নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।
আশা করা গিয়েছিল, স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তিতে দুর্দশাগ্ৰস্ত মানুষের জন্য কিছু দিশার উল্লেখ থাকবে এ বারের বাজেটে। কিন্তু সে পথে না হেঁটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ‘অমৃত কাল’-এর চর্চায় মনোনিবেশ করলেন (‘হাতে রইল অমৃত!’, ২-২)। কোভিডের তৃতীয় প্রবাহের হাত থেকে এখনও দেশ সম্পূর্ণ নিষ্কৃতি পায়নি, অতিমারির দাপটে অর্থব্যবস্থা ধুঁকছে, অভ্যন্তরীণ শ্রমের বাজারে মর্মান্তিক পরিস্থিতি, চাকরির বাজারে মন্দা, মানুষের আয়ও নিম্নমুখী। এই সময়ে বাজেটে নেই তরুণ প্রজন্মের সঙ্কটের সুরাহার কোনও ইঙ্গিত। সুদূর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে নীতি স্থির করা হল।
পণ্যের চাহিদার মূলে আছে মধ্যবিত্তের আয়, কারণ তাঁরাই বাজারের মূল ক্রেতা। করের বোঝা থেকে কিছুটা রেহাই মিললে, অর্থাৎ মধ্যবিত্তের আয় একটু না বাড়লে, তাঁরা শিল্পপণ্য কিনবেন কী করে? আর এতে অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে কী উপায়ে? অর্থমন্ত্রীর মতে, যে হেতু সরকারি বিনিয়োগের বেশির ভাগই পরিকাঠামো নির্মাণে খরচ হবে, অতএব সরকারি বিনিয়োগ বাড়লে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে, সঙ্গে কর্মসংস্থান বাড়বে। প্রশ্ন হল, বাজারে যদি পণ্যের চাহিদা না থাকে, তা হলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে কী ভাবে? তা ছাড়া সরকারি বিনিয়োগ রূপায়ণও সময়সাপেক্ষ। কাজেই বাস্তবে তা কতটা সাফল্য পাবে, কত দিন অপেক্ষা করতে হবে আমজনতাকে, সেটাই দেখার।
উৎপল মুখোপাধ্যায়
চন্দননগর, হুগলি
আশাহত প্রবীণ
এক জন কিছু টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেয়নি। বছর ঘুরে গিয়েছে, উত্তমর্ণ ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। টাকা ফেরত পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে, তবু এক দিন অভ্যাসবশে এক বার তাগাদা দিতে গিয়ে দেখে অধমর্ণ তার বাড়ির বাগানে একটা গাছের চারা পুঁতছে। কিছু বলার আগেই অধমর্ণ বলল, “এই দেখো ভায়া, সেগুন গাছের চারা পুঁতে দিলাম। আর চিন্তা নেই। পঁচিশ বছর পরে এ গাছের মূল্য হবে পাঁচ লাখ টাকা। তুমি সামান্য পাঁচ হাজার টাকার জন্য এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন?”
এ বারের বাজেট দেখে এই গল্পটা মনে পড়ল। বাজেটে দেশের দারিদ্র, বেকারত্ব, শিক্ষা, কৃষি ইত্যাদির সঙ্কট সমাধানের কোনও কথা নেই, কিন্তু পঁচিশ বছর পরে দেশে কত ট্রেন চলবে, তার উল্লেখ আছে, পাঁচ বছর পরে কত জনের চাকরি হবে তার আশ্বাসও আছে। প্রবীণ নাগরিকদের কথা বাজেটে নেই। খুবই স্বাভাবিক। স্থায়ী আমানতে সুদের হার কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে, আর বাজারদর বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয়গুণ। এ অবস্থায় তাঁরা দুটো ডাল-ভাত আর চারটে ওষুধের বড়ি খেয়ে বাঁচবেন, তা শুধুই দুরাশা। দারিদ্রের জ্বালায় কত কৃষক আর প্রবীণ নাগরিক আত্মহত্যা করেছেন, তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না, যাবেও না। পঁচিশ বছর বাঁচব না, এমন একটা ঘোষণা শুনতে পেলে অন্তত মরে বাঁচি।
মানস বিশ্বাস
রৌরকেলা
চাষির লাভ
‘দিশাহীন’ (৩-২) সম্পাদকীয় নিবন্ধের বক্তব্য সমর্থনযোগ্য। প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিশ্বাসঘাতকতা করা হল কৃষকদের সঙ্গে। এ বছর ২.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে সহায়ক মূল্যের খাদ্যশস্য ক্রয়ের জন্য, যা গত বছরের প্রকৃত বরাদ্দের তুলনায় কম। বেকারদের কর্মসংস্থানের উল্লেখ নেই। দেশে ২ বছরে কাজ হারিয়েছেন ৩ কোটি মানুষ। অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, ২০ শতাংশ কাজ ফিরে পাবেন। বাকি ৮০ শতাংশের কী হবে? পরিকাঠামো খাতে ব্যয়বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা আদৌ সুফল দেবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলির রূপায়ণ কেমন হবে, এবং সেগুলো কতটা শ্রমনিবিড় হবে, তার উপর।
অর্থনীতিতে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বাড়াতে বাজেটে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আয়করের সুবিধা দেওয়া দরকার ছিল। বিশেষত বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা থেকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ও ভোগ্যপণ্যের চাহিদাকে বাড়াতে এটা করা হবে ভাবা হয়েছিল। ব্যাঙ্কে সুদের হার উত্তরোত্তর কমছে। আয়কর সামান্যতম কমেনি। সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা সীতারামন বলেছেন, “আয়কর যে বাড়াইনি, এটাই কি যথেষ্ট নয়?” অর্থাৎ, কর কাঠামো অপরিবর্তিত রাখাটা নিজের ‘কৃতিত্ব’, এটাই বোঝাতে চেয়েছেন।
শক্তিশঙ্কর সামন্ত
ধাড়সা, হাওড়া
শ্রমিকের প্রাপ্তি
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের বহু শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়িতে বসে দিন কাটাচ্ছেন। খবরে প্রকাশ, গত অর্থবর্ষে ১০০ দিনের কাজে বাজেট খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থবর্ষে তা করা হয়েছে ৭৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, গরিব মানুষের অন্নে কাটছাঁট করা হল। দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষরা ১০০ দিনের কাজের উপর ভরসা করে সংসার চালান। বাজেট কমলে শ্রম দিবস কমবে, আয় কমবে। এই কি শ্রমিকদরদি বাজেট?
মুন্সি দরুদ
কাজিপাড়া, বীরভূম
কেবল উৎসব
বাজেট যেন শেয়ার বাজারের বিশ্বকর্মা পুজো। এক দিন হইচই, তার পর আগের মতোই ডামাডোল। গত বছরের বাজেট কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন খাতে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল তার কতটুকু খরচ হয়েছে, বাকি বরাদ্দ এবং কাজের কী অবস্থা, কবে শেষ হবে সেই সব কাজ, আদৌ হবে কি না, এই সব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না দিয়েই আবার নতুন করে অর্থ বরাদ্দ, নতুন স্বপ্ন দেখানো শুরু হয়। পুরো ব্যাপারটাই যেন সাজানো-গোছানো নাটক। হিরে-জহরতের শুল্ক কমে, কর্পোরেট শুল্ক কমে, কিন্তু সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, জ্বালানির দাম, এমনকি বিমার প্রিমিয়াম।
শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-১৪১
চাই বিকল্প
বাজেট এবং তৎপরবর্তী বিভিন্ন আলোচনা শুনে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাজই হল শুধু সমালোচনা করা। তারা বিকল্প গঠনমূলক কিছুর কথা ভাবতে পারে না। ক্ষমতায় এসে আবার একই ছাঁচে বাজেট তৈরি করে। আমরা দাবি তুলতে পারি, সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলো নিজস্ব অর্থনীতিবিদদের দিয়ে তৈরি করে দেখাক এমন বাজেট, যাতে সাধারণ মানুষের সমৃদ্ধি আসবে। বিচ্ছিন্ন সমালোচনা অন্ধের হস্তী-দর্শনের সমতুল। দলগুলি বিকল্প পূর্ণাঙ্গ বাজেট তৈরি করে দেখাক। বাজেটের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ ও তদনুযায়ী কর্মসূচির প্রতিফলন পাওয়া যায়। তখন মানুষ দুধকে দুধ, আর জলকে জল বুঝতে পারবে।
মৃগেন গাঁতাইত
কলকাতা-১৫৪
কালের গর্ভে
‘মহাকালের বাজেট’ (সম্পাদকীয়, ২-২) পড়ে মনে হচ্ছে, ‘অচ্ছে দিন’-এর মরীচিকা আগামী ২৫ বছরের জন্য স্থগিত। এখন যে অমৃত কালে আমরা প্রবেশ করলাম, সেখানে একশো দিনের কাজে, গণবণ্টন ব্যবস্থায়, কৃষি এবং সাড়ে পাঁচ কোটি বেকার মানুষের কোনও স্থান নেই, আশা নেই। অবাধ্য কৃষক যা সাজা পাওয়ার পেয়েছে। ফসলের ন্যূনতম দামের আশা ছেড়ে ড্রোনের নজরদারিতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে তাঁদের। যে দেশে ২৪ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে, বেশির ভাগ গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জল নেই, সেই দেশে ড্রোন-নির্ভর কৃষি আর প্রযুক্তি-নির্ভর অর্থনীতি কি উপযুক্ত হবে?
অসীমেশ গোস্বামী
শ্রীরামপুর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy