আচমকাই টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে বিরাট কোহলির পদত্যাগ অবাক করেছে গোটা ক্রিকেটবিশ্বকে। আইপিএল-এর আগে গত সেপ্টেম্বরে টি-২০’র অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর কোহলি জানিয়েছিলেন, ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের কারণে ২০ ওভারের ফরম্যাটের নেতৃত্ব থেকে সরছেন তিনি। টি-২০’র নেতৃত্ব ছাড়ার পরে কোহলিকে আবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দল নির্বাচনের আগে ওয়ান ডে-র অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বোর্ডের তরফে। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মা যুক্তি দেন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দু’জন আলাদা অধিনায়ক চায়নি বোর্ড। এমনকি বিরাটকে টি-২০’র নেতৃত্ব ছাড়তে বারণ করা হয় বলেও সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন খোদ বোর্ড সভাপতি। এর পরই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার ঠিক আগে বিস্ফোরক সাংবাদিক সম্মেলন করে কোহলি বোর্ড সভাপতির সমস্ত বক্তব্য খণ্ডন করেন। বোর্ডের বিরুদ্ধে একপ্রকার বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তিনি। এমন আবহেই প্রোটিয়া সফরে টেস্ট সিরিজ় হারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক টুইট বার্তায় অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগের কথা জানান তিনি।
কিন্তু কেন এই পদত্যাগ? শুধুই কি ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট, না কি বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি? ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বিতীয় সম্ভাবনার পাল্লাই বেশি ভারী। অথচ, টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে কোহলির রেকর্ড আজও অনন্য। হয়তো সাম্প্রতিক ফর্ম তাঁর খারাপ, তবুও পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখলে ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট সার্কিট তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেও অধিনায়ক কোহলির জুড়ি মেলা ভার। ভারতীয় টেস্ট ইতিহাসে অধিনায়ক হিসাবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক টেস্ট ম্যাচ জেতার রেকর্ড রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। কোহলির নেতৃত্বে ৬৮টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ভারত জয় পেয়েছে ৪০টিতে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৬টি অ্যাওয়ে টেস্ট জয় রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এ-হেন এক সফল অধিনায়কের প্রস্থানের প্রশ্নটি উত্তাল করেছে ক্রিকেটবিশ্বকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোর্ডের সঙ্গে সাম্প্রতিক কালে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার জেরে অসম্ভব চাপে ছিলেন কোহলি। এর অভিঘাতেই কি সরে দাঁড়ানো, প্রশ্ন উঠছে ক্রিকেটমহলে। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাই যে বিশ্বের অন্যতম আগ্রাসী চরিত্রের বিপক্ষে গিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে প্রায়শই গুঞ্জন শোনা যায়, কোহলির অন্যতম আস্থাভাজন রবি শাস্ত্রী হেড কোচের পদ থেকে চলে যাওয়ার পর ড্রেসিংরুমের অন্দরে ক্রমাগত কোণঠাসা হচ্ছিলেন কোহলি। রোহিতের সঙ্গে ইগোর লড়াই হোক, কিংবা দল নির্বাচন থেকে ম্যাচের স্ট্র্যাটেজি, সাম্প্রতিক কালে বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাঁর অধিনায়কত্ব। সঙ্গে জুড়েছে ব্যাট হাতে দীর্ঘ দিন ধারাবাহিক শতরানের খরা, যা একেবারেই কোহলিসুলভ নয়। কোনও আইসিসি ট্রফি না জিততে পারার খামতিও কাঁটার মতো বিঁধে আছে। স্পষ্টতই এই কারণগুলি তাঁর অধিনায়কত্বের মুকুট তুলে রাখার পিছনে মুখ্য ভূমিকা নিয়ে থাকতে পারে বলেই মনে করছে ক্রিকেটমহল।
এখন নেতৃত্ব ছেড়ে ‘চাপমুক্ত’ কোহলি ব্যাট হাতে নতুন ইতিহাস তৈরির লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারেন কি না, সেটাই দেখার।
সুদীপ সোম
নতুনগ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা
ওয়াটার পোলো
২৮ জানুয়ারির শতবার্ষিকী ক্রীড়া-ক্রোড়পত্রটি সংগ্রহে রেখে দেওয়ার মতো হয়েছে বিষয়বৈচিত্র এবং পরিবেশনের নৈপুণ্যের কারণে। কিন্তু এখানে ওয়াটার পোলো নিয়ে কোনও লেখা চোখে পড়ল না। এশিয়ান গেমস-এ ১৯৫১-য় সোনা, ১৯৭০-এ রুপো এবং ১৯৮২-তে ব্রোঞ্জ পেয়েছিল ভারতের পুরুষ দল, যেখানে বাঙালি ‘জলের পোকা’রা ছিলেন বিশেষ ভাবে উজ্জ্বল। উত্তর কলকাতার ক্রীড়াপ্রেমী মাত্রেই মনে করতে পারবেন হেদুয়া, কলেজ স্কোয়ারে গরমের বিকেলে ওয়াটার পোলো নিয়ে উন্মাদনার স্মৃতি। কোনও প্রবেশমূল্য ছাড়াই রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যেত দম, বুদ্ধি আর তীব্ৰ গতির এই জলের শিল্পকে। দুই রেল, সেল্ফ কালচার, হাটখোলা, পদ্মপুকুর, সেন্ট্রাল, ন্যাশনাল-এর একাধিক তারকা বাংলার সীমা ছাড়িয়ে দেশের প্রতিনিধি হিসাবে এক সময়ে মুখ উজ্জ্বল করেছেন ভারতের। পুরনো সেই স্মৃতির সুরভি আজও অক্ষয় হয়ে আছে।
অলক রায়চৌধুরী
কলকাতা-৫৫
মহারণ
শতবার্ষিকী ক্রোড়পত্রে রূপক সাহার ‘ডার্বি ম্যাচ থেকে আবেগটাই উধাও’ একটি অসাধারণ রচনা। আগে আমরা ডার্বি ম্যাচকে বড় খেলা বা বিগ গেম বলতাম। আর খবরের কাগজে লেখা হত ‘মহারণ’। আগে বড় খেলার টিকিট যে দিন ময়দান থেকে বিক্রি হবে, বেশির ভাগ সময় সে দিনই এই পত্রিকায় আইএফএ থেকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হত। কিন্তু ফুটবল পাগল দর্শক আগে খবর নিয়ে ময়দানে রাত জেগে লাইন দিত। ময়দানের বটতলা, ধর্মতলার ‘মেট্রো’ হলের সামনেও বড় খেলার টিকিট ব্ল্যাকে বিক্রি হত। তখন মোহনবাগানকে ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা ‘ছারপোকা’ নামে ডাকত, আর ইস্টবেঙ্গলকে মোহনবাগানের সমর্থকরা ডাকত ‘জার্মান’ নামে।
অমরেন্দ্র নাথ ধর
কলকাতা-৫১
সমাজের আদর্শ
শতবার্ষিকী ক্রোড়পত্রে শরীরচর্চা বিষয়ে লেখক কুন্তক চট্টোপাধ্যায় মনোহর আইচ, নীলমণি দাস, বিষ্ণুচরণ ঘোষ প্রমুখ ব্যায়ামবীরের কথা উল্লেখ করেছেন। এই প্রসঙ্গে আরও কয়েক জনের কথা মনে পড়ছে। বিশেষ করে মনোতোষ রায় ও কমল ভান্ডারি। তাঁরাও শরীরচর্চায় ভারত-খ্যাত হয়েছিলেন। ছেলেবেলায় আসানসোল ও সীতারামপুরে যখন রেল কোয়ার্টার্সে থাকতাম, তখন দেখেছি প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে এঁদের ছবি দেওয়া ব্যায়ামের চার্ট দেওয়ালে টাঙানো থাকত এবং ছেলেরা কসরত করত। এঁরাই ছিলেন যুবসমাজের আদর্শ।
ডনবৈঠক ছাড়া সামান্য যন্ত্রপাতি বলতে ডাম্বেল ও মুগুর আর সিলিংয়ে টাঙানো রিং এবং লাফ দড়ি। এই সামান্য উপকরণ নিয়েই ছেলেরা আকর্ষক চেহারার অধিকারী হত। তা ছাড়া, সাঁতারে ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী মিহির সেন ও আরতি সাহা সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত আলোচনা থাকলে ভাল হত।
তপন কুমার মুখোপাধ্যায়
সুভাষপল্লি, বর্ধমান
পালোয়ানি
শতবার্ষিকী ক্রোড়পত্রে ‘পালোয়ানি আর কুস্তির খেল’ শীর্ষক লেখাটিতে বেশ কিছু বিষয় বাদ পড়েছে। বাঙালিদের মধ্যে ভীম ভবানী ছাড়াও প্রথম বুকে হাতি তোলেন রাজেন্দ্রনাথ গুহ ঠাকুরতা, যিনি রামমূর্তিকে চ্যালেঞ্জ জানান ১০০ বাঙালি রামমূর্তি তৈরি করবেন বলে। তিনি সরাসরি বুকে হাতি তুলতে পারতেন। তিনি কলকাতা সিটি কলেজ ও ল কলেজের ফিজ়িক্যাল ইনস্ট্রাকটর ছিলেন এবং তাঁর ছাত্ররা ভূপেশ কর্মকার, কেশব চন্দ্র সেন, আয়রনম্যান নীরদ সরকার, বিষ্টু ঘোষ প্রমুখ বুকে হাতি ও রোলার তুলেছেন।
নীলমণি দাশের গুরু ফণীন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্তের কথা বাদ গিয়েছে, যিনি ছিলেন অম্বু গুহের ছাত্র ও অসামান্য শারীরিক সৌষ্ঠবের অধিকারী। গুণময় বাগচী পর্দায় আসার অনেক আগে থেকেই আরও অনেক গুণময় বাগচী বাংলায় ছিলেন। আর একটি সংযোজন, লৌহমানব নীলমণি দাশের আগে প্রথম বাংলায় লেখা ব্যায়ামের চার্ট ও বই প্রণেতা স্বাধীনতা সংগ্রামী ব্যায়ামসাগর নীরদ সরকার, যিনি অনেক বইও লিখেছেন। ইনি রাজেন্দ্রনাথ গুহ ঠাকুরতা ও পুলিনবিহারী দাশের শিষ্য ছিলেন।
সৌরীশ ঘোষ
পালপাড়া, সাঁতরাগাছি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy