Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
BJP

গণতন্ত্র বড় বালাই

নির্বাচনের ফল যদি অন্য রূপ হইত, শাহজির এমন শান্তরূপ দর্শনের সৌভাগ্য দেশবাসীর হইত না।

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

সন্দেহবাতিক ভাল নয়। কিন্তু সন্দেহ করিবার কারণ থাকিলেও সন্দেহ না করিবার অভ্যাসকে বুদ্ধির লক্ষণ বলা চলে না। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অমৃতকথা শুনিয়া কিছু সন্দেহ স্বাভাবিক। অমিত শাহ— আত্মবিশ্বাসে সতত পরিপূর্ণ, প্রবলপরাক্রমী, কঠোরভাষী অমিত শাহ— শান্ত, সংযত, প্রায় বিনম্র ভঙ্গিতে স্বীকার করিয়াছেন, ভোটের ফল অনুমান করিতে তাঁহার ভুল হইয়াছিল! আরও বলিয়াছেন, তাঁহার দলের কয়েক জন সদস্যের কিছু কুকথার জন্যও হয়তো নির্বাচনে খেসারত দিতে হইয়াছে! বুদ্ধিমান নাগরিক ভ্রুযুগল ঈষৎ কুঞ্চিত করিয়া ভাবিতেই পারেন— এই স্বীকারোক্তি কি স্বতঃস্ফূর্ত, না কি ইহার পিছনে প্রধানমন্ত্রীর প্রেরণা অথবা তাড়না রহিয়াছে? তেমন কোনও চিত্রনাট্য যদি না-ই থাকে, তাহা হইলে এই বোধোদয়ের জন্য আটচল্লিশ ঘণ্টা অপেক্ষা করিতে হইল কেন? ওই আটচল্লিশ ঘণ্টা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অ-দর্শনের কারণই বা কী? ধোঁয়াশা রহিয়াই গেল।

তবে একটি বিষয়ে বোধ করি সন্দেহ বা সংশয়ের কিছুমাত্র কারণ নাই। নির্বাচনের ফল যদি অন্য রূপ হইত, শাহজির এমন শান্তরূপ দর্শনের সৌভাগ্য দেশবাসীর হইত না। তখন নিশ্চয়ই দেখা যাইত আপন নির্ভুল অনুমানের গর্বে তাঁহার ছাতি ফুলিয়া অন্তত সাড়ে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি হইয়াছে। এবং, তখন দলীয় সহকর্মী ও সহধর্মীদের কুকথাগুলি লইয়াও তাঁহার কিছুমাত্র আপত্তি থাকিত কি? বস্তুত, কে বলিতে পারে, ‘গোলি মারো’ আদি সেই সকল ইন্ধনের জন্য তাঁহারা হয়তো বা অভিনন্দিত, পুরস্কৃতও হইতেন। ভোটে বেধড়ক হারিয়া অমিত শাহ বলিয়াছেন, ওই সকল উক্তি যাঁহারা করিয়াছিলেন, বিজেপি তাঁহাদের সহিত দূরত্ব রচনা করিয়াছে। সেই দূরত্ব কোথায় কী ভাবে রচিত হইল, তাহা অবশ্য রহস্যই থাকিয়া গেল— কুবক্তারা সকলেই তো বহাল তবিয়তে বিরাজমান। যথা, অনুরাগ ঠাকুর আপন মন্ত্রিপদে দিব্য সমাসীন, বাজেট সম্পর্কে রকমারি মহাজ্ঞানও নিশ্চয়ই ইতস্তত বিতরণ করিয়াছেন। যে যৎসামান্য তিরস্কার বা নিয়ন্ত্রণ তাঁহাদের শুনিতে বা মানিতে হইয়াছে, তাহা জারি করিয়াছে নির্বাচন কমিশন। কে জানে, অমিত শাহ হয়তো মনে করেন, নির্বাচন কমিশনও তাঁহার দলের অঙ্গ, কমিশনের ‘শাস্তি’তেই দলের কর্তব্য সম্পন্ন হইয়াছে! সর্বগ্রাসী আধিপত্যবাদের ভাবনা তো এমন ধারারই হইয়া থাকে।

অতএব, সম্পূর্ণ বুদ্ধিহীন অথবা অন্ধ ভক্ত না হইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বীকারোক্তিকে আত্মশুদ্ধি তথা হৃদয় পরিবর্তনের লক্ষণ বলিয়া মনে করা অত্যন্ত কঠিন। বিশেষত, লক্ষণীয়, এই স্বীকারোক্তিরও ভাঁজে ভাঁজে নিহিত অহঙ্কার আপনাকে বিজ্ঞাপিত করিতে ছাড়ে নাই। তিনি জানাইয়াছেন, ইতিপূর্বে তাঁহার সকল নির্বাচনী অনুমানই নির্ভুল প্রমাণিত হইয়াছে। এহ বাহ্য। দিল্লির ভোটপ্রচারে কুকথা তো কেবল অন্যেরা বলেন নাই, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও ইভিএমের বোতাম টিপিয়া শাহিন বাগে শিহরন সৃষ্টির কথা বলিয়াছিলেন, শুনিয়া দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকেরা শিহরিত হইয়াছিলেন। অথচ, শ্রীযুক্ত শাহ কার্যত বলিতেছেন, এখনও তিনি সেই উক্তির মধ্যে কোনও অন্যায় দেখেন না, মানুষ হয়তো তাঁহাকে ভুল বুঝিয়াছে। অর্থাৎ, দোষ তাঁহার নহে, দোষ মানুষের। সংশয় হয়, তিনি মনে মনে বিশ্বাস করেন, তাঁহাদের বিরুদ্ধে এমন ভাবে ভোট দেওয়াও মানুষের দোষ হইয়াছে। তবে, মানিতেই হইবে, তেমন কথা মনের মধ্যে থাকিলেও তিনি তাহা বলেন নাই। গণতন্ত্র বড় বালাই। এবং সেই কারণেই, গণতন্ত্র বড় ভরসা। ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখিবার ভরসা। ক্ষমতার অহঙ্কার যাহাতে সুস্থবুদ্ধি এবং সভ্যতাকে গ্রাস করিয়া ফেলিতে না পারে, তাহার ভরসা। দিল্লির ভোটদাতারা সেই ভরসাকে নূতন শক্তি দিয়াছেন। আশা করা যায়, রাজধানী আজ যাহা ভাবিল, দেশ ভবিষ্যতে তাহা ভাবিতে পারিবে।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Amit Shah Delhi Election 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy