সমরেশ চৌধুরী ও সুকুমার সমাজপতি, দুই প্রাক্তন ফুটবলারের কলমে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষের স্মৃতিচারণ পড়লাম (২-৮)। দু’জনেই পুরনো গৌরব ফেরানোর ডাক দিয়েছেন। অন্য একটি সংবাদে দেখলাম, আসিয়ানজয়ী কোচ সুভাষ ভৌমিক ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অন্তর্ভুক্তির দাবি করেছেন (‘প্রধানমন্ত্রীর বার্তার মধ্যেই চলছে...’, ২-৮)। কিন্তু আইএসএল খেলতে গেলে যে শর্তপূরণ করতে হবে, তা হয়ে না ওঠায় এ বছর আইএসএল-এ ইস্টবেঙ্গলের খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এর জন্য দায়ী বর্তমান ক্লাবকর্তারা। স্পনসর এলেও তাকে ধরে রাখতে ব্যর্থ তাঁরা। উভয়ের মধ্যে ক্রমাগত বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে, যা ক্ষতি করেছে ক্লাবের। আজ ইস্টবেঙ্গলের কোনও স্পনসর নেই।
যাঁরা অর্থ বিনিয়োগ করবেন, তাঁরা ক্লাবের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। অথচ কর্তারা এটা কিছুতেই বুঝছেন না। তাঁরা ‘ঐতিহ্য’ আঁকড়ে বসে আছেন। এই মনোভাব চূড়ান্ত অপেশাদার। এ ভাবে চললে সাফল্য আসবে না। আইএসএল-এ ইস্টবেঙ্গল ক্লাব খেললে তার আকর্ষণ অনেক বাড়বে। কিন্তু তার জন্য ক্লাবকর্তাদের অহং ভুলে ভাল স্পনসর আনতে হবে এবং তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। নিছক ঐতিহ্য আঁকড়ে বসে থাকার দিন শেষ। এটা কর্তারা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, তত ক্লাবের পক্ষে মঙ্গল।
অভিজিৎ ঘোষ, কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
চটকলের মজুর
অশোক ঘোষের নিবন্ধ (‘চটশিল্পে শ্রমিকই সমস্যা?’, ২৮-৭) প্রসঙ্গে জানাতে চাই, চটের স্থায়ী বাজার আছে। চটশিল্পের ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল। কিন্তু শ্রমিকদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ১৯৮৪ সালের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ৯০% স্থায়ী কর্মী রাখার নিয়োগনীতিকে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই ভেঙে দেওয়া হয়। সেই সময় থেকেই মালিকরা চটশিল্পে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩০%-এ নামিয়ে আনেন। বর্তমানে চটশিল্পে মাত্র ১৫% শ্রমিক ‘পার্মানেন্ট’ হিসেবে কাজ করছেন। বাকিরা বদলি, চুক্তি, দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করছেন। অনেক জুটমিল আছে, যেখানে কোনও স্থায়ী শ্রমিকই নেই। ফলে কাজের নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষার অধিকার থেকে শ্রমিকরা বঞ্চিত হলেন। ১৯৯৫ সালে ভট্টাচার্য কমিশনের রায় অনুযায়ী চটশিল্পে ‘গ্রেড অ্যান্ড স্কেল’ চালু হয়েছিল। ২০০০ সালে সেটা তুলে দেওয়া হয়।
২০০২ সালে বামফ্রন্ট সরকার চটশিল্পে ন্যূনতম মজুরি দৈনিক ১৭৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১০০ টাকায় নামিয়ে আনে। উৎপাদন-ভিত্তিক মজুরি চালু হয়, যাতে উৎপাদন কম হলেই মজুরের এক-তৃতীয়াংশ মজুরি কাটা হয়। এই সময় শ্রমিকদের মহার্ঘভাতা প্রায় দু’বছর মালিকরা দেননি। ২০১০ সালে ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে দৈনিক মজুরি ১৫৭ টাকা করা হয়। সঙ্গে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি এবং বোনাসের টাকাও আত্মসাৎ করা হয়। এখনও হচ্ছে।
চটশিল্পে আধুনিকীকরণ হলেও শ্রমিকরা তার কোনও সুবিধে পাননি। সম্প্রতি লকডাউনের সময় এক পয়সাও মজুরি দেওয়া হয়নি। মালিকরা ইচ্ছেমতো মিল বন্ধ করে শ্রমিকদের উপর অন্যায় শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন। সরকারও তাঁদেরই প্রশ্রয় দিচ্ছে। ধারাবাহিক ভাবে শ্রমিকদের অধিকার হরণের ফলেই ভিন্রাজ্যের শ্রমিকরা চলে যাচ্ছেন। এ রাজ্যের শ্রমিকরাও চটশিল্পে কাজ করতে চান না। মজুরদের ‘কুলি লাইন’ খোঁয়াড়ের মতো। তবুও মালিকরা জানেন, যে দেশে ৬০ কোটি মানুষ বেকার এবং কর্মহীন, ৮ লক্ষ কলকারখানা বন্ধ, সেখানে বাঁচার তাগিদেই শ্রমিকরা শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। পুঁজিবাদ এতটাই নির্মম।
অমল সেন, কলকাতা-৫৮
আগে উৎপল
মৌ ভট্টাচার্যের ‘তিতাস একটি স্মৃতির নাম’ (রবিবাসরীয়, ২৬-৭) নিবন্ধ সূত্রে কিছু কথা। তিতাসের কথা বলতে গেলে ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে নাট্যকার-পরিচালক উৎপল দত্তের কথাও বলতে হয়। তিতাস পাদপ্রদীপের আলোয় প্রথম উজ্জ্বল হয়ে ওঠে উৎপল দত্তের জন্যই। মিনার্ভায় তিনি অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম-এর নাট্যরূপ প্রযোজনা করেন ঋত্বিক ঘটকের ছবির অনেক আগে। ১৯৬৩ সালের ১০ মার্চ নাটকের উদ্বোধন হয়। উপেক্ষিত অদ্বৈত ও তিতাসকে নতুন করে জানতে আগ্রহী হন পাঠকরা। মঞ্চভাবনার অভিনবত্বে তিতাসের অসামান্যতা ফুটে ওঠে। এ প্রসঙ্গে শোভা সেন বলেন, ‘‘নবান্ন-র পর গ্রামজীবন নিয়ে এত সূক্ষ্ম নাটক, দৃশ্যসজ্জা, অভিনয়, এত সুন্দর প্রযোজনা আর হয়নি’’ (স্মরণে বিস্মরণে: নবান্ন থেকে লাল দুর্গ)। তিতাস তখন বেশ জনপ্রিয়। একশো রজনী চলেছিল। যাতে বৃদ্ধ রামকেশবের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বিজন ভট্টাচার্য। প্রসঙ্গত ব্রাহ্মণবাড়িয়া (অদ্বৈতর জন্মস্থান) নাট্যসংস্থার এক সময়ের সম্পাদক মনজুরুল আলমের কথাও বলতে হয়। তিনিও তিতাসের নাট্যরূপ দেন।
মৌলানা আকরাম সম্পাদিত মোহাম্মদী পত্রিকায় ১৯৪৫ সালে তিন সংখ্যায় (নিবন্ধকার বলেছেন সাত) উপন্যাসের একটি খসড়া প্রকাশিত হয়, দুই নদী (ভাদ্র) ও রামধনু (আশ্বিন ও কার্তিক) নামে (চতুর্থ দুনিয়া, ডিসেম্বর, ১৯৯৪)। অদ্বৈত মল্লবর্মণের মৃত্যুর (১৯৫১) পাঁচ বছর পর পুথিঘর থেকে প্রকাশিত হয় তিতাস একটি নদীর নাম, নব রূপে, বৃহৎ আকারে।
সুদেব মাল, খরসরাই, হুগলি
উপেক্ষিত
‘কাব্যে উপেক্ষিত’ সম্পাদকীয় প্রতিবেদনটি (৬-৮) যথার্থই বলেছে যে, হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, আয়া, সাফাইকর্মী, রক্ষী বা ড্রাইভার— সমস্ত স্তরের কর্মচারীরা ২৪ ঘণ্টা রোগী ও তাঁদের পরিজনকে সাহায্য করছেন। তাঁদের বেতনও যৎসামান্য। এঁরাই সভ্যতার পিলসুজ। উপরের আলোয় যাঁরা আলোকিত, যুদ্ধজয়ের কৃতিত্ব তাঁদের হবে, কিন্তু গরম তেল যাঁদের গায়ে পড়ছে, তাঁদের কথা ভুলেও কেউ মনে করবে না।
সিদ্ধার্থ ভৌমিক, ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
অশুদ্ধ
শান্তনু ঘোষের প্রতিবেদন ‘অনলাইন ক্লাসে কি মানিয়ে নিতে পারছে সব শিশুরা?’ (২৭-৪) শিরোনামটির ব্যাকরণগত ত্রুটি আছে। ‘সব’ একটি ‘সাকুল্যবাচক সর্বনাম’ যা বহুবচনার্থে ব্যবহৃত হয়, এবং রীতি অনুসারে তার পরে বিশেষ্য পদ ‘শিশু’-র সঙ্গে ‘রা’ অনুসর্গটি যোগ হয় না। বদলে, ‘সব শিশু’ বলা যেতে পারে।
নির্মাল্য চট্টোপাধ্যায়, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
কী বস্তু?
‘বাটামের ঘায়ে মৃত্যু আহতের’ (৫-৮) সংবাদ প্রসঙ্গে জানতে চাই, বাটাম কী? ইংরেজিতে ‘ব্যাটন’ আছে। রিলে রেসে অ্যাথলিট আর মিউজ়িক অর্কেস্ট্রার কন্ডাকটরের হাতে থাকে। সংবাদে এটা বোঝানো হয়নি। আর একটি শব্দ ‘ব্যাটেন’-এর অর্থ লম্বা লাঠির মতো। চারকোনা কাঠের ফালি বোঝাতে হয়তো ‘বাটাম’ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এটি শিষ্ট শব্দ নয়। ‘বাটাম পেটা করা’ রকের আড্ডায় ব্যবহৃত হত। শব্দটি এত দিন মুখে মুখে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এ বার ছাপাও শুরু হল। বাংলা এ ভাবেই এগোচ্ছে।
অরণ্যজিৎ সামন্ত, কলকাতা-৩৬
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy