শিল্প-নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্তের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘তাঁর শিল্পের জাদুতে মুগ্ধ বাংলা থেকে বলিউড’ (রবিবাসরীয়, ৪-২) প্রবন্ধটির জন্য সুব্রত চক্রবর্তী ও অমিত রায়কে ধন্যবাদ। শ্রদ্ধেয় বংশীবাবু দীর্ঘ কাল কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন, পথের পাঁচালী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী পর্যন্ত। অর্থাৎ ১৯৫৫-১৯৭০ সাল পর্যন্ত। তার পর আবার ১৯৭৭ সালে সত্যজিৎ রায়ের শতরঞ্জ কে খিলাড়ি-তে শিল্প-নির্দেশকের কাজ করেন। এ কথা অনস্বীকার্য, সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করার ফলে বংশীবাবুর শিল্পের চোখ তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
চলচ্চিত্রে শিল্প-নির্দেশনা করতে গেলে চিত্রনাট্যের প্রয়োজন অনুযায়ী একটা এঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং, বা আদ্যন্ত নিখুঁত একটা ছবি দরকার। এই কাজটা সত্যজিৎ রায় পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে করতেন। নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের সিংহাসন কতটা মাপের হবে, ক্যামেরার চলন অনুযায়ী সিংহাসনের কোন জায়গাতে চুনি-পান্না বসবে, জেনারেল উট্রাম-এর ব্রিটিশ সিংহাসনটা ওই সময়ে কী রকম ছিল, বা গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবিতে রাজদরবারটা কী রকম নিখুঁত পরিপাটি করে সাজাতে হবে, বিরাট দরজায় বাঘের মুখে দাঁতটার মাপ কেমন হলে মানানসই হবে, এ সবই তিনি ছবি এঁকে বুঝিয়ে দিতেন। একই পদ্ধতিতে কী ভাবে সেট বানাতে হবে, তা হাতেকলমে বংশীবাবুকে শিখিয়েছেন। যে শিক্ষা পরবর্তী কালে বংশীবাবু বলিউডের কাজে লাগিয়েছেন।
সুব্রত এবং অমিত, সমীর চন্দের কাজও খুব সামনাসামনি দেখেছি। সেখানেও সেই নিখুঁত ছবি আঁকার ক্যারিশমা। সুতরাং এই ব্যাপারে সত্যজিৎ রায় যে পথিকৃৎ, সে কথা কোনও শিল্প-নির্দেশক (অধুনা প্রোডাকশন ডিজ়াইনার) অস্বীকার করতে পারবেন না। আর সিনেমার এই বিশেষ দিকটি ভারতের সব শিল্প-নির্দেশক— বংশী চন্দ্রগুপ্ত থেকে শুরু করে নীতীশ রায় থেকে সমীর চন্দ থেকে হালফিল সুব্রত, অমিত— সকলেই সত্যজিতের কাছে ঋণী থেকে যাবেন।
দেবানন্দ গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা-৩২
অদ্বিতীয়া
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ, ‘তাঁর প্রতিভার প্রতিস্পর্ধায় কেঁপে গিয়েছিল পুরুষতন্ত্র’ (রবিবাসরীয়, ৪-২) যত পড়ছিলাম, নিজের সময়কাল ও অস্তিত্ব নিয়ে বার বার ছিটকে যাচ্ছিলাম। দেড়শো বছর আগের এক ‘মানুষ’ গওহর-এর এত বৈচিত্রময় প্রতিভার জন্ম, উন্মোচন, বিস্তার! অন্য দিকে, প্রতি মুহূর্তে পুরুষরা শুধুই গওহরের নারীত্ব দেখতেই ব্যস্ত। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’-র অনুসরণে মনে হয় যেন গওহরের আর্তনাদ ছড়িয়ে যাচ্ছে— “শরীর! শরীর! তোমার মন নাই পুরুষ?” অথচ, গওহর তার আগে কী অনায়াসে অজ্ঞানে বা সজ্ঞানে শারীরবৃত্তীয় দেহ আত্মস্থ করেছেন। শরীর জয় করেছেন বলেই শরীরকে বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর করে তুললেন, যেখানে ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ, অর্থ, কিছুই ভেদাভেদ তৈরি করতে পারল না।
গওহর বা অ্যাঞ্জেলিনা ইয়োওয়ার্ড, যাঁর বাবা আর্মেনিয়ান, মা ভিক্টোরিয়া বা মলকা— নানা ধর্মের সহাবস্থান। এমনিতেই হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন-শিখ-মুসলিম ইত্যাদি বিভাগ, শৈব-শাক্ত-বৈষ্ণব উপবিভাগ এবং বর্ণ, জাত, দলিত, জনজাতি, জীবিকাকে কেন্দ্র করে অজস্র শাখা নিয়ে ভারতীয় সমাজ জেরবার আজও। কিন্তু গওহর ও তাঁর পূর্ব প্রজন্মকে দেখা যাচ্ছে আর এক সন্ধিক্ষণে, যখন ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ তার এক সমাজ এবং ধর্ম, তার ভাগ, উপবিভাগ নিয়ে এল। অর্থাৎ রুক্মিণী, ভিক্টোরিয়া/মলকা, অ্যাঞ্জেলিনা/গওহর— দিদিমা-মা-মেয়ে, এই তিন মহিলা অভিযোজন করে চলেছেন এই সময়ে। সুযোগ পেয়েও এই অভিযোজনে ধর্ম কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি। যৌনতা, দেশ, ভাষা ইত্যাদি বড় শত্রুও মাথা তুলতে পারেনি।
গওহরের সঙ্গে আত্মীয়তা হয়েছে ভারত জুড়ে বিভিন্ন স্থানের। বিশেষ করে তিনি থেকেছেন কলকাতা, বারাণসী, বম্বে, দারভাঙা, বহরমপুর, রামপুর ইত্যাদি জায়গায়। তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়েছে ছগন রাই, মইজুদ্দিন, আব্বাস, অমৃতকেশব, নিমাই সেন প্রমুখের। তিনি ভালবেসেছেন বলেই শিখে নিয়েছিলেন বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, উর্দু, আরবি, ফারসি, ফরাসি, পুশতু, মরাঠি, তামিল, গুজরাতি। তা হলে কি এই বৈচিত্র গওহরকে এক জায়গায় বাঁধতে পারেনি? গওহরের এই অসামান্য প্রতিভাই তাঁর একাকিত্বের কারণ? তাঁকে তিন বার আদালতে লড়তে হয়েছে অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পুরুষের বিরুদ্ধে। তিন বারই তিনি জয়ী হলেন। কিন্তু প্রবন্ধকারের কথা অমৃতসমান— তবু হেরে গেলেন জীবনের মকদ্দমায়। সে তো শরীরের মৃত্যু। গওহর অমর তাঁর নাচ, গান, রূপের আঙিনায়।
নৃত্য, গীত, রূপসজ্জা, এই তিন মঞ্চে পুরুষতন্ত্র যত অবলীলায় সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রাখে, নারীকে আজও তার জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হয়। আজ গওহরকে যত সহজে ‘মানুষ’ বলি না কেন, দেড়শো বছর আগে বাকি পুরুষ-নারী নির্বিশেষে গওহরকে মানুষ দূর স্থান, নারীর মর্যাদাও দেয়নি। বাইজি গওহরজান গায়িকা, নর্তকীর মর্যাদা অবশ্য পেয়েছেন। গান্ধীজি দেশের জন্য তাঁর কাছে অর্থ চেয়েছেন, এ-ও কম কথা নয়। যদিও তিনি সাক্ষাতে গান শুনতে আসেননি। গওহর অর্থ, প্রশংসা পেয়েছেন প্রচুর। কিন্তু মনের মানুষ পাননি। কারণ স্বয়ং গওহর ও তাঁর প্রতিভা।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
ধর্মের রূপ
শুভঙ্কর ঘোষ রায় চৌধুরীর ‘আমরা কি গ্রহণে সক্ষম’ (২-২) শীর্ষক প্রবন্ধসূত্রে বলি, বিবেকানন্দ উনিশ-বিশ এবং একুশ শতকেরও এক প্রধান ধর্মব্যক্তিত্ব। তাঁর ধর্মভাবনার কেন্দ্রে ছিল মানবসেবার আদর্শ। ‘অচল’ ঈশ্বরের ‘সচল’ রূপ মানুষকেই তিনি স্থাপন করেছিলেন তাঁর সাধনার কেন্দ্রে। তিনি সন্ন্যাসের সঙ্গে সমাজের মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছিলেন। সন্ন্যাসকে তুলে এনেছিলেন পর্বতগুহার অন্ধকার সাধনপীঠ থেকে গৃহস্থের আঙিনায়। বলেছিলেন, আত্মমুক্তি-সাধনার পাশাপাশি সন্ন্যাসীকে জগৎকল্যাণে আত্মদান করতে হবে। ‘বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়’ সন্ন্যাসীর জন্ম। তাঁর মতে, আচারকেন্দ্রিক ধর্ম হল ধর্মের গৌণ রূপ। ধর্মের মুখ্য রূপ জীবপ্রেম, মানুষের সেবা।
স্বামীজি বললেন কর্মকেও ধর্মে পরিণত করতে হবে। কর্মই উপাসনা, কর্মই ধর্ম। দেশমাতৃকার সেবাকে ভগবানের উপাসনা বলেই তিনি মনে করতেন। মাদ্রাজে প্রদত্ত ‘ভারতের ভবিষ্যৎ’ বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, “আগামী পঞ্চাশ বৎসর আমাদের গরীয়সী ভারতমাতাই আমাদের আরাধ্য দেবতা হউন, অন্যান্য অকেজো দেবতা এই কয়েক বৎসর ভুলিলে কোনো ক্ষতি নাই। অন্যান্য দেবতারা ঘুমাইতেছেন; তোমার স্বজাতি — এই দেবতাই একমাত্র জাগ্রত।” (স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, উদ্বোধন কার্যালয়, ৫ম খণ্ড)। তিনি এ ভাবেই বেদান্তের বাণীকে যুগোপযোগী করে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, শুনিয়েছিলেন আশার বাণী।
সুদেব মাল, খরসরাই, হুগলি
জলের মিটার
পুরসভা থেকে বাড়িতে যে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়, তা নষ্ট হয় সবচেয়ে বেশি। রাস্তার পাইপলাইনেও একই অবস্থা! জল নেওয়া হল, কিন্তু কলের মুখ ঠিকমতো বন্ধ হল না! অথচ, সারা দেশে এখনও প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ পানীয় জল ঠিকমতো পান না। তাই যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি বাড়ি জলের মিটার বসানো হোক। একটা নির্দিষ্ট ইউনিট বা পরিমাণ পর্যন্ত পানীয় জল বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। তার পর প্রতি ইউনিটের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ধার্য হবে। অর্থাৎ, গ্রাহককে জল পেতে গেলে গ্যাঁটের কড়ি খরচ করতে হবে! তা হলেই জল নষ্টের প্রবণতা কমতে পারে।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy