Advertisement
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Rahul Gandhi

সম্পাদক সমীপেষু: রাহুলের পদচ্যুতি

রাহুল গান্ধী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারতেন, কিন্তু রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে আজ পর্যন্ত আদালতে আবেদন করেননি।

protest.

কংগ্রেসের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:২৬
Share: Save:

প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘আসল লক্ষ্য ওবিসি ভোট’ (৩০-৩) শীর্ষক প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। রাজনীতির কারবারিরা নির্বাচনী লাভ ওঠাতে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে থাকেন। পরবর্তী কালে আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁরাই আবার আওয়াজ তোলেন, গণতন্ত্র বিপন্ন, বাক‌্‌স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, ইত্যাদি। গান্ধী পরিবারের কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তো কথাই নেই। এনসিপি সাংসদ মহম্মদ ফয়জ়লের লোকসভা সদস্য পদ গেলে প্রতিবাদ হয় না, কিন্তু রাহুল গান্ধী আদালতের রায়ে লোকসভা সদস্য পদ হারালে দেশব্যাপী আন্দোলন হয় এবং কালো পোশাক পরে আদালতের রায়কে অপমান করেন অনুগামীরা। গান্ধী পরিবার কি আইনের ঊর্ধ্বে? এর আগে মোট ১৭ জন সাংসদ, বিধায়কের সদস্য পদ বাতিল হয়েছে, কিন্তু সকলেই আইনকে মর্যাদা দিয়ে তা বিনা প্রতিবাদে মেনে নিয়েছেন। রাহুল গান্ধী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারতেন, কিন্তু রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে আজ পর্যন্ত আদালতে আবেদন করেননি। কংগ্রেসের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এই কংগ্রেসের ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিরোধী নেতাদের জেলে ভরেছিলেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিলেন। বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে নিজের পছন্দের বিচারক নিয়োগ করেছেন। তার প্রতিক্রিয়াতেই বিচারপতি নিয়োগে কলেজিয়াম গঠন হয়েছে। সুতরাং, বিজেপির বিরুদ্ধে বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ কংগ্রেসের মুখে বেমানান মনে হয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চোর প্রতিপন্ন করতে গিয়ে রাহুল গান্ধী পুরো ‘মোদী’ সমাজকে চোর বানিয়ে ফেলেছেন। মোদীও রাজনৈতিক লাভ ওঠাতে নির্বাচনী লড়াইয়ে বিষয়টিকে পুরো ওবিসি সমাজের বিরুদ্ধে আঘাত হিসাবে প্রচার করেছেন। মনে হয়, রাজনীতিবিদ হিসাবে মোদী অন্যায় কিছু করেননি। কারণ, দক্ষ রাজনীতিবিদরা প্রতিপক্ষের বয়ানকে হাতিয়ার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে থাকেন। তাই প্রত্যেক নেতা যেন ভেবেচিন্তে প্রকাশ্যে বয়ান দেন।

আনন্দ মোহন দাস, উত্তরপাড়া, হুগলি

ঐক্যের হাওয়া

‘ব্যক্তি-নায়ক নয়’ (৩০-৩) শীর্ষক সম্পাদকীয় এবং ‘আসল লক্ষ্য ওবিসি ভোট’ শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়াটা রাজনীতির পালে ক্ষণিকের জন্য জোরালো হাওয়া লাগিয়েছে। প্রগল্‌ভতার বশবর্তী হয়ে বিরোধী দলের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া রাজনীতিতে বিচক্ষণতার পরিচায়ক নয়। ‘সব চোরের পদবি মোদী কেন’, এমন প্রশ্ন কোনও জনসভায় তুলে ধরার মধ্যে রাজনৈতিক কূটকৌশলের অপরিপক্বতাই পরিলক্ষিত হয়। বিরোধী হিসাবে প্রতিস্পর্ধী হওয়ার ইচ্ছা যাঁরা পোষণ করেন, তাঁদের জন্য বাক্‌সংযম যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে ক্ষেত্রে ‘মোদী’ পদবিধারী মানুষদের ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে বিজেপির হাতে জাতভিত্তিক রাজনীতির আরও অস্ত্রশস্ত্র তুলে দেওয়াও কোনও কাজের কথা নয়। বর্তমান ভারতে আমরা মানুষ হিসাবে বাঁচতে ভুলে গিয়েছি। জাতি-বর্ণই আমাদের পরিচয় নির্ধারণ করে। বিগত বিধানসভা নির্বাচনেও পশ্চিমবঙ্গে আমরা কায়স্থ, মাহিষ্য, তিলি, ইত্যাদি সাম্প্রদায়িক ভাগাভাগি নিয়ে কচকচানি শুনেছি। এই সব হিসাবনিকাশের মাঝেই বিজেপির হাতে রাহুল গান্ধী আরও একটা অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তড়িঘড়ি তাঁর সাংসদ পদ খারিজ বিরোধী রাজনীতির পালেও আচম্বিতে খানিক হাওয়া লাগিয়ে, ঐক্যের বাতাবরণ সৃষ্টি করল।

প্রশ্ন থেকেই যায়, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের মতো ঘটনায় কেন্দ্রের শাসক দল কি ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করল না? রাহুল গান্ধীকে আরও একটু বেশি প্রচারের আলোয় নিয়ে এসে লাভ হল কার? রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা যতই সাফল্য লাভ করে থাকুক; শাসক দল বিলক্ষণ জানে জনপ্রিয়তার নিরিখে নরেন্দ্র মোদীর চাইতে তিনি অনেক পিছিয়ে। সেই কারণে মোদীর সঙ্গে রাহুলকে লড়িয়ে দিয়ে আখেরে শাসক দল লাভ খুঁজছে। তবু বহুত্ববাদী গণতন্ত্র কখনও ব্যক্তির মুখাপেক্ষী নয়। কংগ্রেস এবং বিরোধী দলগুলির সংহতির প্রচেষ্টাই ভারতের বহুত্ববাদকে পুনরায় স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

মোদীর কৌশল

একটা সময় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সরকারের নেতা-নেত্রীদের মুখে ১৯৭২ সালের কংগ্রেসি সন্ত্রাসের কথা উঠে আসত। কিন্তু কোনও অস্ত্র বার বার ব্যবহারে যে ভোঁতা হয়ে যায়, সেটা উপলব্ধি করার মতো শক্তি নেতাদের থাকে না। তা ছাড়া আজকের প্রজন্মের ভোটারদের প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের শাসনকালের বিবরণ ‘ক্লিশে’ হয়ে যায়।

বিজেপির তূণীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র জাতপাতের রাজনীতি। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রথম থেকেই অজস্র ধারা-উপধারায় বিভক্ত। এক জাতির আচার অনুষ্ঠান অপর জাতির মানুষের সঙ্গে মেলে না। ঠিক এই জায়গাতেই বিজেপি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের থেকে আলাদা। তাই রাহুল গান্ধীর বক্তব্য অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে, রাহুল গান্ধী সমস্ত ‘মোদী’ উপাধির মানুষকেই দোষী সাব্যস্ত করেছেন। জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে গেলে যে সহানুভূতি আদায়ের প্রয়োজন পড়ে, সেখানে ললিত মোদী ও নীরব মোদীর অন্তর্ধান রহস্য অন্তরালে থেকে গিয়ে প্রাসঙ্গিকতা পায় সমগ্র ‘মোদী’ উপাধিধারী মানুষেরা। বিরোধী নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে বক্তব্য পেশের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট বিচক্ষণ ও সংযত থাকতে হয়, যা বিস্মৃত হয়েছেন রাহুল গান্ধী। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধীদের একটি বড় ভূমিকা থাকে। তাঁদের জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে গেলে একটা মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন হয়। যদিও সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার সুবাদে বিরোধীদের মধ্যে ঐক্যের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তবুও অস্বীকার করা যায় না যে, বিচক্ষণতার দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে রয়েছেন।

রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি

ভারসাম্য

শোভনলাল দত্তগুপ্তের ‘ভুল হয়ে যাচ্ছে বিলকুল’ (২১-৩) পড়ে সাহিত্য পাঠের নির্মল আনন্দ পেলাম। যা কিছু বিজ্ঞানমনস্ক নয়, তাকে যেমন খারিজ করা উচিত নয়, তেমনই এমনও ভাবা ঠিক নয় যে, পশ্চিমের বস্তুবাদী চিন্তা দেশজ জ্ঞানচর্চার পরিপন্থী। এমন ভারসাম্য আমাদের রাজনৈতিক বা সমাজ পরিচালকদের কাছে আশা করা বোধ হয় বোকামিই হবে।

অমিতাভ সরকার, কলকাতা-৩৬

ভুল বার্তা

‘বোতলে সাপ ধরে হাসপাতালে’ (২১-৪) শীর্ষক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সাপের কামড়ের পর এক যুবক সাপটিকে প্লাস্টিকের বোতলে ভরে হাসপাতালে এনেছেন। দু’-এক জন ডাক্তারবাবু মন্তব্য করেছেন, এতে চিকিৎসার সুবিধা হয়েছে। এই খবরটি মারাত্মক ভুল বার্তা দিচ্ছে। জাতীয় বা রাজ্য চিকিৎসাবিধির কোথাও লেখা নেই, সাপ দেখে চিকিৎসা করার কথা। সাপ ধরে আনতে গিয়ে আরও কয়েক জনকে সাপটির কামড় দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় সাপ দেখে চিকিৎসা করা হয় না, রোগীর রোগলক্ষণ দেখেই চিকিৎসা করা হয়। তাই সাপ মেরে বা ধরে হাসপাতালে আনার কোনও দরকার নেই।

দয়ালবন্ধু মজুমদার, টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজ়ার, আইসিএমআর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi PM Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE