‘বিনীত প্রশ্ন’ (১৫-১) শীর্ষক চিঠিতে পত্রলেখক প্রথমে যা বলতে চেয়েছেন, (‘‘পাকিস্তান-বাংলাদেশের হিন্দু-শিখদের অগতির গতি যে একমাত্র ভারত, তা কি অস্বীকার করা যায়?’’) তার সঙ্গে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের কোনও বিবাদই নেই। বরং সিএএ-বিরোধী আন্দোলন হল সিএএ আরও ব্যাপক, বৃহৎ করার আন্দোলন! কেবল আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের শুধুই হিন্দুরা কেন? এর জন্য আন্দোলন। কেন পাকিস্তানের নির্যাতিত আহমদিয়া, শিয়া, সুফি মুসলমানেরা নন? কেন বালুচিস্তান কিংবা সিন্ধুপ্রদেশের অধিকাংশ মুসলমান অধিবাসী, যাঁরা রাষ্ট্রের ভয়ঙ্কর দমন-পীড়নে বাধ্য হয়ে দেশে-বিদেশে আশ্রয় ভিক্ষা করছেন, তাঁরা অন্তর্ভুক্ত নন? শ্রীলঙ্কার তামিল হিন্দুরা কেন নন? নেপালের হিন্দু মদেশীয়রাও বা কেন নন? আসলে পত্রলেখক যে দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী, সেই দল মনে করছে, সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকারীদের হিন্দু-বিদ্বেষী প্রমাণ করবে। কিন্তু লাভ হবে না! কারণ বহু দিন পর ভারতে একটা প্রকৃত গণ-আন্দোলন হচ্ছে, যার রাশটা যথার্থ শিক্ষিত শ্রেণির হাতেই এখনও পর্যন্ত রয়েছে। এটাই শাসকের অত্যন্ত ভয়ের কারণ! সিএএ অবশ্যই হোক, তাতে বরং ধর্মটা অনুল্লিখিত থাকুক, আর তিনটি দেশের নামও বাদ থাকুক। পারবেন কি?
অমিত সরকার
আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান
রোহিঙ্গারা?
‘বিনীত প্রশ্ন’ (১৫-১) চিঠি প্রসঙ্গে বলি, পাকিস্তান আফগানিস্তান বাংলাদেশে মৌলবাদীদের সৌজন্যে বহু সংখ্যালঘু হিন্দু শিখ খ্রিস্টান যে অত্যাচারের শিকার, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই, তাঁদের নাগরিকত্বের সম্মান দিয়ে ভারতে স্থান দেওয়া অতি মানবিক। কিন্তু প্রতিবাদটা আদৌ এ মানবিক দিকটির বিরুদ্ধে নয়। বরঞ্চ সিএএ মুদ্রার উল্টো পিঠে যে অমানবিক সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা, যা ভারতবর্ষের চিরন্তন ‘সবারে করি আহ্বান’ স্পিরিটকে নগ্ন ভাবে আঘাত করে; প্রতিবাদটা তার বিরুদ্ধে।
সিএএ নাকি ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের যন্ত্রণা নিরসনের জন্য! তা, মায়ানমার কি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নয়, যেখানে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে? লক্ষ লক্ষ নিরীহ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের উদ্বাস্তু শিবিরে নারকীয় অবস্থায় কোনও ক্রমে দিন অতিবাহিত করছেন, কত জন প্রাণরক্ষার লক্ষ্যে ভিড়ে-ঠাসা ছোট্ট নৌকায় ভয়ঙ্কর উত্তাল সমুদ্র অতিক্রম করে মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়ার দিকে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে সলিলসমাধি ‘উপহার’ পাচ্ছেন! কেন এই অসহায়দের সিএএ-র আওতায় আনা হবে না? মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করার ‘অপরাধ’-এ?
পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বাদেও শিয়া আহমদিয়া হাজারা সম্প্রদায়ের মানুষও কিন্তু অত্যাচার অনাচার অবিচারের শিকার। তা হলে ভারতের দরজা তাঁদের জন্যই বা রুদ্ধ থাকবে কেন? তাঁরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন বলে? যে দেশের সংবিধান ‘সেকুলার’ সত্তার উপর প্রতিষ্ঠিত, সে দেশ কোন নৈতিক অধিকারে এমন ন্যক্কারজনক ভাবে অসহায় নিপীড়িত আশ্রয়প্রার্থীদের ধর্ম বিচার করে ঠিক করে, এই দেশ কাকে বরণ করবে বা করবে না?
কাজল চট্টোপাধ্যায়
সোদপুর
নিরাপদ
এনআরসি এবং সিএএ-র বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই পথে নামছেন। কিন্তু আন্দোলন জোরালো করার লক্ষ্যে বিরোধী ঐক্যের ডাক দিয়েও তিনি যে কারণে পিছিয়ে এলেন, তা হাস্যকর। ৮ জানুয়ারি ডাকা বন্ধের ইসু সমর্থন করলেও, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করার অভিযোগে কংগ্ৰেস এবং বামপন্থীদের সঙ্গে এক মঞ্চে তিনি থাকতে নারাজ। নিন্দুকেরা অবশ্য বন্ধের দিন ভাঙচুরের ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করে, পরোক্ষে তাঁর ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। যেমন ঘটেছিল ছটপুজোর সময়, রবীন্দ্র সরোবরের ক্ষেত্রে। গণতন্ত্রের পীঠস্থান বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনা তাঁকে পীড়া দেয় না। তাঁর দলের লোক পুলিশকে বোম মারার কথা বললে বা বেধড়ক ঠ্যাঙানি দিলেও তিনি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন। কলেজের অধ্যাপিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারা বা অধ্যক্ষকে কলার ধরে নিগ্রহ করা, তাঁর কাছে ছোট ঘটনা বা দুষ্টু ছেলের কাজ। সর্বংসহা হয়ে তিনি এ সব মেনে নিলেও, দেশের কঠিন সময়ে জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্যে শান দেওয়া থেকে বিরত থাকলেন, বাম-কংগ্ৰেসের শুধুমাত্র এক দিনের ‘গুন্ডামি’র জন্য। নিন্দুকেরা বলছেন, এনআরসি প্রবক্তাদের চটিয়ে, নিজের কবর খোঁড়ার চেয়ে, আপন রাজ্যে কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে রাজপথ সরগরম করা বেশি নিরাপদ।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭
পরিচয়পত্র
মমতা এনআরসি বাতিলের আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁর মতে, আমরা সকলেই ভারতের নাগরিক, সুতরাং নাগরিক হিসেবে কোনও প্রমাণপত্র দরকার নেই। সাধুবাদ জানাই। কিন্তু একটা প্রশ্ন। আমরা সরকারি কর্মচারী, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত। কোনও কাজের জন্য অন্য দফতর থেকে আগত সরকারি কর্মচারীদের, নবান্নে প্রবেশের সময়, শুধুমাত্র পরিচয়পত্র (আইডেন্টিটি কার্ড) দেখালে ঢুকতে দেওয়া হয় না। খাতায় সই করে, আই-কার্ড ও ফোন নম্বর লিখতে হয়, তার পর অনুমতি মেলে। কেন? নবান্নের কর্মী হলে সহজে প্রবেশ করা যাবে, আর অন্য দফতর থেকে এলে নামধাম লিখতে হবে কেন? আমরা যদি এখন ‘হম কাগজ নহি দিখায়েঙ্গে’-র মতো ‘হম আই-কার্ড নহি দিখায়েঙ্গে’ বলি?
মলয় মুখোপাধ্যায়
সাঃ সম্পাদক
কনফেডারেশন অব স্টেট গভঃ এমপ্লয়িজ় (আইএনটিইউসি)
অবচেতনে
সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে এক মুসলিম বিক্রেতার দোকানে ছোট এক টাকার কয়েন দিলে তিনি তা নিতে চান না। তর্ক জুড়ি এবং উচ্চারণ করি অমোঘ বাক্য: দেশের কয়েন না নিলে তিনি দেশদ্রোহী, তাঁর পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত। প্রবল প্রতিবাদ করে তিনি জানতে চান, আমি কেন শুধু পাকিস্তানের নাম করলাম, সেটা কি তাঁর মুসলিম পরিচয়ের জন্য? ছোট কয়েন তো পাশের হিন্দু দোকানদারও নিচ্ছেন না। তাঁকে আমি কোন দেশে যাওয়ার বিধান দেব?
উত্তর ছিল না আমার কাছে। অবচেতনে লালিত এ রকম ধারণা বহন করে চলেছি আমরা অনেকে। আজ যখন এক শিখ পুলিশ অফিসার টাকার জন্য জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়, তখন মনে মনে উচ্চারিত হয় ‘ইউ টু, ব্রুটাস!’ এবং যদি তার নামটা দেবেন্দ্র সিংহ না হয়ে হত দাউদ শেখ, তখন আমাদের স্বস্তি অনেক বেশি হত।
ফারহান, শাবানা, ইরফান হাবিব বা শাহিনবাগের জমায়েত যখন সিএএ-র বিরোধিতা করছেন, সেটা খুব স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু হিন্দু পরিচয়ধারী বিশিষ্ট জনের বিরোধিতায় চমক লাগে। তড়িঘড়ি এঁদের আরবান নকশাল বা কংগ্রেসি বানিয়ে মনে শান্তি আসে। আর এই চরিত্র নির্মাণ করতে করতে কখন যে সমগ্র জাতির চরিত্র নির্মাণ হয়ে যায়, তা অনুভব করি ভারতীয় শিল্পপতির অভিজ্ঞতায়, বিদেশে গিয়ে যখন তিনি শোনেন: আপনি হিন্দু? মুসলিমদের ঘৃণা করেন তো?
শুভেন্দু দত্ত
কেষ্টপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy