্যাচর্চায় ও ছাত্রদের বিদ্যা বিতরণে সর্বদা তাঁরা ছিলেন অক্লান্ত। আর ছিল অফুরন্ত স্নেহ। শ্রেণির পড়ার বাইরে আমাদের নিয়মিত খেলা, ছবি আঁকা, গান, আবৃত্তি শিখতে তাঁরা উৎসাহিত করতেন। তাঁরা ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর। এখন সুধীরবাবুর মতো নিষ্ঠাবান ও ছাত্রদরদি শিক্ষকের সংখ্যা যেন কমে গিয়েছে।

কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া

স্নেহের স্পর্শ

স্বাগতম দাসের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু অভিজ্ঞতা। আমার বাবা জগদিন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ী সাংসারিক জীবনের নানা জটিলতায় ছিলেন নিতান্ত বেমানান, কিন্তু এক জন আদর্শ প্রধান শিক্ষক। এই মানুষটির একটি (সত্যি) গল্প এই প্রসঙ্গে শোনাই। বাবার কাছে ছেলেকে নিয়ে এলেন এক প্রৌঢ়। ক্লাস এইটের ছাত্র সে— বদসঙ্গ, বিড়ি-সিগারেট, সিনেমার ধাক্কায় পড়াশোনা লাটে উঠেছে। যদি শোধরানো যায়, এই আশায় ছেলেকে নিয়ে এসেছেন প্রৌঢ়। ছেলেটি ভর্তি হল ক্লাস নাইনে, এবং প্রথম সুযোগেই স্কুল পালিয়ে ধনিয়াখালির ‘রূপবাণী’ সিনেমা হলে নুন শো দেখতে চলে গেল। শো-শেষে বেরিয়ে এসে ছাত্রটি দেখল, স্বয়ং প্রধান শিক্ষক সাড়ে চার কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এসে দাঁড়িয়ে আছেন সিনেমা হলের গেটে। কথা খরচ করতে হয়নি। পড়ন্ত শীতের বিকেলে, বিস্তীর্ণ আলু খেতের মাঝখান দিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রের সাইকেল চালিয়ে ফিরে আসার দৃশ্য ছোট্ট গ্রামে আলোড়ন তোলে। একটি ঘটনায় জীবন পাল্টে যায় একটি ছেলের। সেই ছেলে আজ পূর্ব রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিক। আমরা একই ক্লাসে পড়তাম, যোগাযোগ আছে এখনও। নিজের শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি, শিক্ষক হিসাবে ছাত্রের প্রতি এই আন্তরিকতার কণামাত্র অর্জন করা হল না।

জ্যোতিরিন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ী, ব্যান্ডেল, হুগলি

অন্য বিষয়গুলি:

Students higher secondary examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy