তখন সবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয়েছে। আকাশবাণী কলকাতায় বছরখানেক আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নাট্যপ্রযোজক হিসেবে আমায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে যেতে বলা হয়েছিল। কেন, তার অবশ্য লিখিত অর্ডার নেই। সে সব থাকতও না! কেন না, সরকার লিখিত প্রমাণ রাখতে চাইত না। মোদ্দা কথা, আমাদের উপরে হুকুম এসেছিল, একটি বিবৃতিতে দশ জন বিখ্যাত অভিনেতার স্বাক্ষর চাই, যাতে বলা হবে তাঁরা দিল্লির সরকারের সঙ্গে সহমত এবং সরকারের পক্ষেই রয়েছেন। অভিনেতাদের রাজি করিয়ে সইসুদ্ধ বিবৃতি কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকে ফ্যাক্স করতে হবে।
সেই মতো আমি এবং দূরদর্শনের নাট্যপ্রযোজক (তিনি এখনকার এক জন খ্যাতনামা নাট্যব্যক্তিত্ব) দু’জনে মিলে চাকরি বাঁচাতে শিল্পীদের বাড়ি-বাড়ি তাক করলুম। কোনও কোনও শ্রদ্ধেয় বামপন্থী শিল্পীও তখন অনায়াসে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। কয়েক জন সামান্য গাঁইগুঁই করলে আমলাসুলভ সুভদ্র ভঙ্গিতে তাঁদের আকাশবাণী-দূরদর্শনও আপনাদের দেখবে, কাজের সুযোগ আসবে ইত্যাদি বলা হচ্ছিল।
শুধু এক জন শিল্পীকে আমরা কিছুতেই রাজি করাতে পারিনি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় দৃঢ় স্বরে আমাদের খানিক বকুনি দিয়েই বলেন, “কখনওই আমি এটায় সই করব না! সরকারের নেকনজরে থাকার কোনও দরকারই আমার নেই।”
নাগরিকত্ব আইন বিরোধী মঞ্চে সৌমিত্রদার সই করার ছবি কাগজে দেখেছি, ওঁর চলে যাওয়ার পরে। তখন সাড়ে চার দশক আগের সেই স্মৃতি চোখে ভাসছিল! এখন অনেক ক্ষেত্রেই দেখি গুণিজনেরা কোনও না কোনও সরকারের সামনে শিরদাঁড়া বিকিয়ে হামাগুড়ি দিচ্ছেন। খ্যাতির মধ্যগগনে থাকা সেই সাহসী সৌমিত্র সত্যিই ব্যতিক্রমী ছিলেন।
জগন্নাথ বসু
কলকাতা-৩৭
চিন্তাশীল সৌমিত্র
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিত্ব এবং জ্ঞানের পরিধি ছিল বিস্তৃত। ওঁর জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল, অভিনয়, নাটক এবং চলচ্চিত্র। কিন্তু মনেপ্রাণে উনি ছিলেন এক প্রাণবন্ত, চিন্তাশীল মানুষ, যাঁর এক বিন্দু অহঙ্কার নেই, তাচ্ছিল্যের কোনও রেশই নেই। যে কোনও মানুষকে, সে যত বিখ্যাতই হন বা যত মুখচোরাই হোক, উনি সহজেই আপন করে নিতে পারতেন। খুব সামান্য পরিচিতি থেকে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আমাদের। আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল সাহিত্য ও দর্শনের মেলবন্ধন। আমি যখন ‘টেগোর সেন্টার অব ন্যাচারাল সায়েন্স অ্যান্ড ফিলজ়ফি’ স্থাপন করলাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে রবীন্দ্রতীর্থে, তখন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, জগদ্বিখ্যাত চিন্তাশীল, দূরদর্শী নায়ক।
উদ্বোধন হয়েছিল বসু বিজ্ঞান মন্দিরে, যা বাংলার নবজাগরণের এক সোপান। লক্ষ করলাম, সৌমিত্রবাবুর কী প্রচণ্ড উৎসাহ, যেন পরিচিত কিন্তু হারিয়ে-যাওয়া কোনও রত্নকে খুঁজে পেয়েছেন। ওঁর কন্যা পৌলমীর সঙ্গে একটি সুন্দর অনুষ্ঠানও করেছিলেন। ‘দেবতার গ্রাস’ যে ভাবে আবৃত্তি করেছিলেন, তা আজও কানে বাজে।
তার পর থেকে প্রায়ই দেখা হত, আলোচনাচক্রে বসতেন রবীন্দ্রতীর্থে। শেষ অনুষ্ঠানে জগদীশচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানও হয়েছিল, খুবই মনোরম। ২ অক্টোবর এ রকম একটি সভার আয়োজন করেছিলাম বাড়িতে, সামনের মার্চ মাসে একটি অনুষ্ঠান, আলোচনার বিষয়বস্তু, ‘আইনস্টাইন ও রবীন্দ্রনাথের কথোপকথন এবং তার তাৎপর্য, আজকের দিনে’। উনি ফোন করে বললেন যে, ওঁর জ্বর হয়েছে। সেই আমার সঙ্গে শেষ কথা।
বিকাশ সিংহ
কলকাতা-২০
বাদ কেন?
দেবাশিস ভট্টাচার্য ‘সত্যেরে লও সহজে’ (১৯-১১) নিবন্ধে বেশ খুঁটিনাটি মনে রেখে উত্তমকুমার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের শেষযাত্রার বর্ণনা করেছেন। বাদ যায়নি সত্যজিৎ রায়ের প্রসঙ্গও। তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি বেশ কিছু ঘটনা বিস্মৃত হলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের স্ক্রিনিং কমিটি থেকে সৌমিত্রকে বাদ দেওয়া হয় শুধুমাত্র মতপার্থক্যের কারণে। মৃণাল সেনের মতো চলচ্চিত্র-ব্যক্তিত্বও বাদ পড়েন। অথচ, এঁদের মতো অভিজ্ঞতা আর কারও ছিল না।
ইভা বসু
কলকাতা-৩৪
নীলকণ্ঠ
কৌশিক সেনের “রেডি? ‘এখনও তো নই!’” (১৭-১১) শীর্ষক নিবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত নীলকণ্ঠ নাটকটি আমিও দেখেছি। এত দিন আমার উপলব্ধি ছিল, নীলকণ্ঠ চরিত্রটি মেরুদণ্ডহীন। কারণ, সে অপমানে বিদ্ধ হতে হতে, হীনম্মন্যতায় ভুগতে ভুগতে, ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় হিসেবে বেছে নেয় নিজের সন্তানের জন্মরহস্য। এটা না ভেবেই যে, এই প্রকাশিত জন্মরহস্য তার সন্তানের দুর্ভোগের, মরণাবধি লাঞ্ছনার কারণ হয়ে উঠবে। কিন্তু কৌশিক সেন নীলকণ্ঠ চরিত্রটির যে বিশ্লেষণ করলেন, তাতে মনে হল, সত্যিই তো, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের মধ্যে যে সত্তা জেগে ওঠে, তা মানবসত্তা। হতে পারে তা স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক, কিন্তু তা অমোঘ সত্য। সৌমিত্রবাবু এই সত্যটিকেই শেষ দৃশ্যে ‘বৈশাখী মেঘের মতো’ ছড়িয়ে দিতেন।
ঝুমা মজুমদার
কলকাতা-৯০
মেলালেন
আমাদের ছোটবেলায় গ্ৰামে কেউ মারা গেলে গোটা গ্ৰাম ভেঙে পড়ত সেই বাড়িতে। এখন কেউ মারা গেলে প্রথমে খোঁজ করা হয়, তিনি কোন দলের লোক। উত্তমকুমার, সত্যজিৎ রায়, জ্যোতি বসু ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু এবং শেষযাত্রায় রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা, সম্মান জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষ থেকে রাজ্যের অতি গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী— সকলে ছিলেন সেখানে। দল নেই, রাজনীতি নেই, আছে শুধু মানুষ। এ দৃশ্য রাজ্যবাসীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
গৌতম পতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
সিদ্ধার্থশঙ্কর
দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘পড়ে গিয়ে বলেছিলেন, পতন শেখাটাও জরুরি!’ (পত্রিকা, ২১-১১) প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বলতে চাই, মুখ্যমন্ত্রিত্বের পাঁচ বছরে সিদ্ধার্থশঙ্করের কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে নেওয়া দুটো পরিকল্পনা—সল্টলেক সিটি তৈরিতে গতি আনা এবং মেট্রো রেলের কাজ ১৯৭২ নভেম্বরে শুরু— বাস্তব রূপায়ণের পথে এগিয়ে দেওয়া। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। রেশনে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা ১৯৭২ থেকেই আবার চালু হয়। একাধিক মিউনিসিপ্যালিটিতে জলাধার নির্মাণ, নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহ, শহরে সরকারি বাস, মিনিবাসের ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করা যায়।
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-১০৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy