Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বাগানের জয়রথ

মাঠের কর্তৃত্ব কোচের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে দল পরিচালনায় প্রশাসক বা কর্তৃপক্ষ কখনও হস্তক্ষেপ করেননি। তাই এই দলের কোচ হোসে মলিনা স্বাধীন ভাবে কোচিং করতে পেরেছেন।

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫ ০৬:০৮
Share
Save

‘দিমিত্রির জাদু, ভারতসেরা মোহনবাগান’ (২৪-২) শীর্ষক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। এ বছর আইএসএল লিগ শিল্ড জিতে ১৩৬ বছরের প্রাচীন মোহনবাগান ক্লাব প্রমাণ করল যে, বাঙালির এবং বাংলার গঙ্গাপারের ফুটবল এখনও মরে যায়নি। গত বছরও মোহনবাগান ক্লাব আইএসএল-এর লিগ ও শিল্ড জয়ী হয়েছিল। শতবর্ষ প্রাচীন মোহনবাগান ক্লাবের এই ধারাবাহিক সাফল্যের কারণ হিসেবে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় ক্লাবের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আধুনিক পেশাদার ব্যবস্থাপনার কথা। আরপিজি গ্রুপের শীর্ষকর্তা সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নামী পেশাদার ব্যক্তিত্ব রয়েছেন মোহনবাগান ক্লাবের বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এ। তাই কোচ থেকে শুরু করে ফুটবলার নিয়োগ— সব কিছুই সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, মাঠের কর্তৃত্ব কোচের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে দল পরিচালনায় প্রশাসক বা কর্তৃপক্ষ কখনও হস্তক্ষেপ করেননি। তাই এই দলের কোচ হোসে মলিনা স্বাধীন ভাবে কোচিং করতে পেরেছেন। তৃতীয়ত, মোহনবাগানের কোচ হোসে মলিনা-ও আগের কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসের মতো নীরবে কোচিং করেছেন। কোনও ম্যাচে দল হেরে গেলেও কোনও অজুহাত দেননি কিংবা দলের খেলোয়াড়দের কোনও দোষারোপ করেননি। মোহনবাগানের এই সাফল্য আগামী দিনে তরুণ বাঙালি ভূমিপুত্রদের ফুটবল খেলতে উজ্জীবিত এবং অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে হয়।

অন্য দিকে, গঙ্গাপারের আর দু’টি শতবর্ষ প্রাচীন ক্লাব ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব এ বছর আইএসএল-এ চরম ব্যর্থ হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই আইএসএল-এ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কোনও সাফল্য নেই। এ বছরও প্রথম ছ’টি দলের মধ্যে থাকতে পারবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। এই সার্বিক ব্যর্থতার মূল কারণ হল— কলকাতা ময়দানের এই প্রাচীন ক্লাবে এখনও কোনও পেশাদার ম্যানেজমেন্ট গড়ে না ওঠা। ক্লাবের শীর্ষ স্তরের কর্মকর্তারা এখনও দল পরিচালনায় রীতিমতো মাথা গলিয়ে থাকেন। তাই এই দলের বর্তমান কোচ অস্কার ব্রুজোও সম্ভবত দল পরিচালনায় খুব বেশি স্বাধীনতা পাননি। ফলে এ বছর ইস্টবেঙ্গল আইএসএল-এ শেষের সারিতেই রয়েছে।

মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব এ বছর আইএসএল-এ প্রথম খেলছে। বর্তমানে এই দলটি আইএসএল-এর অন্তিম, অর্থাৎ ১৩তম স্থানে রয়েছে। ক্লাবের ব্যবস্থাপনাও চূড়ান্ত অপেশাদার। ক্লাবের কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকার ফলে দল পরিচালনাতেও ডামাডোল দেখা দিয়েছে। এই রকম চূড়ান্ত অব্যবস্থা চললে দলের সার্বিক সাফল্য আসবে কী করে?

তুষার ভট্টাচাৰ্য, কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ

সাফল্যের চাবি

আইএসএল-এ ভারতের প্রথম ক্লাব হিসেবে পর পর দু’বার লিগ-শিল্ড জিতে ভারতসেরা হল মোহনবাগান। শুধু টানা দ্বিতীয় বার জয় নয়, এ বছর মোহনবাগান আরও বেশ কিছু রেকর্ড করেছে। যেমন, এর আগে কোনও দল যেখানে পয়েন্ট টেবিলে ৫০-এর গণ্ডি পার করতে পারেনি, সেখানে মোহনবাগান ২৪ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট পেয়েছে। ২৪ ম্যাচে ১৪ বার ক্লিনশিট, সেট পিসে ২০টা গোল, ৫৭০ মিনিট দল কোনও গোল খায়নি, এক মরসুমে সবচেয়ে বেশি জয়, পর পর তিন মরসুম আইএসএল ট্রফি জেতার সাফল্য, সবচেয়ে বেশি হোম ম্যাচ জেতা— সবই আইএসএল-ইতিহাসে রেকর্ড।

মোহনবাগান এ বার নিয়ে পাঁচ বার আইএসএল খেলছে। মোহনবাগান ভারতের একমাত্র দল যারা পাঁচ বারই লিগ টেবিলে প্রথম চারটি দলের মধ্যে ছিল। আইএসএল-এর সবচেয়ে সফল দল মুম্বই সিটি ২০২১-২২ মরসুমে প্রথম চারটি দলের মধ্যে ছিল না। মোহনবাগানের এই ধারাবাহিক সাফল্যের কারণ পেশাদার মানসিকতা। অন্য দিকে, কলকাতার আর এক প্রধান ইস্টবেঙ্গল, এ বছর অন্য বছরের থেকে অনেক ভাল দল গড়েছিল। তাদের প্রাক্তন কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাত মরসুমের শুরুতেই প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, “আমাদের প্রথম লক্ষ্য সুপার সিক্সে থাকা।” আসলে স্বপ্ন না দেখলে সাফল্য পাওয়া যায় না। তা ছাড়া, মোহনবাগানের কোচ হোসে মলিনা ম্যান ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারে দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। দলকে তিনি এক সূত্রে বেঁধেছিলেন বলেই, মোহনবাগান এ বারের আইএসএল-এ ইতিহাস সৃষ্টি করল।

মোহনবাগানের সাফল্যের অন্যতম কারণ সঠিক স্কাউটিং এবং শক্তিশালী রিজ়ার্ভ বেঞ্চ। ভাল দল গড়তে গেলে অবশ্যই টাকার দরকার, কিন্তু সেটা কী ভাবে খরচ হচ্ছে, সেটাই আসল ব্যাপার।

রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

রুচিশীল

‘রঙিন হুল্লোড়’ (১৩-৩) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসবের আনন্দ সভ্যতার চাপে আজ হুল্লোড়ে পর্যবসিত। পণ্য বিপণনের যুগে সব উৎসবই এখন ‘ইভেন্ট’-এ পরিণত হয়েছে। তেমনই শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব লোকচক্ষুর অন্তরালে কখন যে ‘ইভেন্ট’ হয়ে গেছে, তা বাঙালি নিজেরাও জানে না। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য নিমাইসাধন বসু বলেছিলেন, যদি শান্তিনিকেতনের মাটির উপরে টান না থাকে, তা হলে সব কিছুই অন্তঃসারশূন্য মনে হবে।

এমন অন্তঃসারশূন্য মানুষের দল যদি শান্তিনিকেতনকে ঘিরে থাকে, তা হলে উৎসবের আনন্দও এক সময় হুল্লোড়ে পরিণত হবে। শান্তিনিকেতনের ছাতিম কুঞ্জে দীর্ঘ দিনের বসন্তোৎসব উদ্‌যাপন এক দল মানুষের অশালীন আচরণে এক সময় বন্ধ হয়েছিল। এক সময়ে শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসবে রবীন্দ্র ভাবনায় জাড়িত প্রাকৃতিক স্নিগ্ধ পরিমণ্ডলে রুচিশীল সংস্কৃতিমনা কতিপয় মানুষ যাওয়া-আসা করতেন, কিন্তু পরবর্তী সময়ে সমাজের ভিন্ন রুচি-ভিন্ন আনন্দ আস্বাদনের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া বসন্তোৎসব বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিতে উদ্যোগী হন। আনন্দ উৎসবের নামে প্রকৃতির উপর অত্যাচার-সহ শান্তিনিকেতনের ছায়া সুনিবিড় পরিবেশকে কলুষিত করেছে এই সভ্যতাই। তাই সভ্য মানুষকেই ভাবতে হবে বসন্তোৎসব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ার কারণ।

ছাতিম কুঞ্জ ছেড়ে বসন্তোৎসবের উন্মাদনা এখন সোনাঝুরি হাটকেও গ্রাস করেছে। সেখানেও পরিবেশের প্রতি অত্যাচার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সম্পাদকীয়তে যথার্থই প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, দোল রঙের উৎসব। পরিবেশের রঙে রং মিশিয়ে তার মূল চরিত্রটি অক্ষুণ্ণ রাখতে আপত্তি কোথায়? কেন পলাশ ছিঁড়ে, যত্রতত্র রঙের প্যাকেট ফেলে, উন্মুক্ত চত্বরে অনুষ্ঠানের নামে আবর্জনা ছড়িয়ে এই দিন উদ্‌যাপন করতে হবে? আসল কথা হল, ‘শিক্ষা’ এখন মানুষের বৌদ্ধিক মনন এবং আত্মার উন্নতিতে সাহায্য করে না। বর্তমান সভ্যতায় শিক্ষা কেবলই একটি মানুষকে অর্থ উপার্জনের যন্ত্র হিসাবেই দেখে। জোর করে অনিচ্ছুক মানুষের গায়ে রং দেওয়া কিংবা অবলা জীবজন্তুদের রং মাখিয়ে আনন্দ উদ্‌যাপনকে হুল্লোড়ে পরিণত করা শুধুমাত্র প্রশাসনের দ্বারাই নিরস্ত করা যাবে না। এর জন্য মানবমনের আত্মিক এবং বৌদ্ধিক উন্নয়নের প্রয়োজন। শুধুমাত্র রাজনীতির রঙে বিভাজিত সমাজে মানবমনে সেই আত্মিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উৎসবের র‌ং পরিপার্শ্ব থেকে খুঁজে নেওয়ার জন্য সদর্থক অর্থেই শিক্ষিত-রুচিশীল সংস্কৃতিতে আজন্মলালিত একটা মন থাকা অবশ্য প্রয়োজন।

সঞ্জয় রায়, হাওড়া

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mohun Bagan ISL 2024-25

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}