সুনসান টরন্টোর রাস্তাঘাট। —নিজস্ব চিত্র।
লেক মিশিগান-এর তীরে অবস্থিত কানাডার বৃহত্তম শহর টরন্টোর স্কারবরতে বিগত দু’বছরের অবস্থানকালে এ রকম দৃশ্যর সম্মুখীন কদাপি হতে হয়নি।
এ দেশে অনেক আশা, আকাঙ্খা নিয়ে এসেছিলাম, পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হিসেবে কলকাতার টালিগঞ্জের ছোট্ট জনপদ কুঁদঘাট থেকে। কিন্তু এই অতিমারি করোনাভাইরাসের দাপটে এই বাণিজ্যিক নগরী ভৌতিক চেহারায় পরিণত হচ্ছে ধীরে ধীরে। যা আমার কল্পনাতীত।
আমি একটা ‘হরিপদ কেরানি’ মার্কা চাকরি করি একটি গৃহনির্মাণ সংস্থায়। কিন্তু এই অন্টারিও প্রদেশের সরকার আমাদের চাকরিটা-কে অতি আবশ্যিক তকমা দেওয়ায় আমার অধিকাংশ ভারতীয় আইটি প্রফেশনাল-দের মতো বাড়ি থেকে চাকরি করতে পারছি না।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরেই চলে আসছে করোনাভাইরাসের টিকা! দাবি অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীর
সপ্তাহে ৫ দিন প্রায় প্রাণ হাতে (যদিও সেটা গ্লাভসে ঢাকা) করে, মুখে মাস্ক পরে ট্রেন, বাসে করে কর্মস্থলে যাচ্ছি। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত কোনও ভ্রুক্ষেপ দেখিনি কারও মধ্যে (ভাবখানা এমন ইউরোপে হচ্ছে, আমাদের এখানে হবেই না)। কিন্তু যেই ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে করোনা পদার্পণ করল, তখনই সবার টনক নড়ল।
সমস্ত শুকনো খাবার, টিসু পেপার, স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস মুহূর্তে ওয়ালমার্ট, নো ফ্রিলস (একটি কানাডিয়ান স্টোর) থেকে রাতারাতি হাওয়া। ভাগ্য ভাল যে ভেতো বাঙালি আমি। চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, মাখন, ঘি, সর্ষের তেল, লঙ্কা, ডিম ব্যাগবন্দি করে বাড়ি নিয়ে এলাম। এই দেশে একটি বাড়ির বেসমেন্টে আমি একাই থাকি। ভাগ্যক্রমে আমার এক লাদাখি রুমমেট (কনস্ট্রাকশন-এ কাজ করেন) এই মুহূর্তে সোনার থেকে দামি কিছু এন-৯৫ মাস্ক আর গ্লাভস আমাকে দেন।
মেন রোড-এর পাশেই থাকি। রাস্তায় প্রায় ৫০ শতাংশ গাড়ি কমে গিয়েছে। লোক চলাচলও সম হারে কমেছে। ফেডারেল আর প্রাদেশিক সরকার হাতে হাত ধরে লড়াই করছে এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে। আমাদের দক্ষিণের দেশটির তুলনায় জনগণ অনেক সচেতন। তাই আশা করছি এই লড়াইয়ে মানবতারই জয় হবে।
কিন্তু মারাত্মক চিন্তায় রয়েছি আমার বৃদ্ধ বাবা-মা-র জন্য। ওঁরা এখনও কুঁদঘাটেই থাকে। কোনও ভাই, বোন না থাকায় আরও দুশ্চিন্তা করি। দিনে দু’বার কথা হয়, কিন্তু মন যে আর মানে না। চিন্তার আরও কারণ, আমার স্ত্রী আমেরিকার শিকাগো শহরে থাকে। ভাগ্যক্রমে ও আইটি প্রফেশনাল, তাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছে।
আরও পড়ুন: মাত্র ২৪ ঘণ্টাতেই আক্রান্ত ৯৯, ফের করোনা-আতঙ্কে কাঁপছে চিন
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন এই অন্ধকার সময়ের শেষে পরম করুণাময় পৃথিবীর সবার মুখে হাসি ফোটাতে পারেন। এই মুহূর্তে আমার আর কিছু চাহিদা নেই। ভাল থাকবেন সকলে, সাবধানে থাকবেন।
ইন্দ্রজিৎ সাহা, টরোন্টো, কানাডা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন,feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy