—প্রতীকী চিত্র।
পথ দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যুর পর বেহালার চৌরাস্তা এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণ তথা পথচারীদের রাস্তা পারাপারে সহযোগিতার জন্য পুলিশের বন্দোবস্ত সাধুবাদযোগ্য (‘প্রাণের বিনিময়ে নজরদারি রাস্তায়’, ৬-৮)। পথচারীদের অসতর্কতা মেনে নিয়েও বলা যায়, দুর্ঘটনার ক্ষেত্র প্রস্তুত থাকলেও পুলিশ বা এলাকার জনপ্রতিনিধি সেই সম্পর্কে উদাসীন থাকেন, যত ক্ষণ না অবাঞ্ছিত কোনও ঘটনা ঘটছে। এর অন্যতম কারণ অবৈধ উপায়ে কিছু রোজগারের ব্যবস্থা, তা অজানা নয়। শহরের অধিকাংশ স্থানে ফুটপাত দখল, বেআইনি পার্কিং, নির্মাণ সামগ্ৰী ফেলে রেখে রাস্তায় বিপদ বাড়ানো দেখার জন্য সিসিটিভি-র প্রয়োজন হয় না। বেহালার চৌরাস্তার মর্মান্তিক ঘটনার পরও অন্যত্র সেগুলি বহাল তবিয়তে পড়ে থাকবে, হলফ করে বলা যায়। তবে হ্যাঁ, মুখ্যমন্ত্রী বা অনুরূপ কোনও ভিআইপি-র যদি ওই এলাকায় দিয়ে যাওয়ার খবর থাকে, তা হলে ভোজবাজির মতো সেগুলি উধাও হয়ে যাবে। রেলের শীর্ষ আধিকারিক বা কোনও ভিআইপি-র হাওড়া স্টেশনে পদার্পণ ঘটলে সাবওয়ে-সহ হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় দখলদারির চিহ্নমাত্র থাকে না। অথচ, শহরের বড়বাজার, ক্যানিং স্ট্রিট বা এমজি রোডে ফুটপাত দিয়ে নিরুপদ্রবে চলার মতো অবস্থা নেই। হাওড়া সাবওয়ে হকারদের কব্জায় চলে যাওয়া সম্পর্কে সংবাদপত্রে বিভিন্ন সময়ে লেখালেখি কম হয়নি। তাতেও অবস্থার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। আইনের শাসন কায়েম হওয়ার জন্য জনসাধারণ বা নিত্যযাত্রীদের কি বেহালা চৌরাস্তার মতো কোনও অনভিপ্রেত ঘটনার অপেক্ষা করতে হবে?
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
চালকের পরীক্ষা
আট বছরের বালক সৌরনীল সরকার চিরতরে হারিয়ে গেল। তার বাবাও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিণতিতে বেহালার বড়িশা হাই স্কুল সংলগ্ন গোটা এলাকা পরিণত হল এক রণক্ষেত্রে। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এ রাজ্যে কোথাও না কোথাও মাঝে মধ্যেই ঘটছে। অথচ, প্রতিরোধে কোনও স্থায়ী উদ্যোগ নজরে আসে না। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। খুবই সহানুভূতিশীল কথাবার্তা বলেন। এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য কিছু ব্যবস্থাও করেন। আমরা সাধারণ মানুষেরাও খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে এই ঘটনাটার কথা বেমালুম ভুলে যাব। সম্ভবত প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জনসাধারণের এই ভুলে-যাওয়া মানসিকতার কথা খুব ভালই জানেন। তাই তাঁরাও নিশ্চিন্তে আর একটি দুর্ঘটনা ঘটা পর্যন্ত নাকে তেল দিয়ে ঘুমোতে সাহসী হন। বেহালার এই মর্মান্তিক ঘটনার পরে যে প্রশাসনিক উদ্যোগ দেখা গেছে, সেটা যে লোকদেখানো এবং ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা নয়, তা বুঝতে আমাদের কিছু দিন অপেক্ষা করতেই হবে। কারণ, আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা যথেষ্ট বিশ্বাস জোগায় না।
আমরা সকলেই চাই প্রশাসন তার দায়িত্ব সঠিক ভাবে, সময়মতো পালন করুক। বিশেষত বড় রাস্তার ধারে অবস্থিত স্কুলগুলির ছাত্র-ছাত্রীরা যখন স্কুলে আসে, এবং ওদের স্কুল যখন ছুটি হয়, তখন তাদের রাস্তা পারাপারের সুব্যবস্থা করা উচিত। বিশ্বের প্রতিটি সভ্য দেশে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সুরক্ষার জন্য এই পুলিশি ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে যানবাহন চালকেরা নিজেরাই ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তা পারাপারের সময়ে গাড়ি থামিয়ে দেন। অথচ, এই দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত ড্রাইভার যখন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন, তখন দেখা যায় তিনি নিশ্চিন্তে মোবাইলে গান শুনছেন। এতটুকু অনুশোচনা নেই। এঁদের চালকের আসনে বসানোর আগে দেখে নেওয়া উচিত, এঁরা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন কি না। আমি নিজে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিয়ে দেখেছি, সেখানে শুধু রাস্তার নিয়ম-কানুন কতটা জানি সে বিষয়েই জানতে চাওয়া হয়। আর দেখা হয় আমি ঠিক ভাবে স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি নিয়ে এগোতে বা পিছোতে পারছি কি না। অনেক সময় তো এটুকুও সকলের ক্ষেত্রে দেখা হয় না। তবে চিকিৎসকের দেওয়া দৃষ্টিশক্তি ও শারীরিক সক্ষমতার শংসাপত্র জমা দিতে হয়। এর সঙ্গে মানসিক সুস্থতার একটি সার্টিফিকেট নেওয়া উচিত কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার শর্ত আরও কঠোর হওয়া দরকার।
বর্তমানে সরকারি বিদ্যালয়ে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা বেশির ভাগই আসে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে। অন্য দিকে বেসরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আসে সচ্ছল পরিবার থেকে। আর্থিক ভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা যতটা সুরক্ষা পাবে, অসচ্ছল পরিবারের সন্তানেরাও ততটা সুরক্ষা ও গুরুত্ব পাবে, এটাই প্রশাসনিক নিরপেক্ষতার পরিচয়। প্রতিটি শিশুর প্রাণ সমান মূল্যবান। তা ছাড়া বহু বেসরকারি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেরাই নিরাপত্তা রক্ষী রেখে স্কুলের বাস ও অন্যান্য যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকারি স্কুলে সে সুযোগ নেই। তাই প্রশাসনকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে, সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পরিচালকমণ্ডলীরও ছাত্র-ছাত্রীদের পথ নিরাপত্তার বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। তাঁরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা করে পথ নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন করায় উদ্যোগী হতে পারেন।
রতন রায়চৌধুরী, পানিহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
ফুটপাত কই
‘প্রাণের বিনিময়ে নজরদারি রাস্তায়’ (৬-৮) সংবাদটি পড়লে যে প্রশ্নটা উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে তা হল— তবে কি ধাক্কা খেয়ে বোধোদয় হল রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের? সে দিনই ‘পড়ুয়াদের নিরাপত্তা বাড়াতে স্কুলের তালিকা তৈরি হচ্ছে হাওড়ায়’ শীর্ষক সংবাদটিও অত্যন্ত সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু হাওড়া নয়, কলকাতা-সহ শহরতলিতে এই ব্যবস্থা জরুরি। ভাল লাগল জেনে যে, এখন থেকে স্কুলের সময়ে সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের স্কুলের বাইরেই পুলিশ মোতায়েন থাকবে। স্থানীয় থানার ওসি-রাও ট্র্যাফিক পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রধান নগরপাল বিনীত গোয়েল মহাশয়কে ধন্যবাদ জানাই। তিনি ঠিকই বলেছেন, পথচারীদেরও ভুল থাকে। তাঁরা পথচারীদের সচেতন করার চেষ্টা করবেন, উত্তম কথা। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল, ফুটপাত কার? যেখানে হাঁটার জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নামতে হয় পথচারীদের, সেই ফুটপাত কবে পরিষ্কার হবে? পুজোর ঢাকের কাঠি পড়তে আর দু’মাস বাকি। হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, ধর্মতলায় হাঁটা কি আর যাবে তখন? সর্বত্র ভিড় উপচে পড়বে।
পুজোর কেনাকাটার জন্য তখন রাস্তাতেও হকার বসার কারণে আরও ছোট হবে চলাচলের রাস্তা। এটা কি ভেবে দেখার বিষয় নয়? তাই মাননীয় মেয়র এবং কলকাতা পুলিশকে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০১
অবহেলা
“বাংলা মাধ্যম বলে ‘অবহেলা’! ছাত্র-মৃত্যুতে প্রশ্নে পুলিশি ভূমিকা” (৫-৮) সংবাদটির প্রসঙ্গে বলি, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল ও বাংলা মাধ্যমের স্কুলের মধ্যে চরম সামাজিক ও নীতিগত বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নানা কটুকথা শুনতে হয়। এমনকি শিক্ষা থেকে শুরু করে ইন্টারভিউ এবং চাকরি ক্ষেত্রেও বাংলা মাধ্যম শুনলেই তাকে নিচু দৃষ্টিতে দেখা হয়, অবহেলা করা হয়। এর জন্য নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতেও সঙ্কোচ বোধ করে অনেকে। বেহালায় দেখা গেল, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বৈষম্য। সৌরনীলের স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, বাংলা মাধ্যম বলেই তাঁর স্কুলের সামনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে না। নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও কেন এমন বৈষম্য, সরকারকে তার উত্তর দিতে হবে।
জয়দেব বেরা, কাজলাগড়, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy