এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পাট চাষিরা চরম সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছেন। ভরা বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট নিয়ে তাঁরা যারপরনাই সমস্যার সম্মুখীন। রোদে পুড়ে, জলে ভিজে, শরীর-নিংড়ানো পরিশ্রমে চাষিরা প্রতি বছর পাট চাষ করে থাকেন দুটো পয়সার আশায়। এ বছর বর্ষার খামখেয়ালিপনাতে মাঠের পাট নিয়ে চাষিদের দুর্দশার সীমা নেই। তাঁরা ভেবে উঠতে পারছেন না, কী ভাবে পাট কেটে জলাশয়ে পচিয়ে ঘরে তুলবেন পাটের সোনালি তন্তুকে। ভাল ফলন ও ন্যায্য দামের প্রত্যাশায় চাষিরা পাট বুনেছিলেন। প্রথম দিকে আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত অনুকূল থাকায় পাট ভাল বেড়ে উঠেছিল। মাঠভরা পাট দেখে জুড়িয়েছিল চাষিদের মন-প্রাণ। আশায় বুক বেঁধেছিলেন ভাল ফলনের। কিন্তু বর্ষার বৃষ্টিহীনতা সব কিছু চুরমার করে দিল। বৃষ্টির চরম ঘাটতির জন্য এ বছর পাট লম্বায় বড় হলেও পরিপুষ্ট হয়নি। আঁশ ভরাট না হওয়ায় মোটা হয়নি পাট গাছ। অতএব ফলন আশানুরূপ হবে না। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও রোদের দাপটে অনেক জমিতে পাট পুড়ে গিয়েছে।
চাষিরা আরও বেশি সঙ্কটের গভীরে তলিয়ে গেলেন পাট কেটে পচানোর জন্য জলের ঘাটতিতে। পাট বোনার তিন-চার মাসের মধ্যেই পাট কেটে জলাশয়, পুকুর, খাল, বিল, নদী-নালাতে জাঁক দিতে হয়। কিন্তু এ বার চার দিকে সমস্ত কিছুতেই খরার ছাপ প্রকট। পাট কাটার পর পচানোর জন্য বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনে জল তুলছেন চাষিরা। তাতে চাষিদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বিঘাপ্রতি পাট চাষ করতে গিয়ে তাঁদের যা খরচ দাঁড়াচ্ছে, সেখানে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী বিক্রি করতে গেলে কিছুই পকেটে থাকছে না। চাষিরা ভেবে কূলকিনারা করতে পারছেন না, কী ভাবে এই পাট চাষের ক্ষতির হাত থেকে নিজেদের মুক্ত করবেন।
একদা পাট ছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রধান অর্থকরী ফসল। বাংলার পাট বিদেশের বাজারেও সুনাম অর্জন করেছিল তার উৎকৃষ্ট মানের জন্য। সে সময় ছিল পশ্চিমবঙ্গে পাটের স্বর্ণযুগ। সরকারি উদাসীনতা, ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, চাষের খরচ বৃদ্ধি, চটকল বন্ধ হয়ে যাওয়া, সহজলভ্য প্লাস্টিকের অত্যধিক ব্যবহারে পাট চাষের গুরুত্ব ও কদর কমেছে।
তবুও পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দুই দিনাজপুর ও মালদহ জেলার বেশ কয়েক জন কৃষক পাট চাষের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তাঁরা এখন একরাশ আশঙ্কা, উৎকণ্ঠা, ঝুঁকি নিয়ে রাত জাগছেন। ভাল দাম পাওয়া তো দূরের কথা, পাট চাষের খরচটুকু উঠে আসবে কি না, তা নিয়ে চাষিরা চিন্তান্বিত ও আতঙ্কিত। যাতে চাষিরা পাটের ন্যায্য মূল্য পান ও ক্ষতির হাত থেকে নিজেদের কিছুটা মুক্ত করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব সমাজে পড়তে বাধ্য।
পাভেল আমান
হরিহরপাড়া, মুর্শিদাবাদ
সরকারি সেচ
আজও পাট বাংলার কৃষকের কাছে অর্থকরী ফসল হিসেবে গণ্য হয়। পাটকল শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার সঙ্গে রাজ্যের পাট উৎপাদন যুক্ত। ভারতে কৃত্রিম কাপড়ের বস্তা ব্যবহারের সরকারি অনুমোদন পরিবেশের ক্ষতি করছে। এই অনুমোদন বাতিল করা যেমন প্রয়োজন, তেমনই পাটের তৈরি নানা পণ্য উৎপাদনের জন্য কলকারখানা তৈরি করা জরুরি। কিন্তু করবে কে? দেশ বা রাজ্য সরকার কৃষকের উন্নয়নের চাইতে কর্পোরেট মালিকদের উন্নতিতে বেশি আগ্রহী।
নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার একাংশে এ বার ব্যাপক পাট চাষ হয়েছে। ধান বা অন্য কোনও চাষে লোকসান হলেও পাট চাষ কৃষকের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে দেয়। গত মরসুমে পাটের সর্বোচ্চ মূল্য ৯০০০ টাকা কুইন্টাল হয়েছিল। কিন্তু এ বার সারের মূল্যবৃদ্ধি, সেচের জন্য ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির ফলে খরচ বেড়েছে। অথচ, এ বারে বাজারে পাটের মূল্য ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যে। কৃষকের মাথায় হাত।
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আগে পাট ভেজানোর জন্য জলাভূমিগুলিতে সরকার নিজ খরচে মাটির নীচ থেকে জল তোলার ব্যবস্থা করুক। অথবা, গঙ্গার জল সরবরাহ করে পাট ভেজানোর ব্যবস্থা করুক। গত ২৭ জুলাই সারা ভারত কিসান মহাসভার পক্ষ থেকে নদিয়া জেলাশাসকের কাছে পাট ভেজানোর দাবি নিয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। জেলাশাসক সমস্ত ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে পাঠানো চিঠিতে ‘যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার’ সুপারিশ করেন। ব্লক আধিকারিকরা চাষিদের কাছে পরিস্থিতির খোঁজখবর করছেন। তার চেয়ে গ্রামে গ্রামে সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হোক, কোন ডোবা-খানায় জল লাগবে। যত টাকা খরচ হবে, তা সরকার মিটিয়ে দেবে, এই ঘোষণা করা হোক।
কৃষ্ণপদ প্রামাণিক
সদস্য, সারা ভারত কিসান মহাসভা
করদানের সময়
আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগটাই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে করদাতাদের কাছ থেকে। আইন অনুযায়ী, কোনও অর্থবর্ষ ৩১ মার্চ সমাপ্ত হওয়ার পরের দিন থেকে সেই বছরেরই ৩১ জুলাই পর্যন্ত ‘রিটার্ন’ দাখিল করা যায়। না পারলে শেষ তারিখের মধ্যে ‘বিলম্বিত রিটার্ন’ দাখিল করতে পারেন। পূর্বে সে ক্ষেত্রে কেবলমাত্র প্রদেয় কর সুদ-সহ প্রদান করতে হত। এ ছাড়া কিছু করদাতার ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক ক্ষতি ও মূলধনি ক্ষতি আয় থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যেত না। কয়েক বছর আগে এই অসুবিধাগুলির সঙ্গে আর একটি ঝামেলা যুক্ত করা হল— যাঁদের বাৎসরিক আয় পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে তাঁদের অতিরিক্ত ১০০০ টাকা এবং তার চেয়ে বেশি আয়যুক্ত করদাতাকে ৫০০০ টাকা বিলম্বজনিত শুল্ক প্রদান করতে হবে। গত বছর থেকে বিলম্বিত রিটার্ন, যা আগে পরবর্তী ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেওয়া যেত, তা কমিয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হল।
কেন করদাতাদের হাত থেকে রিটার্ন দাখিলের পর্যাপ্ত সময় কেড়ে নেওয়া হচ্ছে? আয়কর আইন অনুযায়ী আজ প্রায় সমস্ত রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করতে হয়। প্রতি বছর আয়কর দফতরের তরফ থেকে নতুন রিটার্ন ফর্ম এবং তাকে অনলাইনে দাখিল করার জন্যে প্রয়োজনীয় ‘ইউটিলিটি’ বা বিশেষ ধরনের ফাইল দেওয়া হয়। প্রতি বছর সে সব প্রকাশ করতে মে-জুন মাস পর্যন্ত দেরি করে আয়কর দফতর। এই বছরেও ১ জুলাই বিভিন্ন রিটার্ন ফর্মের ‘অফলাইন ইউটিলিটি’ প্রকাশ করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তার আগে বহু করদাতা চাইলেও রিটার্ন দাখিল করতে পারেননি।
সেই সঙ্গে, বিভিন্ন ব্যক্তি, নিয়োগকর্তা এবং সংস্থার তরফ থেকে কেটে নেওয়া করের শংসাপত্র (টিডিএস) করদাতাকে প্রদান করার শেষ তারিখ ১৫ জুন। এর পর বিভিন্ন সংস্থার করদাতা সংক্রান্ত প্রদেয় তথ্য যাচাই করে যদি ত্রুটি পাওয়া যায়, তখন সে সব সংশোধনের জন্যে সাধারণত আরও এক মাস সময় লাগে। সুতরাং, আপাত ভাবে এক জন করদাতা রিটার্ন দাখিলের জন্য ১ এপ্রিল থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ১২২ দিন সময় পাচ্ছেন বলে মনে হলেও, বাস্তবে বহু করদাতা মাত্র ৩০-৪৫ দিন সময় পান। দেশের মানুষ যদি স্বচ্ছ হতে চেয়ে দেশকে কর দিতে চান, তাঁকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হবে না কেন?
সঞ্জীব চক্রবর্তী
হাকিমপাড়া, শিলিগুড়ি
শব্দবাজি
আরামবাগে বেশ কিছু লজ বা অনুষ্ঠানবাড়ি আছে, যেগুলিতে অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বাড়িগুলিতে যখন বিয়েবাড়ি চলে, তখন যথেচ্ছ শব্দবাজি ফাটানো হয়, যা গভীর রাত অবধি চলে। ফলে আশপাশের বাসিন্দাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ক্রমশ এই অত্যাচার বেড়েই চলেছে।
অরিন্দম ঘোষাল
আরামবাগ, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy