শহরকে প্লাস্টিক-মুক্ত করিবার শপথ লইয়াছে বৃহন্মুম্বই পুরসভা। গত ২৩ জুন সেই পথে হাঁটিয়াই সেই শহরে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকজাত পণ্যের উৎপাদন, বিক্রয় ও ব্যবহারে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিয়াছে। শুধু আইন করা নহে, সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিকতায় ওতপ্রোত মিশিয়া থাকা একটি বস্তুকে সম্পূর্ণ সরাইয়া দিবার উপায় এবং তাহার প্রতিক্রিয়া লইয়াও তাহারা চিন্তা করিয়াছে। যেমন, প্লাস্টিকের বিকল্প কী হইতে পারে, তাহা নাগরিকদের সামনে তুলিয়া ধরিবার জন্য প্রদর্শনীর আয়োজন, নাগরিকরা কোন ধরনের প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ব্যবহার করিতে পারিবেন না এবং কোনগুলি পারিবেন, সেই বিষয়ে প্রচার, নজরদারির জন্য প্লাস্টিক-বিরোধী বাহিনী গঠন, আইন ভাঙিলে মোটা অঙ্কের জরিমানা-সহ নানা পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন। এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলির অসন্তোষ, খুচরা ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের হুমকি সত্ত্বেও প্রশাসনের পিছাইয়া আসিবার কোনও লক্ষণ এখনও পর্যন্ত দেখা যায় নাই।
মুম্বই পুরসভা অনুধাবন করিয়াছে, প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের বেলাগাম ব্যবহার শুধুমাত্র জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকতের শোভাটুকুই হ্রাস করে না, বৃহত্তর অর্থে তাহা পরিবেশ তথা নাগরিক জীবনেরও সর্বনাশ ঘটায়। অনুধাবন করিয়াছে, কারণ তাহারা ভুক্তভোগী। প্রতি বৎসর বর্ষায় মুম্বইয়ের বানভাসি চেহারার পিছনে প্লাস্টিকজাত বিভিন্ন দ্রব্যের অবদানের কথা ভুলিবে কী উপায়ে? কিন্তু তাহারা অভিজ্ঞতা হইতে শিক্ষা লইয়াছে। এই শিক্ষা কলিকাতা পুরসভা এত দিনেও লইতে পারে নাই। আশ্চর্য নহে। যে শাসকরা বাজি কারখানার শ্রমিকদের কাজ চলিয়া যাইবার অজুহাতে শব্দবাজিকে নিয়ন্ত্রণ করিতে আগ্রহ দেখান না, তাঁহারা হয়তো প্লাস্টিক কারখানা বন্ধ না করিবার জন্যও একই কারণ দর্শাইবেন। সুতরাং ইহাই কলিকাতার ভবিতব্য যে, যত্রতত্র প্লাস্টিক জমিয়া নিকাশির মুখ বন্ধ হইয়া দূষণ ছড়াইবে, প্রতি বর্ষায় সে বানভাসি হইবে। রাজ্যে ৪০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকিলেও তাহা কঠোর ভাবে বলবৎ করা হইবে না এবং প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদন এবং সার্বিক ভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারেও যথেষ্ট সরকারি উদ্যোগ অন্তত আগামী কয়েক বৎসরে দেখা যাইবে না।
প্রশাসন উদাসীন, নাগরিকরাও তথৈবচ। পরিবেশবিদদের লাগাতার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও তাঁহারা— কিছু ব্যতিক্রম সাপেক্ষে— এখনও কাগজ বা পাটের তুলনায় প্লাস্টিকেই অধিক ভরসা রাখেন। কারণ তাহা সস্তা, এবং তাহার অন্য কিছু সুবিধাও আছে। সেই কারণে বড় বিপণি ব্যাগপিছু নির্দিষ্ট মূল্য ধার্য করিয়াও ক্রেতার প্লাস্টিক ব্যাগের প্রতি আগ্রহ কমাইতে পারিতেছে না। এমনকি যে ছোট দোকান নিয়ম মানিয়া প্লাস্টিকের ব্যাগ দিতে অসম্মত হয়, ক্রেতারা অনেকেই সেই দোকান বর্জন করেন। ফলে খুচরো বিক্রেতারাও ক্রেতাদের সন্তুষ্টির জন্য অহরহ নিয়ম ভাঙিয়া থাকেন। ফল: আইন আইনের জায়গায় পড়িয়া আছে, প্লাস্টিক ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতেছে। কাটা ফল, দই, মিষ্টি, এমনকি রান্না করা সব্জিও দিব্যি প্লাস্টিকবন্দি হইয়া ক্রেতার সঙ্গ লইতেছে। কোনও নজরদারি নাই। মহারাষ্ট্রের পথ পশ্চিমবঙ্গ যদি দ্রুত লইতে পারে, পরিবেশ বাঁচিবে, জনজীবনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy