অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্প্রতি নোবেল প্রাপক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে যে সমস্ত নিম্নরুচিসম্পন্ন মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, তা দেখে প্রশ্ন জাগে, আমরা ভারত তথা বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে এত গর্ব করি, তার কি এই প্রতিফলন? আরও অবাক হতে হয়, যখন দেখা যায়, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখেও একই রকম মন্তব্য! আর এঁরা কিনা কথায় কথায় দেশের সংস্কৃতির কথা বলেন!
অন্য দিকে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অভিজিৎবাবুকে ‘বাম ঘেঁষা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দরিদ্রদের অবস্থার উন্নতির কথা বলেছেন বলে অভিজিৎবাবু বাম ঘেঁষা! তাঁকে ‘বাম-ঘেঁষা’ বলে মন্ত্রিমশাই এক দিকে স্বীকার করে নিলেন যে প্রকৃত বামপন্থী প্রকৃত গরিবদরদি।
গরিবের অবস্থা ভারতে আজ কেমন? বিশ্ব ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী আজ ভারতের স্থান ১১৭টি দেশের মধ্যে ১০২তম। তা হলে মাননীয় মন্ত্রিমহাশয়ের রাজনৈতিক ধারা কাদের জন্য, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কি?
নরেন্দ্রনাথ কুলে
কলকাতা-৩৪
কিছু প্রশ্ন
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়দের গবেষণার উদ্দেশ্য কল্যাণকর। তবে এ জাতীয় গবেষণা-পদ্ধতির নীতিগত যৌক্তিকতা নিয়ে দু’একটি প্রশ্ন এসে যায়। এই যে গরিব মানুষদের ‘ট্রিটমেন্ট গ্রুপ’ আর ‘কন্ট্রোল গ্রুপ’-এ ভাগ করে, তাঁদের গবেষণার বিষয়বস্তু করা হয়, এ কি তাঁদের নিঃশর্ত সম্মতি নিয়ে করা হয়? যদি এর পিছনে কোনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বাধ্যবাধকতা বা প্রতারণা থাকে, তা কি এই অসহায় মানুষগুলির মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়?
গবেষকরা হয়তো বলবেন, ‘‘হ্যাঁ, আমাদের দেশের এই গরিব মানুষেরা স্বেচ্ছায় এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন।’’ তবে আমাদের দেশের গরিব মানুষজনের ইচ্ছা-অনিচ্ছা আমাদের রাষ্ট্রশক্তির সামনে যে কতখানি মর্যাদা পায়, তা তো আমাদের অজানা নয়। আর, ডলার-শক্তি তো সম্ভবত তার চেয়েও প্রবল পরাক্রমশালী।
রাজস্থানের উদয়পুরের অভিজিৎবাবুদের যে পরীক্ষাটির কথা মৈত্রীশ ঘটক ও অমিতাভ গুপ্ত তাঁদের ‘‘দারিদ্র থেকে উত্তরণের মই’’ (১৬-১০) শীর্ষক লেখাটিতে বর্ণনা করেছেন, তা নিঃসন্দেহে ‘উৎকোচের বিনিময়ে শিশুদের টিকাদান’। তাঁদের মতে, এই ‘‘পরীক্ষায় দারুণ ফল পাওয়া গিয়েছিল।’’ অর্থাৎ, রাজস্থান সরকারকে এই পদ্ধতিতে বর্ধিত হারে শিশুদের টিকাদান নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হবে। এ একটি সম্ভাব্য রাষ্ট্রনীতি। তাই এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের নাগরিকদের কয়েকটি প্রশ্ন এসে যায়।
প্রথমত, এই উৎকোচ পদ্ধতিতে প্রত্যন্ত মানুষের স্বাস্থ্য-সচেতনতা বাড়বে কি? টিকাদানের সঙ্গে কোনও বস্তুগত লাভকে সম্বন্ধযুক্ত করা হলে, সচেতনতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা কতখানি? স্বাস্থ্য-সচেতনতা ব্যতীত এ জাতীয় সমস্যার কোনও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান কি সম্ভব? দ্বিতীয়ত, এই প্রক্রিয়ায় গরিব খেটে-খাওয়া মানুষের মধ্যে উৎকোচ-নির্ভরতা সৃষ্টি হবে না তো? ‘‘কিছু উপরি না পেলে কেন করতে যাব’’ জাতীয় প্রশ্নের আর একটি নতুন ক্ষেত্র তৈরি হলে, তা তো এই গরিব মানুষদের পক্ষেই ক্ষতিকর। পীযূষ দাশগুপ্ত
কলকাতা-৩১
খোলা মনে
‘দারিদ্র থেকে উত্তরণের মই’ (১৬-১০) শীর্ষক লেখাটি সম্পর্কে কিছু কথা। র্যান্ডমাইজ়ড কন্ট্রোল ট্রায়াল (আরসিটি) হল এমনই একটি পদ্ধতি, যেটা চিকিৎসাশাস্ত্রে আগে ব্যবহার হয়েছিল, যেটা অর্থনীতিতেও ব্যবহার হচ্ছে। এর অবদান বিভিন্ন নতুন ওষুধ তৈরির সময় অনস্বীকার্য। কিন্তু সত্যের সন্ধান করতে গিয়ে নানা সময় নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে আরসিটি নিয়ে, অনেক সময় অনেক মানুষের ক্ষতি হয়েছে— শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে অনেক ওষুধের ক্ষতির পরিমাপ বোঝা যায়নি প্রথম প্রথম, আবার নানা গোষ্ঠীর চাপে পড়ে পাশ করে গিয়েছে এমন অনেক নতুন ওষুধ, যেটি হয়তো আগের ওষুধটার থেকে খুব বেশি লাভ দিতে পারে না, কিন্তু অনেক বেশি দামি। তাই ‘এভিডেন্স বেস্ড মেডিসিন’ শুনতে দারুণ লাগলেও, এটি নির্ভুল একেবারেই নয়। চিকিৎসাশাস্ত্র বা অর্থনীতি— দুই ক্ষেত্রেই আসলে কার্য ও কারণের সরাসরি সম্পর্কের মাঝে এত রকমের অনিশ্চয়তা থাকে, যে সেই সবকে পরিমাপ করা অসম্ভব, তাই এই র্যান্ডমাইজ়েশন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সত্যের কাছে যে পৌঁছানো যায় তা বলা শক্ত, প্রত্যেক পদে পদে থেকে যায় অনেক ভুলভ্রান্তি বা ‘বায়াস’। তাই অর্থনীতির গবেষণা যখন এই পথে যেতে শুরু করেছে, চিকিৎসাশাস্ত্রের কয়েকটি তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রাখা জরুরি।
চিকিৎসায় আরসিটি-র উপযোগিতা বহু গুণ বৃদ্ধি করে ‘ব্লাইন্ডিং’। মানে রোগী জানেন না যে তাঁকে পরীক্ষামূলক ওষুধটি দেওয়া হচ্ছে, না নকল ওষুধটি দেওয়া হচ্ছে। যাতে শুধু সেটা জানার ফলেই তিনি তাঁর আচরণ পরিবর্তন করতে না পারেন। এমনকি তাঁর ওপর লক্ষ রাখা হচ্ছে, এটুকু জেনেও পরিবর্তন হতে পারে ব্যবহারের (হথর্ন এফেক্ট)। আবার, যিনি ওষুধগুলি বা ইন্টারভেনশন দিচ্ছেন, তিনিই যদি এর ফলাফল দেখতে শুরু করেন, তবে হয়তো তিনি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যেতে পারেন সেগুলি নথিভুক্ত করার সময়। তাই ফল দেখবেন আলাদা লোক। এও এক ধরনের ‘ব্লাইন্ডিং’। এ রকমই আছে বিবিধ বায়াস, আর তা ঠিক করতে আশ্রয় নেওয়া হয় নানান উপায়ের।
কিন্তু অর্থনীতি বা যে কোনও সমাজশাস্ত্রের আরসিটি-তে ব্লাইন্ডিং করা যে শুধু দুরূহ তা-ই নয়, অনেক সময় অসম্ভব। এ রকমই প্রতিটি পদে এমন কিছু কারণবশত বায়াস আসতে পারে, যাতে সমীক্ষার ফল ভুল আসতে পারে। সে জন্যই এই সব ফলকে অভ্রান্ত ধরে নেওয়াটা উচিত হবে না। বরং খোলা মনে বিচার করা জরুরি। বহু বছর ঠেকে শিখতে শিখতে চিকিৎসাশাস্ত্রে যেমন কনসর্ট বা অন্যান্য সংস্থা সুচিন্তিত নিয়ম তৈরি করেছে ভাল আরসিটি করার, তেমনই হয়তো অর্থনীতিতেও ‘এভিডেন্সড বেস্ড পলিসি’ তৈরির আগে চলে আসবে এ রকমই কোনও চেকলিস্ট। আরও আশা রাখি, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেখানে একই সমীক্ষা হয়েছে, তার ফল একত্রিত করতে চিকিৎসাশাস্ত্র যেমন সাহায্য নেয় মেটা-অ্যানালিসিসের, তা ক্রমে চলে আসবে অর্থনীতিতেও।
ঋভু বসু
কলকাতা-৮৬
অন্যের গল্প
রবিবাসরীয় ছোটগল্প বিভাগে (১৩-১০) প্রকাশিত হয়েছে ভবতোষ নায়েকের গল্প ‘বিপিন চৌধুরীর আত্মা’। যত দূর জানি, এই বিভাগে মৌলিক গল্প প্রকাশিত হয়, গল্পের অনুবাদ নয়। ভবতোষ নায়েকের গল্পটি হিন্দি সাহিত্যিক হরিশঙ্কর পরসাইয়ের ‘ভোলারাম কা জীব’ গল্পের বাংলা অনুবাদ। অথচ ভবতোষবাবু কোথাও মূল লেখকের ঋণ স্বীকার করেননি। হরিশঙ্কর পরসাইয়ের গল্পটি বাংলায় ‘ভোলারামের আত্মা’ নামে অনুবাদও হয়েছে। করেছেন রমা ভার্মা, যা ১৯৯০ সালের ২৬ ডিসেম্বর আনন্দমেলায় অনূদিত গল্প হিসেবেই প্রকাশিত হয়েছিল। সেই অনুবাদটি থেকে বেশ কিছু লাইন তাঁর গল্পে প্রায় হুবহু তুলে দিয়েছেন ভবতোষবাবু।
কৃষ্ণা সেন
কলকাতা-৪
আনন্দবাজারের বক্তব্য: সত্যটি জানানোর জন্য পত্রলেখককে ধন্যবাদ। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি মৌলিক গল্প প্রকাশ করার, তবু অনবধানতাবশত লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে। এর জন্য আমরা অত্যন্ত লজ্জিত। এমন একটি অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য নিশ্চয়ই আমাদেরও সম্মানহানি ঘটেছে। এই ঘটনার জন্য আমরা পাঠকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy