বাংলার বুকেই ব্রাত্য বাংলা ভাষা। ফাইল চিত্র।
কর্মসূত্রে গত ১৬ বছর বাংলার বাইরে থাকি। তবু বাংলা ভাষার চর্চা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারি না। প্রায় তিন বছর পর পর পশ্চিমবঙ্গে এলাম, আর বাংলা ভাষার হাল দেখে যারপরনাই বিস্মিত হলাম। শুরু করি দার্জিলিং থেকে। একের পর এক সুদৃশ্য বিপণি, কোথাও বাংলায় লেখা নাম দেখতে পেলাম না। এমনকি ঐতিহ্যবাহী দাস স্টুডিয়োর নামও ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় লেখা। গুটিকতক রেস্তরাঁয় বাংলার ছোঁয়া দেখতে পেলাম, “এখানে বাঙালি খাবার পাওয়া যায়।” বাগডোগরা বিমানবন্দরেও বিমান ওঠানামার ঘোষণা হচ্ছে ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায়! বাংলার ব্যবহার সেখানেও ব্রাত্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম, তাঁরা সবই শুনলেন, কিন্তু অবস্থা সেই আগের মতোই।
এ বার এসে নামলাম কলকাতার নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বাংলা সেখানেও চরম অবহেলিত। বাইশ নম্বর স্তম্ভের গায়ে শুদ্ধ ইংরেজি ও হিন্দির সঙ্গে, অশুদ্ধ বাংলায় লেখা, ‘বাস স্টাপ’। এ বার উঠলাম কলকাতার মেট্রো রেলের কামরায়। পাতালেও সেই একই চিত্র। সেখানে বাংলা ভাষায় লেখা, “অগ্নিশমন যন্ত্র এখানে উপলব্ধ আছে।” এ ধরনের বাংলা শোনার অভ্যাস নেই কোনও দিনই। এ বার আসি আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর নামাঙ্কিত শিবপুর উদ্ভিদ উদ্যানে। সেখানে প্রবেশ করতেই আবার শরীর জুড়ে শিহরন, পরিষ্কার বাংলা ভাষায় লেখা— “উদ্যান প্লাস্টিকমুক্ত ক্ষেত্র আছে।”
বাংলা ভাষার প্রতি চরম অবহেলা খাস বাংলারই বুকে? দেখলে শুধু দুঃখ নয়, রাগও হয়।
প্রদীপ চক্রবর্তী, নৈনীতাল
নিজস্বীর কবলে
‘নিজেই দৃশ্য, নিজেই দর্শক’ (২১-১) শীর্ষক শ্রীদীপ মহাশয়ের প্রবন্ধটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সেলফি অর্থাৎ নিজস্বী যে ভাবে জাল বিস্তার করেছে, তা অবাক করে। মানুষ যে ভাবে পারছে সেলফি নিতে ব্যস্ত। শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে, জলে ভেসে, খাদে পড়ে যেতে যেতে ছবি তুলছে। কিছু কিছু সময় তো এমন খবরও পাওয়া যায় যে, রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে। নিজেকে নিয়ে এমনই মত্ততা। নিজেকে দেখার এবং দেখানোর এই প্রবণতার মূল কারণটা কিন্তু সেলফির ক্যামেরা, অর্থাৎ মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা, যা প্রথম বাজারে আসে বছর কুড়ি-বাইশ আগে। তার এক দশকের মধ্যে তো সবার মুখে মুখে শুধুই সেলফি। শেষে এই শব্দটি অক্সফোর্ড অভিধানের অন্তর্ভুক্তও করা হয়। ইন্টারনেট-নির্ভর এই দৃশ্যকেন্দ্রিকতা এখন এতই ছ়ড়িয়েছে যে, বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে নিজের রূপ এবং পারিপার্শ্বিক ছড়িয়ে দিতে আমরা সদাব্যস্ত। কোথাও ঘুরতে গিয়ে, কোথাও খেতে গিয়ে, খাওয়া-বেড়ানো ভুলে মানুষ শুধুই সেলফি তোলে।
আশ্চর্য এই যে, এত সেলফি তোলা হয়, তার সব ছবি কি আমরা সমাজমাধ্যমে দিয়ে থাকি? সম্ভবত না। মাত্র দু’-একটিই দেওয়া হয়। বাকিগুলো মোবাইলে থেকে যায়, পরে যখন আর জায়গা থাকে না তখন ডিলিট করে দেওয়া হয়। লেখক অত্যন্ত সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন যে, যাঁরা এই ছবিগুলো তুলছেন, তাঁরা হয়তো সে কাজে দক্ষও নন। কিন্তু এই ফ্রন্ট ক্যামেরা আসার ফলে, ছবি তোলায় পারদর্শী আর অ-পারদর্শীর তফাত ঘুচে গেছে। এখন মানুষ ভাল ছবির জন্য নয়, যেমন-তেমন একটা ছবি তুলে তাকে পোস্ট করতে পারলেই খুশি। এবং মোবাইল বিক্রেতারা সে কথা বিলক্ষণ জানেন বলেই, এখন নতুন মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনেও সবার আগে লেখা হয়, কত ভাল ছবি বিনা আয়াসে উঠবে, তার বিবরণ।
মনে আছে, ছোটবেলায় বেড়াতে গিয়ে কোডাক ক্যামেরায় ছবি তোলা হত। তার পর বাড়ি ফিরে বেশ কিছু দিন পর ছবি পাওয়া যেত। সেই যে ফিরে আসা আর ছবি হাতে পাওয়ার মধ্যে একটা সময়ের ব্যবধান, তখন নানা রকম চিন্তা চলত মাথায়। কেমন এল ছবিগুলো? একটা চাপা উত্তেজনা। এখন আর তা নেই। এখন বেড়াতে গিয়ে নিজের মতো ছবি তুলে, পছন্দ না হলে সেই ছবি আবার ডিলিট করে দিয়ে, নতুন ছবি তোলা যায়। সেই জন্যেই প্রতি দিন প্রতি মুহূর্তে শুধু ছবি উঠে চলে। নিজস্বী-গ্রস্ত মানুষেরা নিজেকে দৃশ্যপণ্যে পরিণত করে ফেলেছেন। আর তাই তাঁরা সর্বদা ব্যস্ত নিজেকে বিতরণে। এক মুহূর্ত মোবাইল ছেড়ে থাকার উপায় আছে কি তাঁদের?
সুমন চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৫
ডিজিটাল পুণে
কিছু দিন আগে পুণে শহরে গিয়ে সেখানকার দু’টি বিষয় আমাকে আপ্লুত করেছে। প্রথমত, প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল ভারত বলতে যে কী বোঝায়, তা প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করেছি। পুণেতে নগদ টাকার আদানপ্রদান প্রায় নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ কাজ চলে ওয়ালেট পেমেন্ট/ ইউপিআই পেমেন্টের মাধ্যমে। শুধু বড় দোকান বা রেস্তরাঁ-ই নয়, ট্রলি করে ফল বা আনাজ বিক্রেতা, রাস্তার ধারের ফলের রসের ছোট্ট স্টল, অটো চালক ইত্যাদি প্রায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীর কাছেই রয়েছে কিউআর কোড-এর প্রতিলিপি। ক্রেতা বা ব্যবহারকারীরা সকলেই নিজ নিজ স্মার্ট ফোন দিয়ে ওই কোড স্ক্যান করে, বিভিন্ন পেমেন্ট অ্যাপ-এর মাধ্যমে দাম নিতে পারদর্শী। ছোট ও বড় মাপের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আমজনতা, প্রায় প্রত্যেকেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
দ্বিতীয়ত, শহর জুড়ে ২৪ ঘণ্টা মিটার অটো এবং অ্যাপ অটোর চলাচল। ট্যাক্সি নেই, বাসও অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু অটো সারা শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দিবারাত্র অবাধে বিচরণ করে। সঠিক ভাড়া নিয়ে সওয়ারিকে হাসিমুখে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াটাই চালকদের একমাত্র লক্ষ্য বলে মনে হয়।
কলকাতার কথা ভাবলে সত্যিই দুঃখ লাগে। খুচরো টাকা পয়সার লেনদেন করতে প্রায়ই অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, আমরা পুরোপুরি ডিজিটাল পরিষেবার উপর নির্ভর করতে কুণ্ঠাবোধ করি। কিছুমাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া কলকাতার অধিকাংশ দোকানেই ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু সকলের হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন। পুণে, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি ইত্যাদি অধিকাংশ বড় শহর যদি ডিজিটাল ভারতের ভাবনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, তা হলে কলকাতাই বা এত পিছিয়ে থাকবে কেন? সরকার এই ব্যাপারে একটু উদ্যোগী হলে এই বাধা কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়।
তা ছাড়া কলকাতার অটো সার্ভিস এক এক অঞ্চলে এক এক ভাবে চলে। নিরাপত্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে, সন্ধ্যার পর চার জনের জায়গায় ছ’-সাত জন সওয়ারি তুলতে তারা সিদ্ধহস্ত। সুযোগ পেলেই অন্যায় ভাবে বেশি ভাড়া নেয়। এই সব দুর্নীতি রুখতে, কলকাতার অটো ব্যবস্থাকে অবিলম্বে মিটারের আওতায় আনা বাঞ্ছনীয়। ট্যাক্সির ক্ষেত্রে, অসংখ্য ‘নো রিফিউজ়াল’ লেখা ট্যাক্সি থাকা সত্ত্বেও, বেশির ভাগ চালকই মিটারে যেতে অস্বীকার করেন, বেশি ভাড়া হেঁকে বসেন। এই সব ঘটনা ঘটে পুলিশের চোখের সামনে। প্রশাসনও উদাসীন থাকে। পুণে বা অন্য অনেক বড় শহরের মতো সুশৃঙ্খল পরিবহণ ব্যবস্থা কি কলকাতায় আমরা পেতে পারি না?
শান্তনু ঘোষ, শিবপুর, হাওড়া
ফোন-যন্ত্রণা
ট্রেন কিংবা বাসে, এক ধরনের যাত্রী আছেন, যাঁরা মোবাইল ফোন হাতে অদ্ভুত আচরণ করেন। ফোনে কথা বলার সময় লাউডস্পিকার অন করে রাখেন— কাজের লোক এসেছেন কি না, স্বামী টবে জল দিয়েছেন কি না...! আর এক শ্রেণি যথাসম্ভব ভলিউম বাড়িয়ে গান, আজব খবর, সিনেমা দেখতে থাকেন। বাকিদের কাছে ব্যাপারটা যে কতটা বিরক্তিকর, তা বোঝার প্রয়োজন মনে করেন না। গণপরিবহণে ‘ধূমপান নিষেধ’-এর মতো ‘সশব্দে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ’ নির্দেশ চালু হোক।
বিশ্বজিৎ কর, কলকাতা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy