ছোট-বড় সব পুজোর সঙ্গেই একটা বিরাট সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জড়িয়ে থাকে। অন্য দিকে, এর মধ্যে বাঙালির সৃষ্টিশীলতা, সামাজিক সচেতনতা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার যে প্রকাশ দেখা যায়, সেটাও অভিনব। এ সব দেখে মনে হয়, এগুলির কোনও দীর্ঘমেয়াদি সুফল যদি পাওয়া যেত, তা হলে দেশের মানুষের অনেক উপকার হত। পুরস্কারদাতা সংস্থাগুলো পুরস্কার ঘোষণা করার ক্ষেত্রে কয়েকটা শর্ত আরোপ করতে পারে। এক, ক্লাবের তরফ থেকে আর্থিক ভাবে দুর্বল ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না। দুই, খেলাধুলায় প্রতিভাবান ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না। তিন, গরিবদের কী কী ভাবে সাহায্য করা হয়েছে? চার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য বিপদে মানুষকে সাহায্য করা হয়েছে কি না। পাঁচ, সামাজিক ক্ষেত্রে কী উদ্যোগ করা হয়েছে? ছয়, পুজো প্যান্ডেলে আলোকসজ্জার জন্য বিকল্প শক্তির কতটা ব্যবহার হয়েছে। সাত, প্যান্ডেল তৈরির জন্য কত কম সরকারি জায়গা ব্যবহার করা হয়েছে। আট, বয়স্ক মানুষ ও বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের সহজে প্রতিমা দর্শনের জন্য কী ব্যবস্থা করা হয়েছে। নয়, পুজোর পর কত দ্রুত রাস্তা ও খোলা জায়গাকে তার পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এবং দশ, পরিবেশের উন্নতির জন্য কী কী ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরের বছরের পুজোয় এই বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর যোগ করা যেতে পারে।
এর সব ক’টি যদি বিবেচনা করা হয়, তা হলে পুজোতে যে বিপুল অর্থ খরচ হয়, তা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির কাজে লাগতে পারে।
শৌভিক মজুমদার, কলকাতা-৫৫
পুজোয় প্রতিবাদ
ঋজু বসুর সময়োপযোগী প্রবন্ধ ‘চলো চলো গিরি, প্রতিবাদে ঘিরি’ (রবিবাসরীয়, ২৯-৯) পড়ে মুগ্ধ হলাম। এই প্রসঙ্গে কিছু সংযোজনের জন্য এই চিঠি। পুরুষ-শাসিত সমাজে নারীশক্তির আরাধনাই তো একটি বিরাট প্রতিবাদ। যারা সংসারের চার দেওয়ালের মধ্যে নারীদের আবদ্ধ রেখে তাঁদের স্বাধীনতা, সমানাধিকার কেড়ে নিয়েছে, যারা নারীদের প্রাপ্য সম্মান, শ্রদ্ধা, মর্যাদা দেয় না, যারা মনে করে নারীরা শুধু ভোগের বস্তু, তারাও মণ্ডপে গিয়ে মৃন্ময়ী নারীশক্তির কাছে মাথা নত করে। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে নারীরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছেন, তা বিভিন্ন জায়গায় মহিলা-পরিচালিত পুজোর ক্ষেত্রে দেখা যায়। চাঁদা সংগ্রহ, মণ্ডপ, প্রতিমা, আলো-সহ পুজো পরিচালনার আনুষঙ্গিক সব কাজ তাঁরাই করছেন। অনেক মণ্ডপে মাতৃ আরাধনার পুরোহিতের কাজ মহিলারাই করছেন। এ-হেন কাজকে প্রতিবাদ-সহ সামাজিক উত্তরণ বলা যেতে পারে।
পুজোর সময়ে প্রতিবাদ চালানো উচিত কি না, তা নিয়ে চর্চা চলছে। অতীতে কিন্তু পুজোর মধ্যেই অনেক আন্দোলন ও প্রতিবাদ ঘটেছে। ২০০৭ সালে দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে রিজওয়ানুর হত্যার প্রতিবাদে হয়েছিল মহামিছিল। উত্তর কলকাতা কার্যত অবরুদ্ধ ছিল। বিরোধীদের দাবি ছিল, কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পদত্যাগ। জনগণের চাপের জেরে সরকারকে শেষ পর্যন্ত বদলি করতে হয় প্রসূন মুখোপাধ্যায়-সহ আরও চার জন পুলিশ আধিকারিককে। সেই সময় পুজো পরিক্রমার পরিবর্তে অনেক বাঙালিই গুরুত্ব দিয়েছিলেন রিজওয়ানুরের মৃত্যুর প্রতিবাদকে। পরের বছরই তৃণমূলের বিপুল আন্দোলনের চাপে গাড়ি তৈরির কারখানা মাঝপথে বন্ধ করে রতন টাটা বাংলা থেকে ফিরে গেলেন, দিনটা ছিল, ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর, দুর্গাপুজোর চতুর্থী।
দীর্ঘ দিন দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচারের মতো কঠিন অসুখে রাজ্যটা অসুস্থ। আর জি করের ঘটনা একটা স্ফুলিঙ্গের মতো জনগণের চেতনাকে, বিবেককে জাগ্রত করেছে। গণদেবতা জেগেছে, তাই মিছিল, মিটিং, প্রতিবাদ, ধর্না অবিরাম গতিতে চলছে। রাজ্যের চিকিৎসা চলছে, মেরামতের কাজ চলছে। তাই বলে উৎসবের সময়ে কোনও পুজোই বন্ধ হবে না। পুজো যেমন হবে, প্রতিবাদও ঠিক তেমনই হবে। প্রতিবাদী আন্দোলন এবং পুজো একে অন্যের পরিপূরক।
গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
জ্যান্ত দুর্গারা
‘আমি কি দশো দুগ্গা নাকি!’ মায়েদের মুখে এই সংলাপ প্রায়ই শোনা যায়। আসলে, আদরে-আহ্লাদে বড় হওয়া সন্তানের কাছে মা হল সেই জাদুকর, যে একটা দিলে নিমেষে তা দুটো করে আনে, নিজে খাবার আগে সেরা ভাগটা সন্তানের জন্য সরিয়ে রাখে, সন্তানের কাছে যে বিপদতারিণী। অসুখে যে বৈদ্য, বিষাদে যে উৎকণ্ঠিত, সাফল্যে যে আনন্দিত, সেই ৩৬৫ দিনের জীবন্ত দুগ্গাদের আমরা কতটুকু চিনি? এই দুগ্গাদের আবদার মেটায় কে? আচ্ছা, মন খারাপ কি হয় এই দুগ্গাদের? কত জনই বা তার খোঁজ নেয়? আসলে ছোটবেলা থেকে মা মানে রান্নাঘরে দিন-কাটানো, নিজের শখ আহ্লাদ, সর্বস্ব ত্যাগ করা এক জন নারীকেই চেনে বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে। যিনি ছোটবেলায় বাবার পরিচয়ে, পরবর্তী কালে স্বামীর পরিচয়ে বাঁচেন। সংসারের ঘানি টানতে টানতে শেষ বয়েসে সন্তানের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কিন্তু এ ভাবে আর না। আমরা এই পুজোয় ঠিক করতে পারি, দিনের শেষে এক বার হলেও মায়েদের জিজ্ঞাসা করব, ভাল আছ? ভাল থেকো, আর নিজের খেয়াল রেখো। আর তার পাশাপাশি আরও একটা সঙ্কল্প করি যে, আমাদের আশপাশে যে সকল ছোট লক্ষ্মী, সরস্বতীরা আছে তাদের ‘দশো দুগ্গা’ করে তুলতে আমরা পাশে দাঁড়াব।
আমাদের দুগ্গারা প্লেন চালাবে, চিকিৎসা করবে, কাগজে লিখবে, সিনেমা বানাবে, চাঁদে যাবে, সর্বোপরি আত্মনির্ভর হবে।
সায়ন্তন টাট, জাঙ্গিপাড়া, হুগলি
গা-জোয়ারি নয়
ট্রাম একটি দূষণহীন ও আরামদায়ক যান হওয়ায় বিশ্ব জুড়ে এখন প্রায় সাড়ে চারশো শহরে ট্রাম চলে। ছাত্রছাত্রী, বয়স্ক, অসুস্থ এবং সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য ট্রামের যেমন কোনও বিকল্প নেই, তেমনই বিদ্যুতে চলায় এবং গাড়ি হিসাবে দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ট্রাম চালানোর খরচও কম। সে কারণে কম ভাড়ায় সাধারণ মানুষ, ছোট ব্যবসায়ীরা তাঁদের মালপত্র নিয়ে ট্রামে যাতায়াত করতে পারেন।
১৯৯২ সালে সিপিএম সরকারের আমলে রাজ্য পরিবহণ দফতর সিদ্ধান্ত নেয় ধাপে ধাপে ট্রাম পরিষেবা তুলে দেওয়া হবে। ট্রাম কোম্পানির ‘অতিরিক্ত’ জমি বিক্রি করা হবে আবাসন ব্যবসায়ীদের। ট্রামের জমিতে তৈরি হবে বহুতল আবাসন। আশ্চর্যের বিষয়, এখন রাজ্যের তৃণমূল সরকার সিপিএমের রাস্তা ধরেই গোটা ট্রাম পরিষেবাকে বন্ধ করে দিতে চলেছে। সরকার এ ক্ষেত্রে পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের বা নাগরিক সমাজের মতামতের কোনও তোয়াক্কাই করছে না।
ট্রাম চলাচল সংক্রান্ত একটি মামলা হাই কোর্টে চলছে। পূর্ববর্তী শুনানিতে কোর্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল— শহরে যাতে ট্রাম চলাচল অব্যাহত রাখা যায় তার উপায় খুঁজে বার করতে। সরকার সেই নির্দেশের তোয়াক্কাই করেনি। এই অবস্থায় যদি আদালত সরকারকে পুনরায় নির্দেশ দেয় যে, বন্ধ হওয়া ট্রাম রুটগুলি অবিলম্বে চালু করতে, প্রতি রুটে ট্রামের সংখ্যা বাড়াতে এবং আধুনিকীকরণ করতে, তবে ট্রাম ফের স্বমহিমায় ফিরতে পারে। সেই সঙ্গে বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। কোন কোন ডিপো বিক্রি করা হয়েছে, কাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে, কত টাকায় বিক্রি করা হয়েছে— অবিলম্বে তা শ্বেতপত্র আকারে জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। মহানগরীর পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে কাউকেই যা খুশি করতে দেওয়া চলে না।
সমুদ্র গুপ্ত, কলকাতা-৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy