Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Rabindra Sangeet

সম্পাদক সমীপেষু: গাওয়া সহজ নয়

কিশোর কুমারের রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবামের সমালোচনা পড়েছিলাম এক বিশেষ বাংলা পত্রিকায়। গানগুলো যে কিছুই হয়নি, এ-হেন মন্তব্য করে বিশিষ্ট এক সমালোচক তাঁর গায়নভঙ্গিকে বিদ্ধ করেছিলেন।

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪ ০৪:২০
Share: Save:

অলক রায়চৌধুরী রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়ন প্রসঙ্গে যা লিখেছেন তাঁর ‘কেমন করে গান করো’ (৮-৫) শীর্ষক প্রবন্ধে, তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এ সম্পর্কে কিছু কথা বলার উদ্দেশ্যে এই চিঠি। আশা ভোঁসলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, তিনি কবিগুরুর গান ঠিক মতো গাইতে পারবেন কি না। রাহুল দেব বর্মন এ ব্যাপারে তাঁকে সতর্ক করে বলেছিলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া সহজ নয়। কিশোর কুমারের রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবামের সমালোচনা পড়েছিলাম এক বিশেষ বাংলা পত্রিকায়। গানগুলো যে কিছুই হয়নি, এ-হেন মন্তব্য করে বিশিষ্ট এক সমালোচক তাঁর গায়নভঙ্গিকে বিদ্ধ করেছিলেন। অন্য দিকে, দেবব্রত বিশ্বাস না হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কে কতটা রবীন্দ্র অনুসারী, তা নিয়ে যেমন তর্কবিতর্ক চলত, তেমনই হেমন্তর রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়নভঙ্গিতে আধুনিক গানের অনুপ্রবেশ ঘটে গেছে— এই মর্মে অনেক শ্রোতা হাহুতাশও করতেন। দেবব্রতর গানগুলির শুরুতে যন্ত্রের ব্যবহারও এককালে খুবই আলোচিত হত। সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালিমাত্রেই অবগত যে, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ যে ভাবে অনেক গায়ক-গায়িকাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করাতে উৎসাহিত করেছে, তার ফলে অনেক আধুনিক গানের গায়করা রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন রাতারাতি। তখন থেকেই এক দল মুখর হয়ে ওঠেন, যে কোনও গায়ক-গায়িকার রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার বিরুদ্ধে। তখন থেকেই অনেক ধরনের শিল্পীর রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যেই পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলের এক বার কাম রেস্তরাঁয় ‘বড় আশা করে এসেছি গো’ গানটি নাকি ক্যাবারে নাচের সঙ্গে গেয়ে জনৈক ব্যক্তি পুলিশের তাড়া খান। তখনও রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ৫০ বছর পার হয়নি। আছে কপিরাইট আইন।

তার পর কপিরাইট আইন উঠে গেলে নতুন করে সরকার আর এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। এল অন্য রকমের এক খোলা হাওয়া। যিনি নিজের গান নিয়ে যে একান্ত ইচ্ছা প্রকাশ করে গিয়েছেন, তাঁর সেই ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানানো কতটা প্রয়োজন, তা ভেবে কোনও কূল-কিনারা পাওয়া গেল না। ধর্মতলায় এক ভিড় ভর্তি ক্যাসেটের দোকানের সেলসম্যান ছোকরাকে মন্তব্য করতে শুনেছি— রবীন্দ্রনাথ লিখলেন লিখলেন, সুর দিতে গেলেন কেন? সত্যিই ভয়ঙ্কর। আজ এই ভয়ঙ্কর জায়গায় দাঁড়িয়ে আমাদের ভয়মুক্ত করার জন্য সর্বতোভাবে অনুশীলন করা দরকার। না হলে আরও কয়েক বছর পর কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে রবীন্দ্রসঙ্গীত, ভাবলেও ভীষণ
আতঙ্ক হয়।

প্রতিমা মণিমালা, হাওড়া

কোলাহল

অলক রায়চৌধুরীর লেখা প্রবন্ধটি পাঠ করে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথেরই একটি গানের লাইন মনে এল— ‘গান হায় ডুবে যায় কোন কোলাহলে’। রবীন্দ্রসঙ্গীতের পরিবেশন নিয়ে বর্তমানে এক শ্রেণির শিল্পী ফিউশনের নামে যে যথেচ্ছাচার চালাচ্ছেন, তাকে এক কথায় বোঝানোর জন্য এই লাইনটিই যথেষ্ট। রবীন্দ্রগানের বৈশিষ্ট্য ও গরিমা রক্ষিত আছে তার বাণী ও ভাবকে আশ্রয় করেই। কপিরাইটের বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর থেকেই এক শ্রেণির রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মূল গানের বাণী ও ভাবের ঘরে অনেকটা তস্করের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এঁরা আর যা-ই হোক, রবীন্দ্রগানের বাণী, ভাব এবং সর্বোপরি শান্ত সুরের সাধক নন। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজেদের ভাবের ভবরূপটিকে রবীন্দ্রনাথের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। এঁদের আছে নিজস্ব বাছাই করা সমাজমাধ্যমের শ্রোতা, যাঁরা তাঁদের এনে দিচ্ছে জাদুকরী ‘ভিউয়ারশিপ’। এই গায়করা প্রতিনিয়ত অনর্থক সুর-বিকৃতি, উৎকট যন্ত্রানুষঙ্গ আর কম্পোজ়িশন-এর নামে শ্রোতাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছেন। আমাদের শুনতে বাধ্য করা হচ্ছে বেশ কিছু জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীতের পঙ্‌ক্তিগুলির মাঝে অনাবশ্যক কথার প্রবেশ অথবা তালবাদ্যের ঘনঘটা, যা গানটির মূল ভাবের সঙ্গে একেবারেই মেলে না।

তবে আশার কথা এটাই যে, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই শুদ্ধসঙ্গীতের চর্চা করেন। তাল-লয়-বাণী-ভাবের মাহাত্ম্য জেনেই তাঁরা গানের জগতে পা রেখেছেন। তাই এই কথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যেতে পারে, বিশুদ্ধ, অবিকৃত রবীন্দ্রসঙ্গীত যদি কারও রসের খোরাক না জোগাতে পারে, তবে সে দায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের নয়, বরং শ্রোতার। একমাত্র পরিশীলিত শ্রোতারাই পারেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের ঐতিহ্যকে তার আদি ভুবনমোহন গরিমায় ধরে রাখতে। তা না হলে গানের বদলে শুধু শোনা যাবে বেসুরো কোলাহল।

সৌম্য বটব্যাল, দক্ষিণ বারাসত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

তিক্ত আবেগ

‘সাহিত্যের নারী: দুই মেরু’ (৫-৫) শীর্ষক প্রবন্ধে যশোধরা রায়চৌধুরী পুরুষের চোখে নারীর শরীর নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে জানাই— কাব্যে নারীর রূপবর্ণনা আসলে রমণীদের দেহের বর্ণনা। সৌন্দর্য না থাকলে শিল্পীর সৃষ্টি অর্থহীন। এই সৌন্দর্য প্রকাশের ক্ষমতা একমাত্র কবি বা লেখকের স্ব স্ব প্রসূত কবিতা বা গদ্যেই দেখা যায়। যোগ হয় সাহিত্যের রস ও ব্যঞ্জনা। রস সৃষ্টির আর এক নাম সৌন্দর্য সৃষ্টি। সাহিত্য সৌন্দর্যের উপাসক। সৌন্দর্যের ধ্যান মানুষের স্বভাবজাত। সৃষ্টির শুরু থেকেই পুরুষ প্রকৃতির সৌজন্যে নারীর রূপ সৌন্দর্যের দেহবল্লরির আকর্ষণে মুগ্ধ, অনুরক্ত।

কিন্তু বাস্তব জীবনে নারীর রূপ বর্ণনায় পুরুষের তুলির টানে অনেক সময় মাধুর্য থাকে না, কঠিন অবয়ব স্থান পায়। তা কি নিছক নারী শরীরের উপর আক্রোশ থেকে আহূত? যেমন, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের আঁকা স্ত্রী’রা প্রায়ই বীভৎস নিষ্ঠুর ও কদর্য। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে আসে, নারীর যৌবনের সুঠাম তনু পুরুষের কাঙ্ক্ষিত প্রথম বস্তু নয় কি? এ তো প্রকৃতির অমোঘ সত্য। সেখানে যদি নারীর ছলনার শিকার হয় কোনও সৎ পুরুষ, তা হলে তো সেই পুরুষের তিক্ত আবেগের বিস্ফোরণ হবেই। সাহিত্য তো সমাজেরই দর্পণ। স্রষ্টা অর্থাৎ লেখকের ভাবনার বৈচিত্র ধরা পড়ে তাঁর নিজের লেখার মধ্যে। কল্পনার মাধুরী মিশিয়ে সৃষ্টি হলেও সত্যের আবরণের উন্মোচন তো সেখানে থাকবেই। তবুও পরিশেষে বলতে হয় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে, শিল্প হল সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি, কোনও অসংযত কল্পনাবৃত্তির সৃষ্টি নয়।

নারায়ণ সাহা, কলকাতা-৮৪

বিমার বোঝা

‘স্বাস্থ্যের অধিকার’ (২৪-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক ও যুক্তিযুক্ত। ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক নাগরিক নতুন বিমা কিনতে পারবেন, বিমা কেনার আগে কোনও রোগ থাকলে সেই রোগের চিকিৎসার ব্যয়ও এই বিমার আওতায় আসবে— এমন বিষয়গুলি নিঃসন্দেহে খুবই আকর্ষণীয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, চালু স্বাস্থ্যবিমাগুলির প্রিমিয়াম এত বেড়েছে যে, সেগুলি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে বয়স্ক নাগরিকদের পক্ষে। একটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটির বাস্তব অবস্থা বোঝা যাবে। এক প্রবীণ নাগরিক ও তাঁর স্ত্রীর তিন লক্ষ টাকার যৌথ স্বাস্থ্যবিমার ২০১৭-তে জিএসটি সমেত এক বছরের প্রিমিয়াম ছিল ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা। ২০১৮-য় সেই প্রিমিয়াম হয় ১৫ হাজার ১৭০ টাকা ও ২০১৯-এ তা আবার বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৯৬২ টাকা। আর ২০২১ থেকে সেই প্রিমিয়াম এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ১৮২ টাকা। স্বাস্থ্যবিমার এই বিশাল পরিমাণ প্রিমিয়াম দিতে অক্ষম হওয়ায় সেই প্রবীণ মানুষটি বিমা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। স্বাস্থ্যবিমার উপর জিএসটি-র বোঝা ১৮%।

এমন নির্মম বৈষম্যের কারণে প্রবীণ নাগরিকদের পক্ষে নতুন স্বাস্থ্যবিমা কেনা তো দূরের কথা, পুরনো স্বাস্থ্যবিমাগুলিই তাঁরা আর টেনে নিয়ে যেতে পারছেন না। এই প্রিমিয়ামের বোঝা না কমিয়ে নতুন বিমা কেনার লোভ দেখানো কেন?

দেবাশিস মিত্র, মুন্সিরহাট, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore Rabindra sangeet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE