Sourced by the ABP
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রতীক্ষার অবসান। ২০০৭-এর পরে পুনরায় টি২০ চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। কাটল দীর্ঘ ১৩ বছরের বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের খরাও। বার্বেডোজ়-এর রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেশের আইসিসি ট্রফির শাপমোচন ঘটালেন রোহিত-বিরাটরা। আর সেই শাপমুক্তি হল এমন এক দ্বীপপুঞ্জে যেখানে ১৭ বছর আগে কলঙ্কিত হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট। ২০০৭ সালে এক দিনের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ভারত। ঘটনাচক্রে, সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন যিনি, সেই রাহুল দ্রাবিড়ের মগজাস্ত্রেই এ বার মিলল বিশ্বজয়ের স্বাদ। একেই হয়তো বলে ‘পোয়েটিক জাস্টিস’। মাস সাতেক আগে আমদাবাদের এক অভিশপ্ত রাতে স্বপ্নভঙ্গের চূড়ান্ত হতাশায় ম্রিয়মাণ রোহিতের নেতৃত্বাধীন সেই দলটাই আজ ১৪০ কোটি মানুষের অধরা স্বপ্ন পূরণ করল। বারংবার তীরে এসে স্বপ্নভঙ্গের হতাশা ভুলে স্বপ্নপূরণের সাহস দেখালেন রোহিতরা। এই জয়ের কৃতিত্ব কোচ দ্রাবিড়, অধিনায়ক রোহিত থেকে শুরু করে কোহলি, হার্দিক, বুমরা, অক্ষর, আরশদীপ-সহ গোটা টিম ম্যানেজমেন্টের প্রত্যেক সদস্যেরই প্রাপ্য। এ ক্ষেত্রে আরও এক জনের কথা আজ না উল্লেখ করলেই নয়— সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বছর তিনেক আগে বিসিসিআই সভাপতি থাকাকালীন সৌরভের আপ্রাণ চেষ্টাতেই ‘অনিচ্ছুক’ দ্রাবিড় ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এমনকি রোহিতকে অধিনায়ক করার সিদ্ধান্তটাও ছিল সৌরভেরই মাস্টারস্ট্রোক। ফলে নিশ্চিত ভাবে এক সময় দাদার বপন করা বীজের ফলই আজ পেল দেশ।
অন্য দিকে, দেশকে শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত করে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে বিশ্রামের পথে পা বাড়ালেন ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহারথী— অধিনায়ক রোহিত এবং প্রাক্তন অধিনায়ক কোহলি। দেশকে শিখরে পৌঁছে দিয়ে তার শিকড় সম্প্রসারণের দায়িত্ব নিখুঁত টাইমিংয়ে তরুণ প্রজন্মের কাঁধে তুলে দিলেন তাঁরা। এ ভাবেই শেষ হল ভারতীয় ক্রিকেটের এক স্বর্ণযুগ।
সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
দলগত খেলা
২০১১ সালে একদিনের বিশ্বকাপ আর ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-র পর এগারোটা বছরের অপেক্ষা। ২০১৯-এর সেমিফাইনাল, ২০২২-এর সেমিফাইনাল, ২০২৩-এর ফাইনাল— কাপ আর ঠোঁটের পার্থক্যটা ঘুচছিল না। ২০০৭-এ প্রথম টি২০ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য রোহিত শর্মা বা ২০১১ সালে দ্বিতীয় বারের মতো একদিনের ক্রিকেটে বিশ্বজয়ী দলের সদস্য বিরাট কোহলির কাছে তাই এই ২০২৪ সাল ছিল বিশেষ গুরুত্বের। এর আগে বার বার চেষ্টা করেছেন, বিফল হয়েছেন, জুটেছে ‘নয়া চোকার্স’-এর তকমা। বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম সেরা দুই চরিত্রকে নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন, ছড়িয়ে পড়েছে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের চিরপ্রচলিত কাহিনি। অধিনায়কত্বের অমসৃণ পালাবদল সেই কাহিনিকে আর একটু ইন্ধন জুগিয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিরাট কোহলির গত বারের ওই মহাকাব্যিক ইনিংস খেলার পর ওঁকে কাঁধে তুলে নেওয়াটা যদি বিরাট ও রোহিতের মসৃণ সম্পর্কের একটা সিলমোহর হয়, তবে তাতে সোনার প্রলেপ এ বারের জয়োৎসবের মুহূর্তটা। ড্রেসিংরুমের সিঁড়িতে একে অপরকে দীর্ঘ আলিঙ্গন। এই আলিঙ্গনই বুঝিয়ে দেয় এই জয়টা ওঁদের কাছে কতটা দরকারি ছিল। বিরাট কোহলি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন। যে সব ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞ তাঁর স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন, তাঁকে টিম থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলতেন, স্বার্থপর ক্রিকেটার বলতেন, তাঁদের কথাবার্তা এ বার হয়তো বন্ধ হবে।
আরও এক জন হয়তো স্বস্তি পেলেন কিছুটা। মাসখানেক আগে যিনি তাঁর ঘরের মাঠে প্রতিনিয়ত বিদ্রুপের শিকার হয়েছেন, সেই হার্দিক পাণ্ড্য ফাইনালে সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে গেলেন— হেনরিখ ক্লাসেন। ম্যাচের শেষ ওভারে স্নায়ু ধরে রেখে সঠিক বল করলেন। জয়ের পর ওঁর অশ্রুপ্লাবিত চোখমুখ বুঝিয়ে দিল দীর্ঘ দিনের ক্রিকেটীয় এবং ব্যক্তিগত বোঝা যেন অনেকটা হালকা হল।
কথায় বলে, ক্যাচই ম্যাচ জেতায়। ১৯৮৩-র বিশ্বকাপে কপিল দেবের নেওয়া ভিভিয়ান রিচার্ডসের সেই বিখ্যাত ক্যাচ আমাদের প্রথম বার কাপ জয়ের আশা দেখায়। এ বারে ডেভিড মিলারের প্রায় ৬ হয়ে যাওয়া বলকে যে ক্ষিপ্রতা ও দক্ষতায় তালুবন্দি করলেন সূর্য কুমার যাদব, তা নিশ্চিত ভাবে কাপ এনে দিল।
কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের কথাও বলতে হবে। সচিন, সৌরভ, সহবাগের পাশে খানিক অনুজ্জ্বল অথচ কার্যকর এই ক্রিকেটার তাঁর যুগে শরীরে কত আঘাত নিয়েছেন বিষাক্ত ডেলিভারির, ব্লক করে ধৈর্য ভেঙেছেন বোলারদের, টিমের স্বার্থে স্বচ্ছন্দে তুলেছেন কিপিং গ্লাভস। বহু যুদ্ধের সৈনিক সেই দ্রাবিড়কেও শেষ দিকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছিল। আজ দলের কোচের পদ ছেড়ে যাওয়ার আগে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়েই উনি পেলেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। স্বভাবলাজুক রাহুলের হাতে বিরাট ট্রফিটা তুলে দেওয়ার পর ওটা উঁচু করে তুলে ধরে তাঁর সেই পাগলের মতো চিৎকারটা যেন শাপমুক্তিরই ঘোষণা।
বিশ্বকাপের আগে এই টিম কম্বিনেশন নিয়ে সমর্থকদের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। অনেকেই ভারতকে ধর্তব্যের মধ্যে ধরেননি। সেই অবস্থা থেকে ভারত বিশ্বকাপ জিতল— জিতল টিম হিসেবে। এ বার নতুন কোচ আসবেন, নতুন ছেলেদের তৈরি করার পালা। আরও ওয়ান ডে আর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে হবে। টি২০-র জয়টা যেন সেই জয়ের ধারার সূচনাপর্ব হয়।
নির্মলেন্দু কুন্ডু, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
স্মরণীয় টুর্নামেন্ট
এ বারের টি২০ বিশ্বকাপ নানা ভাবে স্মরণীয় থাকবে। আমেরিকায় ক্রিকেট তেমন জনপ্রিয় খেলা না হওয়া সত্ত্বেও, ম্যাচ আয়োজনের জন্য সেই দেশকে বেছে নেওয়ায় ভুরু কুঁচকেছিলেন অনেকেই। ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দিকটি বিবেচনা করে আইসিসি আমেরিকার মতো ধনী দেশে ম্যাচ আয়োজনের ঝুঁকি নিয়েছে, এই ধারণাও অমূলক নয়। তবে বাহবা প্রাপ্য আফগানিস্তানের। অপ্রতুল পরিকাঠামো এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত তৃতীয় বিশ্বের এই দেশটি যে ভাবে শক্তিধরদের পরাজিত করে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল, তা প্রশংসনীয়।
ধারাবাহিক ভাবে সব ম্যাচে অপরাজিত থেকে ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের রুদ্ধশ্বাস জয় টি২০-র ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দক্ষতার শীর্ষে থেকে কোহলি এবং রোহিতের তরুণ প্রজন্মের হাতে টি২০-র দায়িত্বভার অর্পণ করে অবসরের ঘোষণাটিও যথেষ্ট পরিণতমনস্কতার পরিচয়।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
অবনমন
টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত চ্যাম্পিয়ন হল। আমরা নাচলাম, বাজি পোড়ালাম, রাত জেগে আনন্দ করলাম। অবাক লাগে, কী ভাবে বদলেছে ক্রিকেটের ধরন। এক সময় ছিল পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ। তার পর এক দিনের ক্রিকেট। এখন খেলা হচ্ছে কুড়ি ওভারে। ক্রিকেট খেলার সৌন্দর্যটাই যেন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনের জন্য ভয় হয়। এ বার কি ১০ ওভার বা ৫ ওভারের খেলা দেখতে হবে?
অমর ধর, কলকাতা-৫১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy