মুম্বইয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়েছেন জলঙ্গির মসিদুল ইসলাম।
চিঠি এক) বৌবাজারের ওসি নিজে রক্ত দিয়ে আমার মাসিকে বাঁচালেন
আমি সিঙ্গাপুরে থাকি। আমার মাসি শ্যামবাজারের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি। তাঁর এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত খুব প্রয়োজন। কিন্তু আমরা বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়েও রক্ত পাইনি। কারণ, এখন রক্তের চাহিদা তুঙ্গে। আর ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিও রক্তদাতা ছাড়া রক্ত দিতে রাজি নয়। আমার ৮১ বছরের মা আর তাঁর পরিচারিকা ছাড়া কলকাতায় আমাদের কেউ নেই। আমার মা বৌবাজার থানায় সমস্যাটা জানিয়েছিলেন। তারা বলে, রক্তদাতা জোগাড় করতে পারলে, তারা ব্লাড ব্যাঙ্ক পর্যন্ত পাহারার বন্দোবস্ত করবে। কিন্তু আমরা তা-ও রক্তদাতা জোগাড় করতে পারিনি। আমাদের পরিচারিকা এ কথা বৌবাজার থানায় জানালে, ওসি সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজে মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে, স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন এবং আমার মাসিকে বাঁচান। লকডাউনের সময়, এমন সঙ্কটের মুহূর্তে ওই পুলিশ অফিসার যে মানবিকতা দেখিয়েছেন সে জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। এঁরা প্রচারের আলোয় আসেন না। অথচ এঁরাই আমাদের দেশের প্রকৃত নায়ক। আমি আমার পরিবারের তরফে সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আনন্দবাজার ডিজিটালের মাধ্যমে সর্বান্তকরণে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাঁর এই মানবিক কাজ এক জনের জীবন বাঁচিয়েছে। সাবাশ।
সৌম্য মজুমদার, সিঙ্গাপুর
চিঠি দুই) কলকাতায় কেমোথেরাপি হবে, মুম্বই থেকে ফিরতে চাই
আমি মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে থাকি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য মুম্বইয়ের পারেলে রয়েছি। গত ২০ মার্চ আমার অস্ত্রোপচারের পর, ২৩ মার্চ ছুটি দিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর পর কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপির কলকাতায় হবে। কিন্তু লকডাউনের জন্য আমরা রাজ্যে ফিরতে পারছি না। আমার খুব দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। এখানে আমার সঙ্গে আমার শ্বশুরমশাই ও ভায়রাভাই রয়েছেন। ৩ জনের একটি ঘরের জন্য প্রতি দিন ১২০০ টাকা ঘর ভাড়া দিতে হচ্ছে। বেড নেই, ফলে মেঝেতেই আমাদের কাটাতে হচ্ছে। আমরা অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোনও উপায় হয়নি।
মসিদুল ইসলাম, মুম্বই
চিঠি তিন) লকডাউনে হোটেলে আটকে মা, দাদা
আমার মায়ের অস্ত্রোপচারের জন্য এর জন্য তিন সপ্তাহ আগে, মা ও দাদা কোয়েম্বত্তুরের গঙ্গা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এর পর, গত ২০ মার্চ মাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২৫ মার্চ চিকিৎসককে দেখিয়ে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু দেশব্যাপী লকডাউনে তাঁরা হোটেলে আটকে পড়েছেন। কোথাও কোন খাবারের হোটেল বা বাজার খোলা নেই। মুড়ি, বিস্কুট, ছোলা, চিঁড়ে এ সব খেয়েই অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। অর্থও শেষ হয়ে আসছে। জানি না শেষ পর্যন্ত কত দিন তাঁরা এ ভাবে কাটাতে পারবেন। আপনাদের কাছে একান্ত অনুরোধ, আমাদের কথা সরকারের কাছে পৌঁছে দিন।
বেলাল আলি, তপসিয়া, কলকাতা
চিঠি চার) শোনা যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় করোনার টিকা তৈরি হয়েছে
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করে ভেবেছিলাম, ইংরেজদের দেশেই থাকবো। কিন্তু একবার বেড়াতে এসে অস্ট্রেলিয়া ভাল লেগে যায়। কর্মসূত্রে প্রায় পুরো অস্ট্রেলিয়া ঘুরলেও, সিডনি কিছুটা আলাদা। এই শহর অস্ট্রেলিয়ার প্রাণ ভোমরাও বটে। বর্তমানে সেখানেই আছি। অফিস বন্ধ, তাই বাড়ি থেকে কাজ করছি। কিন্তু ক্লায়েন্ট ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের হওয়ায় মাঝে মাঝে তাঁদের অফিসে যেতে হচ্ছে। দোকানে শপিং মলে জিনিসপত্রের যে টান ছিল তা কিছুটা কমেছে। ফলে জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। দেশি দোকানে কালোবাজারি শুরু করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন অভিযোগ পেতেই, জরিমানা করায় তা ঠিক হয়েছে। সিডনিতে প্রায় ৪৬ লক্ষ মানুষের বাস। তা ছাড়া সারা বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক থাকায় সিডনি গমগম করে। কিন্তু এখন রাস্তাঘাট খাঁ খাঁ করছে। অপেরা হাউস খালি। এগুলো কোনওটাই চেনা দৃশ্য নয়। তবে এখানে সরকারের অন্ধ বিরোধিতা করার লোক কম, তাই লোকজন লকডাউন মেনে ঘরেই রয়েছেন। পুলিশকেও লাঠি চালাতে হচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় একটা টিকা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ট্রায়াল হয়ে কবে বিক্রির জন্য উৎপাদিত হবে তা কেউ জানে না। এ দিকে শীত আসছে, তাতে করোনা আরও জাঁকিয়ে বসবে। কিন্তু এখানে সচেতনতা বেশি। এটা একটা ভালো দিক। তাই অস্ট্রেলিয়া ইটালি হয়ে উঠবে না এ আশা করাই যায়।
অনিকেত সোম, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
চিঠি পাঁচ) পরিবার উদ্বেগে, কলকাতা ফিরতে সাহায্য করুন
কর্মসূত্রে রাজকোটে থাকি। লকডাউনের জেরে এখানে আটকে পড়েছি। আমাকে কলকাতা ফিরতে সাহায্য করুন। আমি এখানে খুব হতাশ হয়ে পড়েছি। মহেশতলায় আমার পরিবারকে নিয়েও আমি উদ্বিগ্ন। তাঁরাও আমার ব্যাপারে আশঙ্কায় রয়েছেন। লকডাউনের ফলে রাজকোটে খাবারের সমস্যা দেখা দিয়েছে। হোটেলও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নিত্য দিনই খরচ বাড়ছে। আমাকে কলকাতায় ফিরতে সাহায্য করুন।
চন্দ্রনাথ কুণ্ডু, রাজকোট, গুজরাত
চিঠি ছয়) পেঁপে সিদ্ধ আর ভাত খাচ্ছি, দয়া করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
গত ১৭ মার্চ আমি, আমার শ্বশুর, শাশুড়ি ও শ্যালককে নিয়ে পণ্ডিচেরির পিমস হাসপাতালে চিকিৎসা করতে এসেছিলাম। আমার শ্বশুরের গল ব্লাডার স্টোন ছিল। গত ২০ মার্চ তাঁর ইআরসিপি করানো হয়েছিল এবং স্টেন লাগানো হয়। তার ৬ দিন পরে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনের ফলে অস্ত্রোপচার হয়নি। আমার শ্বশুরকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়। আমরা এখানে দৈনিক ৬০০ টাকা করে ঘর ভাড়া করে রয়েছি। এত দিন ধরে বাইরে থাকার ফলে আমাদের আর আর্থিক সামর্থও ফুরিয়ে আসছে। আরও কিছুদিন থাকতে হলে, আমাদের হাতে আর কিছুই আর থাকবে না। আমরা এখানকার স্থানীয় পুলিশকে জানিয়েছি, কিন্তু তাঁরা কোনও পদক্ষেপ করেনি। পণ্ডিচেরির প্রশাসনের তরফেও আমরা কোনওরকম সাহায্য পাইনি। আমর কাছাকাছি কালাপেট পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আমাদের দুরবস্থার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদের ভাষা বোঝেনি। সবচেয়ে বড় সমস্যা, তামিল ভাষা ছাড়া এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা অন্য ভাষা বুঝতে পারেন না। আমরা এখানে এখন ১০ জন রয়েছি। বর্তমানে আমরা দু’টাকা কেজি দরে চাল কুড়ি টাকায় কিনে, পেঁপে সিদ্ধ করে খাচ্ছি। সরকার থেকে আমাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা বা আর্থিক সাহায্য করলে ভাল হয়। দয়া করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
উত্তম কুমার ঘোড়াই, ফকির বাজার, ডালপাড়া, পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর
চিঠি সাত) বাড়ি ফিরতে না পারলে মারা যাব
আমরা ৮ জন হায়দরাবাদে আটকে পড়েছি। লকডাউনের জন্য কোথাও যেতে পারছি না। বাড়ি না ফিরতে পারলে আমরা না খেয়ে মারা যাব। আমরা উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমান ও বীরভূমের বাসিন্দা।
কাকলি সরকার
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy