নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
যুদ্ধে জয় হবেই হবে— এমন প্রত্যয় যদি থাকে কারও, যুদ্ধ শুরুর আগে খুব বেশি আস্ফালন বা হুঙ্কারের প্রয়োজন পড়ে না তাঁর। আত্মবিশ্বাস টলে গেলেই আস্ফালনটা বাড়িয়ে তোলার দরকার পড়ে। ভোটমুখী গুজরাতে নরেন্দ্র মোদীর তীব্র কণ্ঠস্বর তাই নানান চর্চার জন্ম দিচ্ছে।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আটকে গেলেও, গুজরাতে ভোটের দামামা বেজেই গিয়েছে ইতিমধ্যে। গাঁধীনগর থেকে নরেন্দ্র মোদীর বার্তা তাই মূলত ভোটাদাতাদের উদ্দেশেই ছিল। সে বার্তার সিংহভাগ জুড়ে রইল নেহরু-গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার, রইল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গুজরাতের প্রতি চরম বৈষম্যের অভিযোগ। রাজনীতিতে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থাকেই। ভোটের মুখে নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেসকে আক্রমণ করবেন, এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই। কিন্তু মোদী সরকারের হাত ধরে গোটা দেশে উন্নয়নের জোয়ার আসছে বলে উত্তুঙ্গ প্রচার চলছে যখন, যে কোনও রাজ্যে গিয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যখন উন্নয়নের ‘গুজরাত মডেল’-এর কথা উল্লেখ করছেন, তখন গুজরাতের মঞ্চে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীকে কেন উন্নয়নের খতিয়ান দেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি শব্দ খরচ করতে হল নেহরু-গাঁধী পরিবারকে আক্রমণের জন্য, সে প্রশ্ন তো উঠবেই। সাহস থাকলে উন্নয়নের ইস্যুতে লড়তে নামুক কংগ্রেস— এমন চ্যালেঞ্জ নরেন্দ্র মোদী ছুড়েছেন ঠিকই। কিন্তু ভাষণের সিংহভাগ জুড়ে বিজেপি সরকার কৃত উন্নয়নের কথা বা বিজেপি সরকারের অর্জনের কথা শোনা যায়নি। শোনা গিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার।
আরও পড়ুন:রাহুল-বাণে বিদ্ধ মোদী
নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে শুধু নয়, সমগ্র বিজেপির ভাষ্যেই কিন্তু কংগ্রেস বিরোধী আক্রমণের সুর অনেকখানি চড়া ইদানীং। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীকে অবজ্ঞা করতেই অভ্যস্ত ছিল বিজেপি মূলত। রাহুল গাঁধী বিজেপিকে আক্রমণ করলে মূলত ব্যঙ্গে-কটাক্ষেই তার জবাব দিত বিজেপি। রাহুল গাঁধী অপরিণত, রাহুল গাঁধী অযোগ্য, রাহুল গাঁধী রাজনৈতিক ভাবে অপদার্থ— এই স্তরের আক্রমণ শোনা যেত। সম্প্রতি কিন্তু রাহুলের প্রতি বিজেপির আচরণে বেশ কিছুটা বদল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অবজ্ঞা নয়, বিজেপির দিক থেকে এখন রাহুল গাঁধীর দিকে ধেয়ে যাচ্ছে আক্রমণ। আগে রাহুল গাঁধী বিজেপিকে আক্রমণ করতেন, বিজেপি জবাবে কটাক্ষ করত। ইদানীং বিজেপি নেতৃত্ব স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই আক্রমণ করছেন রাহুল গাঁধীকে। সে আক্রমণে ব্যঙ্গ বা অবজ্ঞার সুর ধরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বিজেপির ক্রমবর্ধমান রক্তচাপের আভাসও মিলছে। অর্থাত্ আর শুধু অবজ্ঞা করা যাচ্ছে না কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে। না চেয়েও গুরুত্ব কিছুটা দিতেই হচ্ছে তাকেঁ।
আত্মবিশ্বাস কি তবে টাল খেল কিছুটা? গত তিন বছরে যে প্রবল প্রত্যয়ে বিরোধীদের অস্তিত্বকে একের পর এক নির্বাচনে স্রেফ নস্যাত্ করেছে বিজেপি, সেই প্রত্যয়ে কি ঘাটতি দেখা দিচ্ছে এ বার? গোটা ভারত ঘুরতে ঘুরতে লড়াইটা যখন পৌঁছেছে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের রাজনৈতিক আঁতুড় ঘরে, তখনই ঘাটতি এসে গেল আত্মবিশ্বাসে? তেমন যদি হয়, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের অফুরন্ত অবকাশের সামনে কিন্তু এ বার দাঁড়াতে হবে বিজেপিকে।
বিজেপি সত্যিই আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে কিনা, গুজরাতে আত্মবিশ্বাস হারানোর মতো পরিস্থিতি বিজেপির জন্য তৈরি হয়েছে কিনা, বিরোধীদের শিবিরে উল্লাসের কোনও অবকাশ রয়েছে কিনা, সে সব প্রশ্নের জবাব গুজরাতের নির্বাচন না মেটা পর্যন্ত খুব স্পষ্ট করে বোঝা কঠিন। রায় যা দেওয়ার, গুজরাতের জনগণই দেবেন। কিন্তু সাফল্যের বাগাড়ম্বর সত্ত্বেও স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে ভোট প্রচার যে শুরু করা যাচ্ছে না, খোদ প্রধানমন্ত্রীকে ময়দানে নেমে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর যে বেশ কয়েক পর্দা চড়াতে হচ্ছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষণের নিরিখে তা বেশ উল্লেখযোগ্য ঘটনা বইকি! ঠিক কতটা চড়বে রাজনীতির পারদ গুজরাত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, ঠিক কতটা উত্তপ্ত হবে বিজেপি-কংগ্রেস লড়াই, তার আভাসও মিলে গেল নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ থেকেই। নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশের চোখ আপাতত টেনে নিলেন নিজের রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে। চেয়ে হোক বা না চেয়ে, নরেন্দ্র মোদী ফের মানলেন, বিরোধীদের সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন করে দিতে এখনও তিনি পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy