ছবি: সংগৃহীত
‘বক্তৃতায় যা ঢাকা পড়বে না’ (১৫-৮) নিবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, আমরা পুরাণ আর ইতিহাস গুলিয়ে ফেলি। পৌরাণিক চরিত্রের জন্মস্থান, জন্মমুহূর্ত ইত্যাদি নিয়ে মাতামাতি করি। কাব্যের নায়কে দেবত্ব আরোপ করে তাঁর পূজা করি। যিনি নিঃসন্দেহে মানুষ, যাঁর জন্ম এবং এই পৃথিবীতে পদচারণের প্রমাণ রয়েছে, সেই গৌতম বুদ্ধও এক অবতার হিসেবে চিহ্নিত। অতএব যা খুশি ইতিহাস বলে চালিয়ে দেওয়া যায়।
ক্ষমতায় আসার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ চেষ্টা চালাচ্ছে স্বাধীনতা আন্দোলনে সঙ্ঘের ভূমিকার ইতিহাস মুছে ফেলার। স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের ভূমিকা নগণ্য। বিনায়ক দামোদর সাভারকর ইংরেজ সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পান। দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক, মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর, ইংরেজের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে জাতীয়তাবাদ বলে মনে করতেন না। আরএসএস-এর অনেকেই মুসোলিনিকে সমর্থন করতেন। সাধারণ ভাবে আরএসএস এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন সমর্থন করেননি, ইংরেজ সরকারকে এই আন্দোলন দমন করারও উপদেশ দেন। গাঁধীকে হত্যা করা হলে বল্লভভাই পটেল আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করেন। এখন পটেলেরই বিশাল মূর্তি নির্মাণ করেছে সরকার। ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার কী হাস্যকর প্রয়াস।
অনীতা মুখোপাধ্যায়
বিষ্টুপুর, জামশেদপুর
তুলনার কারণ
জহর সরকার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আরএসএস-এর ভূমিকা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি তাদের মনোভাবের ব্যাখ্যা করেছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে আরএসএস-এর তৎকালীন কর্ণধার গোলওয়ালকর এবং ভারতীয় জনসঙ্ঘের নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের যে কোনও অবদান ছিল না, তা-ও খোলাখুলি বলেছেন। আরএসএস তা না মানলেও, সত্য সত্যই। তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যায় না। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ শরিক হিসেবে বিজেপি বা আরএসএস-এর গর্ব করার খুব একটা সুযোগ ছিল না। তাই কি রামমন্দিরের ভূমিপূজনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রায় পাঁচশো বছরের রামমন্দির আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
কৃষ্ণা কারফা
বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
সেই পতাকা
জহর সরকারের নিবন্ধ প্রসঙ্গে তৎকালীন হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। শ্যামাপ্রসাদ তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সুকৌশলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকার মধ্যে ‘শ্রী’ অক্ষর এবং পদ্মফুলের সংযোজন ঘটালেন। কলেজে প্রচণ্ড বিক্ষোভ শুরু হল অ-হিন্দু ছাত্র এবং শিক্ষকদের মধ্যে। ১৯৩৭ সালের সমাবর্তনে অ-হিন্দু ছাত্র সম্প্রদায় ও অ-হিন্দু শিক্ষকরা অনুষ্ঠান বয়কট করেন। সেই সঙ্গে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ফজলুল হক ও অন্যান্য মুসলিম মন্ত্রীরা অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। বিপুল সমালোচনার মধ্যে পড়ে সিন্ডিকেট অবশেষে ১৯৩৮ সালের ১২ মার্চ পতাকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। শ্যামাপ্রসাদের এ হেন কীর্তি সেই সময় কেউ সমর্থন করেননি।
রতন চক্রবর্তী
উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
ওঁরাও সংগ্রামী
জহর সরকার আরএসএস-এর দ্বিতীয় সঙ্ঘচালক মাধবরাও গোলওয়ালকরের লেখা এক প্রবন্ধের উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সেটি ঠিক কোথায় আছে, তার হদিশ দেননি। সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার কলকাতায় ডাক্তারি পড়ার সময়ে এখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন। সমিতির বিপ্লবীদের মা কালীর সামনে গীতা হাতে শপথ নিতে হত। ডাক্তার হেডগেওয়ারও এই ভাবে দীক্ষিত হয়ে অনুশীলন সমিতির সদস্য হন। ১৯১১ সালে ‘দিল্লি দরবার’ বয়কট আন্দোলনে হেডগেওয়ার সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। নলিনীকিশোর গুহ তাঁর বইয়ে লিখেছেন, “হেডগেওয়ার সর্বার্থেই ছিলেন একজন সত্যিকারের বিপ্লবী। তিনি সমিতিতে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন।”
জহরবাবু লিখেছেন, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৪২ সালের বিপ্লবকে ব্যর্থ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন!’’ বিয়াল্লিশের অগস্ট আন্দোলন সম্পর্কে শ্যামাপ্রসাদের মতামত লিপিবদ্ধ আছে। কংগ্রেস ওই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার চার দিন পরে শ্যামাপ্রসাদ লর্ড লিনলিথগোকে ১২ অগস্ট চিঠিতে লেখেন ‘‘ভারত ছাড়ো আন্দোলনের যে প্রস্তাব কংগ্রেস ৮ অগস্ট গ্রহণ করেছে তা কার্যত সমগ্র ভারতের দাবি। আক্ষেপ, এই নিয়ে ভ্রান্ত প্রচার চলছে...’’।
হিন্দু মহাসভা কখনও কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের নীতি এবং তোষণের পথ সমর্থন করেনি। অগস্ট আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মহাসভার সঙ্গে কোনও আলোচনাই করেনি কংগ্রেস; সুতরাং আলাদা দল হিসেবে কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত সমর্থনের কোনও দায় ছিল না মহাসভার। মহাসভা সাভারকরের ‘মিলিটারাইজ় দ্য হিন্দুজ়’ নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। সাভারকর ১৯৪১ সালে ভাগলপুরে অনুষ্ঠিত হিন্দু মহাসভার ২৩তম অধিবেশনে বলেন, হিন্দুরা, বিশেষত বাংলা ও অসমের হিন্দুরা যাতে সামরিক বাহিনীর সব রকম শাখায় প্রবেশ করেন, তার জন্য মহাসভার সদস্যদের চেষ্টা করা উচিত। সামরিক শক্তি এবং শিল্পায়ন, এই দু’টিকে তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই হিন্দুদের অধিক সংখ্যায় সেনাবাহিনীতে যোগদানে আহ্বান জানানো হয়, যাতে পরবর্তী কালে ওই প্রশিক্ষিত হিন্দুরা প্রয়োজনে সশস্ত্র সংগ্রামেও অংশগ্রহণ করতে পারেন। জাপানে হিন্দু মহাসভার নেতা রাসবিহারী বসুর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষিত এই সেনারাই আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ভুললে চলবে না, শ্যামাপ্রসাদ মেদিনীপুরে অগস্ট আন্দোলনে সত্যাগ্রহীদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে শ্যামা-হক মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
বিনয়ভূষণ দাশ
গোপজান, মুর্শিদাবাদ
রেলে হাত কেন
‘লাভ কিসে? মত চায় রেল...’ (১৩-৮) প্রসঙ্গে বলি, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষেও রেলে লাভের পরিমাণ ৬৪০০ কোটি টাকা। স্বাধীন ভারতে রেলের ভাঁড়ারে কবে দুর্দশা হল, এটা জনসমক্ষে প্রকাশ করাই তো গণতন্ত্র রক্ষাকর্তাদের পবিত্র কাজ। সেটা ধোঁয়াশায় ঢাকা কেন?
ভারতীয় রেল পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম রেল ব্যবস্থা। দেশে পণ্যপরিবহণ এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রথম স্থানাধিকারী। এই বৃহৎ সংস্থা কি আদৌ সঙ্কটগ্রস্ত, নাকি রুগ্ণ শিল্পের তকমা আঁটার দুরভিসন্ধি? রেলের ৭টি লাভজনক প্রোডাকশন ইউনিটকে কোম্পানি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য বেসরকারিকরণ। বহু বিভাগ, রেল স্টেশন, ক্যান্টিন, টিকিট বিক্রয়কেন্দ্র-সহ রেলের স্থায়ী ব্যবস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দেশবাসীকে আত্মনির্ভর করতেই কি ১০৯টি রুটে ১৫০টি বেসরকারি ট্রেন ছুটবে? ধারাবাহিক ভাবে চলছে কর্মী সঙ্কোচন। ২০০৪ সাল থেকে নিযুক্তরা পেনশন বঞ্চিত, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনও অনিশ্চয়তার মুখে। এই অবস্থায় রেলের ওপর নির্ভরশীল কয়েক কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
প্রণবেশ দত্ত
চিত্তরঞ্জন,পশ্চিম বর্ধমান
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy