Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Bengal SSC Recruitment Case

সম্পাদক সমীপেষু: ব্যবস্থার বিনাশ

স্কুলে চাকরি পাওয়ার একটা ‘সিস্টেম’ অনেক দিনই চালু রয়েছে। চাকরিপ্রার্থীর নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে কর্মখালি বিজ্ঞাপন, আর পরিচিতদের সুবাদে চাকরি মিলত। বেতন ছিল যৎসামান্য।

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪ ০৪:৪০
Share: Save:

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “অযোগ্য এই ‘সিস্টেম’” (৩১-৫) প্রসঙ্গে বলতে চাই, স্কুলে চাকরি পাওয়ার একটা ‘সিস্টেম’ অনেক দিনই চালু রয়েছে। চাকরিপ্রার্থীর নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে কর্মখালি বিজ্ঞাপন, আর পরিচিতদের সুবাদে চাকরি মিলত। বেতন ছিল যৎসামান্য। সাধারণ কাগজে সুপারিশপত্র, বা মুখের কথাতেও কখনও কখনও চাকরি পাওয়া যেত। পরে একটা স্কুল ম্যানেজিং কমিটি তৈরি হল। তারা তৈরি করল স্কুল স্ক্রিনিং কমিটি। তারই পরিবর্তিত সাম্প্রতিক রূপ হল স্কুল সার্ভিস কমিশন, বা এসএসসি। তার ক্ষমতাও একটা সময়ে এক জন মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেল। বাকিরা হয়ে গেলেন হয় সহায়ক, নয় বশংবদ। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নামেই কাজ করল। নেতা-মন্ত্রীদের কাছে শিক্ষকতার চাকরির জন্য সুপারিশ পাঠাতে লাগলেন বিধায়করা। এক সময় শুনেছিলাম, এসএসসি চালু হচ্ছে ভাল ছেলেদের শিক্ষকতার চাকরিতে নেওয়ার জন্য। আস্তে আস্তে শিক্ষকতার চাকরির বেতন অনেক বেড়ে গেল। তার চেয়ে বাড়ল উচ্চশিক্ষিত, বেকার যুবক-যুবতীর সংখ্যা। মানুষের লোভ আর আকাঙ্ক্ষা তাদের নৈতিকতার অবনমন ঘটিয়ে এসএসসি নামক ‘সিস্টেম’-এ ধস নামাল। এসএসসি-র নামে অভিযোগ, তা হয়ে উঠছে কার্যত চাকরি বিক্রয় কেন্দ্র। জুটে গেল দালাল ফড়েরা। জলে গেল যোগ্য প্রার্থীর স্বপ্ন, এক সম্মানজনক জীবন যাপনের আশা।

এটাও শুনেছিলাম, শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত রাখা হবে। কিন্তু তা আর রইল না। প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় বড় রাজনৈতিক নেতা, এবং উচ্চপদে আসীন আধিকারিকরা যে বিদ্যালয়ে নিয়োগ-দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে গেলেন, তা কি সিস্টেমের দোষ? না কি সিস্টেমটাকে যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁদের ভিতরকার লোভ? সিস্টেম-এ যদি ত্রুটি থেকে থাকে, কাজ করতে করতে তা তো সংস্কার করা যেত। এ রকম কোনও সিস্টেম আছে না কি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যার পরিবর্তন হয় না?

দেখেশুনে মনে হয়, সুপরিকল্পিত ভাবে কিছু ক্ষমতাধারী মানুষ সিস্টেমটাকে আর দুর্নীতিমুক্ত রাখেননি। জেনেশুনেই নির্দিষ্ট সময়ের আগে ওএমআর শিট নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই শিটগুলো যাদের প্রস্তুত করতে বরাত দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও নিয়ম মানা হয়নি। কম নম্বরকে যে বেশি নম্বরের আগে রাখা হয়েছে, শূন্য খাতা জমা দিলেও যে প্যানেলে নাম থেকেছে, এ ব্যাপারে তো কোনও দ্বিমত নেই। কেনই বা পর্ষদ একই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম জানাচ্ছে? আন্দোলনরতদের প্রতি যে আন্তরিকতার অভাব, উদাসীনতা এবং অবহেলা দেখানো হয়েছে, তা কি অস্বীকার করা যায়? কোনও সময়েই কি এসএসসি-প্রদত্ত নিয়োগ বিজ্ঞাপন নির্ভুল হয়েছে? এগুলো কি ইচ্ছাকৃত নয়? যোগ্য-অযোগ্যকে তো আলাদা করা যেত। এখন ওএমআর শিট নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তা কি আর সম্ভব হবে?

তনুজ প্রামাণিক, হাওড়া

শাস্তিই প্রাপ্য

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তর্কের খাতিরে যদি ধরা যায় যে, অযোগ্যদের বেছে বেছে বরখাস্ত করা সম্ভব, তার পর কী হবে? ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কেনার টাকা কে শোধ করবে? তাঁদের সন্তানরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হয়েছে, তাদের ছাড়িয়ে আনতে হবে। শিশুটি কেন শাস্তি পাবে? কিন্তু শাস্তি শিশুটি কোথায় পাচ্ছে? প্রকৃত শাস্তি তো পেয়েছেন কিছু নির্দোষ যোগ্য ব্যক্তি। শিশুটির জন্য অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, যেখানে এখনও রাজ্যের সিংহভাগ শিশুই পড়াশোনা করে। অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিশুদেরও সেখানে ভর্তি করা যায়।

ঋণ শোধের কথায় আসা যাক। অযোগ্য প্রার্থীর ফ্ল্যাট অধিগ্রহণ করে বিক্রি করে টাকা আদায় করা যেতেই পারে। এই সিদ্ধান্তকে নিষ্ঠুর মনে হলে ফিরে দেখা যাক কয়েক বছর আগের চিত্র। যে যোগ্য ছেলেটি বা মেয়েটি স্কুল সার্ভিসে অযোগ্যদের কারণে চাকরি না পেয়ে একটা দড়ি বা ওড়নাকে বেছে নিয়েছিল ঝুলে পড়ার জন্য, তার দোষ কোথায় ছিল? তার মৃত্যুর জন্য ‘সিস্টেম’-এর সঙ্গে এই চাকরি পাওয়া অযোগ্য শিক্ষকরা কি সমান দোষী নয়? অযোগ্যদের কারণে কত যোগ্য ছেলের সংসার করে ওঠা হয়নি, চাকরি পেলে হয়তো তার বাবা কিংবা মা ওষুধের অভাবে মারা যেতেন না। সেই হিসাব আমরা কি রেখেছি? কিছু শিশুর দোহাই দিয়ে, কিংবা মানবিকতার খাতিরে, কখনও অযোগ্যদের ‘ব্ল্যাকবোর্ডে চক ঘষতে’ দেওয়া চলে না।

জয়ন্ত শীল, ইছলাবাদ, পূর্ব বর্ধমান

সুবিচার

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এসএসসি হাই কোর্টে অযোগ্যদের তালিকা দিতে পারেনি? প্রশ্ন, যে আধিকারিকদের গাফিলতিতে ওই তালিকা দেওয়া হয়নি, তাঁদের সরিয়ে দেওয়া বা বেতন বন্ধের নির্দেশ কেন দেয়নি আদালত? এঁদের অপদার্থতার বিচার কে করবে?

প্রণয় ঘোষ, কালনা, পূর্ব বর্ধমান

কয়েদখানা?

সম্পাদকীয় ‘পলাতক’ (১৫-৫) অত্যন্ত সময়োপযোগী। কোটার ছাত্র রাজেন্দ্র মীনার নিরুদ্দেশ যাত্রা এবং বাবা-মায়ের কাছে পাঠানো মেসেজ উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিভাবক এবং ছাত্রদের প্রতি একটি সতর্কবার্তা। জীবন একটাই। তাকে নিজের পছন্দে যাপন করার অধিকার সবার আছে। রাজস্থানের কোটাকে ‘বিখ্যাত’ করেছে অসংখ্য কোচিং সেন্টার। তিন দশক আগে কোটার কথা প্রথম শুনি, যখন আমার পরিচিত এক ছাত্র সেখানে পড়তে যায়। পরবর্তী কালে সে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাওয়ায় সেই স্কুলের অভিভাবকরা সন্তানকে কোটাতে পড়ানোর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। কোটায় প্রতিযোগিতা প্রথমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছিল। এর পর সেটা কোচিং সেন্টারগুলোর মধ্যে শুরু হতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর চাপ আরও বেড়েছে। অবাক লাগে, ওখানে এক জন ষোলো-সতেরো বছরের শিক্ষার্থী নিয়মিত প্রতি দিন ষোলো ঘণ্টা লেখাপড়ায় ব্যস্ত থাকে! অন্যান্য নিত্যকর্মে দুই ঘণ্টা! বাকি মাত্র ছ’ঘণ্টা ঘুমোনোর জন্য বরাদ্দ! অথচ বিজ্ঞান বলছে, একটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য দিনে সাত-আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি।

তার উপর সেখানে কোনও বন্ধু নেই। প্রত্যেকেই প্রতিযোগী। এই বয়সে সকলেই প্রায় বন্ধুদের সঙ্গে নিজের মনের কথা বেশি আদান-প্রদান করে। সে সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত। নেই কোনও বিনোদনের ব্যবস্থা। লেখাপড়া ছাড়া বাকি সব এদের জীবনে অপ্রয়োজনীয় করে রাখার বন্দোবস্ত একেবারে পাকা। কারণ এরা ভবিষ্যতে অর্থ, যশ, প্রতিপত্তির শিখরে থাকবে! কঠোর তপস্যা ছাড়া সিদ্ধি আসবে কী করে!

দীর্ঘ তিন দশকের বেশি শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, লেখাপড়ার মান বিচার করে শিক্ষকরা যদি এক ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ আলাদা করে দেন, তবে সেটা মধ্য ও নিম্ন মেধাবীদের মনে হতাশা ও অবসাদ সৃষ্টি করে। কোটার কোচিং সেন্টারে পড়ুয়াদের মধ্যে শ্রেণিবিভাগ মধ্য ও নিম্ন মেধাবীদের অবসাদের অন্যতম কারণ। অনেক ক্ষেত্রেই তারা মূলত বাবা-মায়ের ইচ্ছেপূরণের মেশিন হয়ে ওখানে আসতে বাধ্য হয়েছে। তার পরিণতি যে ভাল হয়নি, সেটা খবরেই প্রকাশ।

গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy