সদস্য সংগ্রহে আপাতত ইতি। ‘আধা কোটি’ ছোঁয়া গিয়েছে, দাবি নেতৃত্বের। —ফাইল ছবি।
কাঁটায়-কাঁটায় আড়াই মাস পার। শুক্রবার শেষ হল বঙ্গ বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান। লক্ষ্য ছিল এক কোটি। কিন্তু বঙ্গ বিজেপি এখন ছুটছে অর্ধেক পথের মাইলফলক ছোঁয়ার জন্য। সেই আধ কোটি কি ছোঁয়া যাচ্ছে? বিজেপি সূত্রের দাবি, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সাড়ে ৪৮ লক্ষে পৌঁছেছে তারা। রাতের মধ্যে ছুঁয়ে ফেলা যাবে ৫০ লাখের চৌকাঠ। কিন্তু এক কোটির কথা ঘোষণা করে আধ কোটিতেই সন্তুষ্টি কি ভাল ফল? রাজ্য নেতৃত্ব বলছেন, ২০২৬-এ দেখে নেবেন। নেতৃত্বের এই ‘আত্মবিশ্বাস’-এর সঙ্গে গোটা রাজ্যের বিজেপি তাল মেলাতে পারুক বা না পারুক, চমকে দিয়েছে রানাঘাট।
রাজ্য বিজেপির দাবি, অভিযানের শেষ দিনে সদস্য সংখ্যা ৫০ লক্ষ ছুঁয়ে ফেলেছে। তবে বিজেপির অন্য একটি সূত্র বলছে, শুক্রবার দুপুর পর্যন্তও ৫০ লক্ষে পৌঁছনো যায়নি। সেই সূত্রের কথায়, রাত ৮টা পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ চলবে। তার মধ্যে লক্ষ্যপূরণ হয়ে যেতেই পারে। না হলে? বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, না হলেও সময়সীমা ‘ঘোষিত’ ভাবে আর বাড়ানো হবে না। তবে ‘অঘোষিত’ ভাবে আরও কয়েক দিন অনলাইন সদস্য সংগ্রহ চালিয়ে যে করেই হোক ওই সংখ্যায় পৌঁছনো হবে।
অর্ধেক মাইলফলক ছোঁয়ার ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তের টানাপড়েনের কথা মানতে রাজি নয় বিজেপি। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের ‘প্রমুখ’ সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘৫০ লক্ষ সদস্য আমরা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছি। এখনও অভিযান চলছে। শেষ হতে হতে ৬০ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছে যাব।’’
অভিযানের শেষ দিনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত রানাঘাট উত্তর-পূর্বের বিধায়ক অসীম বিশ্বাসের নাম। নিজের এলাকায় সদস্য সংগ্রহের তত্ত্বাবধান তিনি নিজেই করেছেন। বিজেপি সূত্রের দাবি, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব বিধানসভা এলাকায় দলের সদস্য সংখ্যা ৫০ হাজার ছুঁয়ে ফেলেছে। রাজ্যের আর কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে এত সংখ্যক সদস্য সংগ্রহ হয়নি। এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘অসীম ওখানে বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন। ৫০ হাজার মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছে সদস্যপদ করিয়েছেন। মানে আসলে দেড় লক্ষ ভোটারকে ছুঁয়ে ফেলেছেন। ২০২৬ সালের কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছেন অসীম।’’ গোটা রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র (নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা) জুড়েই অবশ্য বিজেপির সদস্য সংগ্রহে ‘ইতিবাচক’ ছবি দেখা গিয়েছে বলে বিজেপির দাবি। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিকে সদস্য সংগ্রহে নদিয়া দক্ষিণ পিছনে ফেলেছে। দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার মধ্যে ভাল সংখ্যায় সদস্য মিলেছে নদিয়া উত্তর, বারাসত, পুরুলিয়া, কাঁথি, তমলুক থেকে। ‘সদস্যতা প্রমুখ’ শমীকের কথায়, ‘‘নদিয়া বরাবরই আমাদের সবচেয়ে বেশি সদস্য দেয়। আশির দশকেও নদিয়া থেকেই সর্বোচ্চ সদস্য ছিলেন। এ বারও তাই। আমরা চাই অন্যান্য জেলা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নদিয়াকে টপকে যাওয়ার চেষ্টা করুক।’’
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা অভিযানের শুরু থেকেই ভাল গতিতে এগোচ্ছিল। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর বা ‘দাপুটে’ জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর জলপাইগুড়ি সেই তালিকায় ছিল। পরে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, উত্তর মালদহ থেকেও ভাল সংখ্যায় সদস্য সংগ্রহ হচ্ছিল বলে বিজেপির দাবি। কিন্তু সেই উত্তরবঙ্গের কোনও বিধানসভা কেন্দ্রেও ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহ হয়নি। তবে কিছু কিছু বিধানসভা আসনে সদস্যসংখ্যা ২৫-৩০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।
বিজেপি সূত্রে বিভিন্ন জেলায় সদস্য সংগ্রহের ‘ইতিবাচক’ ছবিরই দাবি করা হচ্ছে বটে, কিন্তু তথ্য বলছে, লক্ষ্যের অনেকটা দূরেই থেমে যেতে হয়েছে তাদের। যদিও সে বিষয়ে কেউ স্পষ্ট জবাব দিতে নারাজ। অমিত শাহ বঙ্গে এসে ঘটা করে ঘোষণা করেছিলেন, বাংলায় এক কোটি সদস্য সংগ্রহ করবে বিজেপি। তার অর্ধেক পথ পৌঁছেই হাল ছাড়তে হল কেন? রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জবাব, ‘‘সব সময় টার্গেট (লক্ষ্য) বড়ই রাখতে হয়। এক কোটি টার্গেট রেখেছিলাম বলে আধ কোটিতে পৌঁছতে পেরেছি। আধ কোটি ঘোষিত টার্গেট হলে হয়তো ৩০ লক্ষে থেমে যেতে হত।’’ তা হলে ‘এক কোটি সদস্য সংগ্রহ’ কি নেহাতই কথার কথা ছিল? আগে থেকেই বিজেপি জানত যে, এ রাজ্যে দলের পক্ষে এক কোটি সদস্য জোগাড় করা সম্ভব নয়? সুকান্ত বলছেন, ‘‘টার্গেট যখন ঠিক করা হয়, তখন কেউই বুঝতে পারেন না, কতটা সম্ভব আর কতটা নয়। কিন্তু টার্গেট বড়ই রাখতে হয়। এটাই নিয়ম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy