কলকাতার যে কোনও রাস্তায়, মাত্র মাইলখানেক হাঁটলে যত গাছ উৎপাটিত দেখা যাচ্ছে, তাতে সংখ্যা সরকারি সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশিই হওয়ার কথা। গাছ যেগুলো পড়েছে সেগুলো প্রায় সবই ঝাঁকড়া,অর্থাৎ যার ক্রাউন— পাতা, ডাল সমন্বিত শিরোভাগ— যথেষ্ট প্রসারিত। ঝড়ের ধাক্কা যখন এই ক্রাউনকে ১৩০+ কিমি বেগে ধাক্কা দিয়েছে, তখন গাছের গোড়া তাকে দাঁড়িয়ে থাকার মতো মেকানিক্যাল সাপোর্ট দিতে পারেনি। এর দু’একটা কারণ প্রাকৃতিক, দু’একটা মানুষের অবদান।
প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে আছে কলকাতার মাটিতে অগভীর জলস্তর, ফলে মূলতন্ত্র খুব গভীরে যাওয়ার দরকার হয় না। তা ছাড়া, শহরের পথের গাছগুলোর বায়ুপ্রবাহজাত প্রবল চাপ নিতে পারার সেই ক্ষমতা নেই, যা সমুদ্রতীরের ঝাউগাছের আছে। ঝড়ে ঝাউগাছ কেন দাঁড়িয়ে থাকে আর একশো কিমি দূরের আমগাছ কেন পড়ে যায়, ভাবলেই বোঝা যায়, প্রকৃতি সমুদ্রতীরের গাছকে যে ভাবে তৈরি করেছে অববাহিকা অঞ্চলের গাছকে সে ভাবে বানায়নি। সুতরাং ঝড়ে বটগাছ, আমগাছ, অশ্বত্থ গাছ পড়বেই। মানুষের ভূমিকা আছে এই পড়াটাকে ত্বরান্বিত করায়।
দেখবেন, খুব কম পড়ে যাওয়া গাছের গোড়া দখলমুক্ত। গাছের গোড়া বাঁধিয়ে মন্দির তৈরি হয়েছে, বা সৌন্দর্যায়ন হয়েছে, নয় স্রেফ গোড়া বাঁধিয়ে আড্ডার জায়গা হয়েছে। গ্রামজীবনের সঙ্গেও বাঁধানো বটগাছ তো অঙ্গাঙ্গি, সেখানে প্রাচীন বট কিন্তু এ রকম সচরাচর মুখ থুবড়ে পড়ে না। কারণ, গ্রামে গাছের গোড়া যতটা জায়গা জুড়ে বাঁধানো হয়, তাতে গাছ বেড়ে বাড়তে বাধা পায় না। ওটাই ‘লোড ডিস্ট্রিবিউশন’-এর শর্ত। গ্রামের মানুষ ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়েই সেটা জানেন। শহরে সে জায়গা কে দিচ্ছে? একটা গাছ, বেড়ে উঠল কি না উঠল, এখানে আষ্টেপৃষ্ঠে তার গোড়ায় বেড়ি পরানোর চেষ্টা হয়। সরকারি উদ্যোগেই হয়। এক একটা ওয়ার্ডে, এক একটা রাস্তায় প্রতিটি গাছের গোড়া বাঁধানো দেখতে পাই। তা ছাড়া সারা কলকাতা জুড়ে গাছের গোড়া বাঁধিয়ে অজস্র দেবালয়। তাই মামুলি ঝড়েই সমূলে উৎপাটিত, আর এ তো ছিল অতিঝড়।
এ ছাড়া, উদ্ভিদ-বিজ্ঞানের সাধারণ ধারণা থাকলেই বোঝা যায়, গাছের গুঁড়িরও আলো-বাতাস লাগে। উদ্ভিদের বাড় দু’রকম। একটা তার দেহের প্রাথমিক কাঠামোটা তৈরি করে। এর পরেও, বিশেষত বৃক্ষ জাতীয় বেশির ভাগ গাছের একটা গৌণবৃদ্ধি ঘটে। এটাই বৃক্ষকে চাপ, তাপ, ঝড়-ঝাপটা সামলানোর ক্ষমতা দেয়। এর ফলে কাণ্ড বাকল তৈরি করে, বর্ষ-বলয় তৈরি করে, আসবাব তৈরির জন্য গাছের মধ্যে ক্রমশ দামি হয়ে ওঠা সারকাঠ বা হার্টউড— সবই মাটির উপরাংশে থাকা বৃক্ষের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আবশ্যিক উপকরণ। বড় গাছের বল্কল ফেটে ছোট্ট ছোট্ট গহ্বর তো এমনি এমনি তৈরি হয় না, গাছ এই কাণ্ডছিদ্রের মাধ্যমে পরিবেশ থেকে জরুরি গ্যাসীয় ও জলীয় পদার্থ টেনে নেয় নিজের দেহে। গাছের গোড়া থেকে কোমর অবধি বাঁধিয়ে দিয়ে সেই বায়ু চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়াটা একটা নিষ্ঠুরতা। একই ক্ষতি গাছের গোড়া মুড়ে অয়েল পেন্ট করে দিলে।
কোনও উদ্ভিদপ্রেমীই এগুলো করেন না। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে কৃত্রিম ভাবে নিজের পছন্দের খাতে বইয়ে দিলে গাছ কষ্ট পায়, এটা তাঁরা বোঝেন। বোঝেন না তাঁরাই, যাঁরা সৌন্দর্যায়ন মানে শুধুই সিমেন্ট, বালি, টাইলস, মোজাইকের কথাই জানেন, গাছ জানেন না। কলকাতার পথের গাছ বাঁচাতে গেলে অনেক বড় পরিকল্পনা দরকার, তবে আপাতত সব বাঁধানো চাতাল ভেঙে ফেলা দরকার, অনতিবিলম্বে।
স্বপন ভট্টাচার্য, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, উদ্ভিদবিদ্যা, প ব সরকারি এডুকেশন সার্ভিস
সরকারের দায়
‘সব দায়’ (২৩-৫) শীর্ষক চিঠিতে লেখক প্রশ্ন তুলেছেন, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ঠিক কবে থেকে বন্ধ করা উচিত ছিল? জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, না মার্চ? কী করে বোঝা যাবে?
ভারতে প্রথম করোনা ধরা পড়ে ৩০ জানুয়ারি। সরকার সতর্ক হয়নি, হয়তো ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির ভোট, তাই ওই দিকে মন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তার পর নমস্তে ট্রাম্প। করোনা নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? তার পর এল মার্চ। বিজেপি তখন মধ্যপ্রদেশে কমল নাথের সরকার ফেলা নিয়ে ব্যস্ত। ১১ মার্চ ‘হু’ করোনাকে অতিমারি অাখ্যা দেয়। ১৩ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রক ঘোষণা করে, করোনা ভারতের পক্ষে কোনও হেল্থ ইমার্জেন্সি নয়। অবশেষে ২৪ মার্চ মাত্র চার ঘণ্টার নোটিসে লকডাউন। সুতরাং সরকারের দূরদর্শিতার অভাব স্পষ্ট। দায় সরকার এড়াতে পারে না।
সুজয় চন্দ, রায়পুর, উত্তর দিনাজপুর
পরীক্ষার উপায়
লকডাউন মিটলে এক মাসের মধ্যে পরীক্ষা নিতে চেয়েছে এ রাজ্যে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু করোনা ও আমপান দুর্যোগের মধ্যে কী ভাবে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভার্চুয়াল জগতে প্রতিবাদে মুখর হয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা (‘ঝড়ে বিধ্বস্ত বহু কলেজ, পরীক্ষা হবে কী ভাবে?’, ২৪-৫)। জুনের মাঝামাঝি কলেজ খুললে পরীক্ষা নেওয়ার কথা জুলাইয়ের মাঝামাঝি। অথচ কেন্দ্রীয় রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, জুন-জুলাইয়ের মধ্যে দেশে করোনা সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছবে। তা হলে?
বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় এমসিকিউ ধাঁচের প্রশ্ন করতে আগ্রহী, কিন্তু তা নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাগ্রহ তুঙ্গে। হঠাৎ প্রশ্নের প্যাটার্ন পরিবর্তন করলে তাদের অসুবিধা হবে। পরীক্ষা নিয়ে বিকল্প কিছু ভাবার সময় এসেছে।
প্রথমত, লিখিত বা অনলাইন পরীক্ষার বদলে প্রতিটি পেপার ভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে দেওয়া যেতে পারে, যা শিক্ষার্থীরা বাড়িতে লিখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কলেজে জমা দেবে। যা বিএড বা মুক্তশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
দ্বিতীয়ত, টার্ম পেপার স্বরূপ, পেপার পিছু একাধিক বিষয় দেওয়া যেতে পারে, যার মধ্যে একটি বিষয় বেছে নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিস্তারিত লিখে জমা দেবে। তার ভিত্তিতে ওই পেপারের মূল্যায়ন হবে।
উপরোক্ত দুটি পদ্ধতিতেই ছাত্রছাত্রীদের কলেজে আসার দরকার নেই, তারা ডাকযোগে উত্তরপত্র (দরকার হলে স্পিড পোস্টে) পাঠাতে পারবে। যেমনটা দূরশিক্ষার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। ফলে যাতায়াতের অসুবিধা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষায় বসার মতো কোনও ব্যাপারই থাকবে না।
যদি পরীক্ষা নেওয়া একান্তই না সম্ভব হয়, ফাইনাল ইয়ারের পঞ্চম সিমেস্টার পর্যন্ত প্রাপ্ত নম্বরের নর্মালাইজ়েশন করে ষষ্ঠ সিমেস্টারে নম্বর দেওয়া যেতে পারে, যা সর্বভারতীয় চাকরির পরীক্ষায় (যেমন, রেল) হামেশায় দেখা যায়।
প্রণয় ঘোষ, কালনা, পূর্ব বর্ধমান
দাম বেশি নিচ্ছে
কাঁচা আনাজ ভ্যানে করে পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি হচ্ছে, যে যেমন খুশি দাম নিচ্ছে। মানুষের দুরবস্থার পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে বিক্রেতারা। এ ছাড়াও, ডামাডোলের বাজারে নির্মাতা থেকে শুরু করে, স্টকিস্ট, ডিস্ট্রিবিউটর, মায় খুচরো বিক্রেতা পর্যন্ত মানুষের অসহায় অবস্থার সদ্ব্যবহার করছে। যখন পরিষেবা-দানকারীদের সবচেয়ে মানবিক হওয়া উচিত, ঠিক তখনই সবচেয়ে বেশি অমানবিকতা দেখাচ্ছে তারা।
দেবাশিস চক্রবর্তী, মাহেশ, হুগলি
ক্ষতিপূরণ
মোবাইল ফোন পরিষেবা দেয় যে সংস্থাগুলি, তারা অনেকেই আমপানের জেরে ঠিকঠাক পরিষেবা দিতে পারছে না। তা হলে তারা হিসেব করে এই ক’দিনের টাকা ফেরত দিক। না হলে, প্যাকেজের সময়সীমা বাড়াক।
সোহিনী দত্ত, কলকাতা-৭৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy