বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার অধীন যশোর রোডে গত এক মাসে পথ দুর্ঘটনায় ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। তার পরেই নড়েচড়ে বসেছে বিধাননগর কমিশনারেট। তাদের এলাকার মধ্যে অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা ভিআইপি রোডের নিরাপত্তা জোরদার করতে এ বার তৎপরতা শুরু হয়েছে। গত সোমবার কমিশনারেটের পুলিশের পদস্থ আধিকারিকেরা বিধাননগর পুরসভা এবং তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা ওয়েবেল-কে সঙ্গে নিয়ে ভিআইপি রোড পরিদর্শন করেন। অত্যাধুনিক মানের ক্যামেরা বসিয়ে বেপরোয়া গাড়িকে জরিমানা করা থেকে শুরু করে রাস্তা বিপন্মুক্ত করার উপায়-সহ নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেই খবর। যদিও ওই দিন ওই পরিদর্শন চলার সময়েই ভিআইপি রোডে সরকারি আধিকারিকদের সামনেই একে অন্যকে ধাক্কা মেরে দুর্ঘটনায় পড়ে দু’টি মোটরবাইক।
অতীতে ভিআইপি রোডে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কৈখালির কাছে গত বছর একটি বেসরকারি বাস থেকে পড়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার পরে সেটির বিরুদ্ধে রেষারেষির অভিযোগ উঠেছিল। তার আগে রাতের ভিআইপি রোডে বাঙুর এলাকায় একটি বেপরোয়া গাড়ি ধাক্কা মেরেছিল লরির পিছনে। ওই ঘটনায় চালক-সহ তিন আরোহী মারা যান। অভিযোগ, অনেক সময়েই রাতের ভিআইপি রোডে অকারণ রেষারেষি করে বিপজ্জনক ভাবে বাস চলাচল করে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ভিআইপি রোডে বেপরোয়া গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে অত্যাধুনিক মানের ক্যামেরা বসানো হবে। যাতে ট্র্যাফিক আইনভঙ্গকারী গাড়ির নম্বর-সহ ছবি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে পৌঁছে যায়। মা উড়ালপুলের উপরে ওই ব্যবস্থা রয়েছে। নিউ টাউনেও একটি এলাকায় ওই ধরনের ক্যামেরা আছে। কিন্তু ভিআইপি রোডে এখনও তেমন ক্যামেরা বসানো যায়নি। সাধারণ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেই গাড়ি চলাচলের উপরে নজর রাখা হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, সামগ্রিক ভাবে উল্টোডাঙা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভিআইপি রোডের সম্পূর্ণ রাস্তা জুড়েই পথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই দূরত্বের মধ্যে গোলাঘাটা, দমদম পার্ক, বাগুইআটি, হলদিরাম বা বাগুইআটি উড়ালপুল থেকে নামার সময়ে দমদম পার্ক বা রঘুনাথপুরের মতো জায়গাগুলিকে দুর্ঘটনাপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব সিগন্যালে গতি নির্ণায়ক ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্যামেরায় এমন ব্যবস্থা রাখার কথাও হচ্ছে, যাতে কোনও আইনভঙ্গকারী গাড়ি ওই সব ক্যামেরার সামনে দিয়ে গেলে পুলিশের কন্ট্রোল রুমে তার সঙ্কেত যাবে।
আধিকারিকেরা জানান, দিনে ট্র্যাফিকের নজরদারি থাকলেও রাতের ভিআইপি রোডে একটা সময়ের পরে ট্র্যাফিক নজরদারি কমে যায়। সেই সময়ে গাড়ি চলাচলের উপরে নজরদারি তেমন থাকে না। তাই ভরসা করতে হয় সাধারণ সিসি ক্যামেরার উপরেই। ফলে ট্র্যাফিক আইনভঙ্গকারী গাড়িকে চিহ্নিত করে যদি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় মামলা রুজু করার উপায় বাস্তবায়িত করা যায়, তবে চালকেরা সতর্ক হবেন। আর দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমবে।
গত সোমবার বিধাননগর পুরসভার নির্বাহী বাস্তুকার (সদর) মনোদীপ মুখোপাধ্যায় ও বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি (ট্র্যাফিক) মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব ভিআইপি রোড পরিদর্শন করেন পুলিশ, ওয়েবেল ও পুরসভার প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, তথ্যপ্রযুক্তিগত ভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করবে ওয়েবেল। ভিআইপি রোডে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি কত হতে পারে, তা নিয়ে সমীক্ষা করে পুলিশকে জানাবে তারা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)