—ফাইল চিত্র।
আমি ও আমার স্ত্রী বর্তমানে ইজরায়েলের ওয়াইসম্যান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সে বিজ্ঞান গবেষক হিসেবে কর্মরত। আমাদের ইনস্টিটিউট ইজরায়েলের রেখোভট শহরে অবস্থিত। এই শহর জেরুসালেম থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে আর তেল আভিভ শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। আমাদের ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয় ১৯৩৪ সালে যা স্বাধীন স্টেট অব ইজরায়েল গঠনের প্রায় ১৪ বছর আগে (১৯৪৮ সাল)। ইজরায়েলের বিজ্ঞান আর কারিগরি বিদ্যার উন্নতিতে এই ইনস্টিটিউটের অবদান অপরিসীম।
আজ পর্যন্ত ৬ জন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীর নাম এই ইনস্টিটিউটের সাথে জড়িয়ে আছে। এখানে উন্নত মানের গবেষণা পরিকাঠামো থাকার জন্য প্রতি বছর প্রচুর বিদেশী ছাত্রছাত্রী ও গবেষক কাজ করতে আসেন। আমি কাজ করি বায়োমলিকিউলার সায়েন্স ডিভিশনে সজীব কোষের ভেতর প্রোটিন অণুর চরিত্র বিশ্লেষণ নিরূপণে। আর আমার স্ত্রী কাজ করেন স্ট্রাকচারাল বায়োলজি ডিভিশনে বিবর্তন নিয়ে। ঘটনাচক্রে আবার, এখানে আমার স্ত্রীর রিসার্চ সুপারভাইজার বিখ্যাত নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আদা ইয়োনাথ, যিনি ২০০৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান।
আমি, আমার স্ত্রী আর আমাদের একমাত্র ছেলে তূর্যকে নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে দিনগুলো ভালই কাটছিল। চিনে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের খবর আগেই পেয়েছিলাম কিন্তু ল্যাবেও দেখছিলাম সহকর্মীরা এটাকে আর পাঁচটা সাধারণ জ্বরের সাথে তুলনা করে ব্যাপারটাকে হাল্কা করে দেখছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে একটা গবেষণা সংক্রান্ত মিটিং শেষ করে ইজরায়েল ফেরার পথে প্রাগ এয়ারপোর্টে হঠাৎ একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম।
তখন ইতালিতে সংক্রমণের খবর আসা শুরু হয়েছে। প্রায় সমগ্র ইউরোপ ‘মুক্ত ভিসা অঞ্চল (সেঙ্গেন)’ হওয়ার জন্য যাত্রীদের মধ্যে চাপা ভয় আর উত্তেজনা দেখতে পেলাম। ইজরায়েল এয়ারপোর্টকে অবশ্য তখন স্বাভাবিক বলেই মনে হল। ধীরে ধীরে এখানেও সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে লাগল, মার্চের মাঝামাঝি বাচ্চাদের স্কুল, কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেল। আমরা স্বামী, স্ত্রী শিফ্টে কাজ করা শুরু করলাম। ধীরে ধীরে ইনস্টিটিউট ল্যাবের কাজেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হল। এক সঙ্গে চার জনের বেশি নয়, আর যাঁরা ঘর থেকে কম্পিউটারে কাজ করতে সক্ষম, তাঁদের ল্যাবে আসতে নিষেধ করা হল। সুপারমার্কেটগুলোতে প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করলাম। সবার ভেতরে প্রয়োজনীয় জিনিস জমা করার প্রবণতা দেখা গেল। আমরাও এখানকার ভারতীয় দোকান থেকে প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, আটা কিনে রাখলাম।
এপ্রিলের ৮ তারিখ থেকে আগামী এক সপ্তাহ ইজরায়েলে ইহুদিদের ‘পেশাখ’ বা ‘পাসওভার উৎসব’। এই সময় ইজরায়েলে লোকজন পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে এক জায়গায় মিলিত হয়ে ধর্মীয় নিয়ম মেনে ডিনার করেন। এ বার করোনা ভাইরাসের গোষ্ঠী সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ইজরায়েল সরকার এপ্রিলের ৮ তারিখ বিকেল থেকে পর্যায়ক্রমে লকডাউন ঘোষণা করেছে, যাতে উৎসব পালন নতুন সংক্রমণের কারণ না হয়ে ওঠে। নিয়ম না মানলে মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে। ইজরায়েল সরকারের সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কারণে, এখনও পর্যন্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব ঘটেনি। ইন্টারনেট, পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় সবই আছে, আমাদের রেখোভট শহরে। ইজরায়েল সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের কারণেই সংক্রমণের ভয়াবহতা ইউরোপের দেশগুলোর মতো হয়নি এখনও পর্যন্ত (লেখার সময় পর্যন্ত মোট সংক্রমণ ১০,০০০-এর নিচে)।
আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনের বাড়িই উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ি আর জলপাইগুড়ি শহরে। দীর্ঘ দিন উত্তরবঙ্গে থাকার সুবাদে জানি, ওখানকার স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কলকাতার মতো উন্নত নয়। তাই করোনা সংক্রমণ শুরু হলে উত্তরবঙ্গের মানুষ কী ভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন, তা ভেবে চিন্তা হচ্ছে। তবে আশা রাখছি, ভারত ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কারণে হয়ত করোনা সংক্রমণ সমগ্র ভারতের মত উত্তরবঙ্গেও ভয়াবহ রূপ নেবে না।
ডঃ দেবব্রত দে, ইজরায়েল
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy