সুমিত ঘোষের তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন ‘আলোর শহরে আঁধারেই পড়ে ভারতের অলিম্পিক স্বপ্ন’ (১২-৮) নিয়ে এই চিঠি। ভারত এ বার অলিম্পিক্সে ভাল ফল করতে পারেনি। মাত্র ছ’টি পদক, ক্রমতালিকায় ৭১ নম্বরে। একটি সোনা জিতলে অনেক উপরে চলে যেত, কিন্তু হল না জ্যাভলিনে নীরজ চোপড়া দ্বিতীয় স্থান অধিকার করায়। বিনেশ ফোগতও সোনা-রুপোর সামনে এসে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বঞ্চিত হলেন। ভারত এ বার ১১৭ জনের দল পাঠিয়েছিল, খরচও কম করেনি, কিন্তু আশানুরূপ ফল হল না।
অনেকেই বলেন, অলিম্পিক্সে মেডেল পাওয়া প্রাথমিক ভাবে সে দেশের আর্থিক অবস্থার ইঙ্গিতবাহী। দরিদ্র দেশ কী ভাবে খেলাধুলার পরিকাঠামো তৈরি করবে? যে দেশ যত আর্থিক ভাবে সবল, সে দেশের পরিকাঠামো তত ভাল, তত মেডেল। কথাটা যেমন ভুল নয়, অপর পক্ষে এটাও দেখি বৎসোয়ানা, কেনিয়ার মতো কিছু উন্নয়নশীল দেশ অলিম্পিক্সে বেশ কিছু সোনার মেডেল জিতে নেয়। এগুলো তাঁদের ব্যক্তিগত সাধনা ও স্পনসরশিপের ফল। ১৪০ কোটির দেশ ভারতও অলিম্পিক্সের আসরে একটু একটু করে এগোচ্ছে, এতগুলো চতুর্থ স্থান পাওয়া তারই পরিচায়ক। আমাদের দেশে খেলাধুলার পরিকাঠামো আগে কিছুই ছিল না, এখন কিছুটা হয়েছে। এটা আশাব্যঞ্জক। তবে, এ বার ব্যাডমিন্টন, কুস্তি, ভারোত্তোলন প্রভৃতি ইভেন্টে মেডেল মাত্র একটি, যা ভারতকে পিছিয়ে দিল। জ্যাভলিনে পারলে ডিসকাস থ্রো-এ কেন পারবে না ভারত? তৃণমূল স্তর থেকে খেলোয়াড়দের খুঁজে এনে ছোটবেলা থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করতে হবে। চিন নাকি ছ’-সাত বছর বয়স থেকে শিশুদের নানা খেলার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। তাই তাদের এত সাফল্য। এ ভাবে আমরাও পারি না?
অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
সরকারি উদ্যোগ
টোকিয়ো অলিম্পিক্সের পর থেকে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের জন্য জন্য খরচ করা হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকা। অথচ, প্যারিস অলিম্পিক্সে ভারতের পদক সংখ্যা দুই অঙ্কেও পৌঁছয়নি। শুধুমাত্র প্রতিভা থাকলেই অলিম্পিক্সে পদক জেতা যায় না, খেলোয়াড়দের নিজেদের মধ্যে পদক জেতার খিদে না থাকলে এবং তাঁরা শৃঙ্খলাপরায়ণ না হলে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও পদক আসবে না। উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, কুস্তিগির বিনেশ ফোগত মহিলাদের ৫০ কেজি বিভাগে ফাইনালে উঠেছিলেন। কিন্তু ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। অলিম্পিক্স ফাইনাল থেকে বাদ পড়ার পরেই ক্রীড়া আদালতে আবেদন করেন বিনেশ। সেখানে তাঁর আর্জি ছিল, যে-হেতু নিয়ম মেনে তিনি ফাইনালে উঠেছেন, তাই অন্তত রুপোর পদক দেওয়া হোক। কিন্তু বার বার দিন স্থির হওয়ার পরেও রায়দান পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বিনেশের আবেদনটাই খারিজ করে দেয় ক্রীড়া আদালত এবং জানায় অলিম্পিক কুস্তিতে পদক দেওয়ার যে নিয়ম আগে কার্যকর ছিল, সেই নিয়মই বহাল থাকবে। অর্থাৎ, অলিম্পিক্সের এই বিভাগের সকল প্রতিযোগীর মধ্যে তিনি থাকবেন সবার শেষে। খুবই বেদনাদায়ক ভারতীয় ক্রীড়া প্রেমিকদের কাছে। এর দায় অবশ্যই বিনেশের কোচ, চিকিৎসক এবং ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন-কে (আইওএ) নিতে হবে।
ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় তিনটি খেলা হল— হকি, ক্রিকেট এবং কবাডি। এর মধ্যে হকি এক সময় ভারতের জাতীয় খেলা হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন কোনও একটি নির্দিষ্ট খেলাকে জাতীয় খেলা বলা যায় না। ১৯২৮ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে ভারতের হকি দল অলিম্পিক্সে একাধিক বার সোনা জয় করেছে। এ বারও তারা ব্রোঞ্জ পেয়েছে। তবে, পড়শি রাষ্ট্র চিন যেখানে পদক তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে বা আগেও এক থেকে দশের মধ্যেই থেকেছে, সেখানে ভারতের ৭১তম স্থান দেখে লজ্জা লাগে।
এক জন ভারতীয় হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকার, সমস্ত রাজ্য সরকার এবং আইওএ-র কাছে আমার আবেদন, সব খেলাধুলার ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব দেওয়া হোক, যাতে ভারত আগামী দিনে এই প্রতিযোগিতায় আরও ভাল ফল করতে সমর্থ হয়। এর জন্য সরকারকে ক্রীড়া অনুসারে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে, এমনকি ব্লক স্তরেও খেলাধুলার পরিকাঠামো এবং কোচিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
সন্দীপ মণ্ডল, কোন্নগর, হুগলি
খিদে কোথায়
এ বছরের ১১৭ জন অলিম্পিক প্রতিযোগীর মধ্যে কত জনের নাম আমরা জানি? অথচ, ক্রিকেটের ১৬ নম্বর ব্যক্তি পর্যন্ত আমাদের মুখস্থ। ফুটবলে অত দূর না হলেও ৮-১০ জনের নাম তো বলে দিতেই পারা যায়। জিমন্যাস্টিক্সে একটাই দীপা কর্মকার তৈরি হয়েছিল বিশ্বেশ্বর নন্দীর অক্লান্ত পরিশ্রমে।
ক্রিকেট আর ফুটবল বাদ দিয়ে সামগ্রিক পরিকাঠামো অন্যান্য খেলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত করুণ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শারীরিক নমনীয়তার কারণে অনেক প্রতিভা উঠে আসে। কিন্তু একটা মেরি কম-এর পর শুধুই শূন্যতা। ছোট বয়স থেকে বিভিন্ন বড় দেশে সম্ভাব্য প্রতিভাদের একত্রিত করে তাদের বিকশিত করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়। আমাদের সরকারও হয়তো নেয়। ঘুম ভাঙে অলিম্পিক্সের বছরখানেক আগে। সেন্ট লুসিয়া বা জামাইকা-র মতো দেশ, যার জনসংখ্যা ভারতের যে কোনও শহরের থেকে কম— পদক তালিকায় রয়েছে আমাদের আগে। যে ইউক্রেনে যুদ্ধ হচ্ছে, তারাও এ বার ৩টি সোনা-সহ বারোটা পদক পেয়েছে। আর আমাদের অর্থ ছাড়াও সদিচ্ছা, মানসিকতার দীনতা এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
চতুর্থ স্থানের জন্য কোনও পদক দেওয়া হলে, আমরা প্রতি বারই হয়তো পাঁচ-ছ’টা করে পেতাম। আসল কথা হল, আমাদের খিদে কোথায়? আমরা যে ‘অল্পে খুশি’-র জাত। একটা ব্রোঞ্জ পদক জিতলে হাজার মানুষ বিমানবন্দরে চলে যান। জমি, পুরস্কার সব পাওয়ার পর দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়ের নতুন করে খিদে তৈরি হবে কী করে? সেই অমূল্য প্রবাদটা মনে পড়ে যায়, কোনও খেলোয়াড়ই রুপো জিততে চান না, বাস্তব হল তিনি সোনা হারেন। চিন পেরেছে। জাপান পেরেছে, ভারতও এক দিন নিশ্চয়ই পারবে। কিন্তু তত দিনে আমরা হয়তো থাকব না।
পার্থ সরকার, কলকাতা-৩৩
মন জয়
প্যারিস অলিম্পিক্স থেকে বিনেশ ফোগতের সোনা না নিয়ে ফেরা দেশের জন্য এক ট্র্যাজেডি। তাঁর লড়াই শুধু খেলার মাঠে নয়, তাঁর সাহসিকতা অনেকের মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়েছে। দেশবাসী আরও খুশি হত যদি তিনি সোনা নিয়ে ফিরতেন। তবে সোনা না নিয়েও তিনি যে-ভাবে একশো চল্লিশ কোটি মানুষের শ্রদ্ধা পেলেন, তাই বা কম কিসের? বরং তিনি আমাদের কাছে সোনার চেয়েও দামি। অনেকগুলো খেলায় দুরন্ত পারফরম্যান্সের পর ফাইনাল রাউন্ডে ওজন পরিমাপের সময় মাত্র একশো গ্রাম ওজন বেশি থাকায় তাঁকে পুরো বিভাগ থেকেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এই নিয়মটিকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতের ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। বিজয়ী না হলেও ফাইনালে ওঠার জন্য রুপো তো তাঁর পাওনা ছিলই। যদিও নিয়ম অনুসারে তেমনটি হয়নি।
এর কিছু কাল আগেই আমরা দেখেছিলাম সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশন-এর তৎকালীন প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারির দাবিতে বিনেশকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে। এই আন্দোলন কী ভাবে পুলিশ ওঠানোর ব্যবস্থা করেছিল, তাও সবার জানা। পদক না পেলেও একশো চল্লিশ কোটি ভারতবাসীর মন জিতেছেন বিনেশ।
শঙ্খ অধিকারী, সাবড়াকোন, বাঁকুড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy