জয়ন্ত বসু তাঁর ‘জলাভূমি বাঁচলে শহরও বাঁচবে’ (৪-৪) শীর্ষক প্রবন্ধতে অত্যন্ত নিপুণ ভাবে জলাভূমি সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। ছোট ছোট প্রাণ-প্রকৃতির ধ্বংস এবং তার সঙ্গে প্রশাসনের গাঁটছড়া দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। সেই ক্রমের বিরাম নেই, বরং আরও বেড়ে চলেছে। যদিও কুড়ি বছর আগে পরিবেশের সঙ্কট এবং সেই সম্পর্কে সাধারণের বোঝাপড়া বিষয়ে বিস্তর পার্থক্য ঘটেছে। বিশ বছর আগে আইপিসিসি-র রিপোর্ট কী, সাধারণ মানুষ তো দূর, অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মধ্যেও কোনও ধারণা ছিল না। আজ অল্প কিছু হলেও তার বদল ঘটেছে। যদিও আজ পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের সঙ্কট যত গভীর অপরিবর্তনীয় হয়ে উঠছে, প্রশাসনের উন্নয়ন নামক কংক্রিটের জঙ্গল তৈরির বাসনা তীব্রতর হচ্ছে। এতে আদৌ সাধারণ মানুষের ভাল হচ্ছে কি? না কি কন্ট্রাক্টর, ঋণ প্রদানকারী সংস্থা এবং অল্প কিছু প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত জনপ্রতিনিধি ও আমলা, কর্মচারীর মুনাফা বাড়ছে? সেই প্রশ্ন নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
পুকুর-জলাশয় কলকাতা শহর জুড়ে যেমন বোজানো হচ্ছে, ঠিক তেমনই সরকারের উদ্যোগে খাল বোজানো হয়েছে। পূর্ব বেহালার মতিলাল গুপ্ত রোড থেকে মহাত্মা গান্ধী রোড পর্যন্ত ২.৭ কিমি চড়িয়াল এক্সটেনশন খাল সম্পূর্ণ বুজিয়ে ভূগর্ভস্থ নিকাশিব্যবস্থা ও রাস্তা তৈরি হয়েছে। চড়িয়াল খাল এই অংশে কোথাও ১২ ফুট থেকে ৪০ ফুট চওড়া ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যাচ্ছে, একটা-দুটো নয়, কয়েকশো পুকুর বোজানোর সঙ্গে প্রবাহিত জলধারার এত দীর্ঘ পথ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। জলজ জীববৈচিত্র সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়েছে। নিকাশিব্যবস্থার উন্নয়নের নামে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ঋণের টাকায় এই কাজ হয়েছে। অঞ্চলের মানুষ জানেন, যে অংশ বোজানো হয়েছে, সেই অংশেও জোয়ারে জল আসা-যাওয়া করত। প্রকৃতি ধ্বংসের এত বড় কুচক্র কলকাতা শহরের বুকে সাম্প্রতিক কালে হয়নি। যদিও সে কথা প্রকাশ্য আলোচনার বাইরে থেকে গিয়েছে।
তাপস দাস, কলকাতা-৮২
খোলা কল
আমি গোবরডাঙা পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়র্ডের খাঁটুরা বাজারের বাসিন্দা! কিছু দিন আগে দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ বাড়ি ফেরার পথে দেখলাম, অন্তত দু’-তিন জায়গায় রাস্তার পার্শ্ববর্তী কল থেকে অনবরত জল পড়ছে। অথচ, সেখানে কেউ নেই! এমনকি পথচারীরা পর্যন্ত অনবরত জল অপচয়ের দৃশ্য দেখে নির্বিকার চিত্তে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন! শেষ পর্যন্ত আমি কলগুলি বন্ধ করে দিই! সবচেয়ে অবাক কাণ্ড, প্রত্যেকটি জায়গাতেই দেখলাম আশপাশের বাড়ির লোকজনের মধ্যেও কোনও হেলদোল নেই! প্রতি দিন স্নান করা, কাপড় কাচা থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ সামলানোর জন্য একমাত্র ভরসা যে কলগুলো, সেখান থেকে অপচয় হতে থাকা জলের জন্য কারও বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই! এই তীব্র গরমে সবচেয়ে মহার্ঘ জিনিসটি হল জল! সেই জলই যে-ভাবে প্রতিনিয়ত অপচয় হচ্ছে, তার খেসারত আমাদের দিতেই হবে! সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ক্রমাগত বেড়ে চলা অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও মাত্রাতিরিক্ত বৃক্ষচ্ছেদনের পরিণাম এই মারাত্মক তাপপ্রবাহ! যার জেরে ছটফট করছি আমরা! পাশাপাশি, এ ভাবে প্রতি দিন আমরা জলের অপচয় করতে থাকলে ফল হবে মারাত্মক! কিছু স্বার্থান্বেষী, অসচেতন মানুষ আছেন, যাঁরা দৈনন্দিন পুরসভার কলের জল ব্যবহার করেন, অথচ কল বন্ধ করতে ভুলে যান! তাঁদের বিরুদ্ধে পুরসভার তরফে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
সৈকত কর্মকার, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
জলের ব্যবস্থা
বাংলা জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। চড়া রোদের হলকা গা-হাত-পা পুড়িয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতির এই উষ্ণ স্পর্শে সবচেয়ে বেশি কাবু পশুপাখি। সকলেরই বেঁচে থাকার জন্য প্রতি দিন পর্যাপ্ত জল পান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই পানীয় জলের সুব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। এই গরমে মানুষের তেষ্টা মেটানোর জন্য একাধিক জায়গায় বিভিন্ন ধরনের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের পক্ষ থেকে রাস্তাঘাটে, পাড়ায় পাড়ায়, বাজার হাটে জলসত্রের আয়োজন করা হচ্ছে। রাজ্য জুড়ে একাধিক থানা চত্বরে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পথচারীদের জলপানের জন্য সুব্যবস্থার আয়োজন করতে দেখা গিয়েছে। চাঁদিফাটা গরমে বাইরে বেরিয়ে সেই জল পান করে মানুষ একটু স্বস্তি বোধ করছেন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
কিন্তু একই সঙ্গে অবোলা পশুপাখিদের জল পানের ব্যবস্থার দিকেও নজর দিতে হবে। প্রতি দিন ওদের জন্য পর্যাপ্ত পানীয় জলের সুব্যবস্থা রাখতে হবে। চার পাশে দিন দিন জলাশয় কমে আসার কারণে ওদের খাদ্য ও পানীয় জলের ঘাটতি তীব্র। এই প্রচণ্ড গরমেও ওদের খাবার ও পানীয় জলের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও শ্রেষ্ঠ জীব আমরা, মানুষেরা। আমরাই পারি ওই অবোলা জীবজন্তুদের কষ্টের কথা ভেবে ওদের পাশে দাঁড়াতে। বাড়ির আশেপাশে, আঙিনায় কিংবা ছাদের এক কোণে গাছের ছায়ায় বা শীতল জায়গা খুঁজে বেশ কিছু ছোটবড় পাত্রে পশুপাখিদের জন্য সামান্য কিছু খাবার ও পানীয় জল রাখা যেতে পারে। গরমে নিজেরা সুস্থ থাকুন এবং অপরকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।
সৌরভ সাঁতরা, জগদ্দল, উত্তর ২৪ পরগনা
সাত ঘণ্টা নষ্ট
২০ এপ্রিল দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চেন্নাই মেলে জরুরি কাজে কটক যেতে হয়েছিল। ট্রেন ছাড়ার সময় ছিল রাত ১১টা ৫৫ মিনিট। সেই মতো স্টেশনের বৈদ্যুতিন বোর্ডে লেখা ফুটে উঠছিল। বহু যাত্রী, বিশেষ করে দক্ষিণমুখী পরিযায়ী শ্রমিকদের স্রোত অপেক্ষা করছিল। তার পর শুরু হল লেট হওয়ার পালা। প্ল্যাটফর্মে কয়েক হাজার যাত্রী বিভিন্ন ধরনের বিলম্বিত ট্রেনের কারণে অসহায় ভাবে অপেক্ষা করতে থাকেন। স্টেশনে তখন লোক ধারণের অবস্থা নেই। ওই গুমোট আবহাওয়ায় কোনও রকমে একটু জায়গা পেয়ে আমরা অপেক্ষা করতে থাকি। ও দিকে রেলের তরফ থেকে কোনও রকম ঘোষণা নেই। অনুসন্ধান অফিসের লোকজন বেপাত্তা। কী কারণে এই দেরি, কখন ট্রেন স্টেশনে আসবে— এই সব নিয়ে বিভিন্ন গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অবশেষে অনেক টালবাহানার পর আমাদের রাত ১১টা ৫৫ মিনিটের চেন্নাই মেল মধ্যরাতে পৌনে তিনটে নাগাদ কটকের উদ্দেশে রওনা দেয়।
ফিরতি পথে ২১ তারিখ কটক স্টেশন থেকে দুপুর ১২টা ১০ নাগাদ ধৌলি এক্সপ্রেসে উঠি, যার শালিমার টার্মিনালে পৌঁছনোর কথা ছিল সন্ধে ৭টা নাগাদ। সারা রাস্তা মোটামুটি সময় মেনে আসার পর যে-ই খড়্গপুর স্টেশনে পৌঁছল, অমনি কী এক রহস্যময় কারণে ট্রেনটির গতি রুদ্ধ হতে আরম্ভ হল। বিভিন্ন জায়গায় থামতে থামতে অবশেষে আমরা শালিমার স্টেশনে পৌঁছলাম রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ। অদ্ভুত ব্যাপার, যখন আমরা ট্রেনের মধ্যে বসে হাঁসফাঁস করছি, তখন সমাজমাধ্যমে রেলের বিজ্ঞপ্তিতে দেখাচ্ছে ধৌলি এক্সপ্রেস মাত্র ৮ মিনিট দেরিতে শালিমার স্টেশনে পৌঁছে গেছে।
হিসাব করে দেখলাম, ৮২৬ কিলোমিটার যাওয়া-আসার পথ অতিক্রান্ত করতে গিয়ে শুধুমাত্র ট্রেনের বিলম্বিত হওয়ার কারণে আমাদের সময় নষ্ট হয়েছে কম-বেশি সাত ঘণ্টা। অভিজ্ঞতা বলছে, কেন্দ্রীয় রেল দফতরের উন্নয়নের ফিরিস্তি শোনার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজতে গেলে আপনাকে হতাশ হতে হবে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর উচ্চকণ্ঠে ঘোষিত ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’-কে জায়গা করে দিতে এ দেশের অন্যান্য ট্রেনের সময়সূচির ব্যাপক পরিবর্তন করা হচ্ছে।
পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৩৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy