‘সেই সব শিল্পীরা’ (রবিবাসরীয়, ১১-১০) নিবন্ধে ঋজু বসু যথার্থ বলেছেন, এক জন মৃৎশিল্পীর শ্রেষ্ঠত্ব জাত-ধর্মের মাপকাঠিতে বিবেচিত হয় না। শৈল্পিক ভাবনাচিন্তার মধ্যে দিয়ে শিল্পীর নিপুণতা যখন ফুটে ওঠে, তখনই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। ব্যারাকপুরে মহাত্মা গাঁধীর জীবনের নানা অধ্যায় ফুটিয়ে তুলতে শিল্পী সুনীল পাল (ছবিতে) বদ্ধপরিকর ছিলেন। পারিশ্রমিকের চিন্তাকে গুরুত্ব না দিয়ে তাঁর পরিকল্পনাকে সার্থক রূপ দিতেই নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি। ভারতের শিল্পের মানকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়ে তিনি তাঁর দায়িত্ব ও আত্মমর্যাদাবোধ প্রমাণ করেছেন।
শিল্পী অলোক সেন স্কুলে পড়তে পড়তে মাস্টারমশাইয়ের মুখে শিবাজির ইতিহাস শুনে মগ্ন হয়েই তৈরি করেছিলেন মাটির শিবাজি। আবার সামাজিক অনাচার, রাজনৈতিক হত্যা বা শাসকের ষড়যন্ত্রের পেক্ষাপটে প্রতীকী অসুর গড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন অগণিত মানুষের। জলধর চন্দ্র রুদ্রপাল ছিলেন মৃদুভাষী। দুর্গার মুখ তৈরির আগে একতাল মাটি নিয়ে এ দিক-সে দিক ঘুরে হঠাৎ দ্রুত হাত চালিয়ে মহামায়ার মুখখানি বানিয়ে ফেলেন। আড়ম্বরহীন জীবন কেটেছে এঁদের অধিকাংশের, প্রচারের আলোয় তেমন আসেননি অনেকেই। তাঁরা আজ নেই, তবে রেখে গিয়েছেন কারিগরি দক্ষতার নিদর্শন, যা আজও মনে আসে শারদোৎসবের প্রাক্কালে।
উৎপল মুখোপাধ্যায়
চন্দননগর, হুগলি
শুধু চাকাতেই?
সম্প্রতি একটি সংবাদে (‘লরির চাকায় করোনা’, ৮-১০) দেখলাম, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভায় বলেছেন, লরির চাকাতে করোনাভাইরাস পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়ছে। চাকার ফরেন্সিক পরীক্ষা করলে সেটা ধরা পড়বে।
এই ভয়াবহ অতিমারি এসেছে নিজের নিয়মে। তাই তার আসা, মারণক্ষমতা নিয়ে কাউকে দায়ী করাটা নির্বুদ্ধিতা। কিন্তু এর মোকাবিলার কাজটি করে থাকে প্রশাসন। সেই কাজটিতে যে পরিকল্পনার প্রয়োজন, সঠিক সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন, একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে তার পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন— সেটা পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে। আমাদের রাজ্যে এ বিষয়ে একটা দিশাহীনতা দেখা যাচ্ছে মাঝে মাঝেই। আর সেই সঙ্গে আছে এক অলীক শত্রুকে দায়ী করা। সাম্প্রতিক তত্ত্বটি বোধ হয় তেমনই একটি বিভ্রান্তিকর মন্তব্য।
অতিমারির শুরুতে যখন আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম, আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেছি রাস্তায় নেমে সকলকে সচেতন করতে, প্রায় প্রতি দিন বৈঠক করতে, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি তৈরি করে কাজ করতে। এখন যখন আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি দিন বাড়ছে, তখন কি ভেবে দেখা হচ্ছে এই ঊর্ধ্বগতি কেন, বা কী ভাবে একে আর বাড়তে না দেওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা যায়?
এই বিভ্রান্তির ক্ষেত্রগুলি এক বার পিছন ফিরে দেখা যাক। যখন লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক নিজের রাজ্যে ফিরে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন, যে সব রাজ্যে শ্রমের মূল্য বেশি, শ্রমিকের চাহিদা বেশি সেখান থেকে চলে আসতে চাইছেন নিজের গ্রামে, তখন তাঁদের জন্য নির্ধারিত ট্রেনকে বলা হল ‘করোনা এক্সপ্রেস’। তাঁরা আসতে বাধ্য হয়েছেন গাদাগাদি করে, দীর্ঘ ক্ষণ ট্রেনে এসেছেন খাদ্য-পানীয় ছাড়াই। এটা অনস্বীকার্য যে, তাঁরা নিরাপদ দূরত্ব রাখতে পারেননি, তাঁরা আসার পর পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলায় কোভিড-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু এর উল্টোটা কী হতে পারত? তাঁরা যেখানে ছিলেন, সেখানেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়াতেন, আমাদের রাজ্য সংখ্যার দিক থেকে একটু ভাল অবস্থায় থাকত। সেটা কি সত্যিই পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে খুব সম্মানজনক হত?
এর পর জুন মাসের শুরুতে অফিস-কাছারি খুলে দেওয়ার পর সরকারি বাসে মানুষকে কী ভাবে যেতে হয়েছে, তা আমরা জানি। প্রাইভেট বাস অপারেটরদের বহু অনুরোধ সত্ত্বেও বাসভাড়া বাড়াতে দেওয়া হয়নি। অথচ সেটি এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত জরুরি ছিল, যাত্রীরা অফিস যাওয়ার একটি বিকল্প ব্যবস্থা পেতেন, ভিড় কম হত।
সংবাদমাধ্যমে পাওয়া পরিসংখ্যানে দেখছি, ২ জুন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৭২ জন, ১৫ জুন ৩৯৮ জন এবং ২৯ জুন সেটা দাঁড়াল ৫৭২ জনে। বাসের ক্ষেত্রে যে সতর্কতাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল, তা দেওয়া হল না। অথচ মেট্রো চালু করার ক্ষেত্রে দেখা গেল অতি কঠোর নিয়মাবলি। এও কি দিশাহীনতা নয়?
এ সব সত্ত্বেও, অনেক মানুষ মাস্কের ব্যবহার নিয়ে যথেচ্ছাচার করলেও, অবস্থাটা বোধ হয় একটু ভালর দিকে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে এল ২৪ সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা। ৫০ হাজার টাকার অনুদান, তৃতীয়া থেকে প্রতিমাদর্শন, এমনকি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা। বহু মানুষ যেন এরই প্রতীক্ষায় ছিলেন। শুরু হয়ে গেল হাতিবাগান থেকে নিউ মার্কেটের ভিড়। সকলেই অবশ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে বলছেন, সব রকম সতর্কতা নেওয়া হবে। কিন্তু আমরা জানি, সেটা অসম্ভব।
এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো ভাবা দরকার ছিল তা হল, এর ফলে আমাদের পুলিশবাহিনী বা ডাক্তার-নার্সদের ওপর কী বিপুল কাজের বোঝা চাপতে চলেছে। অনেকেই বলবেন এবং বলছেন, এতে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। কিন্তু এই অতিমারি যদি আরও ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়, তা হলে সেই স্বস্তি কতটুকু স্থায়ী হবে? অতিমারির শেষে অর্থনীতি যে বৃদ্ধির দিকে যায়, সেও তো প্রমাণিত। অনেক সমৃদ্ধ দেশের জিডিপি যখন শূন্যের নীচে, তখন চিন কিন্তু প্রায় ৩ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দরকার ছিল নামমাত্র পুজো। তা যখন হয়নি, তখন যে সব বিশিষ্ট মানুষের কথা এখনও গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয়, তাঁরা সকলকে ঘরে অথবা পাড়ার পুজোয় থাকতে আবেদন করুন। মুখ্যমন্ত্রীও সাংবাদিক বৈঠক করে বলুন, এ বছরের মতো পুজো পরিক্রমা থেকে বিরত থাকতে।
শুভেন রায়
কলকাতা-৫০
বঞ্চনা
বেঙ্গল কেমিক্যালস-এর ওপর দেবপ্রিয় সেনগুপ্তের যে প্রতিবেদন (‘মুনাফা বাড়লেও বিলগ্নির তালিকায়!’, ১৫-১০) প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী ম্যানেজিং ডিরেক্টর পিএম চন্দ্রাইয়া জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে নতুন বেতনক্রম চালু হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ সত্য নয়। কারণ ২০০৭ থেকে চালু হলেও, ২০১৬ সাল থেকে তা কার্যকর হয়েছে। অর্থাৎ, ৯ বছর পার করে। ওই ৯ বছরে বঞ্চিত হয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারী। এই প্রসঙ্গে জানাই, মুনাফা না হওয়া সত্ত্বেও ১৯৯৫-এর বেতনক্রম চালুর সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হয়নি।
বদ্রী নাথ দাস
প্রাক্তন ম্যানেজার, বেঙ্গল কেমিক্যালস
বিরক্তিকর
ইদানীং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের বিতর্ক সভাগুলো যেমন বিষয়ের দিক থেকে আকর্ষক, শোনা বা দেখা তেমনই বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। মনে হয় ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, এই বিতর্ক সভাগুলো ততই উত্তপ্ত ও বিরক্তি উদ্রেককারী হয়ে উঠবে। এক জনের বক্তব্যের মাঝে অন্য বক্তারা তাঁদের বক্তব্য রাখছেন। এটা শুধু দৃষ্টিকটু নয়, অভদ্রতা ও অন্যায়। এতে আমরা কারও বক্তব্য বুঝতে পারি না। হতে পারে এটাও একটা রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এতে বিতর্কের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।
তপন কুমার দাস
ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
ভাঙাবাড়ি
বড়বাজারে একটি বাড়ি ভেঙে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বছরের পর বছর এই দুঃসংবাদ শুনতে হচ্ছে। এখনও ওই সব অঞ্চলে ২০-৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে বড় বড় ঘর বা বাড়ি এক শ্রেণির অসাধু ভাড়াটে দখল করে রেখেছেন রাজনৈতিক নেতাদের মদতে। অনেকে ভাড়ার টাকার চার গুণ রেন্ট কন্ট্রোলে জমা দেন, তবু ভাড়া বাড়াবেন না। পুরসভা এ সবের তোয়াক্কা করে না। সম্পত্তি করে ছাড় নেই। বাড়িওয়ালাদের পকেট থেকে কর দিতে হয়। আয় না থাকায় বাড়ির সংস্কার হয় না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।
রাধিকানাথ মল্লিক
কলকাতা-৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy