Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Alliance

সম্পাদক সমীপেষু: প্রয়োজন স্বার্থত্যাগ

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:১১
Share: Save:

‘জোট না বেঁধে উপায় নেই’ (৩০-১১) নিবন্ধে ভাস্কর গুপ্ত যথার্থই বলেছেন, বিজেপিকে প্রতিহত করতে হলে এ ভিন্ন পথ নেই। প্রশ্ন হল, দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কী ভাবে এবং কেমন করে ঐক্যবদ্ধ হবে। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যেক দলেরই পৃথক অ্যাজেন্ডা ও লক্ষ্য আছে। জনভিত্তিতেও বিস্তর ফারাক আছে। বিহারে সদ্য ঘটে-যাওয়া বিধানসভার নির্বাচনে মহাজোটের বাম দলগুলি, বিশেষত সিপিআই(এম)এল আশাতীত ভাল ফল করেছে। এই দলগুলি জাতপাতের সমীকরণ অগ্রাহ্য করে শ্রমজীবী গরিব মানুষের বুনিয়াদি সমস্যাগুলো তুলে ধরে শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। এটা দীর্ঘমেয়াদি, কঠিন কাজ, কিন্তু স্থায়ী ফল দেয়।

আজ দেশের শোচনীয় আর্থিক অবস্থা বামপন্থী দলগুলোর সামনে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করছে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার না করতে পারলে বাম দলগুলি দেশের রাজনীতিতে প্রান্তিক শক্তি হয়েই থাকবে। এই দলগুলি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী কর্মসূচির বদলে নির্বাচনী সমঝোতার ‘শর্টকাট’-এ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশি আগ্রহী। সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলতে গেলে যে স্বার্থত্যাগের প্রয়োজন, তার জন্য কোনও দলই আন্তরিক নয়।

পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভার নির্বাচনে এ বার প্রধান তিনটি শক্তির মধ্যে লড়াই হবে। এক দিকে বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, বাম-কংগ্রেস জোট আর ভারতের সর্ববৃহৎ দল বিজেপি, যারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকায় অনেকটা শক্তিশালী। সিপিআই(এম)এল-এর সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, দেশের সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে প্রয়োজনে তৃণমূলকে সঙ্গে নিতে হবে। আর এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধী সিপিএম-এর মতো সর্ববৃহৎ বাম দল। তাদের লক্ষ্য, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা পুনর্দখল করা। তাই তাদের কৌশলে বিজেপি অপেক্ষা তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে হটানো অনেক জরুরি। তার পর জোট ঘোষণা হওয়ার পরে আছে আসন সমঝোতা, যেখানে স্বার্থের সংঘাত দৃষ্টিকটু রূপে প্রকাশ পাবে। এখানেই বিজেপির সম্ভাবনা বাড়বে। সংগ্রামবিমুখ, নীতি-আদর্শহীন, স্বার্থপর রাজনীতির অনুশীলন ভুলিয়ে দেবে “জোট না বেঁধে উপায় নেই” উপলব্ধিকে।

দেবকী রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়

উত্তরপাড়া, হুগলি

দায়বোধ

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এখন সামাজিক দায়বদ্ধতার ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে ব্যক্তির প্রতিষ্ঠা লাভের ধারণায় রূপান্তরিত হয়েছে। রাজনীতি এখন পেশা, যা সমাজসেবা বা দেশসেবার ধারণার সঙ্গে সম্পর্কহীন। ব্যক্তিজীবনের থেকেও সমাজজীবনের মূল্য যাঁদের বেশি, তাঁরাই আগে রাজনীতিতে আসতেন। সুভাষচন্দ্র, গাঁধীজি, ভগৎ সিংহ-সহ বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর রাজনৈতিক দর্শন সেই ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই রাজনীতিবিদরা ছিলেন জনগণের কাছে শ্রদ্ধার। এখন রাজনীতিতে ‘দেশসেবা’ কথাটা হাস্যকর। যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁরা নির্বাচিত হন, সেটাকেই পরে ‘জুমলা’ বলতে তাঁদের বাধে না। ব্যক্তিগত স্বার্থে দলত্যাগ এখন রাজনৈতিক সংস্কৃতি। তাই তো দেশব্যাপী কৃষি আইনের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কৃষকের পদযাত্রার থেকেও গুরুত্বের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্বের সংবাদ পরিবেশিত হয়।

যে নির্বাচকমণ্ডলী তাঁরই দেওয়া প্রতিশ্রুতির উপর ভরসা করে তাঁকে নির্বাচিত করল, তার প্রতি নেতার কোনও দায়বদ্ধতা রইল না। ব্যক্তিগত মর্যাদা বা সুবিধাই সেখানে প্রাধান্য পেল। নেতারা অনুগামী মানুষদেরও সেই লক্ষ্যে নিয়োজিত করেন, যেখানে সীমাবদ্ধ স্বার্থের গুরুত্ব দেশ বা সমাজের চেয়েও বড়। তাই দলত্যাগ বিরোধী আইন আমাদের দেশে জরুরি। যে ভাবে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে সাংসদ, বিধায়কেরা বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন, সেটা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ঙ্কর। এর দ্বারা এক দিকে জনগণের সঙ্গে যেমন বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়, হত্যা করা হয় তাঁদের স্বপ্নকে, অপর দিকে গণতন্ত্রের প্রতি বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। গণতন্ত্র আর ব্যক্তিগত সুবিধাবাদের ধারণা সমার্থক হয়ে যায়।

সূর্যকান্ত চক্রবর্তী

তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

দোষ কী?

দেবাশিস ভট্টাচার্য ‘অধিকার ও অধিকারী’ (৩-১২) নিবন্ধে শুভেন্দু অধিকারীর অতীত ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বেশ কিছু তির্যক প্রশ্নের অবতারণা করেছেন ও প্রকারান্তরে তাঁর প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা কি দোষের? ভারতের জাতীয় কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেক কিছু দিয়েছিল, যেমন অল্প বয়সে যাদবপুরের সাংসদ পদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব, রাজ্যস্তরের যুবনেত্রী। তবু তিনি দলত্যাগ করে নতুন দল গঠন করেছিলেন। কখনও বিজেপির হাত ধরে, কখনও সেই কংগ্রেসের হাত ধরে দীর্ঘ ১৩ বছর নিরলস রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অবশেষে তাঁর দল ক্ষমতায় এসেছিল। সুতরাং দলত্যাগ করে অন্য দলে যোগদান, বা নতুন দল গঠন করে রাজনৈতিক লড়াই চালানো মানেই রাজনৈতিক জীবন কুয়াশাচ্ছন্ন, এমন সতর্কবার্তা অসমীচীন।

অধিনায়ক যতই লড়াকু ও পরিশ্রমী হন, ক্ষুরধার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতী হন, তিনি তখনই সফল হন, যখন তাঁর সেনানীরা উপযুক্ত সঙ্গত করে থাকেন। দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া অঞ্চলে অধিকারী পরিবার, বিশেষ করে শুভেন্দু অধিকারী, হুগলিতে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও বেচারাম মান্না, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় মুকুল রায় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শোভন চট্টোপাধ্যায়, কলকাতায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা যদি উপযুক্ত সঙ্গত না করতেন, তা হলে কি মমতার জয়যাত্রা এত মসৃণ হত! যখন মমতা প্রবল প্রতিপক্ষ বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই করছিলেন, তখন শুভেন্দু অধিকারীর মতো সেনারাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিলেন, পিকে-র মতো স্ট্র্যাটেজিস্ট-এর দরকার পড়েনি।

দীর্ঘ সংগ্রাম করে উঠে আসা শুভেন্দু অধিকারীর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যদি কাটমানি, আমপান দুর্নীতি, পঞ্চয়েতের দুর্নীতি, ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতি, নির্বাচনে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ে দুর্নীতি, দলের মধ্যে যোগ্য সমাদর না পাওয়া, দলের মধ্যে পিকে-র ছড়ি ঘোরানো প্রভৃতি কারণে, ও সর্বোপরি তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে দলত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দেন, বা নিজস্ব দল গঠন করেন, তবে কি তা খুব দোষের হবে?

আশিস কুমার গুহ

কলকাতা-১৪৯

কুরুচিপূর্ণ

বেশ কিছু দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে নানা রকম তির্যক সমালোচনা, কটাক্ষ ও গুজব চলছে। ভারতীয় সংবিধান অনুসারে সকল যোগ্য নাগরিকেরই রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে। ভারতীয় ও বিশ্ব রাজনীতিতে বহু নেতা রাজনৈতিক পরিবার থেকে রাজনীতিতে উঠে এসে নিপুণ ভাবে মানুষের সেবা ও দেশ শাসন করেছেন। যোগ্য হলে করতেই পারেন, তাতে তো অন্যায় নেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো সাংবিধানিক ভাবেই পর পর দু’বার মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তুলনায় তাঁর বয়স কম হলেও ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভায় যোগ্যতার নিরিখে তাঁর থেকে অনেক গুণ পিছিয়ে রয়েছেন, এ রকম সাংসদদের সংখ্যাটা কম নয়। ভারত একটি বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ। এখানে শিষ্টাচার মেনে দলগত ভাবে এক দল অন্য দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি, নীতি ও আদর্শের বিরোধিতা করতেই পারে। তবে দলের কারও প্রতি ইঙ্গিত করে কুৎসা ও আক্রমণ পুরোপুরি সংবিধান-বিরোধী।

বিভূতিভূষণ রায়

হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Alliance BJP Congress CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy