তীব্র শিক্ষক সঙ্কট। ফাইল চিত্র।
‘প্রাথমিক শিক্ষক উচ্চ প্রাথমিকে, বাড়ছে জট’ (২৭-২) প্রসঙ্গে বলতে চাই, উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি গড়ে উঠেছিল ‘সর্বশিক্ষা মিশন’ প্রকল্পের শর্ত মেটাতে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বড় অংশ পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দিতে বাধ্য হত এলাকায় কোনও উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায়। প্রধানত তাদের স্কুলছুট ঠেকাতেই এই বিদ্যালয়গুলি গড়ে তোলা হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই, এই বিদ্যালয়গুলির অধিকাংশই তৈরি হয়েছিল প্রত্যন্ত এলাকায়, আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসরপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। এর পর কয়েকটি ঘটনার অভিঘাতে এই বিদ্যালয়গুলির অস্তিত্ব সঙ্কটাপন্ন হল। প্রথমত, দীর্ঘ কাল নিয়োগ না হওয়া। দ্বিতীয়ত, ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে বদলির সুযোগ নিয়ে শিক্ষকদের একাংশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়া। এবং তৃতীয়ত, উচ্চ বিদ্যালয়ের যে সব শিক্ষক এখানে ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসাবে নিযুক্ত হতেন, তাঁরা কর্মরত অবস্থায় শেষ মাসে প্রাপ্ত বেতন থেকে তাঁদের পেনশন বাদ দিয়ে যে অঙ্ক দাঁড়াত, সেটিই পারিশ্রমিক হিসাবে পেতেন। টাকার অঙ্ক পর্যাপ্ত হওয়ায় তাঁদের এই নিয়োগে উৎসাহ ছিল। পরবর্তী কালে সেই পারিশ্রমিক নামিয়ে আনা হল মাসিক পাঁচ হাজার টাকা (স্নাতক) ও সাত হাজার টাকায় (স্নাতকোত্তর)। দৈনিক ২৩৩ টাকার পারিশ্রমিকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কেউই আর আগ্রহ প্রকাশ করেন না। ফলে তীব্র শিক্ষক সঙ্কট। মুর্শিদাবাদে বহু বিদ্যালয়ের কথা জানি, যেগুলো শুধুমাত্র এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে নিয়ে চলছে। জানা গেল, কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এই বিদ্যালয়গুলির এক বড় অংশকে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। কিন্তু আদালতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়েও বলতে হয়, এটি মাথাব্যথার কারণ না খুঁজে মাথাটাকেই কেটে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত হয়ে দেখা দেবে কি না, সে সংশয় রয়েই গেল।
প্রদীপনারায়ণ রায়, শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ
কমছে কেন?
রাজ্য সরকার সম্প্রতি ৩০ জনের কম পড়ুয়া সম্বলিত স্কুলগুলো বন্ধ করার কথা ভাবছে, সংখ্যাটা আট হাজারের উপরে। প্রশ্ন করা দরকার, যেখানে জনসংখ্যা বাড়ছে, সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যায় কী ভাবে? সর্বশিক্ষা অভিযানের মতো কর্মসূচি চলছে, অথচ একটা রাজ্যে এই ভাবে হাজার হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়াটা কি উন্নয়নের নিম্নমুখিতাই নির্দেশ করে না? সমীক্ষা রিপোর্টগুলো থেকে জানা যাচ্ছে, উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব, দীর্ঘ দিন শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া— এই সব কারণেই আজ সবাই সরকারি স্কুলবিমুখ। আর যতই জামা-কাপড়, মোবাইল, সাইকেল, চাল-আলু দেওয়া হোক না কেন, দিনের শেষে প্রত্যেক অভিভাবকই চান তাঁর সন্তান যেন পড়াশোনাটা ভাল ভাবে করে, স্কুলে পঠনপাঠনটা যেন সুষ্ঠু ভাবে হয়। না-হলে তাঁরাই বা কেন সন্তানকে সরকারি স্কুল থেকে ছাড়িয়ে ভর্তি করবেন বেসরকারি স্কুলে? সরকারও চায় সবাই বেসরকারি স্কুলে চলে যাক, কাঁধ থেকে দায়িত্বের বোঝা নামুক। শিক্ষার ঝাঁপ বন্ধ করে মেলা-খেলা, দান-খয়রাতিতে খরচ করতে চায় সরকার। স্কুল বন্ধ করলে সরকারেরই লাভ।
কিন্তু কর্মসংস্থানের কী হবে? দেড়-দুই লাখ টাকা খরচ করে বিএড করে বেসরকারি স্কুলে মাসিক সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতনে কী ভাবে পরিবারের দায়িত্ব সামলানো যাবে? বেসরকারি স্কুলই কি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের শিক্ষাক্ষেত্রে একমাত্র ভরসার স্থল হয়ে উঠবে? উপযুক্ত পারিশ্রমিক না পেলে এর পরে তো আর কেউ শিক্ষকতার পেশায় আসতেই চাইবে না। বিশেষত যারা মেধাবী, তারা আর এই পেশাকে বেছে নেবে না। কী করে জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্বলিত থাকবেতখন এ সমাজে? আশ্চর্য উদাসীন নাগরিক সমাজ।
গীতশ্রী কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি
পাঠের সেতু
বাজেট অধিবেশনে বিধানসভায় শিক্ষা নিয়ে আলোচনা হবে না (গিলোটিনে এ বার শিক্ষা, ২৫-২)। দেশ ও সমাজের উন্নতির মূল যে প্রকৃত শিক্ষা, এ ভাবনা আজ গৌণ হতে বসেছে। প্রকৃত শিক্ষা অনেক দূর, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই আজ সঙ্কটে। দুর্নীতির সঙ্গে অবহেলা মিলে শিক্ষাব্যবস্থার নাভিশ্বাস উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগ, সিলেবাস থেকে পরিকাঠামো, সব কিছু যাদের দেখার কথা, সেই সরকার পক্ষকেই এই দুর্দশার দায় নিতে হবে। সচেতন ভাবে তাই কি বিতর্ক এড়ানো হচ্ছে? বেশ কিছু দিন যাবৎ সব সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জায়গা হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির কুশীলবদের। এর পর সরকার পক্ষ কেনই বা বিরোধীদের বিধানসভায় বলার সুযোগ দেবে!
রাজ্যে শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯) মেনে সব কিছু করতে গিয়েও সর্বত্র সদিচ্ছার অভাব স্পষ্ট। আইন মানা সীমাবদ্ধ থেকেছে সীমিত পরিসরে। সিলেবাসের কথাই বলা যাক। রাজ্যে সরকার বদলের পর সিলেবাস বদল হয় ধাপে ধাপে। ২০১১ সালেই মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অভীক মজুমদার সরকারি বইগুলোর প্রাক্-কথনে লিখেছেন, “উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাপ্রেমী মানুষের মতামত পরামর্শ আমরা সাদরে গ্রহণ করব।” কিন্তু এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে সিলেবাসের ধারাবাহিকতা, বিষয়বস্তু এবং সেগুলি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছনোর পার্থক্য (সিলেবাস বদলের আগে এবং পরে) পর্যালোচনায় অভিজ্ঞদের মতামত কখনও গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে হয় না। বিরোধী পক্ষকেও সে ভাবে বলতে শোনা যায়নি। একটু সময় নিয়ে পরিবর্তিত সিলেবাসের বাঁধন আরও দৃঢ় করলে অনেক কিছুই ঠিকঠাক থাকত। এর উপর বিগত দু’টি শিক্ষাবর্ষে কোভিড-১৯ খাঁড়ার ঘা দিয়ে গিয়েছে। ক্লাসে পাঠদানের বিকল্প কোনও কার্যকলাপ সাফল্য পায়নি। গত শিক্ষাবর্ষে ‘পঠন সেতু’, ‘শিখন সেতু’ নামে কিছু ‘ব্রিজ মেটিরিয়াল’ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সরবরাহ করেছিল সরকার। সরকারি তরফে বলা হয়েছিল, এগুলি ‘অ্যাক্সিলারেটেড লার্নিং প্যাকেজ’ হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে ‘সেতু’-গুলি যথাযথ ব্যবহারের কথা কোনও পক্ষ ভেবেছে কি? আবার ফিরে আসে সদিচ্ছার প্রসঙ্গ।
এ প্রসঙ্গে আসে বিভিন্ন স্কুলে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতের প্রশ্নটিও। এক দিকে ছাত্রশূন্য স্কুলে (প্রায় ৮০০০ স্কুলে ছাত্রসংখ্যা ৩০-এর কম, বলছে সরকারি তথ্য) শিক্ষকরা আসছেন, অন্য দিকে বেশ কিছু স্কুলে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নাজেহাল হতে হয় প্রতি দিন। বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার বিভিন্ন উপায়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীদের বাড়ির কাছে বদলির ব্যবস্থা করেছে সহানুভূতির সঙ্গে। কিন্তু সেখানেও অপরিকল্পনা আর দুর্নীতি পরিস্থিতিকে ঘোরালো করে তুলেছে। গ্রামের স্কুলগুলিতে স্থায়ী শিক্ষকের সংখ্যা তলানিতে। প্রশাসকদের এ সব তো অজানা থাকার কথা নয়? আর পরিকাঠামো? গত দু’দশকে সরকারি স্কুলের পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্লাসরুম থেকে শৌচালয়ের পরিকাঠামোয় আধুনিকতার ছাপ এলে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে পাঠানোর আগে দু’বার ভাববেন বইকি।
সোমনাথ দে, ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
আবার মাস্ক
গত দু’মাসে জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং কাশির প্রকোপ শিশুদের নাজেহাল করে দিচ্ছে। অথচ, কোভিডের পরে মাস্ক ব্যবহারের অভ্যেস কমেছে। এখনই সচেতন হওয়া দরকার সরকার, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের। বিশেষত প্রাইমারি এবং হাই স্কুলের শিক্ষকরা এগিয়ে এলে এমন পরিস্থিতিতে ফের স্কুল বন্ধ রোখা যাবে।
দীপায়ন প্রামাণিক, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy