Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Before lockdown in London we can came back to India

ফিরে যেতে পারতাম, কিন্তু চাইনি আমাদের জন্য দেশের এক জনেরও ক্ষতি হোক

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌কনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌কনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

লকডাউন লন্ডন। ছবি: লেখকের নিজস্ব।

লকডাউন লন্ডন। ছবি: লেখকের নিজস্ব।

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ২০:৫৩
Share: Save:

তিন বছরের উপরে লন্ডনের ক্রয়ডন শহরে বাস করছি। সন্তানের বয়স পাঁচ বছর। এই লন্ডনে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা যেমন দেখেছি তেমন ঝলমলে রোদ্দুরের গ্রীষ্মকালেরও সাক্ষী থেকেছি। কিন্তু এই বছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে যেন সব কিছু বদলে গেল। করোনাভাইরাসের আতঙ্ক সবাইকে গ্রাস করে নিল।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই ইতালির অবস্থা সবাই বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু সেই পরিস্থিতি যে এখানেও হতে পারে তা মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বোঝা যায়। আর পাঁচ জনের মতো আমরাও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করতে শুরু করলাম। কিন্তু এখানকার মানুষের কাছে সব থেকে বেশি প্রয়োজনীয় জিনিস হল টয়লেট পেপার। তবে আমরা সেদিকে অতটা গুরুত্ব দিইনি বলে বেশি মজুত করতে পারিনি। তবে এক মাসের মতো চাল, ডাল, আলু ও অন্যান্য জিনিস মজুত করে নিই।

মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ছেলের স্কুল বন্ধ হয়নি। তাই আমাদের মনে ভয় যেন দিন দিন জাঁকিয়ে বসছিল। অবশেষে স্কুল যখন বন্ধ হল তত দিনে জল অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজার পেরিয়ে গিয়েছে আর মৃত্যু হয়েছে ৩৩৫ জনের।

ছেলের স্কুল বন্ধ হতেই আমরা নিজেদের ঘরবন্দি করে নিই। কিন্তু এখানেও ইতালির মতো অনেকে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি। ফলে আজকের তারিখে মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজার ৯৩৪ আর আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন ৪৭ হাজার ৮০৬ জন।

আরও পড়ুন: লকডাউনে পাশের বাড়িতে কুকিজ বিলি করে আসছে বুলডগ!

আমাদের ক্রয়ডনের মতো ছোট শহরেও আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখন একটা কথাই বার বার মনে মনে বলছি, খিচুড়ি খেয়ে থাকবো সেও ভাল, তবুও বইরে বেরব না। কারণ বাইরে বেরিয়েও বিশেষ লাভ নেই, সুপার মার্কেটগুলোতে স্টক প্রায় শেষের মুখে, সব কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। পাঁউরুটি আর দুধ ছাড়া মোটামুটি সবই অমিল।

আমাদের খাবারের ভান্ডারও প্রায় ফুরিয়ে আসছে, সঙ্গে আবার পাঁচ বছরের শিশু রয়েছে, ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে জানি না। যত হোম ডেলিভারি সার্ভিস ছিল সব মোটের উপর বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জানি না এর পর কী ভাবে চালাব।

আরও পড়ুন: স্তব্ধ ইটালিতে বারান্দা থেকে ঝুলছে ঝুড়ি! কেউ খাবার নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ রেখে যাচ্ছেন

এই সপ্তাহ থেকে এখানে ইস্টারের ছুটি পড়ছে। তার আগে পর্যন্ত ছেলের স্কুল অনলাইনে ক্লাস হচ্ছিল। শিক্ষিকারা নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে ফোন করে প্রত্যেক পড়ুয়ার খোঁজ নিয়েছেন। ইস্টার এদেশে বড়দিনের মতোই উৎসব। কিন্তু এবার আর অন্য বছরের মতো উৎসবে মেতে ওঠার সুযোগ নেই, বরং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ এখন একটাই প্রার্থনা করছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিপদ কেটে যাক।

সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে আমরা হয়তো দেশে ফিরে যেতে পারতাম, কিন্তু আমরা চাইনি আমাদের দেশের একটা মানুষেরও আমাদের জন্য ক্ষতি হোক। আপনাদের কাছে একটাই অনুরোধ দয়া করে বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন, উপভোগ করুন। চার দিকে তাকিয়ে দেখুন অনেকে সেই সুযোগ পাননি, আর হয়তো কোনও দিনই পাবেন না। তাই সাবধানে থাকুন, ঘরেই থাকুন।

সঙ্গীতা সরকার

ক্রয়ডন, লন্ডন

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

London Indian
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE