ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এক স্মারকলিপি দিয়ে অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের বর্ণনায় ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ শব্দবন্ধ পরিবর্তন করে ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ’ করার দাবি জানানো হয়েছে। এই প্রস্তাব অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিপূর্ণ। সদ্যসমাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের বার্ষিক অধিবেশনেও রাজ্য সরকারের শিক্ষাসচিব ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরূপ দাবি পেশ করা হয়েছে।
‘লুণ্ঠন’ শব্দটি উল্লেখ করলে বিপ্লবীদের বীরত্বকে অবমাননা করা হয়। তাঁদের আত্মত্যাগকে অমর্যাদা করা হয়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সৈনিক, মাস্টারদা সূর্য সেনের সহকর্মী, প্রাক্তন সিপিআই(এম) সাংসদ (১৯৬৭-৭১) গণেশ ঘোষ বহু বার সংসদে ‘লুণ্ঠন’ শব্দটি ব্যবহারে প্রতিবাদ জানিয়ে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সপ্তর্ষি ঘোষ
কলকাতা-৯
অলচিকি
২০১৮ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ডের উপরে ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য’-এ উল্লেখ করা হয়েছে— The languages in which answers in the Non-Language subjects can be written are Bengali, English, Hindi, Nepali, Odia, Urdu and Olchiki। এই বাক্যে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, নেপালি, ওডিয়া ও উর্দু ভাষার মতোই, অলচিকিকেও একটি ভাষা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ Non-Language বিষয়গুলির উত্তর উল্লিখিত ভাষাগুলির সঙ্গে, অলচিকি ভাষাতেও লেখা যাবে। কিন্তু অলচিকি কোনও ভাষা নয়, এটি এক ধরনের লিপি। যে-লিপি সাঁওতালি ভাষা-সাহিত্যের লিখিত রূপ প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়।
পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু বহু গবেষণার পর ১৯২৫ সালে অলচিকি লিপি সৃষ্টি করেন। সেই লিপি ব্যবহার করে সাঁওতালি ভাষায় তিনি বেশ কিছু বইও প্রকাশ করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অলচিকিকে সাঁওতালি ভাষার লিখিত রূপ প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃতি দেয় ১৯৭৯ সালে। সাঁওতালি ভাষা ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হলে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রাথমিক স্তরে সাঁওতালি মাধ্যমে পঠন-পাঠন শুরু করে ২০০৪ সালে। সাঁওতালি ভাষায় বহু পাঠ্যপুস্তক ছাপা হয় অলচিকি হরফে।
বর্তমানে প্রাথমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও সাঁওতালি মাধ্যমে পঠনপাঠন চলছে আমাদের রাজ্যে। ২০১৮ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট ৮২৩ জন (প্রথম ভাষা ও মাধ্যম মিলে) পরীক্ষার্থী সাঁওতালি মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছেন, যেখানে তাঁরা অলচিকি লিপি ব্যবহার করে উত্তর লিখেছেন।
সুতরাং লিপি ও ভাষা সমার্থক শব্দ নয়। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ লিপি ও ভাষাকে গুলিয়ে ফেলে বিভ্রান্তিকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
শিবু সরেন
নীলডাঙা, বীরভূম
‘নিচুতলার’?
কম পদমর্যাদার কর্মী বোঝাতে আনন্দবাজারে ‘নিচুতলার কর্মী’ কথাটা লেখা হচ্ছে। খুবই দৃষ্টিকটু। প্রত্যেকেই কাজের সূত্রে এক একটি পদে আসীন। সেখানে যে যার স্বকীয়তায় উজ্জ্বল।
দেবাশিস বড়ুয়া
কলকাতা-১১০
সুপিষ্টকম্
‘বিস্কুট নয়, সুপিষ্টকম রোজকার ঘরোয়া আড্ডাও সংস্কৃতে’ (৫-৩) শীর্ষক খবরে দুটি পরিবারের সংস্কৃতে আলাপন চিত্রসহ উল্লেখ করেছেন। দুটি পরিবারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আসলে মানুষ যদি কোনও কিছু করার চেষ্টা করে, আর তার মধ্যে যদি থাকে ঐকান্তিক ইচ্ছা, তা হলে সাফল্য অনিবার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার স্যরের কাছে (ড. প্রদ্যোৎ বন্দ্যোপাধ্যায়) শুনেছি ওঁর স্যর মহামহোপাধ্যায় সীতারাম শাস্ত্রীর বাড়িতে একজন পরিচারিকা ছিলেন। সেই পরিচারিকাও শাস্ত্রী মহাশয়ের সঙ্গে সংস্কৃতে বাক্যালাপ করতেন।
খবরে উল্লিখিত বিস্কুটকে ‘সুপিষ্টকম’ (‘ম্’ হওয়া উচিত ছিল) বলা হয়েছে। পিষ্টক বলতে আমরা পিঠা বা পিঠে বুঝি। সুপিষ্টক হলে বোঝা যায় অত্যন্ত সুস্বাদু পিঠে, যা রসে বা দুগ্ধে পরিপূর্ণ। বিস্কুটের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে ‘শুষ্কপিষ্টকম্’। ‘লিকার চা’-কে বলা হয়েছে ‘রক্তবর্ণ চায়ম্’। রক্তবর্ণের সংজ্ঞা তো অন্য রকম। এ ক্ষেত্রে ‘পয়োবিহীনা চা’ বা ‘দুগ্ধবিহীনা চা’ বললে বোধহয় ভাল হত। ‘পয়ঃ’ শব্দের অর্থ আবার জলও। ‘চা’ সংস্কৃত শব্দ নয়। যে শব্দগুলিকে সংস্কৃতে বিভক্তিগত ভাবে প্রয়োগ করা যায় না, সেগুলির পাশে ‘ইতি’ বসিয়ে একটি অর্থপূর্ণ শব্দ করার চেষ্টা করা হয়। তাই বলা যেতে পারে ‘চেতি (চা+ইতি) পানীয়ম্’।
প্রতিবেদনে আরও উল্লিখিত হয়েছে ‘অদ্য কহঃ পাকহঃ? মম তু ইদানিম অতীব বুভুক্ষা’। মনে হয় এখানে একটু শ্রবণপ্রমাদ ঘটেছে। বাক্যটি হওয়ার কথা ‘অদ্য কঃ পাকঃ? মম তু ইদানীম্ অতীব বুভুক্ষা’। বিসর্গযুক্ত বর্ণ শুদ্ধ ভাবে উচ্চারণ করলে শেষে ‘হ’ উচ্চারিত হয়। কিন্তু লেখার সময় তা বলে ‘হ’ লেখাটি যুক্তিযুক্ত নয়। ডালের সংস্কৃত রূপ করা হয়েছে ‘স্যুপম্’।
এ তো ইংরেজি শব্দের শেষে ‘ম্’ যুক্ত করে সংস্কৃত শব্দ তৈরি করা হল! ডালের সংস্কৃত রূপ হওয়া উচিত ‘সূপঃ’। ‘মধুরম্’ হল মিষ্টি (sweet)। কিন্তু মিষ্টদ্রব্য বোঝালে ‘মোদকঃ’ বলাই সমীচীন। পত্রিকায় বলা হয়েছে ‘শাটিকাম কৃনাতু’। মুদ্রিত হওয়া উচিত ছিল ‘শাটিকাম্ ক্রীণাতু’।
দুর্দান্ত কিছু প্রতিশব্দ সংস্কৃতে রয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, এগুলি বর্তমানে প্রচলিত শব্দগুলিকে একটু চিন্তাভাবনা করে সংস্কৃতে রূপ দেওয়া। ফ্রিজকে বলা হয়েছে ‘শীতোদকম্’। ‘শীতোদকম্’ শুনলে বোঝা যায় ঠান্ডা জল। কিন্তু যদি বলা হয় ‘শীতলপ্রকোষ্ঠঃ’, তা হলে মনে হয় একটু ভাল লাগবে। ‘ওয়াশিং মেশিন’কে বলা হয়েছে ‘প্রক্ষালয়া যন্ত্রম্’। ‘প্রক্ষালণযন্ত্রম্’ বা ‘বাসপ্রক্ষালনযন্ত্রম্’ বললে ভাল হয়। ‘বাসঃ’ শব্দের অর্থ বস্ত্র। ‘লিফ্ট’কে বলা হয়েছে ‘উন্নয়নি’। ‘উন্নয়নি’ না বলে ‘উত্তোলনপ্রকোষ্ঠঃ’ বললে কেমন হয়? ‘উন্নয়নি’ বললে উন্নয়নের প্রসঙ্গ চলে আসে। উন্নয়ন অন্য কথা।
পৃথ্বীশ চক্রবর্তী
কলকাতা-১৪০
‘গণ’
‘জনগণমন’ সুন্দর শব্দবন্ধ। সমাজের সকল মানুষের বিবেকের কথা বলে। ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি সমাজের বেশির ভাগ মানুষের মত অনুযায়ী শাসনের তন্ত্রকে বোঝায়। অবাক হই, যখন এক নারীর উপর কয়েক জন লোকের ঘৃণ্য যৌন নিগ্রহের আচরণকে ‘গণধর্ষণ’ আখ্যা দেওয়া হয়। এই ঘৃণ্য কাজের প্রতি নিশ্চয়ই সমাজের বেশির ভাগ মানুষের নৈতিক সমর্থন নেই। তা হলে ‘দলধর্ষণ’ বলাই শ্রেয় নয় কি? অন্যায়ের ক্ষেত্রে ‘গণ’ শব্দটির ব্যবহার বন্ধ হোক।
পার্থ বিশ্বাস
বড়জোড়া, বাঁকুড়া
বাংলা নেই
মোবাইল/ টেলিফোন লাইন ব্যস্ত থাকলে তাতে ঘোষণা শোনা যায়। সেটির ভাষা কলকাতায় বাংলা থাকা উচিত, আর বাংলাই হওয়া উচিত প্রথম ভাষা। দেখা যায়, তা ঘোষণার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা। আবার কখনও তা নেই একেবারেই।
মনোজকুমার দ.গিরিশ
কলকাতা-৩৯
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
ভ্রম সংশোধন
আনন্দবাজার পত্রিকার (৩১-৩) প্রথম পাতায় ছবির ক্যাপশনে ধনপতি সেন লেখা হয়েছে। হবে ধনপতি রায়। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy