Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Nandan

সম্পাদক সমীপেষু: নন্দনেই বা কেন নয়

ছবির বিষয়বস্তু সত্যজিৎ রায়, যিনি নন্দনের সঙ্গে তৈরির দিন থেকে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। নন্দনের লোগো সত্যজিতের নকশা করা!

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২২ ০৪:৫৬
Share: Save:

পরিচালক অনীক দত্তের অপরাজিত ছবিটিকে নন্দনে কোনও শো দেওয়া হল না। অথচ এমন নয় যে, ছবিটি চলছে না, বরং উল্টোটাই। অনেক মাল্টিপ্লেক্সে তো রাতের দিকের শোয়েও ঠাসা ভিড়। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও ছবিটি যথেষ্ট সমাদৃত। বহু দিন বাদে একটি বাংলা ছবিকে ঘিরে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্দীপনা ও আগ্রহ বেশ আশাব্যঞ্জক। অথচ, যে সরকার বাংলা ছবির উন্নতির জন্য সদা তৎপর, সেই সরকারেরই অধীনে থাকা নন্দনে অনেক অকিঞ্চিৎকর ছবি নব্বই শতাংশ খালি আসন নিয়ে একাধিক সপ্তাহ ধরে চললেও কোনও অজানা কারণে এই ছবিটির ঠাঁই হয়নি।

অনেক মানুষেরই মাল্টিপ্লেক্সে বেশি টাকার টিকিট কেটে ছবি দেখার সামর্থ্য নেই। বিশেষ করে আজকে যখন প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কোপে মানুষ নাজেহাল, সে ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র দেখার জন্য নন্দনই অনেকের একমাত্র সম্বল।

তা ছাড়া ছবির বিষয়বস্তু সত্যজিৎ রায়, যিনি নন্দনের সঙ্গে তৈরির দিন থেকে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। নন্দনের লোগো সত্যজিতের নকশা করা! তা সত্ত্বেও সেই ছবি নন্দনে জায়গা না-পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। শোনা যাচ্ছে, পরিচালকের সরকার-বিরোধী মনোভাবই নাকি ছবিটির নন্দনে শো পাওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কথা যদি সত্যি হয়, সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ছবির ভবিষ্যৎ যে কী, তা সহজেই অনুমেয়।

টালিগঞ্জের যে নক্ষত্ররা প্রায়শই ‘বাংলা ছবির পাশে থাকুন’ বলে মিডিয়ায় বাইট দিয়ে থাকেন, তাঁরা আজ এত নিশ্চুপ কেন? সুলভ মূল্যে ছবি দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য একদা যে নন্দনের ভিত্তিস্থাপন হয়েছিল, অপরাজিত-কে সেখানে জায়গা না দিয়ে, সরকার মানুষকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেন।

সৌরনীল ঘোষ, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান

হৃদয়ে অপু-দুগ্গা

অপরাজিত ছবিটির প্রেক্ষাপট নিয়ে যখন জানতে পেরেছিলাম, তখন থেকেই মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা দানা বাঁধছিল। অতীতকে ভালবেসে বেঁচে থাকা বাঙালির অত্যন্ত প্রিয়। তার মধ্যেও সত্যজিৎবাবু এবং তাঁর অমর সৃষ্টি পথের পাঁচালী এক অত্যন্ত সংবেদনশীল জায়গা দখল করে আছে। অপু, দুগ্গা, এদের নিয়েই আমাদের বেড়ে ওঠা। তাই পথের পাঁচালী-র নির্মাণ নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ ছবি তৈরি করা, এবং সেখানে স্রষ্টা ও সৃষ্টি, এই দুইয়ের প্রতি সুবিচার করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সত্যজিৎবাবু-সদৃশ এক জন অভিনেতাকে দিয়ে এই দুরূহ কাণ্ডটা ঘটাতে চাইছেন পরিচালক, শুনে চিন্তা হচ্ছিল যে ব্যাপারটা শেষে একটা ‘শন্তিগোপাল’ ধরনের কিছুতে পর্যবসিত হবে না তো! আরও আশঙ্কা ছিল— তথ্যভিত্তিক, অনেকটাই ডকুমেন্টারির আঙ্গিকে তৈরি এই ছবিটি দর্শকের মনে আনন্দ দিতে পারবে তো?

সম্প্রতি রাঁচীর একটা মাল্টিপ্লেক্সে অবশ্য দেখলাম, প্রচণ্ড দুর্যোগের মধ্যেও হল প্রায় ভর্তি। জানতে পারলাম যে, কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গাতে একই ঘটনা ঘটছে।এর পর ছবির দৃশ্যগুলির ভাবনা, উপস্থাপনা, নাটকীয়তার মধ্যে অবগাহন শুরু হল! ছবিটা দেখতে দেখতে বহু বার চোখের জল বাধা মানেনি, কেননা আজকেও অপু, দুগ্গা, সর্বজয়া, হরিহর পণ্ডিত এরা আমাদের ঘুমের মধ্যে ফিরে ফিরে আসে। আমরা আজও কাশ ফুলের মাঠ পেরিয়ে, ট্রেন দেখতে দৌড় লাগাই। এই চরিত্রগুলোকে পর্দায় মূর্ত হতে দেখে কেমন যেন মিশে গিয়েছিলাম।

সত্যজিৎবাবুর বিভিন্ন ইন্টারভিউ, ওঁর শুটিং করা, এ সবের প্রচুর ভিডিয়ো দেখেছি। ওঁর ব্যক্তিত্ব, উপস্থিতি, সব নিয়ে অল্প কিছু জানা ছিল। তাই জীতু কমলের অভিনয়, এবং তাঁর ‘স্ক্রিন প্রেজ়েন্স’ অনবদ্য মনে হয়েছে ও অনেকটাই চরিত্রের কাছাকাছি লেগেছে। সব অর্থেই বিশাল এক ব্যক্তিত্বকে অনুকরণ করা খুব কঠিন। জীতু কমল সুবিচার করতে পেরেছেন। অপু, দুগ্গা, সর্বজয়া, হরিহর— সবাইকেই যথাযথ মনে হয়েছে, তবে এ বারও ইন্দির ঠাকরুন আমাদের সবার বুক খালি করে দিলেন। চুনিবালা দেবীর মতো, এই চরিত্রাভিনেতাও আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হবেন। সমর্পণের রাস্তায় না হেঁটে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য পরিচালক অনীক দত্তকে অভিনন্দন জানাই।

অঞ্জন মৈত্র, রাঁচী

ক্ষমতার ফাঁদ

সম্প্রতি কলকাতায় দেশের গবেষকদের এক সম্মেলন হয়ে গেল। সম্মেলনে গবেষকরা যে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হন, তা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই সম্মেলনেরকিছু কাল আগে কলকাতায় অবস্থিত এক কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে এক গবেষকের আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষাজগতে সামান্য হলেও আলোড়ন উঠেছিল। অভিযোগ, সেই গবেষক তাঁর অধ্যাপকের কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য পাচ্ছিলেন না, আর পাঁচ বছরেও পিএইচ ডি-র কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ার ফলে তিনি আর কোনও রকম আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছিলেন না। অনুমান করা যেতে পারে, এই সমস্ত কারণে তাঁর মধ্যে হতাশার জন্ম হয়েছিল।

আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যত গবেষণা হয়, তার সিংহভাগই করে থাকেন পিএইচ ডি-র ছাত্রছাত্রীরা। এঁদের গবেষণার মানের উপরেও নির্ভর করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মান। এমনকি, এঁদের পিএইচ ডি থিসিস এবং জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের উপরে অধ্যাপকদের কর্মক্ষেত্রে উন্নতি আর সুনামও খানিক নির্ভরশীল। অথচ, খোঁজ নিলে জানা যাবে, দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অনেক গবেষক কোনও রকম আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না। সংবাদে প্রকাশ, উল্লিখিত কলকাতার গবেষণাগারটি এই আর্থিক (অ)সহায়তার ব্যাপারটি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যত দিন না সমস্যাটিকে বাস্তব বলে স্বীকার করে সমস্যার দায় গবেষকদের উপর চাপানোর স্বভাব থেকে মুক্ত হবে, সমস্যাটি আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এক লজ্জা হয়েই থেকে যাবে। মুশকিল হল এই যে, অনেক ক্ষেত্রেই গবেষকদের সঙ্গে তাঁদের অধ্যাপকদের স্বার্থের সংঘাত থেকে যায়। ফলে ক্ষমতাতন্ত্রের ফাঁদে পড়ে আরও গবেষকের অকালমৃত্যু হয়তো অসম্ভব নয়।

অমিত বর্ধন, চুঁচুড়া, হুগলি

সাইকেলে ফেরা

শিমূল সেনের ‘বাঙালির বাইসাইকেল’ (রবিবাসরীয়, ১৫-৫) তথ্যবহুল সুন্দর লেখা। বাঙালি আইকন সত্যজিৎ রায় কর্মসূত্রে লন্ডন গিয়ে, ডি সিকার বাইসাইকেল থিফ দেখে অনুপ্রাণিত হলেন অপেশাদার অভিনেতা দিয়ে ‘নিয়োরিয়েলিস্টিক মেথড’-এ পথের পাঁচালী ছবি করার। তার পরের কাহিনি তো আমরা জানি। নোবেল জয়ের পর অমর্ত্য সেন শান্তিনিকেতনে এলে, লালমাটির পথে সাইকেল আরোহী অমর্ত্যের ছবি সংবাদপত্রের দৌলতে বিশ্ববাসীর সামনে আসে।

স্কুলে সাইকেল, টিউশন পড়তে যেতে সাইকেল খুব চেনা দৃশ্য। পুজোর মুখে ফেরিওয়ালা সাইকেলের ‘কেরিয়ার’-এ কাপড়ের বান্ডিল নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করেন। গোয়ালার দুধের ক্যান কেরিয়ারের দু’পাশে ঝোলে। একটা সময় বিয়ের যৌতুকে সাইকেল বেশ ওজনদার ছিল। তবে, গতির যুগে সাইকেল এখন পিছনের সারিতে, যদিও বিদেশের অনেক রাষ্ট্রনায়ক সাইকেল সওয়ারি হয়ে অফিস করেন। করোনাকালে যান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের ফলে সাইকেল অনেককেই ‘আত্মনির্ভর’ করেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে যন্ত্রচালিত যানবাহন চলে। ওই জ্বালানির দহনে তৈরি হয় গ্রিনহাউস গ্যাস। এই গ্যাসের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। দাবি উঠেছে মহানগরের রাজপথে সাইকেল লেন থাকার। সে দাবি সঙ্গত। পরিবেশবান্ধব সাইকেল ফিরে আসুক বিপন্ন পৃথিবীকে বাঁচাতে।

দেবাশিস দাস, বোলপুর, বীরভূম

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Nandan Anik Dutta Aparajito
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy