Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

আটকে পড়েছি, খাওয়ার টাকাও নেই, আমাদের ফেরান

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

লকডাউনে আটকে পড়া এই সব মানুষ ফিরতে চান ঘরে।

লকডাউনে আটকে পড়া এই সব মানুষ ফিরতে চান ঘরে।

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ১২:৩৬
Share: Save:

চিঠি-১: বন্ধুদের থেকে ধার নিয়ে আমদাবাদে আছি, ফেরান তাড়াতাড়ি

আমার বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে। আমি আমদাবাদে আছি। একটা বাংলোতে কাজ করি। লকডাউনের জন্য কাজে যেতে পারছি না। আমি ফ্যামিলি নিয়ে ভাড়া বাড়িতে আমদাবাদের একটা গ্রামে থাকি। আমি যেখানে থাকি, সেখানে করোনা পজিটিভ নেই। কিন্তু বাকি জায়গা করোনার আঁতুড়ঘর। জমানো টাকাও শেষ হয়ে গিয়েছে আমার। বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে চলছে। কেউ আমাদের বাড়ি ফেরানোর উদ্যোগ নিলে কৃতজ্ঞ থাকতাম।

সুমন দাস, শরখেজ ভিলেজ, আমদাবাদ, গুজরাত, মোবাইল- ৯৫১০৬৯৫১৫৩, ইমেল- sumand48@gmail.com

চিঠি-২: দুই যমজের জামাকাপড় নেই, দিয়ে এলাম

করোনাভাইরাসের প্রভাবে গোটা পৃথিবীর সাথে ভারতবর্ষেও আজ লকডাউন। লকডাউন মাত্র দু’টি শব্দ। কিন্তু এর ভয়াবহতার অর্থ আমাদের জানা ছিল না কিছু দিন আগে পর্যন্তও। এখন এর ভয়াবহ রূপ আমরা ক্রমশ অনুভব করছি। লকডাউনের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে মার্চের শেষ সপ্তাহে আমার স্কুলের এক সহকর্মী দুই যমজ পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। খবরটা শুনে প্রথমে খুব ভাল লেগেছিল। কিন্তু তার এক সপ্তাহ পরে আমার সেই সহকর্মী টেলিফোন করেন। উনি আমাকে জানান, তাঁর দুই যমজ সন্তানকে পরানোর মতো কোনও জামাকাপড় তাঁর কাছে নেই, কারণ সব জামাকাপড়ের দোকান বন্ধ। তিনি আগেই জানতেন, আমার একটি ৮ বছরের কন্যা এবং একটি ৩ বছরের পুত্রসন্তান আছে। তাই উনি তাঁর ছোট্ট দু’টি পুত্রের জন্য কিছু জামাকাপড় হবে কি না জানতে চেয়েছিলেন।

এই দুই যমজ, যাদের জামাকাপড়ও ছিল না! ছবি- লেখক।

প্রথমে খবরটা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল। কারণ, মানুষ খেতে পাচ্ছে না, থাকার জায়গা নেই, এই সব নিউজ আমরা দিন-রাত নিউজ চ্যানেল কিংবা নিউজপেপারে পড়ছি। কিন্তু মানুষ যে এ রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, তা আন্দাজ করার বাইরে ছিল। তাই আমি আর বেশি দেরি না করে আমার পুত্র রিকোর আলমারি থেকে খুঁজে বের করলাম ওর ছোটবেলার জামাকাপড়। পরের দিন সকালে আমি আর আমার স্বামী দুজনে ওই সহকর্মীর বাড়ি যাই। কসবার হালতুতে জামাকাপড় পৌঁছে দিতে। দেখি, দু’টি শিশু খুব খেলা করছে ওদের মায়ের কোলে। ওরা সুস্থ থাকুক, এই কামনা করে আমরা বাড়ি ফিরলাম।

পূজিতা গুহ, অরিজিৎ গুহ, হালতু, কসবা

চিঠি-৩: নবান্ন, লালবাজারকে বলেও ফিরতে পারিনি শিলিগুড়িতে

লকডাউনের ফলে স্ত্রী আর ৭ বছরের শিশুকে নিয়ে কলকাতায় আটকে পড়েছি। আমার বাড়ি শিলিগুড়িতে। সেখানে আমারা মা, বাবা একাই আছেন। ওঁদের এক জন আবার আর্থ্রাইটিসের রোগী। কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। অন্য জন হাইপারটেনশনের রোগী। প্রথম দফার লকডাউনের সময় নবান্ন আর লালবাজারে বহু আবেদন জানিয়েছি, যাতে শিলিগুড়িতে ফিরতে পারি। আবেদন জানিয়েছি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজি-র কাছেও। কিন্তু কেউই কোনও উত্তর দেননি। স্থানীয় পুলিশও কিছু শুনতে চাইছে না। আমাদের হাতে আর টাকাপয়সা নেই। যে ভাবেই হোক ফিরতে চাই শিলিগুড়িতে। সরকার বা কোনও রাজনৈতিক দলই সাহায্য করছে না। আমাদের ঘরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হোক। আমাদের জন্য দয়া করে গাড়ির বন্দোবস্ত করে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।

অরুণাভ রায়, মোবাইল- ৭৯০৮১৭০৪৭৯/৮৯৪২৯৯৬৮৬০, ইমেল- aaarnab@gmail.com

চিঠি-৪: এটাওয়াতে আটকে আছি, পিঙ্গলায় ফেরান

আমরা ছত্রপতি শহুজি মহারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের কয়েক জন ছাত্র উত্তরপ্রদেশের এটাওয়াতে আটকে রয়েছি। আমাদের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের পিঙ্গলায়। গত ২৫ এপ্রিল এবং ১৭ মার্চ টিকিট ক্যান্সেল হয়ে যায়। আশা করেছিলাম, ৩ মে লকডাউন খুললে বাড়ি ফিরতে পারব। কিন্তু মনে হচ্ছে না ট্রেন চলবে। যদি প্রশাসনের বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নজরে আনতে পারেন, খুব উপকার হতো।

বিশ্বজিত মেটিয়া, ইমেল- biswajitmetya13@gmail.com

চিঠি-৫: হরিদ্বারে আটকে পড়েছি ১১ জন, টাকা শেষ, ফেরান

আমি দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা। আমার পরিবার- সহ হরিদ্বারে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছি। সঙ্গে প্রবীণ সদস্য রয়েছেন। ১১ জন আমরা এসেছি। কলকাতা ফিরতে চাই। আমাদের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা প্রায় শেষ। বয়ঃজ্যেষ্ঠ সদস্যরা তাঁদের প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন না। সর্বোপরি মানসিক ভাবে ও আর্থিক ভাবে আমরা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে একান্ত অনুরোধ, আমাদের কলকাতার বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। আমার কলকাতার বাড়িতেও বয়স্ক মা, বাবা রয়েছেন। বাবাও কার্ডিয়াক পেশেন্ট। চিন্তায় দিন কাটছে ওঁদেরও। আপনাদের সাহায্যপ্রার্থী।

সঞ্চালী চট্টোপাধ্যায়, ইমেল- sanchali004@gmail.com

চিঠি-৬: কলকাতায় পড়তে এসে আটকে পড়েছি, টাকা শেষ, ফেরান কোচবিহারে

আমার বাড়ি কোচবিহার। আমি কলকাতায় পড়াশুনা করি। কিন্তু লকডাউনের জন্য এখানে আটকে পড়েছি। এখানে খাওয়া, থাকার খুবই সমস্যা হচ্ছে। হাতে টাকাপয়সা খুব বেশি নেই। জানি না পরে কী হবে? বাড়িতেও মা, বাবা একাই আছেন। তাঁরাও খুবই অসুবিধায় আছেন। সরকার বাড়ি ফেরানোর জন্য যদি সাহায্য করতো, তা হলে খুবই উপকৃত হতাম।

সৌরভ রায়, ইমেল- roysourov246@gmail.com

চিঠি-৭: এক মাস ধরে আটকে আরব আমিরশাহিতে, বাংলায় ফেরান

আমরা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আটকে আছি। প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ভিসার মেয়াদও শেষ হয়েছে। কোম্পানি ভিসা পুনর্নবীকরণ করেনি। আমাদের কাছে কোনও টাকাপয়সা নেই। খাদ্যেরও ঘাটতি। আমরা একদল আবার এখানে আটকে আছি। আমরা আমাদের কাজ হারিয়েছি। কেরল সরকার মানুষের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ করে, যাঁরা তাদের ঘরের জমি ফেরত দিতে চান। আমি আপনাদের মাধ্যমে অনুরোধ করছি, দয়া করে আরব আমিরশাহিতে আটকে পড়া বাঙালি নাগরিকদের জন্য কিছু সিরিয়াস স্টেপ নিন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন।

প্রসেনজিৎ শীল, ইমেল- silprosenjit12@gmail.com

চিঠি-৮: রাজমিস্ত্রির কাজে এসে রাঁচীতে আটকে পড়েছি, লালগোলায় ফেরান

আমরা মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থানার পাহাড়পুর এলাকার বাসিন্দা। আমরা ৩২ জন ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে রাজমিস্ত্রির কাজে এসেছিলাম। লকডাউনের জন্য সব কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের থাকার ও খাওয়ার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমাদের মতো শ্রমিকদের সরকারি বা বেসরকারি ভাবে কেউ সাহায্য করেনি। সরকারের বিভিন্ন স্তরে আমরা ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কেউই কোনও ব্যবস্থা নেননি। তাই সরকারের কাছে ফের অনুরোধ করছি, আমাদের ফেরানোর ব্যবস্থা নিন।

মিঠুন শেখ, ইমেল- mithunsaikh93@gmail.com

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy