আপনাকে কি অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিচ্ছি? সেই গালি কি আপনার পরিধি অতিক্রম করে মা বাবা, পরিবার পরিজনকেও টেনে এনেছে? বাছাই করা চার অক্ষর, পাঁচ বা ছয় সাজিয়ে রেখেছি আপনার জন্য? মনের যাবতীয় ঘৃণা, বিষ শুধু আপনার জন্য, হ্যাঁ, আপনার জন্যই উগরে দিচ্ছি? কোনও এক প্রাচীন জিঘাংসা জমতে জমতে আমার ভেতরে যে স্তূপ হয়ে ছিল, তা মুহূর্তে বার করে এনে আপনার উপর বর্ষণ করে চলেছি?
অবাক হবেন না। ভেবে নেবেন না, আপনি আমার চরম ক্ষতি করেছেন। এমন আবর্জনা আপনার উপর উগরে দেওয়ার একটাই কারণ, আপনি আমার মতের উল্টো কথা বলছেন! আজ্ঞে হ্যাঁ, আমার মতের উল্টো পথে চলা কিংবা উল্টো কথা বলা মানেই আমার ‘অধিকার’ জন্মায় আপনাকে ভার্চুয়ালি সব রকম ভাবে আঘাত করার।
হ্যাঁ, এটাই এখন সোশ্যাল মিডিয়া বাহিত নব্য সংস্কৃতি। এই নব্য বঙ্গীয় বিপ্লব প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে, শব্দে, বাক্যে, অক্ষরে ‘প্রতিপক্ষ’-এর খুলি ভেদ করে চলে যাচ্ছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি যুক্তি, প্রতিযুক্তি, তর্ক, বিতর্ক। খসে পড়ছে ‘সভ্যতা’র বর্ম। মুখোশ। এক একটি গালাগাল-সমৃদ্ধ পোস্টে লাইকের পর লাইক পড়ছে। কমেন্টের ঝড় উঠছে: দারুণ বলেছেন দাদা, গুরু ফাটিয়ে দিয়েছ, এ রকমই বলা উচিত ওদের, বেশ করেছেন বলেছেন....কুড়ি কুড়ি ক্রিকেটের মতো চার-ছয়ের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তালি তালি তালি... যত কুকথা বলবেন, অচিরেই আপনি এই পাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন। আপনার খেউড় ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়বে এ-মুঠো থেকে সে-মুঠোয়।
এই ‘সভ্যতা’র পেটে পেটে এত বিষ ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ার জন্ম না হলে জানতে পারতেন?
সুদীপ বসু
কলকাতা-১১৮
তোলাবাজি
তোলাবাজির টাকা ফেরত দিতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কন্যাশ্রী যুবশ্রী রূপশ্রী সমব্যথী-সহ বহুবিধ প্রকল্প তৃণমূল সরকার পশ্চিমবঙ্গবাসীদের জন্য নিয়েছে। তার ২৫% টাকা দলের লোকেরা নিচ্ছে বলে মনে করেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। এই নির্বাচনে তাঁরা যে ধাক্কা খেয়েছেন, তাতেই কি তাঁর মনে তাঁর দল সম্পর্কে আত্মবিশ্লেষণের উদ্রেক ঘটল? তিনি কি জানতেন না, তাঁর দলের নিচু স্তরের কর্মী থেকে শুরু করে, সর্বস্তরের বহু নেতানেত্রী কাটমানি খেতে অভ্যস্ত? তিনি জানতেন না ধরে নিলে মস্ত ভুল হবে। তিনি জেনেও চুপ ছিলেন।
কারণ দল একটার পর একটা নির্বাচন পাড়ি দিচ্ছিল অনায়াসে। ছোট ছোট নেতাও হয়ে উঠেছিলেন এলাকার নীতিনির্ধারক। সরকারি কোনও প্রকল্পের সুযোগ পেতে গেলে তাঁদের পকেটে টাকা না দিয়ে গরিব মানুষের উপায় ছিল না। সাধারণ মানুষ চোখের সামনেই দেখছিলেন কী ভাবে গ্রামের নেতাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।
এইগুলি যে মমতার দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল না, নির্বাচনে জয়ই তার একমাত্র কারণ নয়। উনি ভাল করে জানেন, পকেটে কিছু টাকা না ঢুকলে মানুষ এখন আর রাজনীতি করে না। দেশসেবা! সে তো ব্যাকডেটেড শব্দ। বাস্তব প্রয়োজনের স্বীকৃতি না দিয়ে উপায় নেই। বেঁচে থাকার সংস্থান হিসেবে রাজনীতি একটা পেশা হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে এখন উপস্থিত। সাধারণ মানুষেরাও, কিছুটা কাটমানি খাওয়াকে এখন আর খুব একটা দোষের বলে মনে করেন না। কিন্তু লোভ তো এক জায়গায় আটকে থাকে না, তরতর করে এগিয়ে চলে। তাই এই বোধোদয়, পতনকে রুখতে পারবে না বলেই মনে হয়।
সূর্যেন্দু বিকাশ পাত্র
প্রতাপদিঘি, পূর্ব মেদিনীপুর
এদের দল নেই
‘‘যাঁরা টাকা নিয়েছেন, ফেরত দিন।’’— মমতার এই হুঁশিয়ারির পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে কি? তোলাবাজদের কোনও দল নেই। এরা নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থে দল করে। শাসক পরিবর্তন হলে এদের দল পরিবর্তন হয়। কারণ প্রশাসনকে ব্যবহার করে এরা বিভিন্ন অবৈধ কাজ করে থাকে। সাধারণ মানুষ ক্ষমতার ভয়ে চুপ থাকেন। নির্বাচন এলে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এলাকার এই সব ভুঁইফোঁড় কামানেওয়ালা নেতাদের জন্য দলের বিপর্যয় ঘটে। দলের সামগ্রিক উন্নয়ন ঢাকা পড়ে যায়। এ রোগ সহজে সারবে কি? পূর্বে বহু বার দলনেত্রীর মুখে এ সব হুঙ্কার শোনা গিয়েছে। অবস্থার বদল হয়নি। নির্বাচনে জয়ী হলে সাত খুন মাপ। আগামী নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কায় তাই মুখ্যমন্ত্রীর এই সব কথাবার্তা।
শান্তনু সিংহ রায়
মিঠিপুর, মুর্শিদাবাদ
ভর্তির রেট
আমার গাড়ি চালায় যে ছেলেটি, হঠাৎ আমায় জিজ্ঞেস করল: ‘‘স্যর, সুরেন্দ্রনাথ কলেজে এখন ভর্তির রেট কি ৩০ হাজার?’’ আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম! ছেলেটির বোন এ বছরেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছে। বললাম, ওর কলেজে ভর্তির ফি যা লাগবে তাই দিতে হবে। ও বলল: ‘‘না, শুধু তাতেই হবে না। ‘ওরা’ বলেছে ত্রিশ লাগবে!’’ আমি বললাম, এ বিষয়ে কিছুই জানি না, আমাদের সময়ে এই রকম খোলাখুলি তোলাবাজি ছিল না, তবে সিপিএম করি বা না করি, দু’বছরের চাঁদা একসঙ্গে গুনে দিতে হত এসএফআই-কে। সেটাও তোলাবাজিই ছিল, তবে এতটা নয়, আর এত খোলামেলা ভাবে নয়।
ড্রাইভার খুব আফসোস করল, ‘‘এত কাজ করে দিই পার্টির জন্য, তাও বোনটার কলেজে ভর্তির জন্য এত টাকা চাইছে।’’ আমি ওকে পার্টির বড় কাউকে গিয়ে বিষয়টা জানাতে বললাম। ও বলল, সেটাও জানিয়েছে, কিন্তু দশ হাজারের নীচে কিছুই হবে না। তবে ওর মূল ক্ষোভটা দেখলাম টাকার পরিমাণেই, তোলাবাজিটা ও একেবারেই অন্যায় বলে ভাবছে বলে মনে হল না।
আমার ড্রাইভারটি তৃণমূলের সমর্থক এবং একই সঙ্গে সংখ্যালঘু। কিন্তু তাতে বিশেষ সুবিধা হয়নি ওর।
ইন্দ্রনীল মণ্ডল
ইমেল মারফত
হিন্দি চাপানো
আপাতত কস্তুরীরঙ্গনের রিপোর্ট কার্যকর হল না, কিন্তু বহু কাল ধরে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে অ-হিন্দিভাষীদের উপর, আরও চলবে। আমি তখন কিশোর, সম্ভবত ১৯৬৫ সাল, হিন্দি চাপানোর প্রতিবাদে ভারতের অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে আন্দোলন হয়েছিল। বাংলায় তখন তামিলদের মতো না হলেও, আন্দোলন হয়েছিল। স্কুল-কলেজের দাদারা আন্দোলনে ছিলেন, আমরাও। মেমারির রসুলপুরে হিন্দি গানের প্রচুর রেকর্ড পুড়িয়েছিলাম (পরে দাদারা বোঝালেন, এর দরকার ছিল না)। ২০/২৫ বছর আগেও দেখেছি, বহু রেলস্টেশনে সাইনবোর্ডের হিন্দি লেখাটা কেউ আলকাতরা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে।
এর পরেও কিন্তু হিন্দিওয়ালাদের আগ্রাসন বা আধিপত্যবাদ থেমে থাকেনি। সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারের ফর্ম, রেলের টিকিট, সরকারি চিঠি হিন্দিতে লেখা ও ছাপা হতে থাকে, পরে পাশাপাশি ইংরেজিতেও সরকারি চিঠি কেন্দ্রীয় সরকার লিখতে শুরু করে, অবশ্যই চাপে পড়ে।
বিগত দুই দশকেই বৈদ্যুতিন মাধ্যমে হিন্দি আগ্রাসন আরও তীব্র হতে থাকে। এখন বাংলা ধারাবাহিকেও বিশেষ দৃশ্যে হিন্দি গান ব্যবহার হচ্ছে। বাংলা গানের রিয়ালিটি শোগুলোতে হিন্দি গানের আধিপত্য বেশি। এক কথায়, শিশুর জন্মের পর থেকেই, হিন্দিকে তার মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়ার সুবন্দোবস্ত হয়েছে।
অতীতে সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অনেক বিশিষ্ট জন এই বাংলায় বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়ার উদ্যোগ করেছেন। কিছুই ফলপ্রসূ হয়নি বাঙালিদের অসহযোগিতার জন্য। বাঙালি জাতিকে সত্যিই আত্মঘাতী বলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী
কলকাতা-১০৮
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy