Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Schools

সম্পাদক সমীপেষু: ট্যাব চাই আগেই

এমন দিন কবে আসবে, যখন সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষায় বই-খাতা, পরীক্ষা, প্রশ্ন-উত্তর পর্ব— সবেরই মাধ্যম হবে ট্যাব?

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:১০
Share: Save:

স্কুলে পা রাখা মাত্র সে ছুটে এসে বলল, “স্যর, আমার নামটা অনলাইন ক্লাসের গ্রুপে যোগ করব। গত কাল বাবা ফোন কিনে দিয়েছে।” পীযূষের মতো নম্র-ভদ্র, পড়ুয়া ছেলের কথা বিশ্বাস করতে অসুবিধা হয় না। তাদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ, এটা বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাই জানেন। ভাল নম্বর পেয়ে দশম শ্রেণিতে ওঠার পর অনেকেই তাকে সহায়ক বইগুলো জোগাড় করে দিয়েছিলেন। ডিসেম্বরের অর্ধেক হয়ে গেল, তার এখন তেমন কিছু পড়াই হয়নি। স্কুলের অনলাইন ক্লাস এবং নির্দেশগুলো সে জানতেই পারেনি।

সরকারি স্কুলগুলোয় অনেক ছাত্রছাত্রীর এমনই অবস্থা। বিদ্যালয় যাদের অভিভাবক, এমন ছাত্রছাত্রীরা এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় যে পিছিয়ে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই এদের হাতে সরকার যদি একটা করে ট্যাব ধরিয়ে দিতে পারত, তা হলে অনলাইন ক্লাসে তেমন অসুবিধা হত না। পাঠ্যবইগুলো পিডিএফ-এর মধ্যে দিয়ে দিতে পারলে সরকারকে আর ছাপা বইয়ের বাড়তি খরচ জোগাতে হত না। সহজে বহনযোগ্য এই ট্যাবের মাধ্যমে ক্লাসে মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের উত্তর টাইপ থেকে শুরু করে বড় প্রশ্নের পরীক্ষা নেওয়াটা সহজ হত। একটু উন্নত মানের ট্যাবগুলোতে ই-পেন ব্যবহার করে নোট তৈরিও করতে পারত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষামূলক ভাল কিছু ভিডিয়ো দেওয়া যেত তার মধ্যে।

ট্যাবগুলোতে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ থাকবে। যেমন, সেখানে ‘ফ্রি ফায়ার’-এর মতো খেলা থাকবে না, সেখান থেকে ফোন করা যাবে না, ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ থাকবে না। যেটুকু হবে, তা শুধু পড়া পড়া খেলা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেওয়া বিষয় লেকচার বা ক্লাসগুলোর অ্যানিমেশন এত সুন্দর হবে যে, অন্য দিকে শিক্ষার্থীর বাড়তি আগ্রহ তেমন একটা থাকবে না। এমন দিন কবে আসবে, যখন সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষায় বই-খাতা, পরীক্ষা, প্রশ্ন-উত্তর পর্ব— সবেরই মাধ্যম হবে ট্যাব?

রমজান আলি

তেলেনিপাড়া ভদ্রেশ্বর হাই স্কুল, হুগলি

অন্য ঝুঁকি
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের তাদের অনলাইন ক্লাসের সুবিধার জন্য ট্যাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। যুক্তি এটাই যে, অনেক ছাত্রছাত্রীর পরিবার আর্থিক ভাবে অসচ্ছল। তাই করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত, যা তাদের পড়াশোনার অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করেছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, এই পদক্ষেপ পড়াশোনার অগ্রগতিতে সাহায্য করবে। কিন্তু এমনিতেই ছাত্রছাত্রীদের মোবাইলের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি দৈনন্দিন পড়াশোনার মানকে যেমন নিম্নগামী করছে, তেমনই প্রভাবিত করছে তাদের চিন্তাশক্তিকে। বৌদ্ধিক বিকাশের ক্ষেত্রটা ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। তারা একটা স্বপ্নময় কাল্পনিক জগতকেই বাস্তব বলে মনে করছে। সামাজিক উত্থান-পতন, অসাম্য, নৈতিকতা, দায়বদ্ধতা প্রভৃতি তাদের ভাবনার বাইরে। একটা কৃত্রিম জগতে তারা চিন্তাক্ষেত্রকে এমন ভাবে বিকশিত করেছে, যেখানে মানুষের সত্যিকারের উপস্থিতি নেই। বন্ধুবান্ধব, খেলাধুলা, যুক্তি-তর্ক, এ সব এখন অতীত।
তাই সত্যিই যদি ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা নিয়ে ভাবতে হয়, তাদের সফল ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হয়, তবে শুধুমাত্র একটা ট্যাব বা সাইকেল বা কন্যাশ্রী দেওয়ার মাধ্যমে তার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এটা শুধুমাত্র নির্বাচনী চমক। পরিকাঠামোগত কোনও উন্নয়নের পরিকল্পনা না করে, শিক্ষাকে সার্বিক বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে নিয়োজিত করে, পাশ-ফেল তুলে দিয়ে, শুধু একটা ট্যাব দিলেই ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার উৎকর্ষ যে রাতারাতি বেড়ে যাবে না, সেটা রাজ্যবাসী ভালই বোঝেন। মোবাইল ইন্টারনেটের কিছু সুবিধা অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটা হওয়া উচিত একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর। বিদেশে নির্দিষ্ট বয়সের আগে ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
সূর্যকান্ত চক্রবর্তী
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

হিতে বিপরীত?
প্রশাসন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ট্যাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত করা হয়েছে। উদ্যোগটি হয়তো ভাল, কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে, এখন সমাজমাধ্যমের যুগ। ছাত্র-ছাত্রীরা সময়ের অপচয় যাতে না করে, এ জন্য সরকারের উচিত, এই স্মার্ট ট্যাবগুলিকে ‘কাস্টমাইজ়’ করে দেওয়া। অর্থাৎ, ট্যাবগুলিতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা প্লে স্টোর থাকবে না (যাতে অন্য কোনও অ্যাপ ইনস্টল করা না যায়)। অন্যথায় লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হবে।
জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ
বেড়ি পাঁচপোতা, উত্তর ২৪ পরগনা

দামি ইন্টারনেট
রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়াদের অনলাইন পড়াশোনার সুবিধার্থে সাড়ে ন’লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে ট্যাব দেওয়া হবে। কিন্তু শুধু ট্যাব দিলেই তো হবে না, তাকে কার্যকর করার জন্য ইন্টারনেটের প্রয়োজন। গোটা রাজ্যের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি টেলিকম সংস্থার ইন্টারনেট যে ভাবে ক্রমশ মহার্ঘ হয়ে উঠছে, তাতে সন্দেহ আছে, এই সাড়ে ন’লক্ষ ছাত্রছাত্রী আদৌ তা ক্রয় করতে পারবে কি না। যদি ইন্টারনেট প্যাক ক্রয় না করতে পারে, তা হলে গোটা উদ্দেশ্যটাই মাঠে মারা যায়।
আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে অনলাইন ক্লাস চলছে, তার উপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ আছে কি? যদি কোনও স্কুলের এক বা একাধিক শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস না নেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকার কি কোনও পদক্ষেপ করতে পারে? এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ আছে কি? তাই শুধু ট্যাব দেওয়ার মধ্যে প্রাক্-নির্বাচনী চমক থাকতে পারে। কিন্তু তার সুফল কতটা, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই।
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান

খেলাও বন্ধ
লকডাউন পর্ব মিটে গিয়ে আনলক পর্বে অনেক জায়গায় ‘নিউ নর্মাল’-এর নিয়ম মেনে কাজ শুরু হয়েছে। অফিস-কাছারি, কারখানা, দোকানপাট, রেস্তরাঁ, শপিং মল, যানবাহনের ক্ষেত্রে দূরত্ব বজায় রেখে ও মুখাবরণ পরিধান করে কাজ চলছে। স্কুল-কলেজ এখনও চালু করা যায়নি সংক্রমণ ছড়াতে পারে— এই আশঙ্কায়। একই ভাবে খেলার মাঠে নবীন-প্রবীণ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ শিবিরও বন্ধ রাখা হয়েছে। শ্রীরামপুর সাব ডিভিশনাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে যে ফুটবল, টেবল টেনিস, ক্রিকেট-সহ অন্য খেলার প্রশিক্ষণ শিবির চলে, সেগুলো সংক্রমণের আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে।
একই ছবি দেখতে পাওয়া যায় এই জেলার অধীনে থাকা সুইমিং ক্লাবগুলোতে। চাতরা সুইমিং ক্লাব, ইকলেট সুইমিং ক্লাব, কোন্নগর সুইমিং ক্লাব, রিষড়া ও চন্দননগর, নালিকুল-সহ বহু সুইমিং ক্লাবের নবীন ও উঠতি সাঁতারুদের প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা হয়েছে। একই ভাবে জেলার বিভিন্ন ক্লাব আয়োজিত রাইফেল শুটিং, ক্যারাটে, টেবল টেনিস, লন টেনিস, ভলিবল প্রশিক্ষণও বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন স্বাভাবিক প্রয়াসের প্রস্তুতি পর্বে এখন সময় এসেছে এই খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ শিবির শুরু করার। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা সংক্রমণের দাপট খুব তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার নয়। তাই দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্যে খেলাধুলা চর্চা ও সেই সঙ্গে সুষম আহার ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম খুব দরকার।
লকডাউন পর্ব থেকে আনলক পর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ দিন ধরে ওই খেলাগুলির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষানবিশ খেলোয়াড়রা ঘরে বসে আছেন। আবার বিভিন্ন খেলাধুলার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়ম মেনে চালু করা যায়
কি না, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করার অনুরোধ জানাচ্ছি জেলা প্রশাসনিক ও ক্রীড়া প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে।
প্রদীপ কুমার দাস
শ্রীরামপুর, হুগলি

অন্য বিষয়গুলি:

Schools Students Tabs Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy