ঋতু আর উষ্ণতা ভেদে স্থান পরিবর্তনই পরিযায়ী পাখির ধর্ম। শীতের প্রারম্ভে বিভিন্ন দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি এ দেশের জলাশয়ে, সরোবরে, নদীর চরে চলে আসে। কিছু মাস পর আবার ফিরে যায়। এ দেশে ওরা অতিথি। ওদের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য সরকারি নিয়মকানুন আছে। তবে কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এমন নিয়ম নেই? নিজের বসত, পরিবার ছেড়ে অনেক দূরে জীবিকার সন্ধানে যাওয়া, তার পর বিপন্ন অবস্থায় ঘরে ফেরার সময় পদে পদে তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। জীবন বিপন্ন করে খালি পায়ে, খালি পেটে হাঁটা দিয়েছেন রেললাইন ধরে। এ দেশ কি ওঁদের নয়? তবে কেন ওঁরা ‘পরিযায়ী’? ওঁরা কি অন্য রাজ্যের অতিথি হতে পারেন না?
বিশ্ব জুড়ে এই মহামারির প্রকোপে জনজীবনে যে ছন্দপতন ঘটেছে তা আগে কখনও ঘটেনি। এখন ঘরের মধ্যেই নিজভূমে পরবাস। তবে অন্য জীবনের মধ্যেও মানবদরদি অনুভব যেন একেবারে মুছে না যায়। মনের জানলা দিয়ে এই তিন মাসে যে আলোটুকু পেয়েছি, তাতে মনে হয়েছে এই যে জগৎ, যাকে আমরা নিজলোক বলে মনে করি, আসলে সে জগৎকে আমরা পরলোক বানিয়ে ফেলেছি। কেন না এ জগতে সবাই কেমন স্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। মৃত্যু পরকালে প্রবেশের একটা দরজা ছাড়া কিছু নয়।
আসলে মানুষ জন্মেই পরিযায়ী।
অর্ঘ্যমাল্য বিশ্বাস
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
আইন অমান্য
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটা আইন আছে। ইন্টার-স্টেট মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কমেন অ্যাক্ট, ১৯৭৯। কিন্তু আইন আছে আইনের মতোই। কারণ, আইন মোতাবেক পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যের শ্রমিকের সমান হারে মজুরি তো দিতে হবেই, উপরন্তু তাঁরা ঘর ছেড়ে থাকার দরুন নানাবিধ ভাতা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। অতএব সব রাজ্য যদি সব পরিযায়ী শ্রমিককে নথিভুক্ত করতে চায়, তবে সমস্যা। আইনের ফোকর গলে সরকার, মালিকপক্ষ, কন্ট্রাক্টর, প্রোমোটার মিলে সহজ রাস্তা বার করে নেওয়া লাভজনক। সেই রাস্তারই নাম সংগঠিত আর অসংগঠিত ক্ষেত্র। ২০১৮ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার একটি রিপোর্ট বলছে, দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের শতকরা ৯৩ জনই অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন। আবার ২০১৮’র নীতি আয়োগের রিপোর্ট এই সংখ্যাটাকে শতকরা ৮৫ দেখিয়ে কিঞ্চিৎ শ্লাঘা অনুভব করছে। মোট কথা, ভারতের বর্তমান লোকসংখ্যার শতকরা ৩৭-৩৮ ভাগ মানুষ এখন নেহাত পরিসংখ্যান হয়ে বেঁচে আছেন।
সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের মধ্যেও আবার খুব কম সংখ্যকই শ্রম আইনের আওতায় পড়েন ও সুরক্ষা পেয়ে থাকেন। উদার অর্থনীতির অঙ্কের জালে জড়িয়ে শিল্পগুলিতে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ, কন্ট্র্যাক্ট লেবার ইত্যাদি চক্রে সেই সুরক্ষিত শ্রমিক সংখ্যাও ক্রমশ নিম্নগামী। অথচ পুঁজিকে শাসকের কোলে আরও উদার ভাবে খেলতে দেওয়ার জন্য এ দেশে শ্রম আইনের সুরক্ষাবলয় ভেঙে ফেলার তোড়জোড় চলছে। তবু সংগঠিত ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন আছে। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দায়িত্ব তারা কখনও নিয়েছে? সে কথা ভেবেছে?
রবি প্রসাদ ঘোষ
কলকাতা-৮
সবার জন্য কাজ
অনেক মৃত্যু, অনেক লাঞ্ছনা, দীর্ঘ রাস্তায় পায়ে হাঁটা পরিযায়ী শ্রমিকদের অমানবিক দুর্দশার পর দেশের কেন্দ্রীয় সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু কোনও আর্থিক প্যাকেজ রাখেনি। দেশের মানুষের প্রতিবাদ এবং সংবাদমাধ্যমগুলির মর্মস্পর্শী বিবরণের পর অতি সম্প্রতি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সরকার ‘গরিব কল্যাণ রোজগার’ প্রকল্প ঘোষণা করেছে।
এই রোজগার প্রকল্পে সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকা ধার্য করেছে। এই টাকা নতুন করে বরাদ্দ করা হয়নি, ১২টি মন্ত্রকের অন্যান্য ২৫টি প্রকল্প থেকে কিছু কিছু টাকা ছেঁটে নিয়ে তা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ৬টি রাজ্যের ১১৬টি জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা এই ‘গরিব কল্যাণ রোজগার’ প্রকল্পের আওতাভুক্ত হবেন। রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ।
এই প্রকল্প অনুযায়ী পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁদের নিজ নিজ বাসস্থানের এলাকায় ১২৫ দিন কাজ পাবেন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে। দৈনিক মজুরি হতে পারে ১৭৮ টাকা। সারা দেশের ১৫ কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ৭০ লক্ষ এতে কাজ পেতে পারেন। এই প্রকল্প সমস্ত বিপন্ন, দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য কেন হল না? সরকার জানে, ঘরে ফেরা শ্রমিকরা লকডাউনের পর সম্পূর্ণ রোজগারহীন। ফলে এই প্রকল্প প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য, অন্যায় ভাবে পক্ষপাতদুষ্ট, বৈষম্যমূলক এবং মাত্র ১২৫ দিনের জন্য। এ যেন ঠিক পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো।
অমল সেন
কলকাতা-৫৮
শ্রমিক ও ভোটার
অশোক ঘোষ ও মৃন্ময় সেনগুপ্তের নিবন্ধটি (‘‘যাঁদের এখনও ‘শ্রমিক’ ভাবিনি’’, ১৭-৬) অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং সময়োপযোগী। সংসদীয় রাজনীতির মূল উপজীব্য ‘ভোটার’। অসংগঠিত শ্রমিকদের একটা বড় অংশ পরিযায়ী শ্রমিক, আর এঁদের ভোটের মূল্য ভীষণ কম। কারণ এঁরা যেখানকার নথিভুক্ত ভোটার, সেখানে থাকতে পারেন না রুজিরুটির কারণে। আর যেখানে থাকেন, সেখানকার নথিভুক্ত ভোটার নন। ২০১৫ সালের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর একটি সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, যে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা যত বেশি, সে রাজ্যের ভোটদানের হার তত কম। ফলে সংসদীয় রাজনীতির সরল পাটিগণিতেই অসংগঠিত শ্রমিকদের বিষয়টা প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর কাছে ব্রাত্য থেকে গিয়েছে।
আবু বক্কর সিদ্দিক
তপন, দক্ষিণ দিনাজপুর
কু-অভ্যাস
রাস্তাঘাটে থুতু ফেলা, পিক ফেলা, থুতু দিয়ে টাকা গোনার মাধ্যমে অতিমারির মধ্যে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের এবং অন্যান্য মানুষের বিপদ বাড়িয়ে চলেছি! সে দিন দেখলাম এক ভদ্রমহিলা মুখের মাস্ক সরিয়ে দোকানদারের ফেরত দেওয়া টাকা মুখে চেপে রেখে, ব্যাগে জিনিস রাখছেন! ওঁকে সংক্রমণের কথা বলতে উনি এমন ভাবে তাকালেন, মনে হল যেন অপরাধ করে ফেলেছি।
কাজল মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৮
কৃষিঋণ
করোনা কাণ্ডে জীবন ও জীবিকায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদেরও দুর্দশার অন্ত নেই। আমপানের ফলে ফসলের যা ক্ষতি হয়েছে, সেটাও চিন্তার বিষয়। সমস্ত দিক বিবেচনা করে কৃষিঋণ মকুব করে কৃষকদের কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হোক।
মুন্সী মনিরুল হাসান
রায়না, পূর্ব বর্ধমান
সঙ্গে ডিম
ভারত সরকারের মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্রকের সহায়তায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মাধ্যমে ছ’বছর বয়স পর্যন্ত শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। বর্তমানে করোনা সঙ্কটের কারণে কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় উপভোক্তাদের মাথাপিছু শুকনো খাদ্যসামগ্রী (২কেজি চাল, ২কেজি আলু ও ৩০০ গ্রাম ডাল) দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রাপ্য ডিম দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নিমাই আদক
উদয়নারায়ণপুর, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy