Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: আর তাঁর কথা?

উপেন্দ্রনাথ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন, ১৮৯৩-এ গণিতে প্রথম শ্রেণির অনার্স-সহ বি এ, ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে রসায়নে এম এ-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম, আবার ১৮৯৮-এ মেডিসিন ও সার্জারিতে প্রথম স্থান নিয়ে এমবি পাশ করেন।

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৯
Share: Save:

‘কালাজ্বর নির্মূল প্রকল্প’ (১০-১২) শীর্ষক প্রতিবেদনে কালাজ্বর প্রসঙ্গে অনেক তথ্যই দেওয়া হয়েছে। এই জ্বর নির্মূল করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক সাফল্যের কথাও তুলে ধরা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার। কিন্তু একদা এই জ্বরের ওষুধ তৈরি করে অগণিত মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন যিনি, সেই স্যর উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর (১৮৭৩-১৯৪৬) কোনও উল্লেখ লেখাটিতে দেখা গেল না, এটা নিতান্তই দুঃখের।

উপেন্দ্রনাথের বাবা নীলমণি ব্রহ্মচারী ছিলেন রেলের ডাক্তার। উপেন্দ্রনাথ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন, ১৮৯৩-এ গণিতে প্রথম শ্রেণির অনার্স-সহ বি এ, ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে রসায়নে এম এ-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম, আবার ১৮৯৮-এ মেডিসিন ও সার্জারিতে প্রথম স্থান নিয়ে এমবি পাশ করেন। ১৯০২-এ এমডি, ১৯০৪-এ পিএইচ ডি করেন। প্রথম ঢাকা মেডিক্যাল স্কুলে, পরে ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুল (আজকের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল) ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যুক্ত ছিলেন অধ্যাপনা ও চিকিৎসায়। পরে কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজেও পড়িয়েছেন।

ম্যালেরিয়া, ব্ল্যাকওয়াটার ফিভার নিয়ে প্রভূত গবেষণা করেন, তাঁর ‘ট্রিটিজ় অন কালাজ্বর’ বিখ্যাত বই। ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে থাকার সময়েই তাঁর মূল গবেষণা, সেখানেই কালাজ্বর নিরাময়ের ওষুধ ইউরিয়া স্টিবামাইন আবিষ্কার করেন (১৯২২), এবং বিধান সরণিতে নিজের বাড়িতে ‘ব্রহ্মচারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ তৈরি করে দেশি ওষুধ তৈরির উদ্যোগে সফল হন।

১৯২৯-এ নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম প্রস্তাবিত হয়েছিল। যে সময় কালাজ্বরের কোনও চিকিৎসা ছিল না, তখন উপেন্দ্রনাথের আবিষ্কার এক ধাক্কায় বাঙালির কৃতিত্বকে বহু গুণ বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি, বহু প্রাণহানি থেকে দেশকে রক্ষা করেছিল। মনে রাখতে হবে, তখনও অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়নি, অধিকাংশ রোগেই কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ ছিল না। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত হন।

কালাজ্বর প্রসঙ্গে কোনও রকম আলোচনায় এই মানুষটির কথা কি বিস্মৃত হতে পারি?

বিনয় বিশ্বাস

কলকাতা-৩৭

বৈদ্য

প্রজিতবিহারী মুখোপাধ্যায়ের ‘জীবন মশায়’ (রবিবাসরীয়, ৩-১১) লেখাটিতে গণনাথ সেনের প্রসঙ্গে বাংলা ও ঢাকার বৈদ্যদের উল্লেখ একাধিক বার এসেছে। লেখক লিখেছেন, ‘‘...বাংলার বৈদ্য সমাজে গণনাথ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন বৈদ্য ব্রাহ্মণ আন্দোলনের। বৈদ্য জাতির গরিমা প্রকাশ ছাড়াও, ওঁরা চেয়েছিলেন...’’ এই প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা। বৈদ্য কোনও জাতিবাচক শব্দ নয়। বৈদিক যুগে যে-ব্রাহ্মণেরা সর্ববেদ পারদর্শী ছিলেন, তাঁদের বৈদ্য উপাধি দেওয়া হত। বেদ শব্দটি এসেছে বিদ ধাতু থেকে, যার অর্থ জানা। বেদ থেকে বৈদ্য। মহর্ষি শঙ্খ বলেছেন, ‘‘বেদোজ্জাতো হি বৈদ্যঃস্যাৎ’’, অর্থাৎ বেদ থেকে বৈদ্যের উৎপত্তি। বৈদিক যুগে চার বেদ অধ্যয়ন করে আয়ুর্বেদে পারদর্শী হওয়ার পর ব্রাহ্মণরা বৈদ্য উপাধি পেতেন। আয়ুর্বেদ বেদেরই অংশ, আয়ুর্বেদকে বলা হয়েছে ঋগ্বেদের উপবেদ— ‘‘ঋগ্বেদস্য আয়ুর্বেদ উপবেদঃ’’। বৈদিক যুগে আয়ুর্বেদে পারদর্শী হয়ে চিকিৎসক হতে পারতেন একমাত্র ব্রাহ্মণরাই, তাই বৈদ্যদের বলা হত স্ত্রিজ। অর্থাৎ এক জন ব্রাহ্মণ সন্তানের, উপনয়নের পর দ্বিতীয় জন্ম এবং পরবর্তী কালে আয়ুর্বেদে পারদর্শী হওয়ার পর তৃতীয় জন্ম হত— ‘‘বৈদ্যস্ত্রিজঃ স্মৃতঃ’’ (মহর্ষি চরক)। ঋগ্বেদে ও যজুর্বেদে অনেক প্রমাণ আছে— ‘বৈদ্য’, জ্ঞানাধিক্য হেতু শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ। সায়নের টীকায় বলা হয়েছে, চিকিৎসা জ্ঞানসম্পন্ন বিদ্বান ব্রাহ্মণই বৈদ্য। ‘‘দ্বিজেষু বৈদ্যাঃ শ্রেয়াংসঃ’’— মহাভারতে দ্রুপদ কর্তৃক মনুর বচন। অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণই বৈদ্য।

আবার অনেকের মতে, বৈদ্য হল অনুলোম বিবাহের (ব্রাহ্মণ পিতা বৈশ্য মাতার বিবাহ) ফলে সৃষ্ট সন্তান। ফলে এরা বর্ণসংকর জাতি। তর্কের খাতিরে এই যুক্তি মেনে নিলেও, বৈদ্যকে অব্রাহ্মণ বলা যাবে না। কারণ, পিতার গোত্রই তো পুত্র পায়। পিতা ব্রাহ্মণ হলে, পুত্রও ব্রাহ্মণ।

মহাভারতের উদ্যোগপর্বে বলা হয়েছে, ‘‘প্রাণী অপ্রাণীর মধ্যে প্রাণীরা শ্রেষ্ঠ, প্রাণীদের মধ্যে বুদ্ধিমানরা শ্রেষ্ঠ, বুদ্ধিমানদিগের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ, মানুষদিগের মধ্যে ব্রাহ্মণরা শ্রেষ্ঠ, ব্রাহ্মণগণের মধ্যে বৈদ্যরা শ্রেষ্ঠ, বৈদ্যগণের মধ্যে যাদের বুদ্ধি পরিণত হয়ে সাধনার অভিমুখে চালিত হয়েছে, তাঁরা শ্রেষ্ঠ।’’ ফণিভূষণ আচার্যের ‘শব্দসন্ধান’-এ বৈদ্যের ব্যাখ্যা, ‘‘যিনি সর্ববিদ্যায় পারদর্শী: বৈদ্য, যিনি সকল বেদে দক্ষ: বৈদ্য এবং যিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে কুশল: বৈদ্য।’’ বৈদিক যুগে তো ব্রাহ্মণ ছাড়া কারও বেদ পাঠের অধিকার ছিল না।

পৃথিবী থেকে জাতপাত সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হোক, এটাই কাম্য। এই লেখা শুধুমাত্র ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে।

জয় সেনগুপ্ত

হাওড়া

শিক্ষার অপমান

অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরীর ‘সবাই হীরক রাজার প্রজা’ (৫-১২) খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নকে হাজির করেছে। শিক্ষকদের ওই সব দাবিদাওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রীসান্ত্রিরা চোখ গরম করেন, তথাকথিত নৈতিকতার প্রশ্ন হাজির করেন। পার্শ্ব শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যেমন, ‘স্কুল বাদ দিয়ে আন্দোলনে কেন’ প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, “ছাত্রদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। শুধু নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে না-ভেবে, পড়ুয়াদের কথাও ভাবুন।” আন্দোলনকারীরা যে এত দিন আধপেটা খেয়ে বঞ্চিত হয়ে সমাজকে সেবা করেছেন, তা ঊহ্যই থেকে যাচ্ছে। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পার্শ্ব শিক্ষক পদের বেতন ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৪ হাজার করাকে ‘অনেক বাড়িয়েছি’ বলা, এক দাম্ভিক প্রশাসনের প্রতিফলন। সরকারের নিম্নতম স্থায়ী কর্মচারীও তো এর দ্বিগুণ বেতন পাবেন জানুয়ারি থেকে।

সুকান্তবাবু লিখেছেন, “সবচেয়ে নিরাশ করে শিক্ষক নিয়োগ ও বেতনব্যবস্থা (অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের কথা বাদ দিলাম)। স্কুলশিক্ষক (ও সমান তালে কলেজ শিক্ষক) নিয়োগ হচ্ছেন আধা-সিকি-চোদ্দো-আনা নানা ফর্মুলায়। নিয়োগপদ্ধতিতে ইচ্ছা করে ফাঁক রেখে দেওয়া হয়, যাতে কম বেতন ও সুবিধার বিনিময়ে কার্যত পূর্ণ সময়ের কাজ আদায় করা যায়।” একদম ঠিক। শুধু স্কুলের ক্ষেত্রে নয়, ভোকেশনাল-এর মতো বুনিয়াদি কারিগরি শিক্ষার শিক্ষকদের চার আনা মাইনে দিয়ে বাধ্য করা হচ্ছে দ্বিগুণ কাজ করতে। পলিটেকনিকের অস্থায়ী চুক্তির অধ্যাপকদের গত আট বছর ধরে বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে না। সর্ব ক্ষণের জন্য একই কাজ করছেন এক জন একই পদে থেকে, অথচ পাশের অধ্যাপকের বেতন দেড় লক্ষ টাকা, আর তাঁর একুশ হাজার। কোনও সামাজিক সুরক্ষা নেই। প্রতিবাদ করলে, বদলি ও চাকরি চলে যাওয়ার ভয়। এই পরিবেশে কেউ সুস্থ ভাবে শিক্ষাদান করতে পারে? এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শিক্ষার, ছাত্রের। শিক্ষকদের এতটা অপমান কোনও সভ্য সমাজের পরিচয় নয়।

জয়ন্তী বিশ্বাস

দমদম

পরের বার?

১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেন নোবেল পাওয়ার সময় আপনাদের কাগজের প্রচারের ‘জোশ’ অনেক বেশি ছিল। এ বার অভিজিৎবাবুর বেলায় আপনারা ঠিক অতটা হইহই করলেন না। অবশ্য অর্থনীতিতেই আছে, 'law of diminishing returns', সেই নিয়মেই, একটা ব্যাপার উপভোগের প্রথম বার যত উত্তেজনা হবে, তার পর থেকে তা কমবে। সমারসেট মম ‘দ্য মুন অ্যান্ড দ্য সিক্স পেন্স’ বইয়ে লিখেছেন: নদী যখন প্রথম দিন সমুদ্রে পড়েছিল, সমুদ্র দেখে নদী অবাক হয়ে গিয়েছিল।...আজ আর নদী অবাক হয় না। এর পর অর্থনীতিতে যে-বাঙালি নোবেল পাবেন, তাঁর বেলায় উদ্দীপনা আরও কমবে?

সঞ্জয় চৌধুরী

খড়্গপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Upendranath Brahmachari Kala Azar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE