Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষা আক্রান্ত

এই শিক্ষানীতি স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপের নজির রেখেছে। রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ (ন্যাশনাল এডুকেশন কমিশন) যা গঠিত হবে, তার চেয়ারপার্সন হবেন কোনও শিক্ষাবিদ নন, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

নির্বাচন পর্ব মিটে যাওয়ার পরে নতুন সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই কস্তুরীরঙ্গন কমিটির যে রিপোর্টের ভিত্তিতে খসড়া জাতীয় শিক্ষানীতি জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, তা শিক্ষার ওপর এক ভয়ঙ্কর আক্রমণ। ৪৮৪ পাতার একটি রিপোর্ট দিয়ে, জনসাধারণের মতামতের জন্য মাত্র এক মাস (৩০ জুন পর্যন্ত) সময়সীমা ধার্য করা হয়েছিল। যদিও জনমতের চাপে সময়সীমা ৩১ জুলাই ধার্য হয়েছে, তবু এত বড় রিপোর্ট পর্যালোচনা করে মত দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত কম সময়।

তা ছাড়া এটা জাতীয় শিক্ষানীতি, কিন্তু কমিটি আলোচনা করেছে মাত্র দু’টি সংগঠনের সঙ্গে। একটি ছাত্র সংগঠন, যা হল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি), অর্থাৎ শাসক দলের অনুগামী ছাত্র সংগঠন। আর একটি শিক্ষক সংগঠন, তাও শাসক দলেরই অনুগত। বাকি কারও সঙ্গে পরামর্শ বা আলোচনা করার কথা কমিটির মনে হয়নি!

এই শিক্ষানীতি স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপের নজির রেখেছে। রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ (ন্যাশনাল এডুকেশন কমিশন) যা গঠিত হবে, তার চেয়ারপার্সন হবেন কোনও শিক্ষাবিদ নন, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। একাধারে চেয়ারপার্সন, অন্য দিকে কনভেনর। তিনিই বছরে এক বা প্রয়োজনে একাধিক বার সভা আহ্বান করবেন। বডির চেয়ারম্যান হবেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী। এ ছাড়া ২০-৩০ জন সদস্য যাঁরা এই কমিটিতে থাকবেন, সকলেই মন্ত্রী, আমলা প্রমুখ। যদিও কতিপয় শিক্ষাবিদ কমিটির অন্তর্ভুক্ত হবেন, বলা হয়েছে। আশঙ্কা, তাঁরাও মূলত হবেন শাসক দলেরই সমর্থক। তা ছাড়া, কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং, তাঁর বিরুদ্ধে বলার বুকের পাটাই বা ক’জনের থাকে? সেই সঙ্গে আরও বলা হয়েছে, কোনও স্তরে কোথাও কোনও নির্বাচিত বডি থাকবে না। সবই হবে মনোনীত। গণতন্ত্রের চরম পরাকাষ্ঠা!

শিক্ষায় দ্বিভাষা ফর্মুলা, অর্থাৎ মাতৃভাষা ও ইংরেজির পরিবর্তে ত্রিভাষা ফর্মুলা চালু করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে জনমতের চাপে সরকার ঘোষণা করেছে, হিন্দি বাধ্যতামূলক করা হবে না। তবু নীতি থেকে তা বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়নি।

প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল চালুর দীর্ঘ দিনের ন্যয়সঙ্গত দাবি আজও উপেক্ষিত। তথাপি প্রবল জনমত কেন্দ্রীয় সরকারকে বাধ্য করেছিল— কিছুটা হলেও পিছু হটে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল পুনঃপ্রবর্তনে। বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতি তাকেও নস্যাৎ করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নো ডিটেনশন-কেই সমর্থন করেছে, যা জনস্বার্থ-বিরোধী।

অনার্স কোর্সকে তিন বছরের পরিবর্তে চার বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি বিএড-এর ক্ষেত্রেও চার বছরের কোর্স ধার্য করা হয়েছে। এ ভাবে বছর বৃদ্ধি, সময় এবং ব্যয়সাপেক্ষ তো বটেই, পাশাপাশি সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েদের চাকরিজীবনের উপরে বিরাট আঘাত।

শিক্ষা এত দিন পর্যন্ত যুগ্ম তালিকাভুক্ত থাকায়, রাজ্যগুলি আপেক্ষিক অর্থে যতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করত, তাকেও নস্যাৎ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুগ্ম তালিকাভুক্ত থাকার সুবাদে কেন্দ্রীয় নীতিকেই রূপায়ণ করার কাজই হবে রাজ্যগুলির মূল লক্ষ্য।

শিক্ষায় এক দিকে বিদেশি হস্তক্ষেপ বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়ে বিদেশি ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পুঁজিপতিবর্গকে আইনানুগ ভাবে শিক্ষায় আর্থিক সহায়তা দানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার মাধ্যমে, তাদেরও হস্তক্ষেপ বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টর ইন্ডাস্ট্রিকে তাদের বার্ষিক লভ্যাংশের ০.১ শতাংশ ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনে দান করতে হবে। একই ভাবে, সরকারি অর্থের পাশাপাশি পুঁজিপতিদের থেকেও টাকা নেওয়াকে ফিলানথ্রপিক সাপোর্ট আখ্যা দিয়ে তাদের কাছে শিক্ষাকে বিকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিক্ষায় এত দিন পর্যন্ত প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত যে কোর্স ছিল, অর্থাৎ প্রাথমিক-মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক, তারও পরিবর্তন করা হয়েছে। বলা হয়েছে প্রি-স্কুলিং হবে ৩-৫ বছর। তার পর ২ বছর প্রথম-দ্বিতীয়। তৃতীয় থেকে পঞ্চম, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম, নবম থেকে দ্বাদশ ইত্যাদি ভাগ করে উচ্চ মাধ্যমিক ব্যবস্থাকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অনেক সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে দশম শ্রেণি পাশ করার পরে সার্টিফিকেট ও চাকরির দাবিদার হওয়ার সুযোগটুকুও খর্ব হয়ে গেল। একই সঙ্গে ড্রপ-আউট বাড়বে বিভিন্ন স্টেজে ব্যাপক হারে, যা চরম শিক্ষাসঙ্কোচনের পথকেই প্রশস্ত করবে। একই রকম ভাবে ভোকেশনাল এডুকেশন, স্কুল স্তরের পরিবর্তে ঢালাও ভাবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রসারিত করে, চাকরির পরিবর্তে কোনও ভাবে কিছু করে খাওয়ার রাস্তাকেই প্রশস্ত করবে।

বলা হয়েছে, এখন থেকে একমাত্র রেগুলার টিচার নিযুক্ত হবেন। ভাল কথা, এটাই সকলের দাবি। কিন্তু গোটা দেশে যে লক্ষ লক্ষ পার্শ্বশিক্ষক, শিক্ষাবন্ধু, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের সহায়ক, সহায়িকা রয়েছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে, এ সম্পর্কে একটি বাক্যও খরচ হয়নি। যদি এঁদের এই সুযোগে বরখাস্ত করা হয়, তা হলে পরিণাম কী হবে সহজেই অনুমেয়।

শিক্ষা সর্বসাধারণের বিষয়। তাড়াহুড়ো করে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করবেন না। শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে ব্যাপক মতামত গ্রহণ করা হোক, যাতে প্রকৃত অর্থে জনমুখী শিক্ষানীতি তৈরি হতে পারে।।

কার্ত্তিক সাহা

সাধারণ সম্পাদক, অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটি

মিষ্টি কাটমানি

কাটমানি তো শুধু নেতারাই খান না, কাজ করে দেওয়ার নামে এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারী কাটমানি, থুড়ি, মিষ্টি খাওয়ার টাকা নেন। সেই টাকার পরিমাণটা এমনই যে কোনও কোনও কর্মচারীকে মাস-মাইনেয় হাত দিতে হয় না। যাঁরা এই মিষ্টি খাওয়ার টাকা দেন, তাঁদেরও মনের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে, এটা কোনও অন্যায় নয়। সহজে কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়। এটা রেওয়াজ। তাঁরা এর মধ্যে কোনও অন্যায় খুঁজে পান না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগুলো ধরে নাড়া দিতে হঠাৎই তাঁদের মধ্যে বিবেকবোধ জেগে উঠেছে। আর ইন্ধন জোগানো লোক বা দলেরও অভাব হচ্ছে না।

অমিতাভ চক্রবর্তী

সুভাষপল্লি, খড়্গপুর

যেন ছিল না

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাটমানির প্রসঙ্গ স্বীকার করায় সমস্ত বিরোধী দল এমন ‘রে রে’ করে উঠেছে, মনে হচ্ছে কাটমানি অস্তিত্ব শুধু এই রাজ্যে কেন, গোটা ভারতবর্ষে আগে ছিল না। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের শাসনে কাটমানি তো প্রায় শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই সময়ে পঞ্চায়েতের কাজ ভুয়ো মাস্টার রোল তৈরি করে টাকা নয়ছয় করা, পাড়ায় পাড়ায় তোলাবাজি ভয়ানক আকার ধারণ করেছিল। যে কোনও নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য কাটমানি না দিলে কাজ করা যেত না। অথচ কোনও দিন গোটা দেশের কোনও মন্ত্রী কাটমানির প্রসঙ্গ স্বীকার করেননি। মমতা প্রকাশ্যে সেটা স্বীকার করেছেন। এ জন্য মমতাকে সাধুবাদ দেওয়া উচিত।

রতন চক্রবর্তী

উত্তর হাবরা, উত্তর ২৪ পরগনা

স্বভাব মন্দ

সন্দীপন নন্দীর ‘কেউ বলে না ভর্তুকি চাই না’ (৫-৭) নিবন্ধের প্রেক্ষিতে বলি, অধিকাংশ বাঙালি দেশকে ভালবাসে কবিতায়, গানে, কিন্তু প্রাণে নয়। উনি শুধু অর্থকরী স্বার্থের কথা বলেছেন, তা ছাড়াও প্রতিনিয়ত এ ব্যাপার লক্ষ করা যায়। আমরা বাজার থেকে প্লাস্টিক নিয়ে ফিরি, সেই প্লাস্টিকে বর্জ্য ভরে রাস্তায় ফেলি, ট্র্যাফিক সিগনাল অগ্রাহ্য করি, বাসট্রামট্রেনে টিকিট ফাঁকি দিই, দীর্ঘ দিন ধরে এ ভাবে চলতে চলতে আমাদের মনে কোনও অপরাধবোধ জাগে না। কয়েক দশক আগে কাগজে পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপনে দেখা যেত, ‘পাত্রের উপরি আয় আছে’। আত্মচিন্তাই আমাদের একমাত্র চিন্তা।

অর্ণবকুমার সরকার

কলকাতা-৫৬

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy