পৃথিবীর সব দেশের রাষ্ট্রনায়করা যখন করোনা অতিমারির এই মহা সঙ্কটকালে বিধ্বস্ত, তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিখ্যাত মোদী ইন্দ্রজালের কার্যকারিতা পরখ করে নিলেন। ৫ এপ্রিল রাত ন’টায় কার্যত শব্দবাজি ফানুস সহ একটা এক্সট্রা দীপাবলি তথা করোনা উৎসব পালন হল। এতে করোনা ভয় পাক আর না-ই পাক, মোদীজির রাজনৈতিক হিপনোটিজমের ধারভার এখন ঠিক কতটা, ওজন করে নেওয়া গেল, তাঁর গণ-হিস্টিরিয়া উৎপাদনের ক্ষমতায় শান দিয়ে নেওয়া গেল। তা ছাড়া, নিরন্ন কোটি জনতা রাস্তায়, ডাক্তার-নার্সরা যথেষ্ট চিকিৎসা-সরঞ্জাম পান না ইত্যদি সরকারি অপদার্থতা পর্দার আড়ালে চলে গেল। আর মোদীর রাজর্ষি ইমেজটা আগামী নির্বাচনে পরিবেশনের জন্য মুচমুচে করে ভেজে নেওয়া হল।
ধর্মীয় কুসংস্কারের চাষ আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে মসৃণ ভাবেই, আর মাটির গুণে তার ফলনও বেশ ভাল। ধর্মব্যবসায়ী রাষ্ট্রনায়করা সে ফসল ঘরে তুলেছেন প্রায়ই। চোখে কুসংস্কারের ঠুলি পরিয়ে ভারতবাসী নামক কলুর বলদটিকে বেদম খাটিয়ে নেওয়া যায় আরামসেই। এ মাটিতে মাদুলি-তাবিজ, জলপড়া-তেলপড়া-ঝাড়ফুঁক, শনিবার-মঙ্গলবার, হাঁচি-পেঁচো, টিকটিকি-বেড়াল-এক শালিক, চন্দ্রগ্রহণ-সূর্যগ্রহণ, ওঝা-গুনিন, বারবেলা-ব্রত, পলা-নীলা ইত্যাদি দিব্যি ফলেছে। এ মাটিতে মোদীজিরা দীপ জ্বেলে যান, আর আমরা তার আলোয় মানবজনম সার্থক করে যাই।
উৎসব?
৫ এপ্রিল রাত ন’টায় যারা প্রধানমন্ত্রীর আলো জ্বালাবার আহ্বানে বাজি পটকা ফাটাল, তারা সমস্ত পশ্চিমবঙ্গের সংগ্রামরত মানুষের মাথা লজ্জায় হেঁট করে দিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং এ রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যে অপরিসীম অধ্যবসায় ও স্থৈর্যের সঙ্গে এ লড়াই পরিচালনা করছেন, তাতে এই আলোটা অসংখ্য মৃত্যুর মুখে পড়া মানুষকে জীবনে ফিরিয়ে আনবার যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক, কোনও উৎসবের তো নয়। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনাকে এরা উৎসবের আনন্দে পরিণত করে দিল। আশা করি ভবিষ্যতে এ রকম মূঢ় আচরণ থেকে বিরত থাকার আত্মসম্মানবোধ আমরা অর্জন করব।
পিনাকী চক্রবর্তী
ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪পরগনা
শিলনোড়া
গুজব ছড়াতে বাঙালি প্রথম। করোনা জ্বরে কাঁপছে সারা বিশ্ব। ভারতেও তার আঁচ পড়েছে, দেরিতে হলেও। আর এই করোনাভাইরাসকে কাবু করতে নানা কুসংস্কার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যেই। লকডাউনের প্রথম দিকে শোনা গেল, মাটি খুঁড়ে কয়লা বার করে গায়ে মাখলেই নাকি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এমনটা রটে গিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে সারা রাজ্য জুড়ে।
এখন আর এক গুজব। ৫ এপ্রিল নাকি এমন এক চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছিল, যার ফলে শিলের উপর নোড়া দাঁড় করালেই, নোড়া আপনা থেকেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। আর তাতেই প্রমাণ হচ্ছিল, চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এও এক কুসংস্কার। প্রধানমন্ত্রীর আবেদন ছিল, ৫ এপ্রিল, রবিবার রাত ন’টা থেকে ন’মিনিট প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালিয়ে সম্মান প্রদর্শন করা। আর তাতেই রটে গেল, প্রধানমন্ত্রী ওই নির্দিষ্ট সময়টাকে বেছে নিয়েছেন, কারণ ওই সময় পৃথিবীতে এক চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হবে। বাড়িতে বাড়িতে শিলনোড়া নিরীক্ষার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। যতই প্রচার করা হোক না কেন ‘গুজব ছড়াবেন না, গুজবে কান দেবেন না’, বাঙালি তার ঐতিহ্য থেকে পিছপা হবে না।
নরসিংহ দাস
রবীন্দ্রনগর, মেদিনীপুর শহর
দেবতার সম্পদ
এক পঞ্চদশবর্ষীয় কিশোরের মনে যে প্রশ্ন জাতির এবং দেশের এই সঙ্কটকালে উৎসারিত হয়েছে, তার জন্য তাকে কুর্নিশ জানাই। কারণ, ধেড়েরা যে কাজটি করে উঠতে পারেননি, ওই ছেলেটি তা করেছে।
প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে চিঠিতে লিখেছে, ‘‘তিনি যেন ভারতের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করেন (ধর্ম নির্বিশেষে), এই সঙ্কটকালে তাহাদের সম্পদের শতকরা ৮০% শতাংশ দান করিতে’’ (সম্পাদকীয় ‘দেবতার দায়’, ৫-৪)। চমকে ওঠে আমাদের ঘুমন্ত বিবেক।
এক একটি ধর্মস্থানে লাখো লাখো ভক্ত প্রণামী দেন, মানত করেন। দানপাত্র উপচে পড়ে কোথাও কোথাও। মুহুর্মুহু প্রদত্ত দক্ষিণা জমা হয় কাছাকাছি ব্যাঙ্কের শাখায়। দেবতার নামে উৎসর্গীকৃত অর্থ, সোনা, রুপো, অলঙ্কার ব্যাঙ্কের লকারে রক্ষিত থাকে। বা দেবস্থানের সিন্দুকে। সর্বাপেক্ষা ধনী দেবতা কে? এই বাদানুবাদ চলতেই থাকে। প্রশ্নটা এখানেই উঠে আসে। এত দিন যা অনুচ্চারিত ছিল, একটি কিশোর তা উসকে দিল।
এই দুর্দিনে, যেখানে সেলেব্রিটি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সাধ্যমতো অর্থ দান করছেন প্রধানমন্ত্রী বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে, সেখানে কেন বিভিন্ন ধর্মস্থানের ট্রাস্টি বোর্ড টাকা দিতে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এগিয়ে এলেন না? যে ধর্মীয় সংগঠনগুলি এই সঙ্কটমুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, সেগুলির প্রতি প্রণাম রইল।
সেই ছেলেটির প্রশ্ন আজ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, ঈশ্বরকে প্রদত্ত প্রণামীতে জমে ওঠা যে সম্পদ, তা ঈশ্বরের সম্পদ, মানুষেরও সম্পদ বটে। সম্পাদকীয়তে যথার্থই প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘‘মানুষ ঈশ্বরকে যে দক্ষিণা দিতেছে, সেই বিত্ত মানুষের উপকারের নিমিত্ত ব্যয় করিবার আইন করিলে, তাহা কি ধর্ম বিরোধী, না সর্বোচ্চ ধর্মের অনুকূল?’’ একটু গভীরে গেলে এর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় হয়তো: ‘‘যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন/ সেইখানে যে চরণ তোমার রাজে/ সবার পিছে, সবার নীচে, সবহারাদের মাঝে।’’
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী
কলকাতা-১২৫
প্রচারবিমুখ
গ্রামের বটতলাতে এসে দাঁড়াল একটা টুকটুক। গৃহস্থের নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস, যেমন চাল, ডাল, আলু, তেল, বিস্কুট, সাবান, সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সচেতনতামূলক লিফলেট ইত্যাদি সামগ্রীগুলোকে প্যাকেটে ভরে হাজির কিছু তরুণ। উদ্দেশ্য, কান্দি ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে লকডাউনে যে সমস্ত বয়স্ক বা অসুস্থ একলা রয়েছেন, তাঁদের সাহায্য করা, অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। এই তরুণের দল কান্দি ব্লকের এমন শতাধিক অসহায় পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন সামগ্রীগুলি। প্রচারের অন্তরালে থাকতে চেয়ে, জারি করেছেন একটাই ফতোয়া— তাঁরা হাতে হাতে এগুলি তুলে দিচ্ছেন, এমন কোনও ছবি কেউ তুলবেন না এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করবেন না। এ এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত।
অঙ্কুর পাণ্ডে
দুর্গাপুর, মুর্শিদাবাদ
দুটি প্রশ্ন
‘দুশমন দুর্ধর্ষ, কিন্তু জিতব’ (২৮-৩) শীর্ষক নিবন্ধ পড়ে, কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছে।
প্রথম প্রশ্ন: এই ভাইরাসটির হদিশ কি আগে পাওয়া গিয়েছিল চিন-সহ এশিয়া ও ইউরোপের কোনও দেশে? যদি হ্যাঁ হয়, তবে কি তার প্রভাবকে অবজ্ঞা করা হয়েছিল?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: যাঁরা কুকুর পোষেন, তাঁরা অনেকেই জানেন, প্রতি বছর কুকুরকে অ্যান্টি-করোনা টিকা দিতেই হয়। এটা নতুন কোনও টিকা নয়। এই টিকা না দেওয়া হলে সারমেয়টির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ওই টিকা বিভিন্ন ওষুধ সংস্থা চড়া দামে বিক্রিও করে। যে ভাইরাস পশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়, সেটার মানবদেহে প্রভাবকে অস্বীকার হল কেন?
পূর্ণেন্দুবিকাশ ভট্টাচার্য
আন্দুল, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy