ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সুপণ্ডিত ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ পি ভি নরসিংহ রাওয়ের জন্মশতবর্ষ সূচিত হল ২৮ জুন। দেশবাসী জানতেই পারত না যদি না ওই দিন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও দেশের সমস্ত প্রধান সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে তা জানাতেন।
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও সমস্ত ছুঁৎমার্গ ভুলে ভারতে বাজার অর্থনীতির প্রবেশ ঘটিয়েছিলেন। মুহ্যমান ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার ঘটেছিল। বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে তার পর কখনও আর টান পড়েনি। হ্যাঁ, তাঁর আমলেই হর্ষদ মেহতা শেয়ার কেলেঙ্কারি এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু সে জন্য তাঁর সামগ্রিক যোগ্যতাকে ছোট করা যায় কি? অনেক সাফল্য সত্ত্বেও ইন্দিরা গাঁধীর ললাটে জরুরি অবস্থা ঘোষণার কালো দাগ লেগেছিল। রাজীব গাঁধী তাঁর পরিসরে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কি? তবু কংগ্রেস এঁদের দু’জনকে নিয়েই জয়ধ্বনি দেয় আজও। ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন চাণক্য বলে পরিচিত প্রণব মুখোপাধ্যায়কে কংগ্রেস কঠিন সময়ে বার বার ব্যবহার করেছে। কিন্তু যোগ্য পুরস্কার কি দিয়েছে? কংগ্রেস দল আজ কোথাও তাদের কর্মী নরসিংহ রাওয়ের জন্মশতবর্ষ পালন করেছে বলে শুনিনি। তাই অন্য দলের লোক হয়েও তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী যদি ভূমিপুত্র নরসিংহ রাওয়ের জন্মশতবর্ষ পালন করেন, তবে তা দেশবাসী স্মরণে রাখবে।
স্বপন কুমার ঘোষ, কলকাতা-৩৪
কেবল পুরী?
‘বিপজ্জনক’ (২৭-৬) সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে ‘...সনাতন ভারতের হৃদয়ে রথযাত্রার গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনও প্রশ্ন নাই।’ কথাটার মর্মার্থ অনেক গভীরে প্রোথিত। রথযাত্রা যেমন বিভিন্ন জায়গায় বহু প্রতীক্ষিত এক বাৎসরিক উৎসব, তেমনই বহু প্রান্তিক মানুষের রুজির অবকাশ। ছোটবেলা থেকে লক্ষ করতাম, মাহেশে রথ নিয়ে উন্মাদনা স্নানযাত্রা থেকে শুরু হত। এক মাস ধরে মেলায় এলাকা সরগরম থাকত।
বিভিন্ন দোলাচলের পর শুধুমাত্র পুরীর রথযাত্রা অনুমতি পেয়েছে, আর কেউ পায়নি। স্বাভাবিক প্রশ্ন, পুরী কেন, অন্য কেউ নয় কেন? গণমাধ্যমে দেখেছি পুরীতে সুপ্রিম কোর্টের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই রথযাত্রা হয়েছে। মাহেশে রথের টান হয়নি, কিন্তু অন্যান্য বিধি পালন করা হয়েছে। পুরী কিংবা মাহেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কি কোনও নিয়ম মেনেছেন? না মেনেছেন পুরীর রাজা, দয়িতাপতিরা, না মেনেছেন মাননীয় সাংসদ, সেবায়েতরা। তা হলে কি সর্বোচ্চ আদালতের বিচার মেনে কাজ করা মানে শুধুমাত্র মেলা বন্ধ করে গরিবদের বঞ্চিত করা?
দেবাশিস চক্রবর্তী, মাহেশ, হুগলি
ভক্তরাই নেই
এই বছর কেবল মন্দিরের কিছু সেবায়েতদের হাতের টানে জগন্নাথের রথ চলল। প্রথা রক্ষিত হল, কিন্তু প্রভু যাঁদের নাথ, পথের ধারে তাঁদের সহর্ষ উপস্থিতির অভাব কি তিনি অনুভব করেননি?
পার্থ নন্দী, শেওড়াফুলি, হুগলি
মানের কদর
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সরকারি পরিষেবার মান বরাবরই ভাল। রাজ্য সরকার মধ্যবিত্তদের ন্যায্যমূল্যে চিকিৎসা দিলে যেমন সরকারের অনেক খরচ বাঁচবে, তেমনই মধ্যবিত্তরাও বেসরকারি হাসপাতালের আকাশছোঁয়া খরচ থেকে রেহাই পাবে। আবার, সরকার যদি বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার একটি সমান্তরাল শিক্ষা একই গুণগত মান বজায় রেখে শুরু করেন, তা হলে অনেক কম মূল্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সেই সুবিধা নিতে পারবে। বিনামূল্যে সকলকে উন্নত চিকিৎসা ও শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু উচিত মূল্য হলে সরকার ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হবে।
কৌশিক সরকার, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
ভাষার ক্ষতি
দেবজ্যোতি কর্মকারের চিঠির (‘ভুল উচ্চারণ’, ২৪-৬) প্রসঙ্গে জানাই, কিছু বাঙালির বাংলা শব্দের ভুল বা বিকৃত উচ্চারণ বাংলা ভাষার সর্বনাশ ঘটাচ্ছে। ‘সে দিন’, ‘আমাদের’, ‘তাদের’, ‘তোমাদের’ এই শব্দগুলির শেষে অনেকেই একটি অনাবশ্যক ‘কে’ যোগ করে বিকৃত ভাবে উচ্চারণ করছেন— ‘সেদিন-কে’, ‘আমাদের-কে’, ‘তাদের-কে’ হিসেবে। আগে বাংলা শব্দের এহেন উচ্চারণ বা ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল অল্প কিছু মানুষের মধ্যে, কিন্তু বর্তমানে বেশির ভাগ বাঙালিই এই বিকৃত উচ্চারণ করে চলেছেন। টিভি সিরিয়ালের ভাষায়, কখনও কখনও সংবাদেও ভাষার এই বিকৃতি দেখা যাচ্ছে। ভাষা বিশেষজ্ঞ ও বিদ্বজ্জনদের এগিয়ে আসা দরকার। এখন থেকে এই বিষয়ে উদ্যোগী না হলে বাংলা ভাষার চরম ক্ষতি ঘটে যাবে।
সুজাতা গোস্বামী, কলকাতা-২৭
সুপ্ত পুরুষতন্ত্র
সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের এক বিধায়ক কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচির সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘দেশ ভেবেছিল বিকাশের মতো একটি ছেলে হবে। কিন্তু নোটবন্দি, জিএসটি-র মতো পাঁচটি মেয়ে হয়েছে।’’ এই ধরনের কথা সমাজের
সুপ্ত পুরুষতন্ত্রের পরিচায়ক। বহু মানুষই শক্তির আস্ফালন দেখানোর জন্য বলে থাকেন, ‘‘আমরা হাতে চুড়ি পরে বসে নেই।’’ মধ্যপ্রদেশের বিধায়কের এই কথাটার পর সবাই রে রে করে উঠেছেন ঠিকই। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র তাঁর একার কথা নয়। পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা অনেকেরই মনে লুকিয়ে, এই সমস্ত কথাবার্তার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে থাকে।
সুভাশীষ দত্ত, চাকদা, নদিয়া
প্রত্যাবর্তন
লকডাউন শুরুর ক’দিন বাদেই দেখা গেল টোটোচালক, দোকান ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মচারীদের অনেকেই মাছ, আনাজ, ফল বাড়ি বাড়ি ফেরি করে চলেছেন। আমরাও গৃহবন্দি দশায় বাড়িতে বসে টাটকা শাকসব্জি, জ্যান্ত মাছ, ফল এঁদের থেকে সংগ্রহ করতে লাগলাম। এমনই এক মাছ বিক্রেতার কাছে জানা গেল, তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। লকডাউন শুরুর পর আড়ত থেকে মাছ কিনে বিক্রি করছেন। ভাল ভাবেই চলে যাচ্ছে। লকডাউন উঠলেও কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি সকালের দিকে মাছ বিক্রি চালিয়ে যাবেন। গত কয়েক বছর ফেরিওয়ালাদের বিশেষ চোখে পড়ছিল না। ছেলেবেলায় কোনও জিনিসের বিনিময়ে ‘বদল বিস্কুট’-এর কথা মনে পড়লে এখনও নস্টালজিক হয়ে পড়ি। ‘লকডাউন’ ফেরিওয়ালাদের ফিরিয়ে দিল।
পরেশনাথ কর্মকার, রানাঘাট, নদিয়া
ব্লেডের ধার
‘কবি যখন বিজ্ঞাপনে’ (রবিবাসরীয়, ২৮-৬) লেখাটির প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, এক বার বন্ধুস্থানীয় হেমেন্দ্রমোহন বসুর অনুরোধে সুলেখা কালির বিজ্ঞাপনী জিঙ্গল-এ রবীন্দ্রনাথ লেখেন, ‘‘সুলেখা কালি, এই কালি কলঙ্কের চেয়েও কালো।’’
অরুণকুমার রায়ের লেখা ‘রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞাপন’ বই থেকে জানা যায়, এক বার ‘ভারত’ ব্লেড সংস্থা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য কবির কাছে গেলে তিনি তাঁর শ্বেতশুভ্র দীর্ঘ দাড়িতে সস্নেহে হাত বুলোতে বুলোতে বলেছিলেন, ‘‘এই দাড়ি নিয়ে আমি যদি বিজ্ঞাপন করি তা হলে কেউ কি তোমাদের ব্লেডের ধারে আস্থা রাখবে? না আমাকে করবে বিশ্বাস?’’
সায়ন তালুকদার, কলকাতা-৯০
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy